ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনে কুগেলম্যান মিশন চীনের জুজুর ভয় এবং বাস্তবতা
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৪৫
ওয়াশিংটনভিত্তিক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান
॥ হারুন ইবনে শাহাদাত ॥
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পক্ষের কূটনৈতিক উকিল কুগেলম্যান আবার মাঠে নেমেছেন। তিনি চীনের জুজুর ভয় দেখিয়ে বাংলাদেশকে ভারতমুখী করতে তৎপরতা শুরু করেছেন। ভারতের দাসত্ব থেকে মুক্তির ভুল ব্যাখ্যা করে চীনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এবং পশ্চিমা; বিশেষ করে আমেরিকার কর্তৃত্ব ক্ষুণ্নের জিকির তুলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। এ অপতৎপরতার অংশ হিসেবে গত ৩০ জানুয়ারি ভূরাজনীতিবিষয়ক এক প্যানেল আলোচনায় ওয়াশিংটনভিত্তিক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান মন্তব্য করেছেন, ‘চীনের দিকে হেলে পড়লে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ আসতে পারে।’ ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের জিওপলিটিক্যাল ইনসাইটস ‘বাংলাদেশ অ্যাট জিওপলিটিক্যাল ক্রসরোডস’ (ভূরাজনীতির সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ) শীর্ষক আলোচনায় কুগেলম্যানের বক্তব্য ঘিরে রাজনীতি বিশ্লেষকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। দিল্লির স্বার্থ রক্ষার অভিযোগ কুগেলম্যানের বিরুদ্ধে এটি নতুন নয়। ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারও এ সন্দেহের তালিকামুক্ত নয় বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনে দিশেহারা ভারত। ভারতের উগ্রহিন্দুত্ববাদী বর্তমান বিজেপির (ভারতীয় জনতা পার্টি) শাসনে দেশটির গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ খুলে গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ দাবি করলেও সেখানে এখন চলছে ফ্যাসিস্ট ও র্যাসিস্ট শাসন। প্রতিবেশী দেশগুলোর গণতন্ত্র বিকাশে ভূমিকা রাখার বদলে ভারতের একশ্রেণির নেতা ব্যস্ত ছলে-বলে যেকোনো কলে-কৌশলে সে সব দেশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। ভারতের কংগ্রেস সরকার ২০১৩ সালে সুজাতা সিং মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংসের বীজ রোপণ করেছিল। সেই বীজের বিষবৃক্ষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিরোধীদলহীন একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় দশক ভারতের প্রত্যক্ষ মদদে হাসিনা বাংলাদেশে জুলুমতন্ত্র চালিয়েছেন। বাংলাদেশের ভোটাধিকারহারা মানুষের অভিশাপে নিখিল ভারতীয় কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে একই বছর ভারতের ক্ষমতার মসনদে বসেন গুজরাটের কসাই বলে পরিচিত বিজেপি নেতা নরেন্দ্র দামোদর মোদি। তার নেতৃত্বে ভারতে চলছে ফ্যাসিস্ট ও উগ্রহিন্দুত্ববাদী র্যাসিস্ট শাসন। তৎকালীন ভারত সরকারের আওয়ামী লীগের পক্ষে অন্ধ সমর্থনমূলক বাংলাদেশনীতি সম্পর্কে রাজনীতি বিশ্লষকরা সতর্ক করেছিলেন।
সেই সময় একটি জাতীয় দৈনিকের উপসম্পাদকীয় নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘কূটনীতিকদের মতে, ভারতকেও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে তার বাংলাদেশনীতি গ্রহণ করা উচিত। পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি অগ্রাধিকার পেলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক টেকসই হবে না। ভারতে দীর্ঘদিন কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেনÑ এরকম একজন বাংলাদেশি কূটনীতিক বলেছেন, ভারত যেমন অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বহুদলীয় বা জোটগত সম্পর্ককে গুরুত্ব দিচ্ছে, তেমনি পররাষ্ট্রনীতিতেও তাদের উচিত বহুপক্ষীয় সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়া। অর্থাৎ সব ডিম এক ঝুড়িতে না রাখার নীতি গ্রহণ করা। তবে ঝুড়িটি তলাবিহীন কিনা, তা-ও পরখ করে নেওয়া দরকার।’ কিন্তু ভারত সরকার চীনের মোকাবিলায় এশিয়া আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং পশ্চিমাদের ও আমেরিকার স্বার্থ রক্ষার মিথ্যা মুলা ঝুলিয়ে এ অঞ্চলের জমিদারির স্বত্ব নিয়েছিল। কিন্তু ভারত আসলে অন্য কারো নয়, তার নিজের স্বার্থ রক্ষা করা ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করেনি। দেশটি নিজের স্বার্থের প্রশ্নের মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সুশাসনকেও ‘বলি’ দিয়েছে। ভারতের এ চালাকি আমেরিকা ও পশ্চিম দুনিয়ার কাছে ধরা পড়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার একনায়ক রাশিয়ার শাসক পুতিনের পক্ষ নেয়ার পর। তারা ভারতের চোখে বাংলাদেশ ও এশিয়ার অন্যান্য দেশকে দেখা বাদ দেয়। নিজের চোখে দেখতে শুরু করে। এ অঞ্চলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় ভারতের ব্যর্থতা এবং প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের আগ্রাসী হস্তক্ষেপ; এমনকি গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর বিভিন্ন দেশে অবৈধ প্রবেশের মাধ্যমে বিরোধীদলের নেতা-কর্মী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের গুম-খুনের মিশন প্রকাশ্যে আসে। তখনই জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার চাপে বিশ্বনেতারা ভারতের জমিদারির অবসানে তৎপর হয়। ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে মালদ্বীপ, ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের জনগণের আন্দোলন ন্যায্যতা পায়। একে একে অবসান হতে থাকে ভারতের আধিপত্য। সেই ধারাবাহিকতায় জেগে ওঠে বাংলাদেশের তরুণ ছাত্র-জনতা। সব রাজনৈতিক দল-মতের এবং সর্বস্তরের মানুষের এ জাগরণকে কর্তৃত্ববাদী হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ইসলামী জঙ্গিবাদের উত্থান তকমা দিয়ে দমনের চেষ্টা করে। ভারত এ কাজে তার কূটনৈতিক মিশন, থিঙ্কট্যাঙ্ক এবং গদি মিডিয়াকে মাঠে নামায়। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির খোলা আকাশের এ যুগে তাদের সব অপতৎপরতা সচেতন বিশ্বাসীর কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যায়। হাসিনার শত অত্যাচার, জুলুম-নির্যাতন, গুম, খুন, গুলি, বোমা ব্যর্থ হয়। জনতা ওড়ায় বিজয়কেতন। খুনের দায়ে অভিযুক্ত হাসিনাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করে বিশ্বের মানবাধিকারের পক্ষের প্রতিটি দেশ। তারপরও ভারত তার এ সেবাদাসীকে আশ্রয় দিয়েছে। এখন তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পুনর্বাসনের। এজন্য আমেরিকা-চীন দ্বন্দ্বের জুজুর ভয় দেখাচ্ছে।
আমেরিকা-চীন দ্বন্দ্বের জুজুর ভয় এবং বাস্তবতা
বিশ্ব রাজনীতিতে চীন খুবই সতর্ক খেলোয়াড় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা কারো সাথে খুব সহজে যুদ্ধের মতো দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না। তারা মূলত ব্যবসায়ী জাতি। ক্ষমতা, কর্তৃত্ব এবং ব্যবসার প্রশ্নে তারা প্রথম দুটির ব্যাপারে ছাড় দিতে কার্পণ্য করে না ব্যবসায়িক স্বার্থ ঠিক থাকলে। তারা যে যুদ্ধ এড়ানোকে অগ্রাধিকার দেয়, তার ঐতিহাসিক নিদর্শন চীনের প্রাচীর। খ্রিস্টপূর্বাব্দ ২২০ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং বিখ্যাত এ প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন সেই সময়ের যুদ্ধবাজ জাতি মাঞ্চুরিয়া আর মঙ্গোলিয়াদের আক্রমণ থেকে দেশ রক্ষা করতে। বর্তমান