সকল ওলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ হলে বাংলাদেশ জান্নাতের বাগানে পরিণত হবে-ডা. শফিকুর রহমান
১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০০
সোনার বাংলা ডেস্ক : সকল ওলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ হলে বাংলাদেশ জান্নাতের বাগানে পরিণত হবে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমার কাছে কোনো কওমি নাই, কোনো আলিয়াও নাই। আমার কাছে সবাই ওলামায়ে কেরাম। সকল ওলামায়ে কেরাম যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যান, তাহলে বাংলাদেশ জান্নাতের বাগান হয়ে যাবে। তিনি ইমামদের মিম্বারের মতো সমাজেও ইমামতি করতে দেখতে চান বলে তিনি উল্লেখ করেন। গত ৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জেলা পর্যায়ের ইমাম ও খতিবদের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মসজিদ মিশনের সভাপতি মাওলানা যাইনুল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও জেনারেল সেক্রেটারি ড. খলিলুর রহমান মাদানীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বায়তুল মোকাররমের খতিব আব্দুল মালেক, ইমাম মিজানুর রহমান। আরো বক্তব্য রাখেন মুহিব্বুল্লাহ বাকী, প্রফেসর ডক্টর রফিকুর রহমান মাদানী, ডক্টর মুখতার, আব্দুল হাই সাইফুল্লাহ, সাখাওয়াত রাজি, এনামুল হক মুসা, ডক্টর অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক, মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, হারুন ইজহার, মুসা বিন ইজহার, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মনির হোসেন কাছেমী, মুফতি আজহারুল ইসলাম, মুজিবুর রহমান হামিদী, আবু জাফর কাসেমি, মুফতি ফখরুল, মহিউদ্দিন রাব্বানী, ফয়জুল্লাহ আশরাফি, আবু তাহের জিহাদি, ডক্টর শামসুল আলম প্রমুখ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আজকে পর্যন্ত কোনো আলেমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ শুনিও নাই, দেখিও নাই। ওলামায়ে কেরামের প্রতি কম জুলুম করা হয়নি, ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়েছে, হয়রানি করা হয়েছে, নির্যাতন ভোগ করেছেন। তবু তারা ধৈর্য ধরেছেন। আল্লাহ যদি তাদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা তৈরি করে দেন আর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেন, তাহলে মানুষের জীবন, সম্পদ ও ইজ্জত রক্ষা হবে। ধর্ম-বর্ণ নিয়ে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। প্রত্যেক মানুষকে যেন সম্মান করতে পারি, আল্লাহ যেন সেই তাওফিক দান করেন।
তিনি ইমামদের উদ্দেশে বলেন, মদিনার মসজিদের সৌন্দর্য ইলমে ও আখলাকে আপনারা হবেন ওস্তাদ, অগ্রগণ্য, মসজিদে ইমামতির মতো ভবিষ্যতে সমাজেও ইমামতি করবেন। যেদিন এ দৃশ্য দেখব সেদিন আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে কাঁদতেই থাকব। কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলুল্লাহর চর্চা করে মডেলে পরিণত হওয়ার জন্য তিনি আলেমদের প্রতি আহ্বান জানান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মসজিদে নববীকে আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ সা.-এর মাধ্যমে সমাজ সংশোধন ও বিশ্ব পরিচালানার মারকাজে পরিণত করেছেন। সংশোধনের বিষয়ে কিছু বয়ান হয়, কিন্তু পরিচালনার বিষয়ে আলোচনা পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। এ মসজিদে রাসূল সা.-এর পার্লামেন্ট ছিল, কেবিনেট ছিল। মুসল্লিদের এড্রেস করতেন- এটা তার পার্লামেন্ট। আহলে রায় নিয়ে পরামর্শ করতেন- এটা ছিল তার কেবিনেট। মসজিদে বসেই তিনি বিচারকাজ করতেন। আলাদা কোনো কোর্ট বা স্থাপনা ছিল না। এখন আমরা কী দেখি, ইমাম সাহেব নামায পড়াচ্ছেন, সবাই নামায পড়ছেন।
খতিব সাহেব বয়ান দিচ্ছেন, সবাই শুনছেন। কেউ আগে আসছেন, কেউ পরে আসছেন। দুটি খুতবাও অনেকে মিস করে ফেলেন। তার কারণ হচ্ছে, জুমার মধ্যে যে নেয়ামত রয়েছে, তা আমরা জাতির সামনে পরিষ্কার করতে পারিনি। যাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে, তারা আসেন বসেন, মন ভরে তারপর যান। আর যাদের কাছে পরিষ্কার হয়নি তারা আসেন না আর এলেও সেই মনমানসিকতা নিয়ে আসতে পারেন না। তবে এ জুমার দিনে অধিকাংশ মুসলমানরা মসজিদে এসে যান।
