সংক্ষিপ্ত বিশ্ব সংবাদ
১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০০
কাতারের সমর্থন চায় সিরিয়ার নতুন সরকার
কাতারের সমর্থন চায় সিরিয়ার নতুন সরকার। গত রোববার (৫ জানুয়ারি) দোহায় কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সাথে এক বৈঠকে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ হাসান আশ শায়বানী। বাশার আল-আসাদের পতনের পর সমর্থন আদায়ের জন্য সিরিয়ার ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতিনিধি দল বিভিন্ন দেশে সফর করছে। এরই অংশ হিসেবে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার কাতার সফর করেন। এ সময় তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান বিন জসিম বিন জাবর আল থানির সাথে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আসাদ সরকারের আমলে আমেরিকা সিরিয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞাগুলো চাপিয়েছিল, তা যেন এবার তুল নেয়া হয়। আর কাতার যেন এ বিষয়ে মধ্যস্থতা করে। এছাড়া কাতারের সাথে সিরিয়া ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে চায় বলেও জানিয়েছেন তিনি। পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য কাতারের সাহায্য প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তিনি। আল-জাজিরা।
আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসে যোগ দিল ইন্দোনেশিয়া
বিশ্বের উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য বড় পদক্ষেপ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকস জোটে যোগ দিয়েছে। রাশিয়া, চীন, ব্রাজিল, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তর্ভুক্ত এ জোটকে পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি ভারসাম্য রূপে দেখা হয়। গত সোমবার (৬ জানুয়ারি) ব্রাজিল, যেটি বর্তমানে ব্রিকস-এর সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে, ঘোষণা করে যে ইন্দোনেশিয়া জোটের পূর্ণ সদস্যপদ পেয়েছে। গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে জানায়, এটি সমতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং টেকসই উন্নয়নের নীতির ভিত্তিতে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা বাড়ানোর কৌশলগত পদক্ষেপ।
ব্রিকস-এ যোগ দেওয়ার জন্য ইন্দোনেশিয়া রাশিয়ার নেতৃত্ব ও সহায়তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার সংস্কারে আগ্রহী এবং গ্লোবাল সাউথের সহযোগিতায় ইতিবাচক অবদান রাখতে প্রস্তুত। ইন্দোনেশিয়ার সদস্যপদ অনুমোদিত হয়েছিল ২০২৩ সালে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ জোটে প্রথমে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত এবং চীন ছিল। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা যোগ দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইরান, মিশর, ইথিওপিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতও পূর্ণ সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছে।
ব্রিকস-এর একটি মূল লক্ষ্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডি-ডলারাইজেশন, অর্থাৎ ডলারের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করা। জোটটি একটি অভিন্ন মুদ্রার প্রস্তাবও দিয়েছে, যা ডলারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। ইন্দোনেশিয়া বলেছে, এই অর্জন বৈশ্বিক ইস্যুতে তাদের ক্রমবর্ধমান সক্রিয় ভূমিকা এবং একটি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায্য বৈশ্বিক কাঠামো গড়ার প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। ইন্দোনেশিয়ার ব্রিকস-এ যোগদান উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিগুলোর একত্রীকরণকে শক্তিশালী করবে এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্বব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। আল-জাজিরা।
রসায়নবিদ থেকে হিজবুল্লাহর মহাসচিব
নাঈম বিন মুহাম্মদ কাসেম ১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে লেবাননের দক্ষিণে নাবাতিয়া প্রদেশের কাফার ফিলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিবাহিত এবং ছয় সন্তানের জনক (চার পুত্র এবং দুই কন্যা)। কিশোর বয়স থেকেই ইসলাম ধর্মের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ ছিল। নিয়মিত ইসলামী বই অধ্যয়ন করতেন। তার বয়স যখন ১৮ বছর, তিনি অন্যদের জন্য ধর্মীয় ক্লাসের আয়োজন করেন এবং মসজিদে প্রতি সপ্তাহে শিশু ও কিশোরদের ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। কেবল ইসলামী জ্ঞান ও শিক্ষার প্রতিই শেখ নাঈম কাসেমের আগ্রহ ছিল এমন নয়, রসায়ন শাস্ত্রের প্রতিও তিনি আগ্রহী ছিলেন। নাঈম কাসেম লেবানিজ ইউনিভার্সিটি থেকে ফরাসি ভাষায় রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৭৭ সালে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ছয় বছর সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি নাঈম কাসেম লেবাননের ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্রেও ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেন।
