পরিস্থিতি যেমনই হোক, সত্য প্রকাশে পিছপা হওয়া যাবে না : ডা. শফিকুর রহমান
২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৩৪
দৈনিক সংগ্রাম-এর সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান
সোনার বাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ফ্যাসিস্ট আমলে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের ওপর জুলুম চালানো হয়েছিল। সেই সময় সংবাদমাধ্যম যদি সত্যকে পুরোপুরি তুলে ধরতে পারতো, তাহলে ফ্যাসিস্টরা চেপে বসতে পারতো না। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সেনাপতি হয়ে সত্য প্রকাশে সর্বদা অবিচল থাকতে হবে। পরিস্থিতি যেমনই হোক, সত্য প্রকাশে পিছপা না হওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
গত ২০ জানুয়ারি সোমবার সকালে মগবাজারে দৈনিক সংগ্রাম কার্যালয়ে আয়োজিত দৈনিক সংগ্রামের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগ্রাম সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, বাংলাদেশ পাবলিকেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুর রব, সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও বিপিএলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মোবারক হোসাইন।
বক্তব্য রাখেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার মজলুম সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক কবি আব্দুল হাই শিকদার, দৈনিক নয়া দিগন্তের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালাহ উদ্দিন বাবর, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিএফইউজে’র সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূইয়া, দৈনিক সাতমাথা সম্পাদক মো. শাহাবুদ্দিন, সাপ্তাহিক সোনার বাংলার চেয়ারম্যান একেএম রফিকুন্নবী, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপা সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, সামাজিক অধিকার আদায়ের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর প্রধান সানজিদা ইসলাম তুলি প্রমুখ। কুরআন তেলাওয়াত করেন কারী বেলাল হোসেন।
উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান, দৈনিক সংগ্রামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. নূরুল আমীন, এনটিভির ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক জয়নুল আবেদীন আজাদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, ইসলামী ব্যাংক মৌচাক শাখার ব্যবস্থাপক ও ইভিপি ড. মো. আশরাফ আলী, গণঅধিকার পরিষদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের প্রচার সম্পাদক এ.এইচ রনি কে রুহী, নয়া দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী, বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, এনটিভির সিএনই ফখরুল আলম কাঞ্চন, বিএফইউজে’র সহকারী মহাসচিব বাছির জামিল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম, পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন জামিল, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি এডভোকেট হারুন অর রশিদ খান ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতিকুর রহমান প্রমুখ। এছাড়া শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি উমর ফারুক আল হাদী, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব এডভোকেট গোবিন্দ্র চন্দ্র প্রামাণিক, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি ইন্দ্রজিৎ কুমার ঘোষ ও সহ-সভাপতি নাসিম শিকদার, সাব-এডিটর কাউন্সিলের সভাপতি মুক্তাদির অনিক ও সেক্রেটারি জাওহার ইকবাল এবং সহকারী সেক্রেটারি মনির আহমেদ জারিফ, আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব এবিএম ফজলুল করীম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং ব্যক্তির পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। সব মিলিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় দৈনিক সংগ্রামের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ গঠনতান্ত্রিকভাবে স্বীকৃত আর সিভিল কনভেনশন হিসেবে মিডিয়াকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। একটি ঘরের চারটি পিলারের মধ্যে একটি যদি বিধ্বস্ত থাকে, তাহলে ঘর তো টিকবে না। এই একটি কারণেই ভেঙে পড়বে। চারটি পিলার শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে ঘরটি ভালোভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমাদের সমাজটা ভেঙে পড়ার এটাও এক কারণ কিনা- এ বিবেচনা করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, জাতি হিসেবে যারা এগিয়ে যেতে চায়, তারা পেছন দিয়ে কামড়া-কামড়ি করে না। পেছনের কোনো দুঃস্বপ্ন বা দুঃশাসন যদি জাতিকে তাড়া করে- এটি স্মরণ করিয়ে দেয়া সাংবাদিকদের দায়িত্ব। একটি সংবাদমাধ্যমের দুটি অংশ থাকে একটি হচ্ছে নিউজ আরেকটি হচ্ছে ভিউজ। নিউজটি একেবারেই সরাসরি সাদাকে সাদা বলবে এবং কালোকে কালো বলবে। এখানে সাংবাদিকের কোনো বক্তব্য সংযোজন হবে না এবং সত্য থেকে বিয়োজনও হবে না। যিনি যেভাবে বলেছেন, যিনি যেভাবে লিখেছেন হুবহু সেভাবেই তুলে ধরতে হবে। ফ্যাসিবাদী আমলে এটি একেবারেই হয়নি। এখনো তার কিছু কালো ছায়া রয়ে গেছে। কারণ রোগ যখন পুরনো হয়ে যায়, তখন এটাকে ক্রনিক ডিজিজ বলে। ক্রনিক ডিজিজ কিন্তু সহজে সারে না, কিন্তু সারে, সময় লাগবে। আমরা আশা করি, এটি সারবে, থাকবে না।
