উত্তম জীবন সাথী
১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০০
॥ আসমা খাতুন ॥
বিস্ময় এবং অনুভূতি- এ দুই একত্রিত হয়ে হৃদয়ের মধ্যে যে শীতল ঝড় তোলে, সেই ঝড়ের তরঙ্গই অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ে চোখের কোণের কোল বেয়ে। মানুষের শত আবেগ আর অনুভূতির নাম বিয়ে।
কিন্তু!
কপালটা আপনা-আপনি কুঁচকে যায় ইকবালের।
কিন্তু কি?
না মানে! আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে কিনা।
ইকবাল মুচকি হেসে উঠল। তারপর নড়েচড়ে বসল সে।
জানতে চান?
জ্বি।
তবে শুনুন।
হাদীস নং : ৪৭১৭
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর নবী (স.) বলেছেন, একজন নারীকে বিয়ে করার সময় চারটি বিষয় লক্ষ করা হয়।
সেই নারীর ধন-সম্পদ
তার বংশমর্যাদা
তার সৌন্দর্য
তার দীন।
সুতরাং তোমার দীনদার নারীই বিয়ে করা উচিত (অন্যথায়) তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
যেসব বিষয় স্ত্রীর চেয়ে স্বামীর বেশি হওয়া উচিত-
বয়স।
জ্ঞান।
অর্থ।
যেসব বিষয় স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর বেশি থাকা উচিত-
ধৈর্য।
ভালোবাসা।
পরিচ্ছন্নতা।
সাংসারিক কর্ম আগ্রহী।
পরিকল্পনার জ্ঞান।
স্তব্ধ জীবনযাপনের অভ্যাস।
সময়ানুবর্তিতা।
আত্মত্যাগ।
যেসব বিষয় উভয়ের সমান হওয়া উচিত-
একে অপরকেক বুঝতে পারা।
একে অপরের প্রতি সহনশীলতা।
একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
একে অপরের প্রতি সমান বিশ্বাসী।
আসলে উত্তম জীবন সাথী শুধু পছন্দ করে বসে থাকলেই চলবে না। চাইতে হবে মনে মনে আল্লাহর কাছে। রূপ-সৌন্দর্যে বিমোহিত না হয়ে, পছন্দ করতে হবে কিছু বৈশিষ্ট্যকে।
মনে রাখবেন, সৌন্দর্য নয় গুণ মানুষকে সুখি করে।
জীবন সাথী শুধু খাদ্য পানীয়ের আর পথচলার পাটনারশিপ নয়। জীবনসঙ্গী এমন একটি রিলেশনশিপ যার সাথে অনুভূতি, আবেগ, সুখ-দুঃখ, ভালোবাসা ভাগ করে নেওয়া যায়। যার প্রতি পাহাড় সমান আস্থা আর বিশ্বাস অনায়াসে জন্ম নেয়।
এই মেয়ে!
এভাবে নিজেকে ঢেকে-ঢুকে। কেউ পাত্রী দেখাতে আসে? আমরা নই। যেন তুমি আমাদের দেখতে এসেছ। কি আজবরে বাবা।
সুলতানা হকচকিয়ে ওঠে।
পিচ্ছি একটি মেয়ে। কেমন শাসিয়ে কথা বলছে। আমি পাত্রের ছোট বোন। এইটে পড়ি। বয়সে ছোট। আমার বেশ পাওয়ার। ফ্যামিলির মানুষজন আমার কথাই ওঠে আর বসে।
সুলতানা মনে মনে বলে, ফোঁটা ফোঁটা করে দরিয়া হয়। দানা দানা একত্রিত হয়ে স্তূপ হয়। আর তুমি অল্প অল্প করে বেশ বেয়াদব হয়েছ।
স্বপ্না, প্লিজ থাম।
ওকে, বাবা।
মুরুব্বিদের সওয়াল জবাব শেষ। এবার তারা পাত্রীর মুখ দেখতে চাইলেন।
আমি শুধু পাত্রকে মুখ দেখাব।
ধর্মীয় অনুশাসনে বেড়ে ওঠা সাথী চেয়েছিলাম। এতটা ধার্মিক ভাবিনি।
স্বপ্না চেঁচিয়ে বলল, পাত্রের সঙ্গে আমিও থাকব।
তুমি?
কেন ভাইয়া আমি থাকলে কোনো সমস্যা?
সুলতানা ইঙ্গিতে থাকার অনুমতি দেয়।
শোন! আমি কিন্তু আপনি-টাপনি করে বলতে পারব না। আর হ্যাঁ। প্রথম বেবির নাম আমি রাখব।
সুলতানা ভাবে, মেয়েটা শুধু ব্যাবেল নয়। অ্যাডভান্সও বটে।
আর হ্যাঁ… কি যেন বলতে গিয়ে থেমে যায় স্বপ্না।
সুলতানা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে মুখের দিকে। যেন ওর কথা মন দিয়ে শোনা সুলতানার গুরু দায়িত্ব।
স্বপ্না বিড় বিড় করে বলতে আরম্ভ করল, পর্দা করো ঠিক আছে! নামাজ পড়। তাও ঠিক আছে। কিন্তু…।
সুলতানা আগ্রহ সহকারে জানতে চাইল, কিন্তু কি?