তিনি আরো বলেন, মসজিদের দেশ পরিচালনার কথা হলে মানুষ বলে খতিব সাহেব এখানে রাজনৈতিক বিষয় না এলে ভালো হয়। আর সালিশের কথা হলে বাইরে বসতে চায়। কেন? এখানে আল্লাহর ঘর, উল্টা-পাল্টা হলে আল্লাহ ধরবেন। কিন্তু আল্লাহ তো সব জায়গায়ই আছেন। এটি সমাজকে মসজিদ থেকে দূরে সরিয়ে আনা হয়েছে। মরার পরেও লাশ থাকে খতিব সাহেবের সামনে। জীবনে-মরণে যাকে আমি মানলাম, তার মাধ্যমে কুরআনের সঠিক সবকটাকে না পাইলাম। এটা পেতে হবে। কুরআনের হুবহু তাফসির যদি কেউ করেন, এমনকি বাংলা অনুবাদও কেউ যদি করেন তাহলে হিদায়াতের জন্য এটাই যথেষ্ট। খুতবাকে প্রাণবন্ত করতে হবে। খুতবায় যে বয়ান হয়, সেটাও যদি বাংলায় হয়, তাহলে মানুষ মিলিয়ে নেবে। তখন মানুষ খুতবার সময় ঘুমাবে না। কোনো কোনো মসজিদে বাংলা ও আরবিতে খুতবা হয়। এমন কী কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইংরেজিতেও হতে পারে। মানুষ যে ভাষায় বুঝে, তাতে কুরআনের বয়ান করতে হবে।
তিনি বলেন, কুরআন এবং সুন্নাহর মাধ্যমে সমাজের চিত্রটা তুলে ধরবেন। জাতির প্রয়োজনের বিষয়ে খুতবা তৈরি হবে। বছরে বায়ান্নটি সপ্তাহে বায়ান্নটি খুতবা তৈরি করে বয়ান দিতে পারেন। এখান থেকে একটি গাইডলাইন আসবে। সবগুলো মসজিদ থেকে হিদায়াতের বক্তব্য এলে মানুষ হিদায়াতের দিকে যাবে।
মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য তৈরি হয়, এমন কথা কারোরই বলা উচিত নয়। একজন লোকের ঈমান হারানোর জন্য এটাই যথেষ্ট, কোনো সংবাদ পাওয়া মাত্র যাচাই না করে তা বলে দিয়েছে। ধারণার ওপর ভিত্তি করে কারো বিষয়ে কোন মন্তব্য করবেন না।
তিনি বলেন, রাসূল সা. ছোট বড় সবাইকে সালাম দিতেন। এমন সালামের ভাষা পরিবর্তন হয়ে গেছে। সঠিক সালাম শেখা উচিত। আপনারা সালামের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব তৈরি করুন। এক সালাম মানুষের কলব নরম করে দেয়। আপনারা যখন এর চর্চা করবেন, তখন সমাজে রহমত বর্ষণ হওয়া শুরু হবে। মদিনার মসজিদের সৌন্দর্য ইলমে ও আখলাকে আপনারা হবেন ওস্তাদ, অগ্রগণ্য, মসজিদে ইমামতির মতো ভবিষ্যতে সমাজেও ইমামতি করবেন। যেদিন এ দৃশ্য দেখব সেদিন আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে কাঁদতেই থাকব। কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলুল্লাহর চর্চা করে মডেলে পরিণত হবেন।
তিনি ইমামদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের উসিলায় বাংলাদেশের চেহারা আল্লাহ পরিবর্তন করে দিক। আমার কাছে কোনো কওমি নাই, কোনো আলিয়াও নাই। আমার কাছে সবাই ওলামায়ে কেরাম। সকল ওলামায়ে কেরাম সবাই এক হবো। ওলামায়ে কেরাম সবাই যদি এক হয়ে যান, বাংলাদেশ জান্নাতের বাগান হয়ে যাবে। আজকে পর্যন্ত কোনো আলেমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ শুনিওনি, দেখিওনি। ওলামায়ে কেরামের প্রতি কম জুলুম করা হয়নি, ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়েছে, হয়রানি করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে। তবু তারা ধৈর্য ধরেছেন। আল্লাহ যদি তাদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা তৈরি করে দেন আর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে মানুষের জীবন, সম্পদ ও ইজ্জত রক্ষা হবে। ধর্ম-বর্ণ নিয়ে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। প্রত্যেক মানুষকে যেন সম্মান করতে পারি, আল্লাহ যেন সেই তাওফিক দান করেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বাংলাদেশের সমাজ, রাজনীতি ও ইকামতে দীনের আন্দোলনের জন্য ২০২৫ সাল টার্নিং পয়েন্ট। বাংলাদেশকে একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য জাতি যে তাকিয়ে আছে, সেই স্বপ্নের দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে কি না, নাকি নতুন কোনো নৈরাজ্য আবার পিছিয়ে দেবে, সেই ফয়সালার বছর হচ্ছে ২০২৫ সাল।
জামায়াতে ইসলামীর এ শীর্ষনেতা বলেন, ইমাম ও খতিবরা যেখানে থাকবো, এ লক্ষ্যটাকে আমরা সামনে রাখবো। যাতে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করা যায়। তারপর আমাদের সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ কল্যাণ রাষ্ট্র হবে, যার ভিত্তি হবে কুরআন।
এ সময় ইসলামী বক্তাদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অনলাইন-ইউটিউব মাধ্যমগুলোয় চটকদার উপস্থাপনের মাধ্যমে ওয়াজমাহফিলের গুরুত্ব হালকা করা হচ্ছে।