টঙ্গীতে তাবলিগের দু’পক্ষের সংঘাতে চার মুসল্লির প্রাণহানি
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:১৫
স্টাফ রিপোর্টার : গাজীপুরের টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে থাকা সাদ ও জুবায়েরপন্থিদের মধ্যে সংঘাতে রক্তের বন্যা বয়ে গেছে। পবিত্র ইজতেমা ময়দান রক্তাক্ত হয়েছে, নিরীহ মুসল্লিরা মারধরের শিকার হয়েছেন। গত ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দখল করা নিয়ে এ সংঘর্ষ হয়। এ রিপার্ট লেখা পর্যন্ত সাদ ও জুবায়েরপন্থি অনুসারীদের অন্তত চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন কয়েকশ’। এ ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টঙ্গীতে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষের পর গত ১৮ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে এক জরুরি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সাদপন্থিরা মাঠ ছাড়ার ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে ওই মাঠ সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখারও সিদ্ধান্ত হয়। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশ উত্তরা ও তুরাগ নদসংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে।
হতাহত যারা
এদিকে গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে গত বুধবার ভোরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত চারজনের নাম জানা গেছে। এরা হলেনÑ আমিনুল হক (৭০), বাচ্চু মিয়া (৭০), বেলাল (৬০) ও তাজুল ইসলাম (৬৫)। আমিনুল হক ও বাচ্চু মিয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু গ্রামে। আর বেলালের বাড়ি ঢাকার দক্ষিণখানের বেড়াইদ এলাকায়। তার পিতার নাম আ. সামাদ। তাজুল ইসলামের বাড়ি বগুড়ায়। আহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনÑ আ. রউফ (৫৫), মজিবুর রহমান (৫৮), আ. হান্নান (৬০), জহুরুল ইসলাম (৩৮), আরিফ (৩৪), ফয়সাল (২৮), তরিকুল (৪২), সাহেদ (৪৪), উকিল মিয়া (৫৮), পান্ত (৫৫), টঙ্গীর খোরশেদ আলম (৫০), বেলাল (৩৪), আনোয়ার (৫০), আবু বক্কর (৫৯), আরিফুল ইসলাম (৫০), আনোয়ার (২৬), আনোয়ার (৭৬), ফোরকান আহমেদ (৩৫), আ. রউফ (৫৫), মজিবুর রহমান (৫৮), আ. হান্নান (৬০), জহুরুল ইসলাম (৩৮), আরিফ (৩৪), ফয়সাল (২৮), তরিকুল (৪২) ও সাহেদ (৪৪)।
উত্তরা ও তুরাগ নদসংলগ্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
মাঝরাতে গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দখল নিয়ে মাওলানা সাদ ও জুবায়েরপন্থিদের সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহতের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উত্তরা ও তুরাগ নদসংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ১৮ ডিসেম্বর ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এতদ্বারা সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সম্প্রতি উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-ওওও/৭৬)-এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে বুধবার দুপুর ২টা থেকে কামারপাড়া, আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা সেক্টর-১০ এবং তৎসংলগ্ন তুরাগ নদের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় যেকোনো প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ ইত্যাদি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হলো। এদিকে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় কাকরাইল মসজিদ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ ও র্যাব। এছাড়া ঘটনাস্থলে সকাল থেকে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
টঙ্গীতে উত্তেজনা যেভাবে শুরু
বেশ কিছুদিন ধরেই তাবলিগ জামাতের মাওলানা সাদ অনুসারীদের জোড় ইজতেমাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা জোড় ইজতেমা পালন করেন। এরপর ২০ ডিসেম্বর থেকে মাওলানা সাদ অনুসারীরা জোড় ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিলে তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নেন জুবায়ের অনুসারীরা। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে সাদ অনুসারীদের ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ ঠেকাতে ময়দানের চারপাশে ও বিভিন্ন সড়কের মোড়ে লাঠি হাতে পাহারা বসায় জুবায়ের অনুসারীরা। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাদ অনুসারীরা ইজতেমা ময়দানের উদ্দেশে বাস-ট্রাকে করে মাঠে আসতে থাকে। মধ্যরাতে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সাদ অনুসারীদের গাড়ি আটকে দেন জুবায়েরপন্থিরা। একপর্যায়ে রাত আড়াইটার দিকে মাওলানা সাদ অনুসারীরা ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করলে উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় গ্রুপের চারজন নিহত ও অন্তত অর্ধশত মুসল্লি আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে।
আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জামায়াত আমীরের
তাবলিগ জামাতের এ সংঘর্ষ নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান তার ফেসবুকে এক পোস্ট করেছেন। তাতে তিনি বলেন, আজ (১৮ ডিসেম্বর) ভোর রাতে তুরাগ তীরে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ৩ জন মুসল্লির ইন্তেকালে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। মহান আল্লাহর দীনের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকলকে সবর করার এবং শান্ত থাকার জন্য আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাই। বিষয়টি যৌক্তিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হোক তাই কামনা করি। যারা নিহত হয়েছেন, মহান আল্লাহ তাদের উপর রহম করুন, ক্ষমা করুন এবং জান্নাত নসিব করুন। আল্লাহ তায়ালা আহত ভাইদের দ্রুত সুস্থতার নিয়ামত দান করুন। দেশ এবং উম্মাহর স্বার্থে সকলেই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবেন সেই প্রত্যাশা রাখি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।