যুক্তরাজ্যে খালেদা জিয়া চিকিৎসা নেবেন লন্ডন ক্লিনিকে


১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০০

স্টাফ রিপোর্টার : লন্ডনে পৌঁছেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত ৮ জানুয়ারি বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১ টার দিকে যুক্তরাজ্যে পৌঁছান তিনি। যুক্তরাজ্যে কর্মরত প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ সফিক এ প্রতিবেদককে সফরসঙ্গীসহ খালেদা জিয়ার যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে ৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা ছাড়েন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা ঘিরে রাজধানীতে বড় শোডাউন করেছেন বিএনপি নেতাকর্মী। উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে যাত্রা করলেও রাজনৈতিক কর্মসূচির মতো বিএনপি নেত্রীর গাড়িবহরের সামনে-পেছনে ছিল নেতাকর্মীর ঢল। ঘোষিত কর্মসূচি না থাকলেও তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে বিমানবন্দর ছাড়িয়ে উত্তরা পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে লাখো নেতাকর্মী জড়ো হন। এতে বিমানবন্দর থেকে মহাখালী পর্যন্ত তীব্র যানজট দেখা দেয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা চেয়ারপারসনকে বিমানবন্দরে বিদায় জানান। তার বিদেশযাত্রার কারণে কড়া নিরাপত্তা ছিল বিমানবন্দর এলাকায়। খালেদা জিয়ার সঙ্গে গেছেন তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান। সঙ্গে রয়েছেন দীর্ঘদিনের পরিচর্যাকারী গৃহকর্মী ফাতিমা বেগমও। খালেদা জিয়া কারাবন্দী থাকা অবস্থায় ফাতেমা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। আরও রয়েছেন তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের ছয় সদস্য। তাঁরা হলেন- মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিক, অধ্যাপক নুরুদ্দিন আহমেদ, জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও মোহাম্মদ আল মামুন। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার ও প্রটোকল অফিসার এস এম পারভেজও খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হয়েছেন।
লন্ডনে সাড়ে সাত বছর পর ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হলো খালেদা জিয়ার। তবে তিনি কবে দেশে ফিরবেন, তা নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক আল মামুন গণমাধ্যমকে জানান, উন্নত চিকিৎসায় খালেদা জিয়া কতদিন বিদেশে থাকবেন, তা দেশি-বিদেশি চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড বলতে পারবে। বোর্ড যেভাবে পরামর্শ দেবে, সেভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চলবে। তিনি লিভারসহ নানা জটিলতায় আক্রান্ত। লম্বা চিকিৎসা নিতে দেড়-দুই মাস লাগতে পারে। তবে এর আগে সুস্থ হয়ে গেলে দেশে চলে আসবেন। বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান।
জানা গেছে, খালেদা জিয়া শত বছরের পুরোনো লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হতে যাচ্ছেন। এটি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে পরিচিতি। সেন্ট্রাল লন্ডনের ডেভনশায়ার প্লেস ও মেরিলিবন সড়কের এ হাসপাতালে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি চিকিৎসা নেন অনেক রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনীতিক, অভিনেতা ও ধনাঢ্য ব্যক্তি। এ হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসা নেন ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়ামের স্ত্রী প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিন। চিকিৎসা নেন রাজা তৃতীয় চার্লস। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, তার স্বামী ফিলিপ অব এডিনবরা একাধিকবার এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। অ্যানটনি ইডেন ও ক্লিমেন্ট অ্যাটলিসহ অনেক ব্রিটিশ সরকারপ্রধানের চিকিৎসাও হয়েছে যুক্তরাজ্যের এ হাসপাতালে। লন্ডন ক্লিনিকের রোগীর তালিকায় নাম লেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ও ব্রিটিশ-আমেরিকান অভিনেত্রী লিজ টেইলরও। এ হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে কারাবন্দি দুই নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল তৎকালীন সেনাসমর্থিত সরকার, যা ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ নামে পরিচিত। সে সময় শেখ হাসিনা প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশ গেলেও দেশে থাকার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন খালেদা জিয়া। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালান। তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, গুম-খুনের মামলা চলছে। তাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি দিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রার মাধ্যমে গত সাড়ে চার দশকে এ প্রথম দুই নেত্রী বিদেশে। দুই রাজনৈতিক পরিবারেরও কেউ নেই দেশে।