সংক্ষিপ্ত বিশ্ব সংবাদ
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:১১
ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে অস্ত্র বাংলাদেশি সংখ্যালঘু ইস্যু : ওয়াইসি
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপরে হামলাকে হাতিয়ার করে ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) প্রধান ও হায়দরাবাদের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। এক অনুষ্ঠানে শনিবার ওয়াইসি বলেন, ‘ভারত সরকারের উচিত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপরে হামলা নিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সঙ্গে কথা বলা। বাংলাদেশের এ ধরনের ঘটনাকে হাতিয়ার করে ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে কেন?’ ওয়াইসি বলেন, ‘আমি গত ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবার সংসদে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে সরব হয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশের পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন কেন? এখান থেকে তিনি বক্তব্য প্রচারই বা করছেন কেন? ভারত সরকার কি তার বক্তব্যকে সমর্থন করে?’
গত কয়েক দিন ধরেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-নির্যাতনকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় বিজেপি। কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশন অভিযান, পেট্রাপোল ও ঘোজাডাঙা সীমান্ত অবরোধ, কলকাতার রানি রাসমণি রোডে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর সমাবেশে হাজির ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বাংলাদেশে ধৃত চিন্ময়কৃষ্ণের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন মঞ্চ থেকে সরব হয়েছে বিজেপি। বিজেপি-বিরোধীদের মতে, বাংলাদেশকে সামনে রেখে রাজ্যে মেরুকরণের রাজনীতি করতে চাইছে বিজেপি। এ প্রেক্ষাপটে আসাদউদ্দিনের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত রাজনীতিকদের। আনন্দবাজার পত্রিকা।
ভারতকে ‘অসহযোগী’ দেশ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
ভারতকে ‘অসহযোগী’ দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ায় যথাযথ সহযোগিতা না করায় তাদের অসহযোগী দেশের তালিকাভুক্ত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা আইসিই অভিযোগ করেছে, ভারত সাক্ষাৎকার গ্রহণ, সময়মতো ভ্রমণ নথি ইস্যু এবং নির্ধারিত ফ্লাইটে তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগী দেশের তালিকায় আরো আছে ভুটান, কিউবা, ইরান, পাকিস্তান, রাশিয়া এবং ভেনেজুয়েলা। আইসিই জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ১৪ লাখ ৫০ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়িত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ১৮ হাজার অভিবাসীই ভারকের নাগরিক। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রায় ৯০ হাজার ভারতীয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টাকালে আটক করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই পাঞ্জাব, গুজরাট এবং অন্ধ্র প্রদেশের বাসিন্দা। এনডিটিভি।
গোলান পরিকল্পনায় ‘সীমান্ত প্রসারিত’ করতে চাইছে ইসরাইল : তুরস্ক
সীমানা প্রসারিত করার লক্ষ্যে অধিকৃত ও সংযুক্ত গোলান মালভূমিতে বসবাসকারী জনসংখ্যা দ্বিগুণ করার ইসরাইলি পরিকল্পনা নিয়ে গত ১৬ ডিসেম্বর সোমবার নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতি উদ্ধৃত করে আঙ্কারা থেকে এএফপি জানায়, ‘সিদ্ধান্তটি দখলদারিত্বের মাধ্যমে সীমানা সম্প্রসারণের ইসরাইলি লক্ষ্যের একটি নতুন ধাপ।’ এতে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, পরিকল্পনাটি বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর প্রতিবেশী সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা আনার প্রচেষ্টা ‘গুরুতর ব্যাহত’ করবে। এএফপি।
পালিয়ে যাওয়ার পর প্রথম বিবৃতিতে যা বললেন বাশার আল-আসাদ
বিদ্রোহীদের আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সিরিয়ার সাবেক স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ প্রথমবারের মতো বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি পরিকল্পিত ছিল না। গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতন ঘটে। এ সময় তিনি পালিয়ে গিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন। এরপর গত সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) মস্কো থেকে প্রথম বিবৃতি দিলেন তিনি। সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেয়া বিবৃতিতে বাশার আল-আসাদ বলেন, ‘সিরিয়া থেকে তার চলে যাওয়াটা পরিকল্পিত ছিল না এবং হামলার শিকার একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য মস্কো তাকে অনুরোধ করেছিল।’ তিনি বলেন, ‘সিরিয়া থেকে আমার প্রস্থান পরিকল্পিত ছিল না অথবা লড়াইয়ের শেষ সময়েও এটি ঘটেনি।’ সিরিয়ার সাবেক এ স্বৈরশাসক বলেন, ‘আমি রোববার (৮ ডিসেম্বর) ভোর বেলা পর্যন্ত দামেস্কে ছিলাম। সেখান থেকে আমার দায়িত্ব পালন করেছিলাম। সন্ত্রাসী বাহিনী যখন দামেস্কে অনুপ্রবেশ করে, তখন লড়াই অভিযানের তদারকি করার জন্য আমাদের রুশ মিত্রদের সাথে সমন্বয় করে লাতাকিয়ায় চলে আসি। আমি সেদিন সকালেই হামিমিম ঘাঁটিতে পৌঁছাই,’ বলেন তিনি। তিনি আরো বলেন, মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এর এক পর্যায়ে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি তীব্র ড্রোন হামলার মুখে পড়ে। সামরিক ঘাঁটির কমান্ড ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাকে তাৎক্ষণিক রাশিয়ায় সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করে। সিরিয়া বর্তমানে ‘সন্ত্রাসীদের’ হাতে রয়েছে বলে বিবৃতিতে দাবি করেন বাশার আল-আসাদ। তিনি বলেন, সিরিয়াজুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে পড়ায় এবং ৭ ডিসেম্বর (শনিবার) সন্ধ্যার দিকে সন্ত্রাসীরা দামেস্কে পৌঁছানোর ফলে প্রেসিডেন্টের ভাগ্য এবং তার দেশে অবস্থান ঘিরে সংকট তৈরি হয়। ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি ও আখ্যানের মাঝে এসব ঘটেছে। যার লক্ষ্য ছিল সিরিয়ার মুক্তি আন্দোলনের নামে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে আবারো পুনরুজ্জীবিত করা। আল-জাজিরা, এএফপি, রয়টার্স।
