ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বিশাল কর্মী সম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার

অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে জাতির ভাগ্যে মহাদুর্যোগ নেমে আসবে


১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০০

গত ৪ জানুয়ারি শনিবার দুপুরে মুক্তাগাছা আর. কে সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার

দেশের কোথাও মাস্তানি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না- মতিউর রহমান আকন্দ
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জামায়াত-শিবির নিয়ে জনগণের আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে- নূরুল ইসলাম বুলবুল
অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে জাতির ভাগ্যে মহাদুর্যোগ নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু লোক পাগল হয়ে গেছে। আমরা যেখানে সাড়ে ১৫ বছর ধৈর্য ধরেছি, সেখানে কী আরেকটু ধৈর্য ধরা যায় না? জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে। আমরা জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনের জন্য এগিয়ে যাচ্ছি। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ঠেকানোর ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে সকলকে স্বোচ্চার থাকতে হবে।’ গত ৪ জানুয়ারি শনিবার দুপুরে মুক্তাগাছা আর. কে সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপজেলা আমীর অধ্যক্ষ সামছুল হকের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরিচালক ড. সামিউল হক ফারুকী, ময়মনসিংহ জেলা আমীর আবদুল করিম, নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ কামরুল হাসান মিলন, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, সদ্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মোজাম্মেল হক আকন্দ, মানারাত ইন্টারন্যাশনালের শিক্ষক অধ্যাপক মো. আবদুল গফুর, শিবিরের সাবেক বিতর্ক সম্পাদক মো. গোলাম কিবরিয়া, ময়মনসিংহ জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমান ফরাজী, জেলা শূরা সদস্য মাওলানা বদরুল আলম, ময়মনসিংহ মহানগর শিবির সভাপতি মো. শরীফুল ইসলাম খালিদ, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদালয় শাখা শিবির সভাপতি মো. ফখরুল ইসলাম, মুক্তাগাছা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ হাবীবুল হক শরীফ, উপজেলা শূরা সদস্য মাওলানা মোস্তফা রায়হান, ডা আজহারুল ইসলাম শাহীনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও গণমান্যরা বক্তব্য রাখেন। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন উপজেলা সেক্রেটারি আবদুল্লাহ মোহাম্মদ মুজাহিদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনা ও আহতদের দ্রুত সুস্থ কামনা করেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, “হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। এ মুক্তাগাছাও নতুন দেশ গঠনের অংশীদার। এখানেও আমাদের ভাই শহীদ হয়েছেন। অনেকেই আহত হয়ে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা তাদের এ অবদান চিরকৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, গত দেড় দশকে আমরা একটা কালো যুগ পার করেছি। আইয়্যামে জাহিলিয়ার যুগে মানুষ যেভাবে বর্বর শাসনের অধীনে ছিল, আমরাও সেই সময়টি পার করেছি। প্রায় ১৮ বছর ধরে আমরা ভোটাধিকার পাইনি। গণতন্ত্র ছিল না, আইনের শাসন ছিল একবারেই অনুপস্থিত। মানুষের অন্ন, বস্ত্র বাসস্থানের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। মানুষের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। তিনি বলেন, দেশে চলেছিল একদলীয় শাসন। আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ চাকরি পায়নি, ব্যবসা করতে পারেনি। মানুষের জীবনের কারো নিরাপত্তা ছিল না। মতপ্রকাশের অধিকার ছিল একেবারেই রুদ্ধ। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, লুটপাট, একদলীয় শাসনসহ নানা অনাচারের মাধ্যমে তারা দেশের সবকিছুকেই তছনছ করে দিয়েছিল।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আওয়ামী লীগ জামায়াতের রাজনৈতিক অধিকার শেষ করতে চেয়েছিল। আমরা কোথাও ১০ জন বসলেও নাশকতার অভিযোগ এনে আমাদের ধরে নিয়ে যেত। আর ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ তাদের দোসররা রাস্তাঘাট দখল করে সভা সমাবেশ করলেও তাতে কোনো সমস্যা হয়নি। তারা দেশের শীর্ষনেতাসহ আলেম ওলামাদের হাতকড়া পরিয়ে আদালতে নিয়ে যেত। মিথ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর জেলে রেখেছিল। আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে থাকতে পর্যন্ত দেয়নি। সেই কালো যুগে কারো ধর্মীয় স্বাধীনতাও ছিল না। তারা অধিকাংশ ইসলামী দলের নেতাদের কারাগারে আটক করে রেখেছিল। আলেম-ওলামাকে রিমান্ডে এনে শারীরিকভাবে প্রচণ্ড নির্যাতন করেছে। ধর্ষণ, খুন, চুরিসহ মিথ্যা মামলায় শীর্ষ আলেমদের অপমান-অপদস্থ করেছে। তারা আমাদের শীর্ষনেতাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে। অন্যদের তিলে তিলে নির্যাতন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। এখনো কয়েকজন কারাগারে আটক রয়েছেন। আমরা তাদের নিঃশর্ত মুক্তি চাই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের আইন করে মীমাংসিত ইস্যুকে সামনে এনে বিদেশি প্রভুদের কথায় জামায়াত নেতাদের মিথ্যা মামলায় বিচার করেছে। তারা সব যুক্তি, আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করে হত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। তিনি বলেন, আমাদের শীর্ষনেতা মাওলানা আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব অভিযোগ মিথ্যা। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে তাকে মুক্তি দিতে হবে।
মুক্তাগাছার জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই এলাকা শহীদদের এলাকা। এখান থেকে আমরা যাকে প্রার্থী ঘোষণা করবো, আপনারা তাকে বিজয়ী করবেন, ইনশাআল্লাহ। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত করে ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রগঠনে আপনারা ভূমিকা রাখবেন।”
এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, “আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করেছে। তারা দেশের সব কাঠামো ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তাগাছার এ ময়দান শহীদদের ময়দান। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদদের রক্তের ময়দান। এখানে জুলুম, নির্যাতন, দুর্নীতির কোনো সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আমাদের জীবন ব্যবস্থা হবে ইসলাম। এটির বাস্তবায়ন হলে দেশে চুরি, দুর্নীতি, ঘুষ, রাহাজানিসহ কোনো অন্যায় থাকবে না।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করেছিল, এখন নতুন বাংলাদেশের দাবিদার অনেকেই হয়ে উঠেছে। ৫ আগস্ট ও জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে জামায়াত-শিবির কথা বলে না। যারা এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারাই বলছেন, আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের ভূমিকা কী ছিল। তিনি বলেন, হাজারো নির্যাতন সত্ত্বেও জামায়াত-শিবির কারো কাছে মাথানত করেনি। তাই নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জামায়াত-শিবির নিয়ে জনগণের আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।