আলোকে তিমিরে

ঐক্য-অনৈক্য-ঐক্য…


২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:০৫

॥ মাহবুবুল হক ॥
প্রখ্যাত সাংবাদিক, সম্পাদক ও ইতিহাসবিদ আবুল আসাদ সাহেবের একটা ‘কলাম’ ছিল, ‘নিজেরে হারিয়ে খুঁজি’। বড় তাৎপর্যপূর্ণ ছিল কলামের শিরোনামটি। কোনো কিছু হারাতে পারে, হারিয়ে যায়, কিন্তু সেই হারানোর বিষয়টি তালাশ করা বা খোঁজ করা হারানোর মতো অত সহজ নয়। হারানোর বিষয়টি বা কাজটি পানির মতো সহজ। একটু অসতর্ক হলে, একটু অসাবধানী হলে, একটু চঞ্চল হলে সেটা স্বাভাবিকভাবে হারিয়ে যায়। বিদগ্ধ আলেমগণ বলেন, ওসব কিছু না, শয়তান ওটা লুফে নেয়। শুধু জিনিস হারায় না, গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, জীবন ও জগৎ সব স্বাভাবিকভাবে হারিয়ে যায়। শুধু কি জীবন ও জগৎ? শুধু কি ব্যক্তিগত জীবন, শুধু কি পারিবারিক জীবন, শুধু কি সামাজিক জীবন এবং শুধু কি জাতিগত বা রাষ্ট্রিক জীবন? না, এটুকু নয়। হারিয়ে যায় অনন্তকালের পারলৌকিক জীবন। আবার এখানেও কিছু বিভাজন আছে, সবাই ইহকাল ও পরকাল- দুটি জীবনই হারায় না। কেউ ইহকাল হারায়, কেউ আবার পরকাল হারায়। এ দুটি জীবন পৃথকভাবে হারালে একরকমভাবে ক্ষতি হয় না। যারা মুসলিম, তারা জানে যে, পরকাল হারাতে হয় না। কিছু যদি হারাতেই হয়, অর্থাৎ কোনো কারণে যদি ইহজীবন হারাতে হয়, তাহলে তাই হোক। কিন্তু কোনো অবস্থায়ই যেন পরকাল না হারায়। কারণ তারা ভালোভাবে উপলব্ধি করেন যে, একালের জীবন বা ইহকালীন জীবন সামান্য ক্ষণের জন্য। আর পরকালের জীবন অনন্তকালের জন্য। কিন্তু মুদ্রার অপর পিঠে যারা পরকালকে বিশ্বাস করে না, তাদের তো পরকাল নিয়ে চিন্তা নেই। তাদের সকল চিন্তা হলো দুনিয়ার কোনো কিছু যেন হারাতে না হয়। সেক্যুলারদের এমবিশন অব লাইফ ‘ঘানির এক খুঁটিতে বাঁধা’। ঘানির গরুটার (কুলুর বলদ) চোখ বাঁধা থাকে। সে আপন মনে ঘুরতে থাকে। সে চোখ খুলে দুনিয়ার দিকে তাকাতে পারে না। আশপাশের বহু কিছুকে সে অনুভব করতে পারে না, অনুমান করতে পারে না, উপলব্ধি করতে পারে না। সে শুধু আপন মনে ঘুরতেই থাকে। জীবনের সকল লাভ বা উপার্জনের সূত্র এখানেই যেন। তার ধ্যান-ধারণার মধ্যে অনন্তকাল নেই, পরকাল নেই- শুধু আছে ইহকাল। সবাই আবার অত্যন্ত সচেতনভাবে কোনো কিছু হারানোর চেষ্টা করে না। উপেক্ষা বা অবহেলায় ইহকাল ও পরকালের অনেক কিছু আমরা হারাই।
অনেকে এভাবেও চিন্তাভাবনা করে যে, ঠিক আছে দুনিয়ায় কিছু পেলাম, কিছু হারালাম। আবার পরকালেরও কিছু পেলাম এবং কিছু হারালাম। এতে আবার তেমন কী অসুবিধা? কিন্তু দুনিয়ায় না হোক, পরকালের কোনো কিছু হারালে যে শাস্তি ভোগ করতে হবে, সে হিসাব হয়তো অনেকেই আমরা করি না বা করতে পারি না। বিষয়টি এমন সহজ-সরল নয় যে, বড় জান্নাত না পেয়ে একটু ছোট জান্নাত পেলাম। তাতে আর এমন কী ক্ষতি হলো?
