শুষ্ক মৌসুমেও পদ্মা নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে : কুষ্টিয়ায় শুষ্ক মৌসুমেও ভাঙছে পদ্মা, অসহায় নদীপাড়ের মানুষ
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৪৯
কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার মিরপুরে শুষ্ক মৌসুমেও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে প্রমত্ত পদ্মায়। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শত শত হেক্টর ফসলি জমি, বসতবাড়িসহ অনেক স্থাপনা। পদ্মার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এসব এলাকায় ভাঙন তীব্র হচ্ছে।
এদিকে গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে প্রায় পৌনে ৩ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে স্থানীয় এলাকাবাসী। সকাল ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত উপজেলার বহলবাড়িয়া এলাকার কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে তারা। মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় সড়কের দুই পাশে বাস ট্রাকের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। পরে পুলিশের আশ্বাসে মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয় স্থানীয় এলাকাবাসী।
জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমেও পদ্মা নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার তালবাড়িয়া, বহলবাড়িয়া, ইউনিয়নের সাহেবনগর, বারুইপাড়া ইউনিয়নের মির্জানগরে বেশকিছু এলাকা পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়ছে শত শত হেক্টর ফসলি জমি, বসতবাড়িসহ অনেক স্থাপনা। পদ্মার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এসব এলাকায় ভাঙন তীব্র হচ্ছে।
এর আগে পদ্মা নদীতে তিনটি জাতীয় গ্রিডের বৈদ্যুতিক টাওয়ার পোল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চরম হুমকির মুখে পড়েছে বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী জাতীয় মহাসড়ক। শুষ্ক মৌসুমেও ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে নদীতীরবর্তী মানুষের। অনেকেই নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কায় বসতবাড়ি ভেঙে অন্যত্রে সরিয়ে নিয়েছেন। এসব এলাকার মানুষ ফসলি জমি ও বসতভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, শুষ্ক মৌসুমেও পদ্মা নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। পদ্মা নদীর ভাঙন রোধ করার জন্য অনুমোদিত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তবে অনিবার্য কারণবশত সেটি বিলম্ব হচ্ছে। অবিলম্বে ভাঙন রোধে প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিন স্থানীয় সাহেবনগর ও মির্জানগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শুষ্ক মৌসুমেও পদ্মা নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদী পাড়ে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করতে আসা শ্রমিকরা।
স্থানীয় মোহাম্মদ হারুন নামের শ্রমিক নদীর ভাঙন দেখিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের এখানে থাকার ঘর ছিল। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে নদীতে সবকিছু নামিয়ে নিয়ে চলে গেছে। থাকার ঘরটাও সরিয়ে নিতে পারিনি। এখনো আতঙ্কে রয়েছে কখন কি হয়।
নদীর পাড়েই কথা হয় মো. লিটন নামের এক শ্রমিকের সাথে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও এখানে দুই বিঘার মতো জায়গা ছিল। এখানে ঘরবাড়ি, রান্নাঘর ছিল। এক রাতের ভেতরে নদীতে সবকিছু নামিয়ে নিয়ে গেছে। আশপাশে যে কয়টা ঘর আছে আমরা ভয়ের ভেতরে আছি আবার কখন সবকিছু নদীতে না নিয়ে নিয়ে যায়। আমরা শক্তি পাচ্ছি না এখানে থাকার। নদীভাঙন রোধে দ্রুত কাজ করতে না পারলে এখানকার ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবকিছু নদীগর্ভে চলে যাবে।
স্থানীয় নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অপু বলেন, আমাদের পদ্মা নদীর অংশে ছয়টি চ্যানেল হয়েছে। এর মধ্যে মূল চ্যানেলটি হয়েছে আমাদের এ জনবহুল এলাকার মধ্য দিয়ে। ফলে এখনো মেসিভ পরিমাণ ভাঙন হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করবে। কিন্তু এখন তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানুয়ারিতে কাজের কথা বলছেন। দ্রুত কাজ শুরু না হলে আবারো কর্মসূচি দেয়া হবে।
মিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বলেন, মিরপুরে পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। পরে তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে অবরোধ তুলে নেয়।