ছড়া কবিতা
২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫৮
পুরাতন বছর শেষ
আব্দুস সাত্তার সুমন
পুরাতন বছর শেষ হলো
নতুন বছর হতে,
গত বছর কী করিলাম
হিসাব-নিকাশ মতে।
আয়ের থেকে ব্যয় যে বেশি
কত মানুষ ক্ষুব্ধ,
হয়ে গেল দেশের মাঝে
নানান রকম যুদ্ধ।
পাল্টে গেল অনেক কিছু
পড়ালেখার মান,
কত মানুষ হারিয়ে গেল
অগণিত প্রাণ।
নতুন নতুন জন্ম নিল
নবজাতক দেশে,
আপন মানুষ ছেড়ে গেল
বন্যায় গেল ভেসে।
আরাধনা হয়নি তেমন
পাইনি কোনো কিছু,
শূন্য হাতে আছি ভবে
মোহ মায়ার পিছু!
নববর্ষ এসেছে
আসাদুজ্জামান খান মুকুল
পুরাতন সাল বিদায় নিয়ে
নববর্ষ এসেছে,
আনন্দেতে ধরণীর সব
রঙিন সাজে সেজেছে!
আমরাও অতীত গ্লানি মুছে
নতুনত্বে তুলব সুর,
অপশক্তি গ্রাসে আসলে
ভেঙে তারে করব চুর!
মানবতার মেলবন্ধনে
চলব সবাই একই সাথ,
হিংসা-বিবাদ ছুড়ে ফেলে
ভালোবাসায় করব মাত।
জাত ভেদাভেদ ছিন্ন করে
ভাঙব সবার মনের ভুল,
গাইব সুরে মানবজাতি
একটি বৃক্ষের অনেক ফুল।
নববর্ষে চলার পথে
প্রভু যদি সহায় হয়,
সবাই আমরা মিলেমিশে
ধরিত্রীতে আনব জয়!
পিঠা
আসাদুজ্জামান আসাদ
শীতের দিনে খেজুর গাছে
কলসি বাঁধে গাছি
ভোর বেলা রসের লোভে
বসে সবাই আছি।
শীত মৌসুমে মাকে নিয়ে
যাই যে মামার বাড়ি
মামি বানায় নকশিপিঠা
অতি তাড়াতাড়ি।
চালের গুঁড়ায় ভাপাপিঠা
রসে ভরা হাঁড়ি
গল্পে গল্পে পিঠা খেতে
বসি সারি সারি।
আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-পড়শি
পিঠার মাখা-মাখি
মজার পিঠার খাবার তরে
করি ডাকা-ডাকি।
সরষেফুল
গোলাপ মাহমুদ সৌরভ
কুয়াশা ভেজা সরষেফুলে
ভোমর কেন নাচে?
হলুদ রঙের ফুল ফুটেছে
কী মিষ্টি মধু আছে।
হলুদ হলুদ এই সরষেফুল
হাওয়ায় হেলে দুলে,
মিষ্টি সকালে এসো তুমি
খোঁপায় দেব তুলে।
সরষেফুলে মন মেতেছে
শিশির বিন্দু হাসে,
রোদের ঝলক ঝিকিমিকি
মুক্তা ঝরায় ঘাসে।
সত্যি মানুষ
সুমাইয়া জামান
বলতে পারি মুখে কথা
লিখতে পারি হাতে
তবুও কেন মানুষ হ
বলো মা দিন রাতে।
হাঁটতে পারি চলতে পারি
আঁকতে পারি ছবি
তবুও কেন মাগো বলো
মানুষ কবে হবি?
