ইসলামী নৈতিকতার চারিত্রিক সংস্কারে ব্যক্তিগত রিপোর্ট


২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:২০

॥ নাজিয়া তুল ফাতাহ ॥
হযরত মূসা (আ.), হযরত দাউদ (আ.)ও তাদের স্ব-স্ব জাতির সামরিক শক্তি নির্ণয় করার জন্য আদমশুমারি পরিচালনা করেন। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, চীনা, রোমান ও গ্রিক শাসকরাও একই জাতীয় জনসংখ্যা ও সম্পদ শুমারির ব্যবস্থা করতেন। মধ্যযুগের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে জানা যায় যে, ওইসময় সরকারি পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা ছিল। ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে স্ট্রাসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জর্জ অব-রেক্ট জৈব এবং অপরাধ পরিসংখ্যানের প্রবর্তন করেন। তিনি লোকদের নৈতিক চরিত্র সংস্কার এবং জীবনবীমা ও পেনশনের একটি প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের নিমিত্ত বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে এ প্রকল্পের কার্যকারিতা প্রদর্শন করেন।
পরিসংখ্যান দ্বারা আমরা এমন একটি শাস্ত্র, যার সাহায্যে কোনো অনুসন্ধান ক্ষেত্রে বহুবিধ কারণে প্রভাবিত বা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত তথ্যসামগ্রী প্রণালীবদ্ধভাবে সংগ্রহ, উপস্থাপন, বিশ্লেষণ, বিশ্লেষিত তথ্যের ব্যাখ্যাকরণ ও ব্যাখ্যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে সঠিক ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।
তো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রিপোর্ট সংগ্রহের মাধ্যমে প্রত্যেক জনশক্তির উন্নত ইসলামিক নৈতিক চরিত্র সংষ্কারের কাজ করে যাচ্ছে, যা অনেকটা পরিসংখ্যানের মতোই।
কারণ এতে ব্যক্তির তথ্য বা একটি শহরের তথ্যসামগ্রী যাচাই করে প্রণালীবদ্ধভাবে সংগৃহীত, সংখ্যায় প্রকাশিত, গণনাকৃত বা প্রাক্কলিত এবং বহুবিধ কারণ এর একটি হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, যা লক্ষণীয় মাত্রায় প্রভাবিত কার্যাবলির সমষ্টিকে বোঝানো হয়।
যাতে নির্ভুলতার যুক্তিসঙ্গত মান অনুসারে এবং তুলনা করে ব্যক্তির নৈতিকতা যাচাই ও উন্নয়ন হতে পারে। এতে ব্যক্তি যেমন ভালো পথে যায়, তেমনি একটি সমাজ তথা রাষ্ট্র ভালো পথে যায়।
যেহেতু রিপোর্টের মাধ্যমে ব্যক্তি নামায, কুরআন, হাদীস, ইসলামী সাহিত্য, আত্মসমালোচনা ও সংরক্ষণ, আল্লাহর পথে কতটুকু কাজ করছে, তার হিসাব রাখা হয়, এতে নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন সম্ভব হয়। ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ পরকালীন জবাবদিহি সহজ করে, এটা সত্য।
আল্লাহ তায়ালা এ পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য এবং মানুষের জীবন পরিচালনার পদ্ধতি ও পন্থা কী হবে, তাও বলে দিয়েছেন। এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বলা হয়েছে, আমি বললাম, ‘তোমরা সবাই তা থেকে নেমে যাও। অতঃপর যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোনো হিদায়াত আসবে, তখন যারা আমার হিদায়াত অনুসরণ করবে, তাদের কোনো ভয়ও নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সূরা বাকারা : ৩৮)।
উপরোক্ত আয়াতে যে জীবনবিধানের কথা বলা হয়েছে, মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য আল্লাহর এ বিধানের চেয়ে উত্তম বিধান আর নেই। এ বিধান হচ্ছে ইসলাম। তাই এ বিধান যারা দুনিয়ায় মেনে চলবে, তারা পরকালীন জীবনে শান্তিতে থাকবে, জান্নাত পাবে এবং যারা এটা মানবে না, তারা কঠিন কষ্টের মধ্যে নিমজ্জিত হবে, ইহকালে এবং পরকালে।
কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকেই আল্লাহ একাকী তাঁর সামনে দাঁড় করাবেন এবং তার কাছ থেকে দুনিয়ার জীবনের প্রত্যেকটি কাজের হিসাব নেবেন। এ ব্যাপারে সূরা মরিয়মে আল্লাহ বলেন, “আর কিয়ামতের দিন তাদের সকলেই তাঁর কাছে আসবে একাকী।” (সূরা মরিয়ম : ৯৫)।
