সম্পাদকীয়

জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সময়ের অপরিহার্য দাবি


২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:০৮

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রাথমিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে, তবে চূড়ান্ত বিজয় এখনো আসেনি। তাই তো এ সাফল্যের কারিগররা তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রেখে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে চলছেন। অন্যদিকে ষড়যন্ত্রকারীরাও বসে নেই। ষড়যন্ত্রকারীরা অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বিজয় ছিনিয়ে নিতে। তারা ভালোভাবেই জানে এ বিজয়ের নায়ক বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সেই সকল জনশক্তি, যারা জীবনের বিনিময়ে হলেও কোনো ব্রাহ্মণ্যবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির আধিপত্য রুখে দিতে সদা প্রস্তুত। তাই ষড়যন্ত্রকারীদের প্রথম টার্গেট দেশপ্রেমিক এ শক্তির মধ্যে সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি করে বিভেদের প্রাচীর গড়ে দুর্বল করা। এ কথা আমাদের কারো অজানা নয়, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের টার্গেট ক্ষমতার মসনদ দখল করা। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ক্ষমতার মসনদ দখল করার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বদলে গেছে। একটা সময় ছিল, যখন ক্ষমতা মানে ছিল প্রভুত্ব ও মালিকানা কায়েম করা। কিন্তু আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্রের ধারণায় রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের অর্থ জনগণের কল্যাণের জন্য আত্মনিবেদিতভাবে কাজ করা।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশের কিছু রাজনৈতিক দল ও নেতা এখনো সেই সামন্ত যুগের প্রভুত্ব ও মালিকানা কায়েম ধারণা তাদের হৃদয়ে লালন করেন। তাই যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা লাভের অপচেষ্টাকেই তারা রাজনীতি বলে মনে করেন। ক্ষমতায় যাওয়ার পর আর ছাড়তে চান না। ছলে-বলে ক্ষমতা ধরে রেখে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জনগণকে শোষণ করে অবৈধ অর্থ-বিত্তের পাহাড় গড়ে তোলেন। এভাবেই ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়। সদ্য পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার শেষ পরিণতি দেখার পরও দেশের কিছু কিছু রাজনৈতিক দল এ শিক্ষা গ্রহণ করেনি। তাই তারা রাষ্ট্র সংস্কার ও স্বৈরাচারের আসার পথ বন্ধ করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করার বদলে পতিত স্বৈরাচারের ভাষায় কথা বলছেন। পতিত স্বৈরাচারকে আশ্রয় দেয়া আধিপত্যবাদী অপশক্তির অ্যাসাইনমেন্ট বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হচ্ছেন। তাদের কারণেই দেশের পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক ইসলামী মূল্যবোধ জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসীদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে, যা চূড়ান্ত বিজয়ের পথে বাধা বলে আমরা মনে করি। পতিত স্বৈরাচারদের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তারা তাদের লুটপাটের অর্থ এবং ক্ষমতায় থাকতে নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে যাদের জন্য কাজ করেন, তাদের সাহায্য-সহযোগিতায় ব্যাপক অপতৎপরতা চালান। এভাবে ক্ষমতায় ফিরে আসা তাদের জন্য অসম্ভব হলেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিপ্লবের সুফল থেকে জনগণকে বঞ্চিত করে। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি মন্থর করে এবং বিপ্লবের সহযোদ্ধার একজনের হাত অন্যজনের রক্তে রঞ্জিত করার মতো অপকর্ম চালিয়ে প্রতিহিংসার অট্টহাসি হাসে।
তাই আমরা মনে করি, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত বিজয় ও সাফল্য পেতে আমাদের ধৈর্য ও সতর্কতার সাথে সামনে পা ফেলতে হবে। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শক্তির মধ্যে যারা বিভেদের দেয়াল তুলতে তৎপরতা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে জনবয়কট কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। নিজের আদর্শ তুল ধরতে গিয়ে অন্যকে ছোট করার নাম গণতান্ত্রিক বিতর্ক নয়- এ কথা ভুলে গেলে শত্রুরাই লাভবান হবে। শত্রুদের পরাজিত করতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী এবং দেশপ্রেমিক সকল দলমত, ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐক্য ও সংহতি এ সময়ের অপরিহার্য দাবি বলে আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।