দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান আমীরে জামায়াত ডা. শফিুকর রহমানের


১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৫৩

গত ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার সকালে কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে মহানগরী জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দল ও জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এক কাতারে দাঁড়িয়েছেন। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনো বিদেশি আগ্রাসন সহ্য করবো না। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমি আমরা কাউকে ছেড়ে দেব না। আমাদের জীবন দেব, তবু এক ইঞ্চি জমি আমরা ছেড়ে দেব না। এটি আমাদের কমিটমেন্ট। গত ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার সকালে কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে মহানগরী জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কুমিল্লা নামে বিভাগ না দেয়ায় পতিত সরকারের সমালোচনা করে আমীরে জামায়াত আরও বলেন, নামের কারণে বিভাগ না দিয়ে একটি জেলার মানুষের প্রতি জুলুম ও অসম্মান করা হয়েছে। দেশের এক ইঞ্চি মাটির প্রতি অবজ্ঞাকারী কোনো ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ‘কুমিল্লা’ নামে বিভাগ ঘোষণা করার জন্য আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়া তিনি কুমিল্লা বিমানবন্দর সচলের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন এবং বিমানবন্দর তৈরি করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, প্রশাসনের সর্বস্তরে সংস্কারের জন্য আমরা সরকারকে সময় দিয়েছি। প্রয়োজনে আরও দেব। তবে মৌলিক সংস্কার করে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দিতে হবে। ২০২৪ এর জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার করতে হবে। তবে আমরা আইন হাতে তুলে নিতে চাই না। পরাজিত শক্তি এখনো বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ভারতীয় মিডিয়ায় মিথ্যাচার চালিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চেয়েছিল। কিন্তু এদেশের মানুষ তাদের সে পাতা ফাঁদে পায় দেয়নি। দেশের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা কাউকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করতে চাই না। সবার পরিচয় হবে আমরা বাংলাদেশি।
কর্মী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা মহানগরী জামায়াতের আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক এ কে এম এমদাদুল হক মামুন ও সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমানের যৌথ পরিচালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, মাওলানা আবদুল হালিম, চাকসুর সাবেক ভিপি অ্যাডভোকট জসিমউদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আবদুর রব, মোবারক হোসাইন প্রমুখ। এছাড়া বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় শূরা ও অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত ভূঞা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও টিম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আমীর অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শাহজাহান, কুমিল্লা উত্তর জেলা আমীর অধ্যাপক আবদুল মতিন, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াসির আরাফাত, ড. মোবারক হোসেন, কুমিল্লা মহানগরী নায়েবে আমীর মোছলেহ উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা সেক্রেটারি ড. সৈয়দ সরোয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, কুমিল্লা উত্তর জেলা সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম শহীদ, মহানগরী সহকারী সদস্য কামরুজ্জামান সোহেল, মহানগরী শিবির সভাপতি নোমান হোসেন নয়ন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি হাফেজ ইউসুফ ইসলাহী, মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন, নাসিম আহমেদ মোল্লাসহ নেতৃবৃন্দ। শুরুতে কুরআন তেলাওয়াত করেন মহানগরী মজলিসে শূরা সদস্য ড. আবরার আহম্মদ। সমাবেশের উদ্বোধন করেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ মাছুম মিয়ার পিতা শাহীর মিয়া।
দীর্ঘ ১৯ বছর পর অনুষ্ঠিত সমাবেশ উপলক্ষে গত কয়েকদিন থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালায় জামায়াত। দলীয় আমীরকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন ও তোরণ দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় পুরো নগরী। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় সম্মেলন শুরুর কথা থাকথা থাকলেও সকাল সাড়ে ৬টা থেকেই নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড ও ৬টি ইউনিয়ন থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনে যোগ দেন নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে পুরুষদের জন্য টাউনহল মাঠ ও নারীদের জন্য নির্ধারিত কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। একপর্যায়ে কর্মী সমাবেশ জনসমাবেশে রূপ নেয়। পুরুষদের প্যান্ডেল টাউনহল মাঠের আশপাশের এলাকা পূবালী চত্বর, লিবার্টি মোড়, জিলা স্কুলের সামনের রাস্তা, মনোহরপুর, বাদুড়তলা ও লাকসাম রোডের পুরো রাস্তাই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। অপরদিকে নারীদের জন্য নির্ধারিত ঈদগাহ মাঠেও স্থান সংকুলান না হওয়ায় সিটি পার্ক মোড় ও প্রেস ক্লাবসহ আশাপাশের এলাকাও নারী কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গত সাড়ে ষোলো বছর জাতির জন্য একটি শ্বাসরুদ্ধকর শাসন ছিল। মূলত পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের অস্তিত্ব ধ্বংস করার মিশন শুরু হয়। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট আজো প্রকাশ করা হয়নি। সেনাবাহিনীর সদস্যরা জানতে পারেননি তাদের সহকর্মীদের হত্যার রহস্য। পুরো ঘটনার আদ্যোপান্ত তদন্ত করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর একের পর এক দেশপ্রেমিক নাগরিকদের হত্যা করা হয়। সবচেয়ে বড় আঘাত দেয়া হয় জামায়াতে ইসলামীর ওপর। জামায়াতে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিচারের নামে হত্যা করা হয়। আলেমদের হত্যা করা হয়। সাংবাদিকদেরও হত্যা করা হয়। এরপর ধাপে ধাপে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়। বিরোধীদলের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না। বিশেষ করে জামায়াতের ওপর সবচেয়ে বেশি অবিচার করা হয়। আমাদের শীর্ষনেতাদের একে একে মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেয়া হয়। অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের কারাগারে রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়। আমাদের কার্যালয়গুলো অন্যায়ভাবে বন্ধ রাখা হয়। তবে এতো নির্যাতনের পরও আল্লাহর রহমত ও নেতাকর্মীদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা টিকে আছি। তাদের ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত তারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। ২৪ এর হত্যার সকল নায়ক-নায়িকাদের বিচার করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি দাবি জানান। শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ নেই। দেশের প্রশ্নে জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক দেশ নয়। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলেছি, আমরা বাংলাদেশে মেজরিটি মাইনরিটি মানি না। বাংলাদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করেছে তারা বাংলাদেশি। এই মাইনরিটি শব্দ ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠী দেশের বাইরে থেকে স্বার্থ হাসিল করতে চায়। ভারতের হলুদ মিডিয়ার অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জগন্নাথ হলের হিন্দু ছেলে মেয়েরা প্রতিবাদ করেছে। তারা বলেছে, ভারতীয় মিডিয়ার প্রচারণা মিথ্যা। আমরা বলতে চাই, কেন ভারত এসব মিথ্যাচার করছে? আমরা কী তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছি? ভারত বলে, আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক সহিষ্ণুতার অভাব। বিশ্ববাসী জানে ভারতীয় উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হাতে কত মানুষ নির্মমভাবে নিহত হয়। বাংলাদেশে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটে না।
তিনি বলেন, একটি চরমপন্থী সংগঠনের হাতে নির্মমভাবে চট্টগ্রামের আদালতে একজন আইনজীবী খুন হয়েছেন। তারা চেয়েছিল এ খুনের মাধ্যমে দাঙ্গা বাধাতে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের মুখে চুনকালি লেপে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে বলেছে, এ খুনের সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার হবে আইন অনুযায়ী। আমরা নিজের হাতে আইন তুলে নিতে চাই না। ভারতে এমন একটি উদাহরণ কেউ কী দেখাতে পারবে?
তিনি বলেন, বিভিন্ন ধর্মের সম্মানিত ব্যক্তিদের সাথে একসাথে দাঁড়িয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এ দেশ আমাদের সবার। আমরা কোনো বিভাজন চাই না। এ মহৎ উদ্যোগের জন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান এবং এ যাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন।
তিনি আগামীতে দেশ যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে চালানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, আগামীতে চাঁদাবাজমুক্ত, দেশপ্রেমিক চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ দেশ চালাবেন। জনগণ ভোটের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। সেই নির্বাচনে কোনো টাকার খেলা হবে না। এজন্য কিছু নির্বাচনী সংস্কার প্রয়োজন। ৪২ বছরে যুবকরা ভোট দিতে পারেনি। এবার যুবকরা শুধু ভোটই দেবে না, জাতিকে নেতৃত্বও দেবে। তিনি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানান। বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নের দাবি জানান। বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে নারীরা যথাযথ মর্যাদা ও নিরাপত্তা পাবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, যোগ্যতার ভিত্তিতে সবাইকে মূল্যায়ন করা হবে। দেশে কোনো বৈষম্য থাকবে না। তিনি অভিযোগ করেন বিগত দিনে পুলিশের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তারপরও আমরা প্রতিশোধপরায়ণ হইনি। আমরা সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।
গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সবসময় সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলতে হবে। অন্যায়কারী যেই হোক, কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। আমাদের ভুল হলেও লিখবেন। তাহলে সংশোধন হতে পারবো। তিনি বলেন ২৪ এর আন্দোলনের মূল সেনাপতি ছিলেন শিক্ষার্থীরা। আমরা শুধু তাদের পাশে থেকে পানি পান করিয়েছি। তবে সে সময় রাতে ঘুমাইনি। যে জাতির নেতৃত্ব ঘুমায় না সে জাতি নিরাপদ থাকে। তিনি নেতাকর্মীদের চরিত্র গঠনের পাশাপাশি মানুষের ক্রান্তিকালে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন।
ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ভারত আমাদের প্রতি আগ্রাসী আচরণ করলে বাংলাদেশের মানুষ সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবিলা করবে। সীমান্তে হাজারো শহীদের লাশের মিছিল হবে। তারপরও আধিপত্যবাদী শক্তিকে মাথাচাড়া দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে না। আগামী নির্বাচনে সৎ ও খোদাভীরু নেতা নির্বাচিত করতে হবে। তিনি বলেন জামায়াতে ইসলামী ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তাই এবার জামায়াতকে সুযোগ দিতে হবে। ডা. তাহের কুমিল্লা নামে বিভাগ ঘোষণা ও কুমিল্লা বিমানবন্দর সচলের দাবি জানান।
মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, ৫ আগস্টের পরাজিত শক্তি পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে বিতর্কিত করতে চায়। তিনি দেশ রক্ষায় সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান। জামায়াতকে সুযোগ দেয়ার দাবি করেন।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা জীবন দিতে পারি কিন্তু কোনো আধিপত্য শক্তির কাছে মাথানত করব না। আমরা আওয়ামী শক্তির কাছে মাথানত করিনি। জুলুম নির্যাতন হয়েছে তবু আপস করিনি। তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান।
মোবারক হোসাইন বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশকে ধ্বংস করে দিয়ে প্রচণ্ড জনরোষের মুখে বিদেশে পালিয়ে গেছে। তাকে যেকোনোমূল্যে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য আমি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সৈয়দ বশির আহম্মেদ, পিরোজপুর: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, শোষণমুক্ত সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই। এদেশ মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের দেশ আমরা মিলেমিশে বসবাস করবো। আমরা ফ্যাসিবাদদের মতো কোথাও পালিয়ে যাবোনা। এদেশ আমাদের, আমরা সকলে মিলেমিশে বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।
গত ২ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার জগন্নাথকাঠি বাজারে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন। শফিকুর রহমান আরো বলেন, “জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্যাতিত মানুষের রক্তে ২৪ বিপ্লব হয়েছে। তাই এ কৃতিত্ব আমাদের কারো একার নয়। এটা মহান আল্লাহর রহমত। নির্যাতিত, নিপীড়িত নিগৃহীত মানুষের ডাকে সাড়ায় আল্লাহ আমাদের জুলুমের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। ২৪ বিপ্লব আমাদের সবার অংশগ্রহণে আমরা পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে মুক্ত হয়েছি। এ বিপ্লবে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। কেউ চিরতরে পংগু হয়েছেন। কেউ হারিয়েছেন অঙ্গ। তাই এদেশ হবে, মুসলিম, হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার। এদেশে আমরা আর কোনো রক্তপাত দেখতে চাই না। যে লক্ষ্য নিয়ে দেশটা মুক্ত হয়েছে, সেই লক্ষ্যে দেশটা হবে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিমুক্ত একটা দেশ। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে একটা সুন্দর দেশ গড়ি।” এ সময় শফিকুর রহমানের সাথে উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুর ১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মাসুদ সাঈদী এবং শামীম সাঈদীসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আমীর তোফাজ্জল হোসাইন ফরিদ, নায়বে আমীর মাওলানা আব্দুর রব, জেলা সেক্রেটারি মোজহিরুল হক, নেছারাবাদ উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, সেক্রেটারি মাওলানা মো. আবদুল রশিদ, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা মো. জহিরুল ইসলাম প্রমুখ। এরপর তিনি ছারছিনা দরবার শরীফে গিয়ে মাজার জিয়ারত করেন এবং দরবারে সকলের সাথে কুশল বিনিময় শেষে বানারীপাড়া উপজেলার উদ্দেশ যাত্রা করেন।
ছারছীনা দরবার শরীফের পীর ছাহেবের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ
ছারছীনা দরবার শরীফের পীর ছাহেব আলহাজ হযরত মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমাদ হুসাইনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
জানা যায়, গত সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান নেছারাবাদ উপজেলায় সফরে আসেন। এ সময় ছারছীনা দরবার শরীফের মরহুম পীর ছাহেবদের মাজার শরীফ জিয়ারত করার উদ্দেশে দরবার শরীফে প্রবেশ করেন। জিয়ারাতের পর তিনি ও তার সফরসঙ্গীরা ছারছীনায় জোহর নামাজ আদায় করেন এবং বর্তমান গদ্দীনশীন পীর ছাহেব আলহাজ হযরত মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমাদ হুসাইনের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তিনি মরহুম পীর বাহরে শরিয়ত, মুজাদ্দেদে জমান, কুতবুল আলম শাহ্ সূফী হযরত মাওলানা মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (রহ.)-এর বিভিন্ন অবদানের কথা স্মরণ করে স্মৃতিচারণ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সিনিয়র নায়েবে আমীর আলহাজ হযরত মাওলানা শাহ্ আবু বকর মোহাম্মদ ছালেহ নেছারুল্লাহ, নায়েবে আমীর আলহাজ মাওলানা মির্জা নূরুর রহমান বেগ, মির্জা মো. শোয়াইবুর রহমান বেগ, অতিরিক্ত নাজেমে আ’লা মাওলানা মো. আলী আকবর, ছারছীনা আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা রূহুল আমিন আফসারী সহ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীরের সফরসঙ্গী বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।