উপরোক্ত আয়াত থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর কাছে উপস্থিত হয়ে সকলকে তাঁর জীবনের সকল কাজের হিসাব দিতে হবে। বিশেষ করে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে থেকে তার জীবন, যৌবন এবং সম্পদের হিসাব নেবেন। এ ব্যাপারে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামতের দিন প্রভুর নিকট থেকে আদমসন্তানের পা সরবে না। জিজ্ঞাসা করা হবে তার বয়স সম্পর্কে কী কাজে সে তা অতিবাহিত করেছে, তার যৌবন সম্পর্কে কী কাজে সে তা বিনাশ করেছে; তার সম্পদ সম্পর্কে, কোথা থেকে সে তা অর্জন করেছে আর কী কাজে সে তা ব্যয় করেছে এবং সে যা শিখেছিল তদনুযায়ী কী আমল সে করেছে?” (তিরমিযী)।
যারা দুনিয়ায় ভালো কাজ করে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে, তাদের ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে, কেবল তারাই খুব সহজেই তাদের আমলনামা পেশ করতে পারবে। আর যারা দুনিয়ায় নিজের বিবেক দিয়ে কুরআনকে অনুধাবন করবে না, কুরআনের বিধান মানবে না আখিরাতে সে অন্ধ হয়ে উঠবে, এরাই আসলে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “স্মরণ কর, যেদিন আমি প্রত্যেক মানুষকে তাদের ইমামসহ ডাকব। অতঃপর যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তারা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণ অবিচার করা হবে না। আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট।” (সূরা বনি ইসরাইল : ৭১-৭২)।
আখিরাতে দুনিয়ার জীবনের আমলের হিসাব গ্রহণের জন্য অন্য কারো সাক্ষ্য প্রয়োজন হবে না, বরং সে নিজের মুখেই নিজের আমলনামা পাঠ করবেÑ এটাই তার হিসাবের জন্য যথেষ্ট হবে। তাই সংগঠনের রিপোর্ট রাখা খুবই জরুরি। আল্লাহ সকল মানুষকেই তার আমলনামা পাঠ করার জন্য বলবেন এবং মানুষ নিজেই তার নিজের আমলনামা আল্লাহর কাছে পেশ করবে। এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, “পাঠ কর তোমার কিতাব, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশকারী হিসেবে যথেষ্ট।” (সূরা বনি ইসরাইল : ১৪)।
যদি কেউ নিজের আমলনামা পেশ করতে ইচ্ছুক না হয়, তখন (কিয়ামতের দিন) তাঁর মুখে মোহর করে দেয়া হবে, তখন তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার দুনিয়ার জীবনের অন্যায় কাজের সাক্ষ্য দিতে থাকবে। এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বলা হয়েছে, “আজ আমি তাদের মুখে সিলমোহর করে দেবো এবং তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে ও তাদের পা সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে, যা তারা অর্জন করত।” (সূরা ইয়াসিন : ৬৫)।
দুনিয়ার জীবনের হিসাব আখিরাতে এমন সূক্ষ্ম হবে যে, মানুষ দুনিয়ায় কী করেছিল, কী বলেছিল এবং কী কল্পনা করেছিল যা তার জীবনে কাজে পরিণত করেনি, সেটাও আল্লাহ সেদিন মানুষের সামনে প্রকাশ করে দেবেন। তখন মানুষ আফসোস করতে থাকবে। এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, “আর তারা বলবে, ‘হায় ধ্বংস আমাদের! কী হলো এ কিতাবের! তা ছোট-বড় কিছুই ছাড়ে না, শুধু সংরক্ষণ করে’ এবং তারা যা করেছে, তা হাজির পাবে। আর তোমার রব কারো প্রতি জুলুম করেন না।” (সূরা কাহাফ : ৪৯)।
দুনিয়ায় যারা অপরাধ করবে এবং অপরাধমূলক কাজের প্রেরণা দেবে, তাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা অপরাধ করবে এসকল ব্যক্তির অপরাধের বোঝাও কিয়ামতে অন্যায় কাজের উদ্বুদ্ধকারীর ঘাড়ে আল্লাহ চাপিয়ে দেবেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “যারা আল্লাহর সাক্ষাৎ অস্বীকার করেছে, তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; এমনকি যখন হঠাৎ তাদের কাছে কিয়ামত এসে যাবে, তারা বলবে, ‘হায় আফসোস! সেখানে আমরা যে ত্রুটি করেছি তার ওপর।’ তারা তাদের পাপের বোঝাসমূহ তাদের পিঠে বহন করবে; সাবধান! তারা যা বহন করবে তা কত নিকৃষ্ট!” (সূরা আনআম : ৩১)।
