কমছে না চালের দাম


১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:২৯

ডিম পেঁয়াজ আলু কমতির দিকে
রমজানে বাজার স্থিতিশীল থাকার আশা
স্টাফ রিপোর্টার : দেশের খুচরা বাজারগুলোতে সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। সব ধরনের শাকের মূল্যও কমেছে। আলু ও পেঁয়াজের দাম কমছে। ডিমের মূল্য গত সপ্তাহের চেয়ে আরও কমেছে। গত ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার এক ডজন ডিমের মূল্য ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। এক সপ্তাহ আগে এক ডজন ডিমের দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। গরু গোশত ও মুরগির মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে, মূল্যবৃদ্ধির পর আর কমছে না। তবে চালের মূল্য শুধু বাড়ছেই। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। একদিকে আমনের মৌসুম; অন্যদিকে সরকার শুল্ক-কর ছাড় দিয়েছে, কিন্তু চালের মূল্য কমছে না।
থামছে না চালের দামের ঊর্ধ্বগতি
নিয়ন্ত্রণে আসছে না দেশের চালের বাজার। একদিকে রমজান সামনে রেখে আমদানিতে শুল্ক-কর ছাড় দিয়েছে সরকার; অন্যদিকে অতি সম্প্রতি কৃষকের ঘরে আমন ধান উঠেছে। তবুও বাড়ছে চালের দাম। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) তথ্য বলছে, ৫ জানুয়ারি প্রতি কেজি মোটা চালের দর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৪৮-৫০ টাকা। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ৫ জানুয়ারি প্রতি টন চালের দাম ছিল ৫২৫ ডলার। এক বছর আগে ছিল ৬৫২ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে চালের দাম ২৪ দশমিক ১৯ শতাংশ কমলেও দেশের বাজারে বেড়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। শুল্ক-কর ছাড় দেয়ার পরও দেশের বাজারে চালের দাম কমেনি। গত ২০ অক্টোবর চাল আমদানিতে মোট শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ থেকে কমিয়ে ২২ শতাংশ করা হয়। ৩১ অক্টোবর বাকি শুল্কও প্রত্যাহার করা হয়। বর্তমানে শুধু ৩ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বহাল রয়েছে।
কমেছে দেশি পেঁয়াজের মূল্য
রাজধানীসহ সারা দেশের খুচরা বাজারে পেঁয়াজের মূল্য কমেছে। বাজারের প্রতিটি দোকানে ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। আর কিছু কিছু দোকানে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজেরও দেখা মিলেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বেশ কিছুদিন হলো বাজারে দেশি পেঁয়াজ এসেছে। তাই দাম এখন অনেকটা কম। মাসখানেক আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার ওপরে ছিল। এখন প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কমেনি গোশতের দাম
মূল্যবৃদ্ধির পর আর কমেনি গরু গোশত ও মুরগির দাম। এখনো বাজারে সেই আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে মুরগি, গরু-খাসিসহ অন্যান্য গোশত। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে মাছের দাম। এক সপ্তাহ আগেও ২০০ টাকার নিচে কোনো মাছ ছিল না। কিন্তু এখন বাজারে পাঙাশ-তেলাপিয়াসহ বেশ কিছু মাছের দাম মধ্য-নিম্নবিত্ত ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে। তবে ক্রেতাদের দাবি, এ সময়ে মাছের দাম কম থাকার কথা থাকলেও বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে হুটহাট দাম বাড়িয়ে দেয়। গত ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার বাজারের খবর নিয়ে জানা গেছে, বাজারে পাঙাশ ও তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহেও সর্বনিম্ন দাম ছিল ২০০ টাকার বেশি। এছাড়া শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহেও ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়, কিছুটা ছোট হলেই আবার দাম নেমে যাচ্ছে ৩০০ টাকার নিচেও। এছাড়া পাবদা ৩৫০, কার্প ২২০-২৪০, সরপুঁটি ২০০, চিংড়ি ৮০০, মলা মাছ ৩৫০ টাকা এবং শোল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। এখন বাজারে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি খাসির গোশত ১০৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত। দেশি মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায় এবং প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়।
সম্প্রতি বাজার বিশ্লেষণ করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। ওই প্রতিবেদন বলছে, ‘আসন্ন রমজানে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল থাকবে।’ এতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারদরের নিম্নমুখী প্রবণতার পাশাপাশি পণ্যের বাজারে মূল্য সহনীয় রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারের নানামুখী উদ্যোগে বাজার পরিস্থিতি ইতিবাচক হচ্ছে। রমজানেও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের স্থানীয় বাজার স্থিতিশীল থাকবে। রমজান সামনে রেখে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত ওই প্রতিবেদনে দেশের পণ্য আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা হয়, গত বছরের তুলনায় স্থানীয় বাজারে কম দামে পণ্য ক্রয় করতে পারবে সাধারণ মানুষ।