কিন্তু হারিয়ে হারিয়ে আবার খুঁজে খুঁজে ফেরা। সে এক দারুণ কষ্টের বিষয়! এ বিষয়ে যুবক থাকতে যতটা সহজ বলে মনে হয়, বার্ধক্যে ঠিক ততটাই কঠিন। বলা হয়ে থাকে, ‘সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের হাজার ফোঁড়’। শিশু-কিশোর ও যৌবনকালে যদি লেখাপড়ার সুযোগ হারিয়ে যায়, তাহলে কী বার্ধক্যে পড়াশোনা করে জীবন গঠন করা যায়? যায় না। কষ্ট পেতে হয়, দুঃখ পেতে হয়, জীবন ও জগৎ এলোমেলো হয়ে যায়। জীবনকে আর শৃঙ্খলার মধ্যে টেনে আনা যায় না? সুতরাং আইনস্টাইনের তত্ত্বটাই এখনো সজীব হয়ে আছে। ‘স্থান-কাল-পাত্র’- এ তত্ত্বে যদি মনোনিবেশ না করা যায় বা এ তত্ত্বকে যদি উপেক্ষা করা হয়, তাহলে জীবন ও জগৎকে সাজানো যায় না।
বিশাল ‘ঐক্যের’ মাধ্যমে অর্থাৎ গণবিপ্লবের মাধ্যমে আমরা প্রথম পর্যায়ে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ উপভোগ করেছি। শুধু উপভোগ নয়, অনেককিছু যেন অর্জন করেছি। চারদিকে তখন অর্জনের ঢেউ, শুধু প্রাপ্তি আর প্রাপ্তি। স্বৈরাচার বিদায় হলো, বিদায়ের সাথে সাথে জীবনের সবদিক থেকে একই গুমোট অন্ধকার যেন অপসৃত হলো। এ হারানোর মধ্যে বিশাল অর্জন ছিল। যারা জুলুমবাজ ছিল, অত্যাচারী ছিল, দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক ছিল, লুণ্ঠনকারী ছিল এবং যারা ছিল স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ধ্বংসকারী, তাদের পৃথক করে আন্দোলন করতে হলো না। এক আন্দোলনের সাথেই সব অন্ধকার দূর হয়ে গেল। আলোর রেখা জীবনের আঙিনায় উদ্ভাসিত হলো। যারা বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের বিরোধী ছিল, তাদের কথা এখন থাক। তারা তো পরাজিত হলো। তারা তো জীবন ও মুখ রক্ষার জন্য নানাভাবে মরিয়া হয়ে গোপনে ছোটাছুটি করতে লাগলো। যারা বিপ্লবের অংশীদার ছিল না অর্থাৎ বিপ্লবের ঝুঁকিতে যারা অংশগ্রহণ করেনি, অন্যদের ওপর নির্ভর করেছিল, তারা ঐক্যতানে রাতা-রাতি অংশীদার হয়ে গেল। তাদের মধ্যে বিপ্লবের আকাক্সক্ষা ছিল, অভ্যুত্থানের স্বপ্ন ছিল, কিন্তু অংশগ্রহণের সাহস ছিল না। তারা নানা ছুঁতা-নাতায় বিপ্লবীদের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেল। এভাবেই চলছিল, ঐক্যের জোয়ার স্ফুরিত হচ্ছিল, ভাটার টান ছিল না। নতুন করে