এসব হিসাবকার্য পরচিালনা করার জন্য আল্লাহর অন্য কারো সহযোগিতার প্রয়োজন হবে না, বরং তিনি নিজেই যথেষ্ট। তিনি যখন কোনোকিছু করতে চান, শুধু হও বললেই সেটা হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, “যখন আমি কোনোকিছু ইচ্ছা করি, তখন আমার কথা শুধু কেবল এই বলা যে, ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায়।” (সূরা নাহল : ৪০)।
এছাড়া মানুষের হিসাব সংরক্ষণের জন্য আল্লাহর সুনিপুণ দৃষ্টি ফেরেশতারা নিয়োজিত রয়েছে। যাদের সংখ্যা গণনা করা সম্ভব নয়। যারা আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া অন্য কারো কথায় পরিচালিত হয় না। এসকল ফেরেশতাকে দিয়ে প্রত্যেক মানুষের আমলনামা আল্লাহ সংরক্ষণ করছেন। এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, যখন ডানে ও বামে বসা দুজন লিপিবদ্ধকারী পরস্পর গ্রহণ করবে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে তার কাছে সদা উপস্থিত সংরক্ষণকারী রয়েছে।” (সূরা কাফ : ১৭-১৮)।
এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “আর অবশ্যই তোমাদের জন্য তত্ত্বাবধায়কগণ রয়েছে। সম্মানিত লেখকবৃন্দ। তারা জানে, যা তোমরা কর।” (সূরা ইনফিতার : ১০-১২)।
আল্লাহর ক্ষমতা এত বেশি যে, যদি আল্লাহ চান ফেরেশতাদের ছাড়াও এসকল কাজ করবেন, সেটাও আল্লাহ করতে পারেন। কারণ আল্লাহ মানুষের এত নিকটে আছে যে, মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। আল্লাহ মানুষের অন্তরের সকল খবর রাখেন এবং মানুষের সকল কাজের সাথে থাকেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “আর অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার প্রবৃত্তি তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয়, তাও আমি জানি। আর আমি তার গলার ধমনী হতেও অধিক কাছে।” (সূরা কাফ : ১৬)।
উপরোক্ত বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার বোঝা যায়, আল্লাহ তায়ালা মানুষ ও জীনের দুনিয়ার সকল কাজের হিসাব সংরক্ষণ করছেন এবং কিয়ামতের দিনে সেটা ফাঁস করে দেবেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, যে দিন গোপন বিষয়াদি ফাঁস করা হবে। অতএব তার কোনো শক্তি থাকবে না। আর সাহায্যকারীও না।’ (সূরা তারিক : ৯-১০)। ‘আল-কুরআনে আরো বলা হয়েছে, সেদিন জমিন তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে।’ (সূরা যিলযাল : ৪)।
উপরোল্লিখিত আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক বান্দার দুনিয়ার জীবনের সকল কর্মকাণ্ড আল্লাহর কাছে লিপিবদ্ধ থাকছে এবং কিয়ামতের দিন বান্দার সামনে সেটা ফাঁস করা হবে। তখন অপরাধীদের চেহারা মলিন হবে, তারা লজ্জিত-অপমানিত হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আল্লাহ বলেন, “সেদিন অনেক চেহারা হবে ভীতসন্ত্রস্ত, কর্মক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। তারা প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে। তাদের পান করানো হবে ফুটন্ত ঝর্ণা থেকে। তাদের জন্য কাঁটাবিশিষ্ট গুল্ম ছাড়া কোনো খাদ্য থাকবে না। তা মোটাতাজাও করবে না এবং ক্ষুধাও নিবারণ করবে না।’ (সূরা গাশিয়াহ : ২-৭)।