১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে নাঈম কাসেম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইসলামী চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটাতে ‘লেবানন মুসলিম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ নামক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। ১৯৭৪ সালে ইমাম মুসা সাদরের মাধ্যমে আমাল আন্দোলন প্রতিষ্ঠার পর তিনি এ আন্দোলনের সামরিক শাখা ‘নিপীড়িতদের আন্দোলন’-এ যোগ দেন এবং দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। ১৯৮২ সালে ইসলামী কমিটিগুলোর বৈঠকের পর লেবাননে হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যারা এটি প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেন তাদের একজন হলেন নাঈম কাসেম। নাঈম কাসেম ১৯৯১ সালে হিজবুল্লাহর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেলের পদে নির্বাচিত হন এবং সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতের আগ পর্যন্ত এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ২০২৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর লেবাননের হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ বৈরুতের দাহিয়া এলাকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হন। সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর নিহত হওয়ার প্রায় এক মাস পর ২৯ অক্টোবর লেবাননের হিজবুল্লাহ নাঈম কাসেমকে সংগঠনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত করে।
শেখ নাঈম কাসেম আমাল আন্দোলন ও হিজবুল্লাহ- এ দুই সংগঠনের সাথেই কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। তিনি লেবাননের আমাল আন্দোলন এবং হিজবুল্লাহ- এই দুই সংগঠন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তিদের একজন। সাংগঠনিক দিক থেকে বিবেচনা করলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। হিজবুল্লাহর কাঠামোগত এবং সামরিক শক্তিকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে তার এ বৈশিষ্ট্য ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। লেবাননের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে হিজবুল্লাহর সম্পর্ক উন্নয়নেও নাঈম কাসেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
শেখ নাঈম কাসেম বলেছেন, শহীদ হাসান নাসরুল্লাহর পথ পুরোপুরি অনুসরণ করে যাবেন। কাজেই দখলদার শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নীতি থেকে এক চুলও সরে যায়নি হিজবুল্লাহ এবং ভবিষ্যতেও তারা এ নীতিতে অটল থাকবে। শেখ নাঈম কাসেমের ব্যক্তিত্ব এবং ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে লেবাননের হিজবুল্লাহর উপমহাসচিব পদে থাকার অভিজ্ঞতা সংগঠন পরিচালনার কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। একইসাথে চারটি যুদ্ধ অর্থাৎ ১৯৯৩, ১৯৯৬, ২০০০ এবং ২০০৬ সালের যুদ্ধে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতার কারণে শেখ নাঈম কাসেম সহজেই যুদ্ধ পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন। এর ফলে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর পথ দক্ষতার সাথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন শেখ নাঈম কাসেম। পার্সটুডে।
বিশ্বের দীর্ঘতম চালকবিহীন ট্রেন চালু সৌদিতে
বিশ্বের দীর্ঘতম চালকবিহীন ট্রেন ‘রিয়াদ মেট্রো’ চালু করেছে সৌদি আরব। গত রোববার (৫ জানুয়ারি) ভোর ৬টা থেকে ট্রেনটি পুরোপুরি চালু হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রয়্যাল কমিশন ফর রিয়াদ সিটি (আরসিআরসি)। ট্রেনটি রাজধানী রিয়াদ ও তার আশপাশের অঞ্চলে চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছে। পুরো অঞ্চলটি এক নেটওয়ার্কের অধীনে আনার জন্য ছয় ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক ভাগের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে একটি করে লাইন। লাইনগুলোরও আলাদা নাম দেয়া হয়েছে- ব্লু লাইন, ইয়েলো লাইন, পার্পল লাইন, রেড লাইন, গ্রিন লাইন এবং অরেঞ্জ লাইন। এসব লাইনের মধ্যে ব্লু, ইয়েলো এবং পার্পল লাইনে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু করেছিল রিয়াদ মেট্রো। পরে ১৫ ডিসেম্বরে রেড এবং গ্রিন লাইনেও পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল শুরু হয়। রয়েল কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ৫ জানুয়ারি থেকে অরেঞ্জ লাইনসহ অন্যান্য লাইনে পুরোদমে চলা শুরু করেছে মেট্রোটি। গালফ নিউজ।
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : আবদুল কাইউম খান