কোনো আসনে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে ফল বাতিল
২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৫০
স্টাফ রিপোর্টার : অবাধ, সুষ্ঠু ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়ে সামনে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে কমিশন। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর একটি অংশ চলতি বছরই নির্বাচন চাচ্ছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের চাপ রয়েছে সরকারের ওপর। এ অবস্থায় সরকারপ্রধানের নির্দেশনা সামনে রেখে নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে ইসি। তাছাড়া নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশনের সুপারিশও মাথায় রাখছে ইসি।
এদিকে সপ্তমবারের মতো বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত ২০ জানুয়ারি সোমবার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন সাভারের এ কার্যক্রমটি উদ্বোধন করেন। ইসি জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, গত ২০ জানুয়ারি দুপুরের দিকে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থিত থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজিসহ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে ছবি তুলে নিবন্ধন সম্পন্ন করার কাজ। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করা হবে। পুরো কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত থাকবে ৬৫ হাজার লোকবল। যারা ১ দশমিক ৫২ শতাংশ নাগরিককে ভোটার তালিকায় যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করবেন। এদিকে ২০২২ সালে নেওয়া তিন বছরের তথ্যের শেষ ধাপের হালনাগাদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এতে ১৮ লাখের মতো ভোটার আগামী মার্চে যোগ হতে পারে। সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। বাড়ি বাড়ি হালনাগাদে ১৯ লাখ নতুন ভোটার তালিকায় যোগ হতে পারে। নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ৪০ থেকে ৪৫ লাখ ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তালিকায় দ্বৈত ভোটার যেন না থাকে, মৃত ভোটার যেন বাদ দেওয়া যায় এবং নতুনদের অন্তর্ভুক্ত করে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্যই বাড়ি বাড়ি তথ্য হালনাগাদ করছি।
২০০৭-০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এর আগে ভোটার তালিকা হালানাগাদ করা হয়েছে ছয়বার। ২০০৯-১০ সাল, ২০১২-১৩ সাল, ২০১৫-১৬ সাল, ২০১৭-১৮ সাল, ২০১৯-২০ ও ২০২২-২৩ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ইসি।
ভোটার তালিকা হালানাগাদে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য যে সকল কাগজপত্র তথ্য সংগ্রহকারীদের দিতে হবে: ক) ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মসনদের কপি। খ) জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের কপি। গ) নিকটাত্মীয়ের এনআইডির ফটোকপি (পিতা-মাতা, ভাই-বোন প্রভৃতি)। ঘ) এসএসসি/দাখিল/সমমান, অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)। ঙ) ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি/চৌকিদারি রশিদের ফটোকপি)।
ভোটার হওয়ার সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে: ক) নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্মনিবন্ধন বা শিক্ষা সনদের সঙ্গে হুবহু মিলিয়ে লিখতে হবে। খ) জন্মতারিখ অবশ্যই জন্মনিবন্ধন বা শিক্ষা সনদ অনুযায়ী হতে হবে। গ) স্থায়ী ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভোটারের প্রকৃত স্থায়ী ঠিকানা লিখতে হবে। ঘ) কোনো অবস্থাতেই দ্বৈত বা দুইবার ভোটার হওয়া যাবে না।
গত ২১ জানুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। সেখানে তিনি জানান, ৪০ ভাগের কম ভোট পড়লে সেই আসনে ভোট বাতিল, এমন সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া গুম, খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না বলেও সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে নয়, নির্বাচনী অঙ্গনকে দুর্নীতিমুক্ত করতেই নির্বাচন ব্যবস্থায় সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায়ে বিগত তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনারদের বিচারে কমিশন গঠন করা হবে। নিরপেক্ষ তদন্ত করে তাদের বিচার করা প্রয়োজন। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা কোনো দলকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার পক্ষে নয়। তবে যারা জুলাই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তারা নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাবে কিনা তা সিদ্ধান্ত নেবে দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দল।