বেড়েছে চাল মাছ গোশতের দাম, কমেছে আলু পেঁয়াজ ও সবজির


২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৯

স্টাফ রিপোর্টার : বাজারে আগের চেয়ে অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। বিশেষ করে নিত্যপণ্য হিসেবে বিবেচিত সবজি, পেঁয়াজ ও আলুর মূল্য কমতির দিকে। শীতের সব ধরনের সবজি, আলু ও পেঁয়াজের ভরা মৌসুম এখন। আর এ কারণে বাজারের সরবরাহ বেশি, আর এতে দাম কমতে শুরু করেছে। তবে বাজারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য চাল এর দাম বেড়েছে। চালেরও এখন ভরা মৌসুম, কিন্তু দাম বাড়ছে, আর এর জন্য ক্রেতারা দায়ী করছেন চাল সিন্ডিকেটের হোতাদের। এছাড়া গরুর গোশতের মূল্য অপরিবর্তিত থাকলেও খাসি ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। বাজারে দেশি মাছের দামও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।
কমেছে সবজি আলু ও পেঁয়াজের দাম : বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসা ও ভারতের পেঁয়াজের আমদানি বাড়ায় দাম নেমেছে ৫০-৭০ টাকা কেজির মধ্যে, যা কিনতে আগে ১০০-১২০ টাকা গুনতে হতো। অবশ্য হিলিতে মূল্য আরও কম, সেখানে পেঁয়াজের কেজি মাত্র ৩২ টাকা। অন্যদিকে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা দরে। আলুর দাম কয়েক সপ্তাহ আগের তুলনায় কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এদিকে ফুলকপি, শিম, শালগম, মুলার মতো শীতকালীন সবজির দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে। বাজারে ফুলকপি বিক্রি হতে দেখা গেছে ২০ থেকে ৩০ টাকা প্রতি পিস। শিম, শালগম, মুলার কেজি ৩০-৫০ টাকার মধ্যে। বরবটি, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, কচুরলতি, উস্তাসহ অন্য সবজিগুলোর দামও আগের তুলনায় কেজিপ্রতি ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, শীতের সবজির বিপুল সরবরাহের কারণে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কমেছে।
গোশতের মূল্য বেড়েছে
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে খাসির গোশতের দাম কেজিতে ১০০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ১১০০ টাকায় বিক্রি হওয়া খাসির গোশত এখন কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে ১২০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, ৮-১০ দিন আগে খাসির গোশত ১০৫০-১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন তারা। এখন ১১৫০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। কারণ শীতকালে অনুষ্ঠানের চাপ বেশি থাকে। তাই খাসির চাহিদা বেশি থাকে। অনুষ্ঠানের চাপ কমে গেলে গোশতের দামও কমে যাবে। তবে গরুর গোশত আগের মতোই ৭৫০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরুর খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক। গরুর খাদ্যের দাম না কমলে মাংসের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে বেশ কয়েক সপ্তাহ স্থিতিশীল থাকার পর ডিসেম্বরের শেষ দিকে এসে হুট করে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে যায়, এখনো কমেনি। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা দরে, যা ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। এর প্রভাবে বাজারের সোনালি মুরগির দামও বেড়েছে। এ জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০-৩৫০ টাকা, যা আগের চেয়ে কেজিতে ২০ টাকা বেশি। মুরগির দাম বাড়লেও ডিমের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়।
দেশি মাছের দাম অনেক বেশি
নির্ভরযোগ্য বিক্রেতা ‘সেতারা ফার্ম’ তাদের ওয়েবসাইটে মাছের যে মূল্যতালিকা নির্ধারণ করে রেখেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, রাজশাহীর দেশি রুই মাছের (ছোট সাইজ) কেজি মূল্য ৩২০ টাকা, বড় সাইজ ৪৫০ টাকা। কাঁচকি মাছ ৬০০ টাকা, বাইল্লা মাছ, ৯৫০ টাকা, দেশি কৈ মাছ ৯৫০ টাকা, পাবদা মাছ ৫৫০ টাকা, টাকি মাছ ৪৫০ টাকা, মোল মাছ ৭৯০ টাকা, দেশি ট্যাংরা মাছ ৬২০ টাকা, দেশি পুঁটি ৫৫০ টাকা, সরপুঁটি ২৭০ টাকা, ফলি মাছ ৪৫০ টাকা। বাতাসি মাছ ৭২০ টাকা, কাজলি ৯৮০ টাকা, তাপসি ৬৫০ টাকা ও বড় গলদা (কেজিতে ৬ থেকে ৮ পিস) চিংড়ি ১৫০০ টাকা কেজি।
ভরা মৌসুমেও চালের দাম চড়া
দেশে এখন চলছে আমনের ভরা মৌসুম। হাট-বাজারে রয়েছে পর্যাপ্ত আমন ধানের সরবরাহ। স্বাভাবিকভাবে এ সময় ধান ও চালের দাম নিম্নমুখী হওয়ার কথা। কিন্তু পুরো ডিসেম্বর মাসজুড়ে ছিল খুচরা ও পাইকারি বাজারে উল্টো চিত্র, যা এখনো চলমান। গত ৩১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার এ রিপোর্ট লেখার দুই সপ্তাহ আগে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম পাইকারি পর্যায়ে ২-৫ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৪-৮ টাকা বেড়েছে। খবর নিয়ে জানা গেছে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নওগাঁ ধান-চাল উৎপাদনে বরাবরই সমৃদ্ধ একটি জেলা। ওই জেলায়ও চালের দাম বেড়েছে, যা রীতিমতো অস্বস্তির। চালের বাজারে আকস্মিক এ অস্থিরতার পেছনে মজুদ সিন্ডিকেটকে দুষছেন ব্যবসায়ীরা। এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দেশীয় চালের মূল্য আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা ভোক্তাদের। নওগাঁ শহরের গোস্তহাটির মোড় পৌর চাল বাজারে দাম বাড়ার পর বর্তমানে প্রতি কেজি জিরাশাইল ৭০-৭৪ টাকা, কাটারিভোগ ৭২-৮০ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৮-৬০ টাকা দরে কেনা-বেচা হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি জিরাশাইল ৬৫-৬৬ টাকা, কাটারিভোগ ৬৪-৭২ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৪-৫৮ টাকা দরে কেনা-বেচা হয়েছে।