চীনও তার বড় প্রতিবেশী ভারত সীমান্তে অস্ত্র ব্যবহার না করার চুক্তি করেছে। প্রথাগত অস্ত্র ব্যবহার না করার এ চুক্তি কঠোরভাবে রক্ষা করে চলছে। সেই চীন বিশ্বের পরাশক্তি আমেরিকার সাথে যুদ্ধে জড়াবে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের কারণে, আমেরিকার সাথে দূরত্ব বাড়বে সবই অবাস্তব কল্পনা। বিশ্লেষকরা বলেন, চীনের বিশাল বিনিয়োগ আছে আমেরিকায়। ব্যবসা-বাণিজ্যিক বন্ধুত্বসুলভ প্রতিযোগিতা নতুন নয়। দেশে দেশে এ প্রতিযোগিতা ছিল এবং থাকবে। বাংলাদেশ প্রভুত্ব নয়, বন্ধুত্ব চায়। কিন্তু ভারত বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের ছোট ছোট দেশগুলোর ওপর প্রভুত্ব করতে আমেরিকা ও চীনের জুজুর ভয়ের অপব্যবহার করছে। পশ্চিমা বিশ্ব গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে গুরুত্ব দেয়। সর্বশেষ বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান তলানিতে। বিশেষ করে দেশটি সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষায় শুধু ব্যর্থই নয়, বরং এক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সরকার দস্যুর ভূমিকায়; বিশেষ করে বর্তমান বিজেপি সরকার ভোটে জিততে হিন্দুত্ব কার্ড ব্যবহারে মুসলিম, খ্রিস্টান এবং নিম্নবর্ণের হিন্দু তফসিলি সম্প্রদায়ের অধিকার হরণ করছে প্রতিনিয়ত।
বিবিসির উত্তর আমেরিকাবিষয়ক সম্পাদক জন সোপেল বলেন, ‘আমেরিকার বর্তমান সরকার তার মিত্রদের বলতে চাইছে যে, পশ্চিমা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের শ্রেষ্ঠত্ব বাকি বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। বাকি বিশ্বকে বলতে হবেÑ চীনের বিনিয়োগ নিয়ে আখেরে তাদের বিপদে পড়তে হবে, চীন মানবাধিকারের তোয়াক্কা করে না, সুস্থ প্রতিযোগিতার ধার ধারে না।’ তাই হাসিনার পতন এক্ষেত্রে আমেরিকা ও পশ্চিমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। এখন বাংলাদেশ, সরকার, রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব ও মিডিয়ার দায়িত্ব সেই খোলা চোখের সামনে তুলে ধরা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শের সাথে নাৎসি ও ফ্যাসিবাদী আদর্শের কোনো পার্থক্য নেই। তারপরও ভারত শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চায়; যা শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়া তথা গোটা বিশ্বের জন্য হুমকি। হাসিনার দোসররা পাচার করা অর্থে গোটা বিশ্বে মাফিয়া রাজত্ব গড়ে তুলেছে। তাই তাদের সাথে তেমনই আচরণ করতে হবে, যেমন আচরণ করা হয় হিটলার, মুসোলিনি ও তার আদর্শের অনুসারীদের সাথে। তবেই ফ্যাসিবাদ মোকাবিলার সংগ্রামে বাংলাদেশ গোটা বিশ্বকে পাশে পাবে।
মাইকেল কুগেলম্যানরা যেন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করে দেশের সাধারণ মানুষ এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করার সুযোগ না পান, সেই চেষ্টা জোরদার করতে হবে। এ কাজে বাংলাদেশ সফল হলে ট্রাম্প প্রশাসনের শাসনে বাংলাদেশ অনেক সুবিধা পাবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
ট্রাম্প প্রশাসনের শাসনে বাংলাদেশ অনেক সুবিধায়
যদিও মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দেশের পররাষ্ট্রনীতি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা চাপের মুখে রয়েছে। কারণ ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বড় চার দেশ একে অন্যের সঙ্গে নানাভাবে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন কেমন আচরণ করবে, তা অজানা। তবে বাংলাদেশ যাতে চীনের দিকে হেলে না পড়ে, সেজন্য ট্রাম্প প্রশাসন চাপ দিতে থাকলে বাংলাদেশকেও কোনো না কোনো পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তবে অন্যান্য নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশ ক্রয়াদেশ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুফল পেতে পারে। কম ও মধ্যম দামের পোশাকের ক্রয়াদেশের একটি অংশ চীন থেকে সরে বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করা যায়। জাপান, কোরিয়া; এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিকারক চীনা কোম্পানিগুলোও এখন কারখানা অন্য দেশে সরিয়ে নিতে বাধ্য হতে পারে।’ অবশ্য তিনি একটি আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ রপ্তানি খাতে এগিয়ে গেছে বাণিজ্য উদারীকরণের সুযোগ নিয়ে। এখন বড় বাজারগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রের মতো আমদানিতে শুল্কারোপ শুরু করে, সংরক্ষণবাদিতা শুরু হবে। এতে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোরই অসুবিধা হবে।’ তবে এ শঙ্কা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বলে মনে করেন বিশ্বের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জোসেফ স্টিগলিৎজ বলেন, কার্যত সব অর্থনীতিবিদ মনে করেন, শুল্কের প্রভাব যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, পুরো বিশ্বের জন্যও খুব খারাপ হবে। ট্রাম্পের এ পদক্ষেপে প্রায় নিশ্চিতভাবেই মূল্যস্ফীতি বাড়বে। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকার সময় চীনের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছিলেন। জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যে শুল্কারোপ করেছিল। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া বাণিজ্য টানাপড়েন তখন বাণিজ্যযুদ্ধ হিসেবে পরিচিতি পায়।
এবারও আমেরিকার শুল্কারোপের প্রতিবাদে বিভিন্ন দেশ পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাদের পাল্টা ব্যবস্থায় কাজও হচ্ছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা গেছে, ট্রাম্প একের পর এক তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছেন। তাই ভয়ের কিছু নেই। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে আমেরিকার অবস্থান পরিবর্তনের আশঙ্কা নেই। কারণ তিনি হিটলার নন।
লেডি হিটলার এবং হিটলার নন
হাসিনা ইতোমধ্যে লেডি হিটলার পরিচিতি পেয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্পের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণার মেঘ আস্তে আস্তে কাটতে শুরু করেছে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এমন নেতিবাচক অভিযোগ করা হলে তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প জোরালো গলায় প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, তাঁর স্বামী ‘হিটলার নন’ এবং তাকে (ট্রাম্পকে) হিটলারের সঙ্গে তুলনা করা ‘ভয়ানক’।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ভারত তার সেবাদাসী হাসিনার পুনর্বাসনে নেতিবাচক প্রচারণার যে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, তাতে তারা সফল হবে না। তবে তাই বলে আমাদের চুপচাপ বসে থাকলে চলবে না। তাদের মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তির যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, “অনেক মিডিয়া; বিশেষ করে ভারতীয় ‘মিস ইনফরমেশন’ ছড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দায় চাপাবো ভারতীয় মিডিয়ার ওপর। তারা যাচাই না করে সংবাদ প্রচার করছে, যার প্রেক্ষিতে ভারতীয় জনগোষ্ঠী ক্ষেপে যাচ্ছে। ভারতীয় মিডিয়া আমাদের জাতিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। আমরা বিশ্বের নামকরা অনেক মিডিয়ার সাথে কথা বলেছি। কিন্তু ইন্ডিয়ান মিডিয়া আগে থেকে ঠিক করে রাখা প্রতিবেদন প্রচার করছে।”