এক যুগ পর দামেস্কে কাজ শুরু করল তুরস্কের দূতাবাস
দীর্ঘ ১২ বছর পর সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে আবারও কার্যক্রম শুরু করেছে তুরস্কের দূতাবাস। গত ১৪ ডিসেম্বর শনিবার দামেস্কে অবস্থিত এ দূতাবাসে তুর্কি পতাকাও উত্তোলন করা হয়েছে। এর আগে ২০১২ সালে তুরস্কের এ দূতাবাসের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স হিসেবে মৌরিতানিয়ায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত বুরহান কোরোগলুকে নিয়োগ দেওয়ার পর দামেস্কের তুর্কি দূতাবাস আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় চালু হয়েছে। এর আগে ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান আনুষ্ঠানিকভাবে কোরোগলুকে নতুন পদে দায়িত্ব দেন। আনাদলু বলছে, দামেস্ক শহরের রাওদা স্কোয়ারের কাছে এমন একটি এলাকায় এ দূতাবাস রয়েছে যেখানে অন্যান্য অনেক দেশের কূটনৈতিক মিশনও অবস্থিত। ২০১১ সালে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর আসাদ সরকারের সহিংস দমন-পীড়নের পরে তুর্কি দূতাবাস কিছু সময়ের জন্য তাদের পরিষেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছিল। তবে ২০১২ সালের ২৬ মার্চ থেকে এ দূতাবাসটি তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম স্থগিত করে। এ সিদ্ধান্তের পর দূতাবাসের কর্মীরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা তুরস্কে ফিরে গিয়েছিল। এদিকে এ মাসের শুরুতে বাশার আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সিরিয়ার কনস্যুলেট জেনারেল নিরবচ্ছিন্নভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট সেভদেত ইলমাজ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে বলেছেন, ‘আমাদের ভালোবাসার পতাকা উত্থাপনের মাধ্যমে ১২ বছর পর দামেস্কে আমাদের দূতাবাসে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করতে দেখে আমরা আনন্দিত। দূতাবাস পুনরায় চালু করা সিরিয়ার স্থিতিশীলতার পাশাপাশি এ অঞ্চলে শান্তি ও সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের সবচেয়ে দৃঢ় পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি।’ ইলমাজ আরও আশা প্রকাশ করেছেন, সিরিয়ার সাথে তুরস্কের কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ‘ভ্রাতৃপ্রতিম সিরিয়ার জনগণের জীবন স্বাভাবিককরণে অবদান রাখবে এবং সিরিয়ার প্রাতিষ্ঠানিক, অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত অবস্থার পুনর্গঠনে সহায়তা করবে।’ আনাদলু।
হিজাব আইন স্থগিত করল ইরান
ইরানের হিজাববিষয়ক একটি আইন স্থগিত করেছে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল। এ আইনটি গত ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবার থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান আইনটিকে ‘অস্পষ্ট এবং সংস্কারের প্রয়োজন’ বলে উল্লেখ করেছেন। এর মাধ্যমে আইনটি পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। প্রস্তাবিত নতুন আইনে নারী ও মেয়েদের চুল, হাতের বাহু ও পায়ের নিচের অংশ প্রদর্শনের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। দেশটির অধিকারকর্মীরা এর তীব্র সমালোচনা করছিলেন। নারীদের জন্য কঠোর পোশাক আইন কয়েক দশক ধরে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। একে কেন্দ্র করে অতীতে অনেক বিক্ষোভের জন্ম হয়েছিল। এ আইনে অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে এবং কেউ যদি নিয়ম কানুনকে উপহাস করে, তাহলে তাকে বড় জরিমানা এবং পনের বছরো পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছিল।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ আইন নিয়ে তাদের শঙ্কার কথা বলে আসছিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ইরানের কর্তৃপক্ষ ‘দমন-পীড়নের দম বন্ধ করা প্রক্রিয়াকে আরো সুরক্ষিত করতে চাইছে’। জুলাইয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তখনকার প্রার্থী পেজেশকিয়ান প্রকাশ্যেই হিজাব ইস্যুতে ইরানের নারীদের সাথে যে ধরনের আচরণ করা হয় তার সমালোচনা করেছিলেন। তিনি কারো ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ না করার অঙ্গীকার করেছিলেন। বহু ইরানি নাগরিকের প্রত্যাশাও তাই। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, যারা সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে হতাশ। তবে আইনটির সমর্থকরা প্রেসিডেন্টকে এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তারা দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকার জন্য নিরাপত্তা কাউন্সিলের সমালোচনা করছে এবং দ্রুত এটি যাতে প্রয়োগ করা যায় সেজন্য স্বাক্ষর করার দাবি জানিয়েছে। এরপরেও এটি কার্যকর করা স্থগিত করার মানে হলো সরকার দুবছর আগের মতো আরেকটি বিক্ষোভের সূচনা হতে পারে বলে সরকারের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে। বিবিসি।
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : আবদুল কাইউম খান