ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহারে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৩১
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা : মানুষ রূপচর্চার জন্য বহু বছর ধরে প্রসাধনীসামগ্রী ব্যবহার করে আসছেন। আধুনিক জীবনে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে ড্রেসিং টেবিলে ভিড় বেড়েছে প্রসাধনীর। ত্বকের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী কিনে থাকেন অনেকে। আধুনিক জীবনের উৎকর্ষতায় আবার ঘরে বসেই পরিচয় হয় অনেক নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনীসামগ্রীর সঙ্গে। শহরের অলিগলির কসমেটিকসের দোকান কিংবা সুপারশপ ছাড়াও এখন আরও একটি মাধ্যম যোগ হয়েছে এসব প্রসাধনীসামগ্রী বিক্রির ক্ষেত্রে। আর তা হলো অনলাইন মাধ্যমে প্রসাধনীসামগ্রী বেচাবিক্রি। হাত বাড়ালেই মেলে বিভিন্ন ধরনের রং ফরসা করা ক্রিম, পাউডার, সাবান, লোশন, জেল প্রভৃতি। এসব উপকরণ ত্বক উজ্জ্বল করা ও সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
কুষ্টিয়ার বিভিন্ন দোকানে নামিদামি ব্র্যান্ডের এসব প্রসাধনীর ছড়াছড়ি। তবে এসব প্রসাধনীর ভিড়ে ভেজাল বা নকল এবং মানহীন প্রসাধনীরও অভাব নেই। পাড়া-মহল্লার ছোট-বড় দোকান থেকে শুরু করে শহরের বিপণিবিতান সবখানেই মিলেমিশে আছে মানহীন এসব প্রসাধনী। সুদৃশ্য মোড়কে নামি-দামি ব্র্যান্ডের ভেজাল এসব প্রসাধনী বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন বাজার ও সুপারমার্কেটে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এসব ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে তাৎক্ষণিক ফর্সা হলেও দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের ক্ষতিসহ শরীরে দেখা দিচ্ছে নানা রোগের সংক্রমণ। এতে মারাত্মকভাবে বেড়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
কুষ্টিয়ার নুরুজ্জামান বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, আমাদের অনেকের মধ্যে একটি ধারণা হচ্ছে সুন্দর হওয়ার মাপকাঠি মানেই সাদা হওয়া। এটি নিতান্ত একটি ভ্রান্ত ধারণা। এ ধারণা থেকে অবশ্যই আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত।
তিনি আরও বলেন, সব রঙের ত্বকই স্বতন্ত্র সৌন্দর্য ধারণ করে। অতএব সাদা হওয়ার বাড়তি কসরত করা তেমন জরুরি নয়। তবে যদি কৃত্রিম উপায়ে ত্বক উজ্জ্বল করতেই হয়, তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। তাহলে ত্বক সংক্রান্ত সমস্যায় পড়তে হবে না। আর যারা বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে ভেজাল প্রসাধনীসামগ্রী ব্যবহারে উৎসাহিত করছেন তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। এতে ভেজাল কারীদের দৌরাত্ম্য কমে আসবে। ফলে একদিকে কমে যাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি; অপরদিকে লাভবান হবে ক্রেতাসাধারণ।
কুষ্টিয়ার একটি বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শাফফাত হোসাইন রানা বলেন, ভেজাল প্রসাধনীগুলোয় সাধারণত যে নরমাল স্কিনটা আছে স্কিনের ফ্লোরাগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে। অনেক সময় স্কিনগুলো পুড়ে যাচ্ছে। স্কিনের কালার চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। অনেক কসমেটিক আছে, যেগুলো ফর্সা হওয়ার জন্য ব্যবহার করে। এগুলো ব্যবহার করলে দেখা যায় যে ৭ দিনের মধ্যে স্কিনটা ফর্সা করে দিচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে যে স্কিনের যে মেলানিনটা থাকছে, সেই মেলানিনগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এগুলোর পরে দেখা যাচ্ছে ওই জায়গাগুলোয় ধিরে ধিরে ইনফেকশনে পরিণত হচ্ছে। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ইফেক্টিভ হচ্ছে। ইনফেকশন থেকে একপর্যায়ে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
কুষ্টিয়ার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মো. তৌছিফুর রহমান বলেন, অল্প বয়সীদের মধ্যে ব্রণ এবং স্কিন ইনফেকশনের প্রবণতা যেমন বাড়,ে ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ফিল্ড কর্মকর্তা দীপঙ্কর কুমার দত্ত বলেন, প্রসাধনীতে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার হচ্ছে। এগুলো পরীক্ষা ছাড়া ধরাটা কঠিন হয়ে যায়। যখন টেস্টে পাঠানো হয়, তখন এর মধ্যে কেমিক্যালের পরিমাণ কি পর্যায়ে আছে, তখন দেখা যায়। তাছাড়া কি কেমিক্যাল মিশিয়ে করছে এটা আমাদের খালি চোখে বোঝার কোনো উপায় থাকে না।