প্রসঙ্গ : গাজার শিশুদের আর্তনাদ এবং আমেরিকায় দাবানল


২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:১৪

॥ একেএম রফিকুন্নবী ॥
দুনিয়ার সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অসম যুদ্ধ চালাচ্ছে মানবতাবিরোধী ইসরাইল ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে। গাজা এখন ধ্বংসস্তূপ, গাজায় ইতোমধ্যে নিহত হয়েছে প্রায় ৪৭ হাজার বনি আদম। আহত হয়েছে লক্ষাধিক। তীব্র খাদ্যঝুঁকিতে আছে প্রায় ২২ লাখ মানুষ। শিশু-নারীরা প্রাণ হারিয়েছে, পঙ্গুত্ববরণ করেছে। অসহায় শিশুরা মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছে খুনি, মানবতাবিরোধী ইসরাইল ও তার দোসর আমেরিকার ধ্বংসের জন্য। ইসরাইল দীর্ঘদিন যাবত ফিলিস্তিন এলাকা; বিশেষ করে গাজায় মানবিক বিপর্যয় ঘটিয়ে শিশু, নারী, বৃদ্ধ জনতাকে ঝাঁকে ঝাঁকে বোমা মেরে স্থলপথে কামান দাগায়ে হত্যা করেছে। পঙ্গু করেছে, আহত করেছে। হাসপাতালগুলো ধ্বংস করেছে। খাবার পানির ব্যবস্থা নষ্ট করেছে। কোনো বাধাই তাদের এ হামলা থেকে বিরত করতে পারেনি। বার বার যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নিলেও আমেরিকার সমর্থন পেয়ে ইসরাইল কর্তৃপক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সায় দেয়নি। অসহায় মানুষ, শিশু-নারীরা মহান আল্লাহর কাছে এ দানবিক শক্তি ইসরাইলকে ধ্বংস করার আকুল আবেদন করেছে।
ইসলামী দুনিয়ার ৫৭টি দেশের সবাই দায়িত্ব নিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, তুরস্ক, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া যৌথভাবে দায়িত্ব নিলে ইসরাইলের এ অমানবিক আচরণ থামাতে পারত বলে আমি মনে করি। আমেরিকার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সামরিক শক্তির বলে ইসরাইল ফিলিস্তিনের ওপর এ অমানবিক আচরণ চালিয়েছে। মানুষের যখন শেষ, মহান আল্লাহর হস্তক্ষেপ তখন শুরু হয়। মহান আল্লাহর ধৈর্যের সীমা অনেক প্রসারিত। তাই হঠাৎ করেই তার গজব আসে না।
ইসরাইলের ওপর গজবের নিশানা হিসেবে তার অন্যতম সাহায্যকারী আমেরিকার ওপর আল্লাহ গজব শুরু করে দিয়েছেন। গত কয়েকদিন যাবত আমেরিকার সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী এলাকা ক্যালিফোর্নিয়ার পাহাড়-পর্বত থেকে শুরু করে শহর-বন্দরে মহান আল্লাহ ঝড়ের বেগে আগ্নেয়গিরির লাভা এমনভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন, ফলে বিশাল বিশাল স্থাপনা, ঘরবাড়ি, শিল্প-কারখানা, চলার পথ সবই দাবানলে ছারখার হয়ে গেছে, এখনো হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরাও কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারছে না, কবে এ দাবানল বন্ধ হবে। ক্যালিফোর্নিয়ার বড় স্থাপনা হলো হলিউড পাহাড়। যেখানে দুনিয়ার সবচেয়ে নারকীয় সিনেমার নির্মাণকাজ চলে। ল্যাংটা, উচ্ছৃঙ্খল সিনেমা তৈরিতে নায়ক-নায়িকারা ওই শহরে একত্রিত হয়ে গোটা দুনিয়ায় তাদের খারাপ কাজের ফসল সিনেমা বানিয়ে ল্যাংটা কালচার প্রচার করছিল।
রিহ্যাবের মেলায় অংশগ্রহণের উসিলায় আমার একাধিকবার আমেরিকায় সফরের সুযোগ হয়েছে। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, ডেটট্রায়েট, লসএঞ্জেলেস ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে। সুযোগ আমেরিকার শিক্ষানগরী বোস্টন সফরেরও। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর, সেখানে বসবাসরত সিনিয়র সিটিজেন এরিয়া দেখার সুযোগ আল্লাহ করে দিয়েছিলেন। সব জায়গায়ই উন্নতির ছোয়া লাগলেও চরিত্রের দিক থেকে নিকৃষ্টমানের প্রভাব দেখা যায়। পুরুষ-মহিলার আদি যুগের চাল-চলন পথে-ঘাটে পরিলক্ষিত হয়। পর্যটনকেন্দ্র, বাগান, মাঠেও তারা আমাদের মতো পরিবার নিয়ে চলাচলের পরিবেশ রাখেনি।
