সংক্ষিপ্ত বিশ্ব সংবাদ


১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৪৩

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ভারতসহ ৩ দেশ বিপদে
নতুন করে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় বিপদে পড়েছে চীন ও ভারত। এতে করে এ দুই দেশকে জ্বালানি তেল আমদানিতে খুঁজতে হবে বিকল্প বাজার। অন্যদিকে তেল বিক্রির বড় বাজার হারালে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে রাশিয়ার জন্য। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ক্ষমতা ছাড়ার আগ মুহূর্তে এটি বাইডেন প্রশাসনের রাশিয়ার অর্থনীতিতে সর্বশেষ আঘাত বলে অভিমত ব্যবসা বিশ্লেষকদের। রাশিয়ার তেল উৎপাদনকারী প্রধান দুটি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম এবং সারগেটনেফটগ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বড় ক্ষতি হয়েছে ১৮৩ তেলবহনকারী ভেসেল জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায়।
যেসব জাহাজের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, এর বড় একটি অংশ চীন-ভারতে জ্বালানি তেল পরিবহন করে। ২০২২ সালে জি-৭ দেশগুলো তেলের দাম বেঁধে দিলে রাশিয়া বাজার ধরতে বেছে নেয় এশিয়াকে। এদিকে সস্তায় তেল কিনতে পারায় রাশিয়া হয়ে উঠেছে চীন-ভারতের মুনাফার বড় বাজার। নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত জাহাজগুলো ২০২৪ সালে মোট ৫৩০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রফতানি করেছে, যা দেশটির অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানির ৪২ শতাংশ। রফতানি হওয়া এ তেলের ৩০০ মিলিয়ন ব্যারেলই গেছে চীনে এবং বাকিটা ভারতের বাজারে। বাণিজ্যভিত্তিক পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান কেপলারের বিশ্লেষণ বলছে, রুশ জ্বালানি তেলের বাণিজ্যে এটা বড় রকমের ধাক্কা। সমুদ্রে রাশিয়ার তেল বহনকারী জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় বিকল্প খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত ভুগতে হবে দেশটিকে।
গেল বছর প্রথম ১১ মাসে ভারত ৩৬ শতাংশ জ্বালানি তেল আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় সাড়ে ৪ শতাংশ বেশি। একই সময়ে চীনের ২০ শতাংশ জ্বালানি তেলের জোগানদাতা ছিল রাশিয়া, যা আগের বছরের থেকে ২ শতাংশ বেশি। হঠাৎ করে রাশিয়ার ওপর এমন নিষেধাজ্ঞায় ভারত-চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার দিকে ঝুঁকতে হবে। রাশিয়া ও ইরানের তেল সরবরাহ কমে আসায় মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম এমনিতেই ঊর্ধ্বমুখী। এতদিন ভারত-চীন রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনতে পারলেও এবার বেশি দামে বিকল্প বাজারমুখী হওয়া ছাড়া দেশ দু’টির সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। ইউএনবি।

মণিপুরে আসাম রাইফেলস ক্যাম্পে উত্তেজিত জনতার হামলা
স্থানীয় কয়েকজনকে হেনস্থার অভিযোগে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন আসাম রাইফেলস ক্যাম্পে আগুন দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। গত শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজ্যের কামজং জেলার হংবেং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, শনিবার হংবেং এলাকার নাগা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় বাড়ি তৈরির জন্য কাঠ কেটে নিয়ে যাচ্ছিলেন কয়েকজন। এ সময় কাঠবোঝাই গাড়িটি আটকে দেন আসাম রাইফেলসের সদস্যরা। এরপরই শুরু হয় অসন্তোষ। অশান্তির আশঙ্কায় মণিপুরের কাংপোকপি জেলার গেলজাং মহকুমার একাংশে শনিবার থেকে কার্ফু জারি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না-আসা পর্যন্ত কার্ফু বলবৎ থাকবে। তবে কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত, তা অবশ্য খোলসা করা হয়নি। কেবল বলা হয়েছে, জীবন এবং সম্পত্তির নিরাপত্তার জন্যই এ সিদ্ধান্ত।
চলতি বছরের একদম গোড়ায় কাংকোপকি জেলায় পুলিশের এক ডেপুটি কমিশনারের দফতরে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে কুকি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। প্রসঙ্গত, কাংপোকপির পাহাড়ি এলাকা থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে সরানোর দাবি জানিয়ে আসছে কুকি জনজাতির মানুষরা। অন্যদিকে মণিপুরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে শনিবার বৈঠকে বসেন ওই রাজ্যের রাজ্যপাল অজয়কুমার ভাল্লা এবং সিআরপিএফ আধিকারিকেরা। আনন্দবাজার পত্রিকা।

গাজায় বেঁচে থাকা ‘ক্রমশ অসম্ভব’ হয়ে উঠছে : অ্যামনেস্টি
গাজায় বেঁচে থাকা ‘ক্রমশ অসম্ভব’ হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যামনেস্টি ডেনমার্কের প্রধান ভাইব ক্লারুপ। গত শনিবার (১১ জানুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইব ক্লারুপ অ্যামনেস্টির অনুসন্ধানের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। ডিসেম্বরে বিশ্বব্যাপী এ সংস্থাটি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যার উপসংহারে এ কথা বলা হয়েছে। উপসংহারে ক্লারুপ বলেন, ‘ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে। যখন আমরা বলি ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে, তখন এটি কোনো মতামত নয়, এটি একটি আইন। পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে একটি উপসংহার।’ তিনি আরও বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় বেঁচে থাকা ক্রমশ অসম্ভব হয়ে উঠছে…। জনগণ হিসেবে আমাদের ভূমিকা হলো এ গণহত্যা বন্ধ করা।’
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। দেশটির অব্যাহত এ হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এজন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে। জাতিসংঘের হিসাব মতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসাথে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিশরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে।
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : আবদুল কাইউম খান