ঐক্যের ডাক দিতে হয়নি। এমনি এমনি ঐক্যের সাগর বিস্তৃত হচ্ছিল। ঐক্যের খাল-বিল, নদী-নালা থেকে বিপুল বারিধারা সাগরে এসে উপস্থিত হচ্ছিল। একটা নবতর উন্মাদনা বাংলাদেশের আকাশ-বাতাসকে উচ্চকিত করেছিল, সমুজ্জ্বল করছিল। বিভক্তির ধারা, বিভাজনের ধারা সংকুচিত হয়ে পড়ছিল। একতার একটা ঢেউ দেশবাসীকে দারুণভাবে আশান্বিত করেছিল, যা ছিল দেশবাসীর ওপর জগদ্দল পাথরের মতো ভারী। যে কারণে প্রায় ৫০ বছর ধরে মানুষ স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করতে পারেনি। বিনা কারণে আত্মীয়কে অনাত্মীয়কে মনে করতে হয়েছে। বন্ধুকে শত্রু মনে করতে হয়েছে। আবার শত্রুকে মনে করতে হয়েছে আপন বন্ধু।
সব অভিশাপ যেন বরফখণ্ডের মতো অথবা মোমবাতির মতো গলে গলে মিলিয়ে যাচ্ছিল। আশা ছিল ঐক্যের সুউচ্চ মিনার অচিরেই গড়ে উঠবে। একসময় যারা কারো ছায়া মাড়াতো না, তাদের দেখা গেল প্রকাশ্যে গলাগলি করতে। ‘এসো ভাই দেশ গড়ি’- এ স্লোগানে স্লোগানে বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস যখন মুখরিত হতে লাগল, তখন কে বা কারা, কার পরামর্শে বিপ্লব বা অভ্যুত্থানকে শিকেয় তুলতে লাগলো। ঐক্যের পানে ছুটে চলা দেশবাসী হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো। কেউ কিছু বোঝার আগেই বিপ্লবীরা সংবিধানে ফিরে গেল। স্বৈরাচারকালের প্রেসিডেন্টকে ধরে রাখল। প্রেসিডেন্টের হাতে সরকার গঠনের শপথ গ্রহণ করল। হঠাৎ করে ‘নির্বাচন নির্বাচন’ চিৎকার উঠল। আর এর সাথে সাথে বিপ্লব হারিয়ে গেল। অভ্যুত্থান হারিয়ে গেল! সাথে সাথেই হারিয়ে গেল ঐক্যের ‘স্বপ্নদোলা’। অনৈক্যের বরফ এবং মোমবাতি মাত্র কিছুদিন আগে প্রকাশ্যে গলিত হচ্ছিল, ঠিক তেমনিভাবে ঐক্যের ফলে গড়ে ওঠা বরফখণ্ড শরৎ, হেমন্ত ও শীতেও গলে গলে বিলীন হচ্ছিল। আকাক্সক্ষা যেখানে ছিল বড় বড় মাঠে সমবেত হওয়ার, সেখানে নিজেরাই পুনরায় ছোট ছোট মাঠ উদ্বোধন করে ফেলল। যে যার জায়গায় আবার ফিরে যেতে লাগল। কেউ চাইল নির্বাচন, কেউ চাইল সংস্কার, কেউ চাইল উন্নয়ন, কেউ চাইল বিচার, কেউ চাইল ঐক্য আবার কেউ চাইল অনৈক্য। কেউ স্বৈরাচারকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে চাইল, আর তলে তলে নবতর সেক্যুলার স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল!
