মানুষ আর ক্ষমতার পালাবদল নয়, সংস্কার চায় : ডা. তাহের


১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০৮

চাঁদপুর জেলা সংবাদদাতা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, পরিবর্তন করেই ছাড়বে। ৫ আগস্ট শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন হয়নি, মানুষের বিবেক খুলে গেছে। মানুষ আর ক্ষমতার পালাবদল চায় না। দেশজুড়ে সংস্কার চায়, নির্বাচনের সংস্কার চায়। তিনি বলেন, জাতির জন্য, দেশের জন্য, ধর্মের জন্য যে লড়াই, সেটিই মানুষকে শ্রেষ্ঠ করে। ৫ আগস্ট এ দেশের সূর্য সন্তানরা সেটি প্রমাণ করেছেন এবং তা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।
গত ১১ জানুয়ারি শনিবার চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি পাইলট হাইস্কুল এন্ড কলেজ মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হাজীগঞ্জ উপজেলা শাখা আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। হাজীগঞ্জ উপজেলা শাখার আমীর বি এম কলিমুল্লাহর সভাপতিত্বে ও হাজীগঞ্জ পৌরসভা জামায়াতের আমীর আবুল হাসানাত পাটোয়ারীর পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ মোবারক হোসাইন। বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর এডভোকেট মাসুদুল ইসলাম বুলবুল, সেক্রেটারি এডভোকেট শাহজাহান মিয়া, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আবুল হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, হারুন উর রশিদ ওসমানী, চাঁদপুর শহর আমীর এডভোকেট শাহজাহান খান, কচুয়া আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আবু নছর আশরাফী, হাজীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, ছাত্রশিবিরের সাবেক শহর সভাপতি ইসমাঈল খানসহ হাজীগঞ্জ উপজেলা এবং পৌরসভার জামায়াত ও শিবিরের নেতৃবৃন্দ।
ডা. আব্দুল্লাহ তাহের বলেন, বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, পরিবর্তন করেই ছাড়বে। ৫ আগস্ট শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন হয়নি, মানুষের বিবেক খুলে গিয়েছে। মানুষ আর ক্ষমতার পালাবদল চায়না। দেশজুড়ে সংস্কার চায়, নির্বাচনের সংস্কার চায়। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের মাধ্যমে লুটপাট এর দিন শেষ হয়েছে, নির্যাতনের দিন শেষ হয়েছে, গুণ্ডামির দিন শেষ গেছে, টেন্ডারবাজির দিন শেষ হয়েছে। ৫টি হোন্ডা, ১০ গুণ্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা এটা আর বাংলাদেশে হতে দেয়া হবে না।
ডা. তাহের আরো বলেন, জামায়াতের এক দফা সকল অন্যায়, হানাহানি, দুর্নীতি, নেগেটিভিটি দূর করে নতুন সূর্যোদয়। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই না, যেখানে ব্যাংক মালিকেরা ব্যাংক ডাকাতি করে, ডিসি এসপিরা জনগণের রক্তচোষণ করে কোটিপতি হয়। ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে উদযাপন করা হয়। এখন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কোনো অসৎ লোককে ভোট দেবো না, সে যে দলেরই হোক। জাতির জন্য, দেশের জন্য, ধর্মের জন্য যে লড়াই সেটিই মানুষকে শ্রেষ্ঠ করে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, জননিরাপত্তা আরো জোরদার করতে হবে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা সকল দেশের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই। কিন্তু কারো দাসত্ব চাই না। ভারতের সাথেও সুসম্পর্ক চাই। এদেশ থেকে দুর্নীতির কবর রচনা করে তার ওপর পাকা প্রলেপ দিয়ে দিতে হবে।
মোহাম্মদ মোবারক হোসাইন বলেন, বাংলাদেশের জনগণ জামায়াতে ইসলামীকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার জন্য অধির আগ্রহে আছেন। দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে জামায়াতে ইসলামী জনগণের সকল অধিকার নিশ্চিত করবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ববৃন্দকে হত্যা করেছে। ফ্যাসিবাদের বিচার বাংলার মাটিতে হবে, ইনশাআল্লাহ। ছাত্র-জনতার ত্যাগ ও কুরবানি জামায়াত বুকে ধারণ করে। সকাল থেকেই হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন এবং নির্বাচনী প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে মিছিল সহকারে সমাবেশে প্রবেশ করে। নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। পুরো হাজীগঞ্জ শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সমাবেশের আমেজ। তিনি সকালে শাহরাস্তির ঐতিহ্যবাহী কালিবাড়ী মাঠে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। শাহরাস্তি উপজেলা আমীর মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মো. মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য কুমিল্লা মহানগর আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, চাঁদপুর জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা বিল্লাল হোসাইন মিয়াজী, সাবেক আমীর মাওলানা আবদুর রহীম পাটওয়ারী, নায়েবে আমীর এডভোকেট মো. মাসুদুল ইসলাম, জেলা সেক্রেটারি এডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া, জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আবুল হোসাইন। বক্তব্য রাখেন জেলা সহকারী সেক্রেটারি মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, হারুনুর রশীদ ওসমানী, মুহাদ্দিস আবু নসর আশরাফী, ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি ইব্রাহিম খলিল, শাহরাস্তি উপজেলা নায়েবে আমীর বাদশা ফয়সাল, উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা মাইনুদ্দিন, শাহরাস্তি পৌরসভার সেক্রেটারি আলমগীর হোসেনসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন জামায়াতের নেতৃবৃন্দ। পরিচালনা করেন পৌর আমীর মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বেলা ১টা পর্যন্ত সম্মেলন চলে। উপজেলার সকল ইউনিয়ন থেকে হাজার হাজার নেতা ও কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, চারটি ইস্যুতে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে- দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, টেকসই গণতন্ত্র, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ এবং একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। তিনি বলেন, আসুন সকলে মিলে দেশকে গড়ি। আমরা সংস্কার চাই। দলগুলোর ভেতেরের সংস্কারের প্রয়োজন থাকলে তাও করা দরকার।