জানুয়ারির মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে : ঢাবি ছাত্রশিবির


১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:০৪

সোনার বাংলা ডেস্ক: ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেছেন, জানুয়ারির মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন চায়। আমরাও চাই। তবে ডাকসু আয়োজন করতে প্রশাসন যদি অতিরিক্ত সময় চায়, যৌক্তিক কারণ দেখাতে হবে। নির্বাচন ঘিরে অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডাকসু একটি প্রতিযোগিতামূলক জায়গা। আমরা এটিকে দ্বন্দ্ব হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই না। বরং প্রতিযোগিতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই। তাছাড়া নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন হলে কোনো সংগঠন আগ বাড়িয়ে সংঘাতে জড়াবে না। কারণ কেউ যদি আগ বাড়িয়ে সংঘাতে জড়ায়, শিক্ষার্থীরা তাকে আর ভোট দেবেন না। আমরা যে সংস্কার প্রস্তাব করছি, অন্য সংগঠনগুলোও করবে। এর মধ্যে সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে যৌক্তিক সংস্কারগুলো নিশ্চিত করতে হবে।
গত ১৩ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে ঢাবির মধুর ক্যান্টিনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের প্রস্তাবনা গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরার সময় তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাবি শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আশিক, সাবেক প্রচার সম্পাদক হোসেন মোহাম্মদ জুবায়ের, সাবেক সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুর প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন ঢাবি শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দীন বলেন, শিবিরের সংস্কার প্রস্তাবনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ লক্ষ্য ও উদ্দেশে ধারা ২(ক) সংস্কার করতে হবে। ডাকসুর ‘লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য’ ধারায় ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ, রাজনৈতিক বিশ্বাস ও মতাদর্শ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষা ও অধিকার আদায়ের মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করা। শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে নীতিমালা প্রণয়নে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
প্রস্তাবনায় তিনি আরো বলেন, “শিবির ডাকসুকে যুগোপযোগী ও শিক্ষার্থীবান্ধব করার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট কিছু সম্পাদকীয় পদের পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংযোজন করা প্রয়োজন বলে মনে করছে। বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক’ এর পরিবর্তে ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক’ পদ রাখতে হবে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্পিরিটকে ধারণ করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মৌলিক মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন এ সম্পাদক।” মহিউদ্দিন খান বলেন, “গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ‘কমনরুম ও ক্যাফেটিরাবিষয়ক সম্পাদক’ পদের পরিবর্তে ‘পাঠাগার, পাঠ কক্ষ ও কমনরুমবিষয়ক সম্পাদক’ ও ‘ক্যাফেটেরিয়া ও ক্যান্টিনবিষয়ক সম্পাদক’ পদ সৃষ্টি করতে হবে।
ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার নিয়ে ছাত্রশিবিরের ৯ প্রস্তাবনা- ১. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে ধারা ২-ক (স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ধারণ ও লালন করা) সংস্কার করে ‘স্বাধিকার আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সব শিক্ষার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ধারণ ও লালন করা’ হিসেবে স্থাপন করতে হবে। ২. ডাকসুর ‘লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে’, ‘ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ, রাজনৈতিক বিশ্বাস ও মতাদর্শ নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ স্বার্থরক্ষা ও অধিকার আদায়ের মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করা এবং শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব নীতিমালা প্রণয়নে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা’ সংযুক্ত করতে হবে। ৩. ডাকসুর কার্যাবলিতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষা ও গণতন্ত্র চর্চা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের উল্লেখ থাকতে হবে। ৪. সংসদের অনির্বাচিত সভাপতির স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা সীমিত করতে হবে ও কার্যনির্বাহী পরিষদকে শক্তিশালী করতে হবে। ৫. ডাকসুকে যুগোপযোগী ও শিক্ষার্থীবান্ধব করার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট কিছু সম্পাদকীয় পদের পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংযোজন করতে হবে। এ প্রস্তাবে ঢাবি শিবির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক পদের নাম পরিবর্তন করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়াবিষয়ক সম্পাদক পদকে আলাদা করে ‘পাঠাগার, পাঠকক্ষ ও কমনরুম বিষয়ক সম্পাদক’ এবং ‘ক্যাফেটেরিয়া ও ক্যান্টিনবিষয়ক সম্পাদক’ নামে দুটি পৃথক পদে ভাগ করা, সাহিত্য সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদ দুটিকে একত্র করে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদ তৈরি এবং ‘নারী ও সমতাবিষয়ক’ এবং ‘ধর্ম ও সম্প্রীতিবিষয়ক সম্পাদক’ দুটি নতুন পদ প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়। ৬. বিদ্যমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে। ৭. যেকোনো সময়ে ডাকসুর গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের যে ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটকে দেয়া হয়েছে, সেটির পরিবর্তন করতে হবে এবং ডাকসু গঠনতন্ত্র সংশোধনের এখতিয়ার ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রদান করতে হবে। ৮. নির্বাহী কমিটির সভায় যেকোনো অ্যাজেন্ডা আলোচনা করার জন্য সভাপতির অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করতে হবে। ৯. গঠনতন্ত্রের অনুল্লিখিত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সভাপতির একক সিদ্ধান্তের পরিবর্তে সংসদের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য করতে হবে।