উপরোক্ত কুরআন-হাদীসের বক্তব্য অনুসারে একজন মুমিনের দুনিয়ায় থাকতেই আখিরাতের হিসাব দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করে জীবনের সকল কাজকর্ম পরিচালনা করা দরকার। আমি যদি দুনিয়ায় থাকতেই আখিরাতের হিসাব সহজ করার জন্য নিজের জীবনের সকল আমল সংরক্ষণ করার চেষ্টা করি, নিজে আত্মসমালোচনা করে ভালোটা গ্রহণ করি, খারাপটা বর্জন করি, তাহলে আখিরাতের হিসাবটা সহজ হবে। এজন্য ইসলামী সংগঠনের মধ্যে প্রত্যেক কর্মী ও দায়িত্বশীলের জন্য নিজের রিপোর্ট সংরক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছে। এ রিপোর্ট একজন মুমিনের জন্য পরকালীন জীবনের আয়নাস্বরূপ। আয়নায় যেমন নিজের চেহারা দেখা যায়, ঠিক তেমনি নিজের ব্যক্তিগত রিপোর্টের মাধ্যমে পরকালীন জবাবদিহি কেমন হবে, সেটা অনুধাবন করা যায়। এজন্য প্রত্যেক মুমিনের উচিত ব্যক্তিগত রিপোর্ট সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা।
মানুষ পরকালীন হিসাবের চিন্তা ভুলে দুনিয়ার জীবনের চাকচিক্যময় মরীচিকার পেছনে ছুটছে, যেটা খুবই ক্ষণস্থায়ী এবং নগণ্য। এটা একটা ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ মরীচিকাময় দুনিয়ার স্বার্থ হাসিলের পথে তারাই ছুটতে পারে, যারা পরকালীন জীবনের হিসাব ও জবাবদিহির বিষয়ে গাফেল। তাই এ বিষয়ে আমাদের তৎপর থাকতে হবে। এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, “তোমরা জেনে রাখ! দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা, শোভা-সৌন্দর্য, পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার আর ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা মাত্র। তার উদাহরণ হলো বৃষ্টি; আর তা থেকে উৎপন্ন শস্যাদি। (যা) কৃষকের মনকে আনন্দে ভরে দেয়; তারপর তা পেকে যায়; তখন তুমি তাকে হলুদ বর্ণ দেখতে পাও, পরে তা খড়-ভুসি হয়ে যায়। (আর আখিরাতের চিত্র অন্যরকম, পাপাচারীদের জন্য), আখিরাতে আছে কঠিন শাস্তি, (আর নেক্কারদের জন্য আছে) আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোঁকার বস্তু ছাড়া আর কিছুই না।” (সূরা হাদিদ : ২০)।
অন্যায় থেকে ফিরে থাকা এবং সঠিক পথের অনুসারী হওয়া ঈমানের একান্ত দাবি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নারী-পুরুষের জন্য এমন কিছু চিন্তা-উপলব্ধি রয়েছে, যা মানুষকে অন্যায় পথ থেকে দূরে রাখে। সঠিক পথের সন্ধান দেয়। এর জন্য প্রয়োজন আল্লাহর একত্ববাদের দিকে রুজু হওয়া এবং আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার জন্য আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়া, দীনের কাজে নিয়োজিত হওয়া। আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের ডেকে ডেকে সে কথাই বলেছেন, “তোমরা এগিয়ে যাও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও সেই জান্নাত লাভের জন্য, যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের প্রশস্ততার মতো। তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে তাদের জন্য; যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের প্রতি ঈমান এনেছে। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা করেন, তা দান করেন। আল্লাহ বড়ই মহা অনুগ্রহশীল।” (সূরা হাদিদ : ২১)।
পরিশেষে বলা যায়, মানুষের জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী। কখন কার জীবনপ্রদীপ নিভে যাবে, সেটা কউ জানে না। তাই এখন থেকেই পরকালীন জীবনের হিসাব সহজ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। সর্বোপরি আল্লাহর ইবাদতে সময় দিতে হবে। আল্লাহ সকল বনি আদমকে ডেকে বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা কর, আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুই হাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব-অনটন রহিত করবো না। (তিরমিযী)।
অর্থাৎ রিপোর্টের মাধ্যমে ব্যক্তি নিজে আখিরাতের জন্য প্রস্তুত করছে, তথা সামগ্রিক রিপোর্ট পুরো জাতিকে আখিরাতের জন্য তৈরি করছে এবং ইহকালীন শাস্তি, পরকালীন মুক্তির দরজা খুলে দিচ্ছে।