আমি বলি খোকা তোকে
সত্যি মানুষ হতে
সত্যি মানুষ তখন হবি
চললে সত্য পথে।
শীতের জামা
সাদমান হাফিজ শুভ
জীবনজুড়ে কষ্ট ওদের
গরিব-দুঃখী যারা,
শীতটা এসে কষ্ট বুঝি
করছে ভীষণ তাড়া।
পথের পরে যে শিশুটি
নিত্য কাটায় দিন,
তার কথা আর কীই-বা বলি
দুঃখ সীমাহীন।
দাও না ওদের গায় জড়িয়ে
একটি শীতের জামা,
একটুখানি হোক না রঙিন
ওদের জীবননামা।
সাধ্যে যদি নাহি কুলোয়
পুরাতনই দাও,
তোমার মায়ার পরশ পেয়ে
হাসুক ওরা তাও।
স্বৈরাচার
ফরিদ আহমদ ফরাজী
ধীরে ধীরে বিশ্ব থেকে
স্বৈরাচারের দল
শর্ত ছাড়া গর্তে লুকায়
অহংকারের ফল।
জনগণের ঘাড়ে চেপে
বসত খেত আর
ছলেকলে মিথ্যে বলে
চলত চমৎকার।
জনগণের রোষানলে
পড়ে হারায় খেই
ঘুমে থেকে উঠে দেখে
তার গদিটা নেই।
স্বৈরাচারের স্বৈরাচারী
চলবে না আর বিশ্বে
সিরিয়া আর বাংলাদেশে
দেখছি করুণ দৃশ্যে।
এসব দেখে ওদের যদি
হতো খানিক শিক্ষা
সম্প্রীতির মিলনমেলা
দিতাম তাদের ভিক্ষা।
জুলাই মানে
জাকারিয়া আল হোসাইন
জুলাই মানে দু’হাত তুলে
শপথ নেয়ার ক্ষণ
শক্ত হাতে শত্রু রুখে
স্বদেশ গড়ার পণ।
জুলাই মানে বুকের তাজা
রক্ত দেয়ার মাস
জালিমদের জানান দেয়া
আমরা নই কো দাস।
জুলাই মানে বজ্রকণ্ঠে
শক্ত প্রতিবাদ
দেশ বাঁচাতে আমরা সবাই
বিদ্রোহী উন্মাদ।
জুলাই মানে স্বৈরশাসন
মুক্ত হওয়ার দিন
হাজার হাজার শহীদ গাজীর
স্মৃতি অমলিন।
জুলাই মানে আঁধার নিপাত
স্বাধীন পরিবেশ
জুলাই মানে রক্তে পাওয়া
নতুন বাংলাদেশ।
ফাঁসির আদেশ শুনে
আবুল খায়ের বুলবুল
ফাঁসির আদেশ শুনে তুমি
কাঁদলে না অঝোর ধারায়
খবর শুনে কেঁদেছে পাখি
যেন মরু সাহারায়॥
আল্লাহু আকবার বলে তাই
ভয়হীন চিত্তে ছুটেছো
আসমানের ঐ স্রষ্টার নামে
বার বার চুমু খেয়েছো
নীড়ের পাখি করছে মাতম
শোকের অশ্রু ধারায়॥
পাহাড় কাঁদে ঝর্ণা হয়ে
নদী বয়ে চলে যায়
সাগরের ঢেউরাশি এসে
কূল-কিনারা ভাসায়॥
অন্যায় ও অবিচার রুখতে
দিয়েছ জীবন ঢেলে
কুরআনের রাজ প্রতিষ্ঠায়
রেখেছ চোখ মেলে
তোমারই ভার নেবেন তিনি
হুরীদের ঐ পাহারায়॥
টোকাই
হাসান জামান
একটি ছেলে সারাটা দিন
ঘুরছে পথে পথে
নোংরা ছেঁড়া বস্তা কাঁধে
গা ভরা তার ক্ষতে!
খাবার খুঁজে সারাটা দিন
ময়লা ঝুড়ি থেকে
এই নিয়ে যা একটি রুটি
কেউ বলে না ডেকে!
কৌটা শিশি টুকরো লোহা
টোকাই ভাঙা চোরা
বোতল বাটি পলিথিন ব্যাগ
খেলনা পুতুল ঘোড়া!
তোমরা তারে টোকাই বলো
বস্তি ঘরের ছেলে-
আবদুল কালাম সেওতো হতে পারে
তোমার স্নেহ পেলে।
শাকসবজি খাই
মুহাম্মদ আলম জাহাঙ্গীর
প্রতিদিনই আমরা খাবো নানা শাক আর সবজি
ভাতে শাকের ঝোল মিশে ভাই
ডুবে হাতের কব্জি।
পালং কলমিশাক খেলে ভাই রক্তে
আয়রন বাড়ায়
দেহের ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া
মল কষাটা তাড়ায়।
লালশাক রোজই পাতে খেলে বৃদ্ধ কিশোর নবীন
অ্যানিমিয়া ওজন কমায়
বাড়ায় হিমোগ্লোবিন।
পুঁইশাক আর গিমাশাক খেলে নিত্য জনগণে
বাত ব্যথা কফ ডায়াবেটিস
খোসপাঁচড়া জ্বর কমে।
সর্ষে কচু মুলাশাক ভাই রোজই পাতে খেলে
রাতকানা রোগ হৃদকম্পন স্ট্রোক
থেকে মুক্তি মেলে।
তেলাকুচা সজনে পাতা ঢেঁকি ডাঁটা লাউশাক
খাই হেলেঞ্চা মটরশুঁটি
বারোমাস ডেকে নাক।
শাকসবজিতে ঢের ভিটামিন আছে
আমিষ ফাইবার
মেলে আয়রন শর্করা জিংক
ক্যালসিয়াম লেড পাইআর।
আরো মেলে স্টার্ক ক্যারোটিন
পটাশ ম্যাগনেসিয়াম
ফসফরাস আর ম্যাঙ্গানিজে
দেহ করে সুঠাম।
শাকসবজি নিষ্কাশন করে দেহের সকল বর্জ্য
তাই কিনে খাই শাকসবজি রোজ
টাকা করেও কর্য।
হাড়ের গঠন করতে মজবুত পেতে শক্তি
পুষ্টি শাকসবজি খাই নিত্যদিনই
ভাতে মুষ্টি মুষ্টি॥