আমাকে এসবে জুলুম করতে পারবে না।
সুলতানা শান্ত স্বরে বলল, ইসলাম অর্থ শান্তি। ভালোবাসার আরেক নাম ইসলাম। কারো ওপর জুলুম করে না। জুলুম করতে কাউকে এনকারেজও করে না।
কী আশ্চর্য!
ইকবাল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
সরি ভাইয়া।
সুলতানা দৃষ্টি সংযত করে।
কি নাম আপনার?
ভাইয়া তুমি দেখি ভীষণ বোকা। ওনার বায়োডাটায় তো সব আছে। নাম-ধাম পড়াশোনা। কমবেশি সবাই জানি। এসব আবার জিজ্ঞেস করা লাগে। শুধু সময় নষ্ট।
কড়া নজরে বোনের দিকে তাকায় ইকবাল।
স্বপ্না ভয়ে ঢোক গিলতে থাকে।
তোমরা আলাপ কর। আমি আসছি।
স্বপ্নার চলে যাওয়ার পথের দিকে কিছুক্ষণ দুজন তাকিয়ে থাকে।
নীরবতা ভেঙে ইকবাল বলে, আপনার এ জীবনবিধান আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।
আমার বলছেন কেন?
তবে কার?
এক মহান সৃষ্টিকর্তার বিধান। যিনি ইহকাল-পরকাল ও বিচার দিবসের মালিক। দৃশ্য-অদৃশ্য সবকিছুই যার নিয়ন্ত্রণে। মহান রাব্বুল আলামিন যিনি সবকিছুর মহাপরিচালক। তাঁর বিধান প্রত্যেক নর-নারীর ওপর ফরজ করা হয়েছে।
ইকবালের খুশি চোখ-মুখ ছাপিয়ে ওঠে। মনে মনে এরকম সঙ্গী চেয়েছিলাম। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানায় সে।
আমার বখাটে বোনটাকে ভালোবেসে ধর্মীয় আলোয় আলোকিত করে সাজিয়ে তুলতে পারবেন তো!
আর আপনাকে?
ভ্যাবলা টাইপের ছেলে আমি। খুব অগোছাল। বেশি বেহিসেবি। আড্ডাবাজ। দেখতেও খুব হাবাগোবা। নাকটাও চ্যাপ্টা, মোটা। মায়ের মুখে শুনেছি, জন্মের কয়েক বছর আমি রাজপুত্রের মতো সুন্দর ছিলাম। দুষ্টুদের সেরা ছিলাম। ধুলোবালি আর রৌদ্রের সংস্পর্শে ফর্সা গায়ের রঙটা কেমন তামাবর্ণ হয়ে গেছে। জগতের কঠিন বিষয় আমি কোনো কিছুই বুঝি না। যদি বুঝিয়ে না বলা হয়।
আমাকে আপনি মানিয়ে নিতে পারবেন তো!
সুলতানা মুচকি হেসে বলে, মানিয়ে নেয়ার কোনো প্রয়োজন আছে কি?
ঠিক বলেছেন! এতগুলো যার বদঅভ্যাস, তাকে জীবনসাথী হিসেবে কে চায়?
যে বুদ্ধিমতি, সেই।
মানে!
নিজেকে বুদ্ধিমতি ভাবি না। তবে এতটুকু বোঝার সামর্থ্য রয়েছে। যে নিজেকে অন্যের জিম্মায় সঁপে দেয় সুন্দর জীবনের প্রত্যাশায়। সে তো কাদামাটির একটা দলামাত্র। তাকে যে কেউ নিজের মতো গড়ে নিতে পারে।
অন্যের ভালো কিছুর সাথে নিজের তুলনা না করা। আপনার যা আছে- অন্যের কাছে তা স্বপ্নের মতো। তাই নিজের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করুন।
সুলতানা ইশারায় তাকে চা খেতে বলে নিজেও চায়ের কাপে চুমুক দেয়।
সুলতানা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল, নিশ্চয়ই ভাবছেন, আমার শাশুড়ির কথা। তিনি কত ভালো। বউমা গল্প করছেন আর তাকে চা এনে দিলেন।
না, মানে।
আপনার চিন্তা সঠিক। সত্যিই আমার শাশুড়ি ভালো।
এই যে আপনি চলে যাবেন।
হুম।
আমি সন্ধ্যার সব কাজ সেরে নিজেকে সুন্দর করে সাজাব। যেন সদ্য বিবাহিত নারী। আমার শাশুড়ির সাথে একটু টিভি দেখব। শুধু টিভি দেখার উদ্দেশ তার কাছে বসা নয়। আমরা দুজন মিলে সুখ-দুঃখের গল্প করব।