এমনই পরিবেশে আল্লাহ তায়ালা তার কুদরতের খেলা লসঅ্যাঞ্জেলেসে জাহান্নামের আদলে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে দিয়ে সবকিছু ধ্বংস করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যুগে যুগে সামুদ জাতি, আবরাহার হাতি বাহিনী, নমরূদ-ফেরাউনের জাতি ধ্বংসের নমুনা আজ আমরা লসঅ্যাঞ্জেলেসে দেখতে পাচ্ছি। মাইলের পর মাইল আগুনে পুড়ে যাচ্ছে। কোনো ফায়ারব্রিগেড বাহিনীর কার্যকলাপ কাজে আসছে না। এতবড় শক্তিধর দেশ হয়েও আগুন নেভানোর কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারছে না। আকাশপথ, স্থলপথেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থায় দাবানল প্রতিরোধ করতে পারছে না। নায়ক-নায়িকাদের বিলাসবহুল ঘরবাড়ি, পর্যটনকেন্দ্র সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সবই আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ।
অন্যদিকে আমেরিকার পূর্বদিকের শহর রাজধানী ওয়াশিংটনে বরফ পড়ে চলার পথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবহাওয়া মাইনাস ১১ ডিগ্রিতে নেমে গেছে। আমেরিকার ঐতিহ্য ভঙ্গ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠান বাগান চত্বরে না করে ঘরের মধ্যে করেছে। এটাই আল্লাহর কেরামতি।
অন্যদিকে সৌদি আরবে বন্যায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। মরুভূমিতে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া প্রাকৃতিক চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে। দুনিয়াটা মহান আল্লাহ তার নিজের পথে চালানোর জন্য দেশে দেশে দূষিত পরিবেশ ধ্বংস করে নতুন যুগের সৃষ্টির আভাস দিচ্ছেন।
মহান আল্লাহ মানুষকে তার সীমাহীন শক্তির জায়গা জান্নাতুল ফেরদাউস দিতে চান। সময় সময় তার শক্তির মহড়ায় আমাদের যাচাই-বাছাই করে পাপমুক্ত করে জান্নাতে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে চান। আমরা আল্লাহর এ নিয়ম মেনে জান্নাতে যাওয়ায় শরিক হতে চাই। নবী নূহ আ.-এর সময় তার উম্মাহ (জাতি)-কে সত্য দীনের দাওয়াত দিয়ে কাছে টানতে না পেরে আল্লাহর সাহায্য চাইলেন। মহান আল্লাহ নবীকে দিয়ে বড় নৌকা বানিয়ে আল্লাহর অনুগত লোকদের নৌকায় উঠিয়ে পাহাড়ে স্থান করে দিয়ে নাস্তিকদের ডুবিয়ে মারলেন। এর মধ্যে নূহ আ.-এর এক ছেলে ও বিবিও নৌকায় স্থান পায়নি। দীর্ঘদিন পাহাড়ে থাকার পর সব সৃষ্টির কবর হওয়ার পর নতুন পৃথিবীতে আবার নূহ আ. তার লোকবল, পশু-পাখি, গাছপালাসহ অবতরণ করেন। আবার নতুন পৃথিবীর কাজ শুরু হয়।
আমরা শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত। আল-কুরআন আমাদের চলার পাথেয়। নবীর আদেশ-নির্দেশ মেনে চললেই আমরা দুনিয়ায় শান্তি কায়েম করতে পারব আর বিরোধীরা মহান আল্লাহর রোষানলে পড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে আপনি জেনে খুশি হবেন মানবতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট ইসরাইল সরকার কুয়েতের মধ্যস্থতায় হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে বাধ্য হয়েছে। আলহামদুল্লিাহ ইতোমধ্যেই বন্দিবিনিময় শুরু হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজাবাসী তাদের নিজ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। শত বিপদেও তারা তাদের নিজস্ব ভূমিতে ফিরতে পেরে আনন্দ-উল্লাস করছে। আমরা তাদের জন্য দোয়া করিÑ যাতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কায়েম করতে পারে।
আমরা দুনিয়ার সব ভালো চাই। দল-মত ধর্মীয় পরিচয় ভুলে আমরা দেশ-দরদির ভূমিকায় থেকে দেশকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি। আল্লাহর সাহায্য আসবে। দুনিয়া-আখিরাতে কল্যাণ আমাদের জন্য প্রসারিত হবে, কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক : সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।