অনৈক্যের বান যখন ইন্ডিয়ার অপবিত্র পানির মতো উচ্ছল হয়ে উঠল, সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে, সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে- এ জিগির যখন সমুন্নত হলো, তখন কে বা কারা কাদের বাস্তব পরামর্শ ও উপদেশে একটু নমনীয় ভাব প্রচ্ছন্নভাবে চারদিকে উদ্ভাসিত হতে লাগলো, আলহামদুলিল্লাহ। নিশ্চয়ই এর মধ্যে আল্লাহর মহিমান্বিত কোনো পবিত্র ইঙ্গিত বিরাজমান রয়েছে।
আল্লাহর ওয়াস্তে একটু ফিলিস্তিনের দিকে দৃষ্টিপাত করুন। আমরা মনুষ্যজাতি যখন কোনো উপকার করতে চাই বা কল্যাণকর কোনো ভূমিকা পালন করতে চাই, তখন কার্যত দেখা যায়, একজনের জায়গায় একাধিক ব্যক্তি উপকৃত হয়। কিন্তু মহান আল্লাহ যখন দুনিয়ায় সামান্য কল্যাণ করার চিন্তা করেন, তখন তা দুনিয়ার একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে যায়! মধ্যপ্রাচ্যে কী হচ্ছে, আমরা জানি না। আমাদের দেশের মতো সেখানেও ভেতরে-বাইরে লাখো লাখো সমস্যা, লাখো লাখো ষড়যন্ত্র। সে সময়কালে ফিলিস্তিন এবং তার আশপাশের শিশুসহ ৫০ হাজার বনিআদম শাহাদাতবরণ করেছে। প্রায় ঠিক একই সময়কালে বাংলাদেশেও প্রায় ৩ হাজার বনিআদম শাহাদাতবরণ করেছে। মহান আল্লাহর কী আশ্চর্য মহিমা- সাময়িককালের জন্য হলেও সেখানে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। আর ঠিক একই সময় আমাদের সোনার দেশে অনৈক্য থেকে ঐক্যের দিকে আমরা এখন দৃষ্টি প্রসারিত করতে শুরু করেছি। অনুমিত হয়, যেকোনো কারণেই হোক, মহান আল্লাহ নেয়ামত, রহমত, মাগফিরাত ও বরকতের বিষয় ছড়িয়ে দেওয়ার অভিপ্রায়ে উৎফুল্লহ রয়েছেন। একই সময়কালে অশান্তি, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ধ্বংস ও বিপর্যয় আবার একই সময়কালে শাহাদাতের নাজরানাসহ শান্তি, কল্যাণ, স্বস্তি অর্থাৎ রহমত আর রহমত।
মহান আল্লাহর কী অপূর্ব মহিমা- ঠিক এ সময়ে সমাজের, সরকারের, রাষ্ট্রের বড় ছোট সবাই প্রচ্ছন্নভাবে ঐক্যের কথা বলছেন, গত এক সপ্তাহে ছোট বড় বিষয় বাদ দিলে ঐক্যের একটা মহান সুর বাতাসে যেন বয়ে বেড়াচ্ছে।
যারা বোধশক্তিসম্পন্ন এবং যাদের মহান আল্লাহ অন্তরদৃষ্টি প্রদান করেছেন, তারা ঠিক অনুভব করতে পারছে, সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালা এ সময়ে প্রকৃতির মতো মানুষের মাঝেও ঐক্য নির্মাণ করতে চাচ্ছেন। মহান আল্লাহর এ আকাক্সিক্ষত অভিলাষকে এখন ধারণ করতে হবে। ঐক্য বা একতার জন্য মনস্থির করতে হবে। ছোট ছোট মিটিং-সিটিং-এর সাথে সাথে সকলকে নিয়ে ঐক্যের জন্য জনসভার আয়োজন করতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিদ্বেষ নয়, হিংসা নয়, হানাহানি নয়, ভালোবাসার বাণী ছড়িয়ে দিতে হবে। এ মুহূর্তে লোভ, মোহ ও মাৎসর্য পরিহার করতে হবে। দখল ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। প্রতিশোধের প্রজ্জ্বলিত অগ্নি নির্বাপিত করতে হবে।
আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিধর দেশগুলা আগ্নেয়গিরির উত্তাল লাভা ও দাবানলের আগুন কখনো নির্বাপিত করতে পারেনি। সবসময় ব্যর্থ হয়েছে। মহান আল্লাহর যখন ইচ্ছে হয়েছে, তখনই লাভা ও দাবানল বন্ধ হয়েছে। দার্শনিকরা বলেন, মানবজাতির মনে যখন হিংসার দাবানল প্রজ্জ্বলিত হয়, তখন প্রকৃতির মাঝেও ধ্বংসের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। কারণ বিষয়টা হলো এককেন্দ্রিক! মহান স্রষ্টার অবারিত সৃষ্টি। মানুষকে বলা হয়, ‘আশরাফুল মাখলুকাত’। সেই মানুষের মনে যখন ক্রোধ, প্রতিশোধ, হিংসা, বিদ্বেষ ও ধ্বংসের উন্মাদনা সৃষ্টি হয়, প্রকৃতিও তখন হয়তো মানুষের কর্মকাণ্ডকে অনুকরণ ও অনুসরণ করতে থাকে! সবকিছুর সূত্র এক জায়গা। এটাকেই বলে ‘ন্যাচারাল ফেনোমেনা’। এ সূত্রেই আমরা আশা ও দোয়া করছি, দাবানল স্তিমিত হয়ে যাক! স্তিমিত কেন? স্তব্ধ হয়ে যাক! দুনিয়াব্যাপী স্বস্তি ও শান্তি-সুখের আবাহন সৃষ্টি হোক।
আমেরিকার বনে দাবানল সৃষ্টি হলে দুনিয়ার অন্য অঞ্চলের মানুষ আনন্দ প্রকাশ করে! তারা হয়তো উপলব্ধি করে না, তাদের দেশে হয়তো বনজঙ্গল নেই, কিন্তু মেঘের বজ্রপাত আছে, নদীর ভাঙন আছে, সাগরের ঘোড়দৌড় আছে, বাতাসের ঝঞ্ঝা আছে, বরফের উন্মত্ততা আছে। যা নেই বা যা আমরা এখনো দেখিনি, তারও কত নতিজা আছে। আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমরা ধ্বংসের নতুন নতুন নতিজা দেখতে চাই না। আমরা সৃষ্টির প্রকৃতির, মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গল চাই। আমরা আর হিংসা চাই না। বিদ্বেষ চাই না। সবাইকে সাথে নিয়ে একটু শান্তি চাই! শান্তি!!
কে আমাদের কী ক্ষতি করল, সে বিষয় নিয়ে আমরা রাতের মগ্নতা অতিবাহিত করতে চাই না। গত দেড় হাজার বছরে আমরা নিজেরা নিজেদের কী ক্ষতি করেছি, তার হিসাব আগে নেয়া প্রয়োজন। আমাদের পার্শ্ববর্তী সমাজ বলে ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। কথাটা নির্মম হলেও, নিষ্ঠুর হলেও বাস্তব সত্য। ‘সনাতন সত্য’। শাশ্বত ও চিরকালীন সত্য! কোথায় খুঁজবেন দৃষ্টান্ত? ফিরে যান সেই বাবা আদমের ঘরে। ছোট ভাই বড় ভাইকে অর্থাৎ কাবিল হাবিলকে হত্যা করল! ইতিহাসের এ দিকটায় আমাদের চোখ ফেরাতে হবে। দুনিয়ার প্রতিটি ধর্ম ও সংস্কৃতির অনুসারীদের প্রাজ্ঞ উপলব্ধি হলো, ঘরের শত্রুরাই ঘরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বাইরের শত্রু, অন্য জাতি বা ধর্মানুসারীদের অতটা ক্ষতি করতে পারেনি, যতটা ক্ষতি করতে পেরেছে নিজেদের ঘরের মানুষ, সমাজের মানুষ, ধর্মের মানুষ, মতবাদের মানুষ ইত্যাদি ইত্যাদি!
মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ এই ‘তোমরা’ কে? শব্দটিকে অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়। আমরা এখন সেই বিস্তৃতির দিকে চোখ ফেরাচ্ছি না। আমরা এখন শুরুতে আমাদের দিকেই তাকাতে চাই। আমরা এ সন্ধিক্ষণে ইসলামপন্থী দলগুলোর প্রতি বিনীত আহ্বান জানাতে চাই- ‘‘আসুন, ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে আমরা একতাবদ্ধ হই। তারপর আল্লাহর রহমত হলে আশপাশের দিকে ইনশাআল্লাহ আমরা চোখ ফেরাবো।”