মন্ত্রিত্ব হারালেন টিউলিপ সিদ্দিক

দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হাসিনা পরিবার


১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৬

* প্রমাণ পেয়েছে দুদক, দায়ের হয়েছে একাধিক মামলা

স্টাফ রিপোর্টার : শেখ হাসিনার রাজনৈতিক এক মিত্রের কাছ থেকে ফ্ল্যাট উপহার নিয়েছেন শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক। এ উপহার নেওয়ার কথা তিনি গোপন রেখেছিলেন। আবার যার কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি নিয়েছেন, তিনি টিউলিপের ঘনিষ্ঠজন। এ বিষয়ে তিনি ব্রিটেনে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখিও হয়েছিলেন। দেশটির বিরোধীদলের পক্ষ থেকে টিউলিপকে বরখাস্তের আবেদনও জানানো মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। এ ঘটনায় বেশ চাপের মুখে পড়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ও ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি। এদিকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ক্ষুমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতির হাজারো অভিযোগের মধ্যে মাত্র একটি মামলা হয়েছে হাসিনা ও তার পরিবারের অন্যদের বিরুদ্ধে। অন্য অভিযোগগুলোও তদন্ত করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর।
বিনামূল্যে পাওয়া ফ্ল্যাট, রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা ছড়ানো থিঙ্কট্যাঙ্কের সাথে যুক্ত, বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চাপ বাড়ছে ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের ওপরে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ দুজন ব্যক্তির কাছ থেকে উপহার হিসেবে ফ্ল্যাট নেয়ার কারণে ব্রিটেনের বিরোধীদলসহ অনেক ব্রিটিশ এমপি টিউলিপের পদত্যাগ দাবি করছেন। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সাথে একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করার সময় প্রকল্পের মোট ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল। মূলত টিউলিপ সিদ্দিকের খালা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন যে ব্যাপক তদন্ত শুরু করেছে তারই আওতায় পড়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। এছাড়া এত অভিযোগের মাঝে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন করায় এক সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে। ওই সময় সেই সাংবাদিক অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে মন্তব্য করতে ছাড়েননি তিনি।
এদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। আর সহযোগী আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনা ও টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিককে। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকায় মামলাগুলো করা হয়। এর আগেও একই অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে দুদক। দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, পূর্বাচল নতুন শহরে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করেছেন। এ বিষয়ে দুদকের কাছে যথেষ্ট প্রমাণাদী আছে।
জানা যায়, শেখ রেহানার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। এ মামলায় শেখ হাসিনা, রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাসহ ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। রিজওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক এসএম রাশেদুল হাসান। মামলাটিতে ববির ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর আজমিনাকে প্রধান আসামি করে দায়ের করা মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। তিনটি মামলার আসামি তালিকায় অন্য যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সচিব পূরবী গোলদার, সাবেক অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, মেজর (ইঞ্জি.) শাসসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, মো. নূরুল ইসলাম, সাবেক উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান ও পরিচালক শাহিনুল ইসলাম। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/ ৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজউকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেন। এ বরাদ্দের তালিকায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের নাম রয়েছে। বরাদ্দকৃত প্লটগুলো পূর্বাচল নতুন শহরের সেক্টর ২৭-এর কূটনৈতিক জোনে সড়ক নং ২০৩-এ অবস্থিত। জনপ্রতি ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠা জমি বরাদ্দ দেয়া হয়।