জামায়াতে ইসলামী বৈষম্যহীন মানবিক সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চায়-ডা. শফিকুর রহমান
১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০০
জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা বিভেদের বাংলাদেশ চাই না। মানবিক ও সাম্যের বাংলাদেশ চাই। সেই বাংলাদেশ গড়তে দেশবাসীর ভালোবাসা চাই, সহযোগিতা চাই। তাদের পাশে চাই। আমরা কথা দিচ্ছি- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে যুবকদের দেশ গড়ার কারিগর বানাবো। নারীদের যথাযোগ্য সম্মান দেব। এদেশে আর কোনো ষড়যন্ত্র হতে দেব না। জীবন দেব, তবুও কারো লালচক্ষু দেখাতে দেব না।
গত ৩ জানুয়ারি শুক্রবার নাটোরের নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা আমীর ড. মীর নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক সাদেকুর রহমান সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন।
কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন ও মো. মোবারক হোসেন। সম্মেলনে অতিথি বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, রাজশাহী মহানগরী আমীর ড. কেরামত আলী, রাজশাহী জেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল খালেক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমীর আবুজার গিফারী, নওগাঁ জেলা আমীর মাওলানা আব্দুর রাকীব, পাবনা জেলা আমীর আবু তালেব মণ্ডল প্রমুখ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ আমাদের সকলের প্রিয় জন্মভূমি। সব মানুষ তার জন্মভূমিকে তার প্রাণের চেয়েও ভালোবাসে। কারণ সংশ্লিষ্ট দেশে তাকে আল্লাহ তায়ালা পয়দা করেছেন। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, [বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.] মক্কাতেই তার জন্ম হয়েছিল। জীবনে দুবার তিনি কেঁদেছেন। একবার রাসূলকে হত্যা করার চূড়ান্ত ফয়সালা হওয়ার পর আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে মক্কা মোকাররামা থেকে মদিনা মুনাওয়ারায় যেদিন হিজরত করছিলেন। আরেকবার বিজয়ের বেশে মক্কায় ফিরে আসার সময়।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে বার বার ষড়যন্ত্র হয়েছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ইসলাম এবং ইসলামী নেতাদের বিরুদ্ধে দেশের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করেছে। বিডিআর কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ফাঁসি দিয়েছে। শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামির নেতাকর্মী ও আলেমদের নির্বিচারে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনগণ আন্দোলন করেছে। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন করে। ছাত্রদের মিছিলে গুলি করে হত্যা করে হাজার হাজার ছাত্র মেরেছে। কিন্তু হত্যা করেও এবার পতন ঠেকাতে পারেনি। ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারত গেছে। শেখ হাসিনা আবারও দেশে আসার ষড়যন্ত্র করছে। টুস করে ঢুকে পড়বে। হবে না। বলে দিতে চাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরবে না। হাসিনা ফিরবে না। কিন্তু তাকে আনা হবে বিচারের জন্য। যে ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, সেই ট্রাইব্যুনালে হাসিনার বিচার হবে। উঁকি মারার চেষ্টা করছে। আপনারা উঁকি মারবেন তো বিপদে পড়বেন। আর ফ্যাসিবাদ আসতে দেবে না দেশের মানুষ। তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তালিকা থেকে ভুয়া ভোটারদের বাদ দিতে হবে। নতুন ভোটার করতে হবে। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলায় কারো কারো গায়ে লেগেছে। তারা আবার রাজাকারের কথা বলে। মনে রাখবেন এদেশের মানুষে আর এ স্লোগান খায় না। এ কথা বলে শেখ হাসিনা পালিয়েছে। সুতরাং সাবধান। আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ। সরকার যদি উদ্যোগ নেয়, আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে সরকারকে সাহায্য করবো। এদেশের মানুষও সাহায্য করবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নাটোর জেলার সমন্বয়ক শেখ ওবায়দুল্লাহ মীর বলেন, ১৬ বছর আগে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের একটি কথাই মনে পড়ে, তিনি বলেছিলেন, বাংলার আকাশে আজ অন্ধকারের ঘনঘটা। সুবহে সাদেক হতে অনেক সময় লেগে যাবে। সেখান থেকে বের হতে ১৬ বছর লেগে গেছে। এখন আমাদের স্লোগান দুইটা। নারায়ে তাকবীর আর ইনকিলাব জিন্দাবাদ। শেষে বলব আমাদের পথ ‘ইহদিনাস সিরাত্বল মুস্তাকিম।’ সহজ-সরল পথ। ইসলামিক শাসন আমাদের কামনা। এদেশে যেন ইসলামী শাসনের পতাকা চলে আসে।
অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ১৯৫৬ সালে কুরআনের সংবিধান চালু হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের গভর্নমেন্ট স্পিকার শাহেদ আলীকে হত্যা করেছিল। এ পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার কারণে ১৯৫৮ সালে মার্শাল ল’ জারি করেছিল আইয়ুব খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা জামায়াতে ইসলামী করেনি। দেশের স্বাধীনতা এবং স্বার্থের জন্য কাজ করেছে সেদিন। আমাদের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে ইসলামের জন্য। তিনি বলেন, এ জমিন আল্লাহর। জামায়াতে ইসলামী এখানে ইনসাফভিত্তিক দেশ গঠন করতে চায়। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, কেউ কিছু করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ। মোবারক হোসেন বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডবের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি করেছিল। তার সমাপ্তি ঘটেছে পলায়নের মাধ্যমে। শেখ হাসিনাও পালিয়ে গেছেন। পৃথিবীতে আর কোনো স্বৈরাশাসক এভাবে পালায়নি। আবার মাঝে মাঝে তিনি উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছেন। বলা হচ্ছে তিনি বাংলাদেশে চট করে ঢুকে যাবেন। ওনাকে চট করে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ওনাকে এনে খুনের বিচার করা হবে। তিনি ইসলামী আন্দোলনের রাহবারদের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়েছিলেন, জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে আমাদের রাহবারদের হত্যা করেছেন। ওনাকেও দেশে এনে বিচারের মাধ্যমে সেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। ইনসাফভিত্তিক সমাজ কায়েম জামায়াতে ইসলামীর পক্ষেই সম্ভব। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।