আযম মীর শাহীদুল আহসান বলেন, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা তার ৫০ বছরের পথচলার ইতিহাসে অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে এবং বরাবরই সংগ্রাম সত্য প্রকাশে ছিল আপসহীন।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, দৈনিক সংগ্রামের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। দৈনিক সংগ্রাম সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ও ইসলাম কায়েম করার জন্য এককাতারে কাজ করে যাচ্ছে। সত্যের জন্য দৈনিক সংগ্রাম অতীতে লড়াই করেছে, বর্তমানেও লড়াই করছে ভবিষ্যতে লড়াই করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, দৈনিক সংগ্রাম ৭১-এর পর অন্ধকার বাংলাদেশে আলোকবর্তিকা ছিল। গত ৫০ বছর দৈনিক সংগ্রাম সত্যের পক্ষে লড়াই সংগ্রামে ছিল অবিচল। সংবাদকে একটু ছোট করে বেশি সংবাদ দেয়ার চেষ্টা করা উচিত সংগ্রামের। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা আগামী দিনে জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে এবং সবার কথা বলবে, ইনশাআল্লাহ।
মাহমুদুর রহমান বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলাম আমি। আজ অনেক দিন পরে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।
হাসান হাফিজ বলেন, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকাকে গলাটিপে মেরে ফেলতে চেয়েছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের প্রতীক।
এম আবদুল্লাহ বলেন, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার অফিসে হামলা করা হয়েছে এবং প্রবীণ সম্পাদক ও বুদ্ধিজীবী আবুল আসাদকে জেলে বন্দী করা হয়েছে এবং আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু সেদিন আমরা সেভাবে প্রতিবাদ জানাতে পারিনি।
কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেন, গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের দুঃশাসন-জুলুমের শিকার হয়েছে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদ দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন।
এম এ আজিজ বলেন, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা ও জামায়াত মজলুম হয়েছে গত ১৬ বছরে আওয়ামী দুঃশাসনের কবলে পড়ে। সবার মত তুলে ধরার জন্য আহ্বান জানাবো দৈনিক সংগ্রামকে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা দৈনিক সংগ্রাম। শত নির্যাতনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে ছিল।
জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, দৈনিক সংগ্রাম দেশের অন্যতম প্রধান ও পুরনো পত্রিকা। ফ্যাসিবাদের সময়ে দৈনিক সংগ্রামের ওপর টর্নেডো বয়ে গেছে। তাতেও ন্যায় ও সত্যের মধ্যে অবিচল ছিল। ভবিষ্যতেও ন্যায় ও সত্যের পথে এগিয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সংগ্রাম পত্রিকার সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, সুদীর্ঘ ৫০ বছর পার করেছে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা। গত ৫০ বছর সংগ্রাম পত্রিকা আপসহীন ছিল।
আব্দুর রব বলেন, সংগ্রাম করেই অর্ধশত বছর পার করেছে দৈনিক সংগ্রাম। সত্য খবর প্রকাশে সংগ্রাম ছিল অবিচল। এখনো সেই ধারা অব্যাহত আছে। সত্য প্রকাশে অতীতের মতোই সংগ্রাম আপসহীন থাকবে এ প্রত্যাশা আমাদের।
অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন বলেন, দৈনিক সংগ্রাম কিছু জনশক্তি তৈরি করেছে। এজন্য সংগ্রামের প্রতি কৃতজ্ঞ। জাতির জন্য দৈনিক সংগ্রাম অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে এবং অবদান রেখেছে। অনুকূল পরিবেশ কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে আরো বেশি অবদান রাখার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ২৪ গণঅভ্যুত্থানের সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের পাশাপাশি দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা অনেক অবদান ছিল। অনেক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা ৫০ বছর পার করেছে।
রাশেদ প্রধান বলেন, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমার দলের পক্ষে সংগ্রামী অভিনন্দন। সংগ্রাম পত্রিকা মাথানত করেনি সত্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা।
সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও গুম হওয়া সব মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়নি ‘অনেক ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে আমরা ৫ আগস্ট নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। অনুষ্ঠান শেষে মো. মোবারক হোসাইন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সংবাদপত্রজগতের সিনিয়র অনেকে এসেছেন এবং বক্তব্য রেখেছেন। সবাইকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি।