জনসমর্থন ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে : এগিয়ে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী


৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:০০

॥ হারুন ইবনে শাহাদাত ॥
মিথ্যা অভিযোগে অত্যাচার-নির্যাতন করে কষ্ট দিয়ে ন্যায়ের পথের কোনো কাফেলাকে ধ্বংস করা যায় না। বরং ষড়যন্ত্রকারী ফ্যাসিস্টরাই জুলুমের অন্ধকার গহ্বরে হারিয়ে যায়। জালিমের জুলুম-নির্যাতন ও অপকর্ম পৃথিবীর ইতিহাসের পাতা থেকে কখনো হারিয়ে যায় না। এ কথা বোঝাতে আমেরিকান লেখক হ্যারিয়েট জ্যাকবসের (১৮১৩-১৮৯৭) বিখ্যাত উক্তি, “There are wrongs which even the grave does not bury.” অর্থাৎ এমন কিছু ভুল আছে, যা কবরেও দাফন করা যায় না। মানে হলো কিছুতেই লুকানো যায় না। বরং সেই ভুলের পরিণতিতে জালিম শাসকের পতন হয়, রাজআসনে অভিষিক্ত হন মজলুমের প্রতিনিধিরা। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন ও পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ফিনিক্স পাখির মতো উত্থানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এমন ইতিবাচক পরিবর্তনেরই পূর্বাভাস দেখছেন। ‘শহীদের রক্ত বৃথা যায় না, রক্ত সিঁড়ি বয়ে আসে বিজয়’- দেশের রাজনৈতিক পালাবদল সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞ বিশ্লেষকরা। দেশ-বিদেশে বাংলাদেশ জামায়তে ইসলামীর প্রতি শুধু আগ্রহই বাড়ছে না, সমর্থন ও প্রভাবও বাড়ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমীর ডা. শফিকুর রহমানের ইতিবাচক ইমেজ ও নেতৃত্বের প্রভাবে ‘ইসলামফোবিয়া’ কেটে গেছে। ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামী নিয়ে যে অহেতুক ভীতি ছিল, তা দূর হয়ে গেছে এবং যাচ্ছে- এ উপলব্ধি আধুনিক শিক্ষিত ও বর্তমান প্রজন্মের।
আধুনিক শিক্ষিত ও বর্তমান প্রজন্মের উপলব্ধি
আধুনিক শিক্ষিত ও বর্তমান প্রজন্মের উপলব্ধি এবং মতামত বিশ্লেষণ করলে জামায়াতের জনপ্রিয়তার কারণ ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না।
এ প্রসঙ্গে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার পুত্র ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘উনি (ডা. শফিকুর রহমান) জামায়াতের আমীর একজন মডার্ন। আমি মনে করি, উনার হাত ধরে এ দেশে জামায়াত অনেক দূর এগিয়ে যাবে। উনার পরিবারে সব মহিলা উচ্চ শিক্ষিত ডাক্তার। তাই কেউ যদি প্রশ্ন তোলে মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে জামায়াতের আমীরের মতবিরোধ নিয়ে, তাহলে তা হবে হাস্যকর। ১৬ বছর রাজপথে দাঁড়াতে পারেনি জামায়াত, তারপরও তারা দমে যায়নি।’ শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর জামায়াত জনপ্রিয় হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘জামায়াত এমনিতেই জনপ্রিয়। মানুষ তাদের সম্মান করে। সকল রাজনৈতিক দলেরই অর্থ (অর্থনৈতিক দুর্নীতি) নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আজ অব্দি জামায়াতের এমন কোনো বিষয় নেই যে, রাজনীতিতে এসে কোটি টাকার মালিক হয়েছে।’
আধুনিক চিন্তা-চেতনার ধারক ড. রেজা কিবরিয়া বিশ্বের অন্যতম অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া করে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। তার মতো এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থা বাড়ছে। এ প্রতিবেদকের সাথে কথা প্রসঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাকের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমীর ডা. শফিকুর রহমান আমার অন্যতম প্রিয় ব্যক্তিত্ব। তার বক্তব্য শোনার পর আমার ইসলাম ও ইসলামী রাজনৈতিক দর্শনের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। নারীর স্বাধীনতা নিয়ে যে ভয় ছিল, তা কেটে গেছে। ইসলাম যে একটি আধুনিক আদর্শ, এ ব্যাপারে আমার মনে আর কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসাদ জানান, ‘শত অত্যাচার-নির্যাতনের পরও জামায়াতে ইসলামীর অগ্রযাত্রায় এ দলটির প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। তারপর থেকেই আমি বুঝতে পারি, জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার বিরোধিতা না, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছিল, যে সত্য তারা পঞ্চাশ বছর আগে বুঝেছিল, তা অন্যরা একটু একটু করে এখন বুঝতে পারছে।’
অর্ধশতাব্দী আগের ভিত্তিহীন অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ের অমানবিক ঘটনার বোবাকান্না আওয়ামী লীগের দলকানারা দেখতে না পেলেও হৃদয়বান প্রতিটি মানুষ তা উপলব্ধি করেছেন। দেশ-বিদেশের বিশ্লেষকরা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এর ফলে জামায়াতে ইসলামীর দলপ্রিয়তা বাড়বে। কারণ জামায়াতে ইসলামী তথাকথিত কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি আদর্শভিত্তিক একটি কাফেলা। যাদের লক্ষ্য দুনিয়ার সীমানার বাইরেও বিস্তৃত। এ সংগঠনের প্রত্যেক নেতা-কর্মী বিশ্বাস করেন, মানুষকে মানুষের গোলামি থেকে মুক্তি দেয়াই প্রকৃত স্বাধীনতা। রাষ্ট্রক্ষমতা উপলক্ষ্য মাত্র, মূল্য লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমে দুনিয়ার ও পরকালের কল্যাণ লাভ করা। আওয়ামী লীগ ও হাসিনা এ সত্য বুঝতে ব্যর্থ হয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার অমানবিক খেলায় মেতে উঠেছিলেন।
ভিত্তিহীন অভিযোগ ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা
পতিত স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট হাসিনা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পূরণ করতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে যে অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন করেছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে সত্যি বিরল। জামায়াতের সাবেক আমীর ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। যা দেশে-বিদেশে জুডিশিয়াল কিলিং এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে ব্যাপকভাবে নিন্দিত হয়েছে, ভিত্তিহীন সাজানো মামলায় তাদের হত্যার আদেশ বাতিল করতে জাতিসংঘসহ বিশ্বের সকল মানবাধিকার সংস্থা বার্তা দিয়েছিল। আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও রাজনৈতিক দলের নেতারা অনুরোধ জানিয়ে হাসিনাকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে খুনের নেশায় মত্ত হাসিনা থামেননি। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে তিনি হত্যা-ষড়যন্ত্রের পথই বেছে নিয়েছিলেন। তার আক্রোশের শিকার হয়ে, কারানির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ভাষাসৈনিক, ডাকসুর সাবেক জিএস, কেয়ারটেকার সরকার ফর্মুলার প্রবর্তক বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, নায়েবে আমীর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মাওলানা একেএম ইউসুফ ও মাওলানা আবদুস সুবহান। এখনো কারাগারে আছেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। উল্লেখিত জাতীয় নেতারা ছাড়াও অসংখ্য নেতা-কর্মী খুন, গুম ও কারানির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শাহাদাত বরণ করেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি; এমনকি ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও একদিনের জন্যও তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে পারেনি হাসিনার দুঃশাসন।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, ফ্যাসিবাদীরা মনে করে, দমন-পীড়নের মাধ্যমেই প্রতিপক্ষকে দমন করা সম্ভব। কারণ যুগে যুগে পতিত ফ্যাসিবাদ জনতার প্রতিরোধে ফিরে আসতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা সেই আয়নায়ই আদর্শিক রাজনৈতিক শক্তির মূল্যায়ন করে ভুল করে। ফ্যাসিবাদীর প্রতি রাষ্ট্র কঠোর হলে জনগণ তাকে সমর্থন করে, তারাও সরকারকে সহযোগিতা করে। কিন্তু উল্টো ঘটনা ঘটে আদর্শিক রাজনৈতিক শক্তির ক্ষেত্রে। তাই যারা ভাবছেন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে আবার ফিরে আসবে, তাদের এ চিন্তা ভুল। কারণ ফ্যাসিবাদ জার্মানি ও ইতালিতে ফিরে আসেনি। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশেও ফিরে আসার উদারণ নেই। কারণ ফ্যাসিবাদীদের প্রতি থাকে জনগণের রাগ-ক্ষোভ ও ঘৃণা। অন্যদিকে আদর্শিক দলের প্রতি থাকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতি যে এমন ঘটনা ঘটবে, সেই ইঙ্গিত বিশ্লেষকরা অনেক আগেই দিয়েছিলেন।
অনেক আগের সেই ইঙ্গিত
শত অত্যাচার-নির্যাতনের পরও দেশে ইসলামপন্থীদের পক্ষে জনসমর্থন বাড়ছে। বিশেষ করে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে বিগত দুই বছরে জনসমর্থন দ্বিগুণ বেড়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বিগত পর্যবেক্ষণ এবং ২০১৫ সালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) পরিচালিত জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য উঠে এসেছিল সেই ২০১৫ সালেই। জরিপটি পরিচালনা করেছে নিয়েলসন-বাংলাদেশ। গত ২০১৫ সালের মে ও জুন মাসে আড়াই হাজার প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের ওপর চালানো এ মতামত জরিপের একটি প্রশ্ন ছিল- আপনি কি জামায়াতে ইসলামীকে পছন্দ করেন, এ প্রশ্নের উত্তরে শতকরা ২৫ জন ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন। অর্থাৎ তারা জামায়াতে ইসলামীকে পছন্দ করেন। অথচ মোট প্রাপ্ত ভোটের হিসাব বিবেচনা করে গত ২০১৩ সাল পর্যন্ত রাজনীতি বিশ্লেষকদের প্রতিটি প্রতিবেদনেই তারা বলেছেন, জামায়াতের জনসমর্থন শতকরা ১২-১৩। এ হিসাবে দলটির জনসমর্থন দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
অথচ ২৮ অক্টোবর ২০০৬ সাল থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় এ ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ওপর অকথ্য নির্মম নির্যাতন অব্যাহত আছে। বিরামহীন অপপ্রচার, ভিত্তিহীন অভিযোগ, হয়রানি, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, রিমান্ড, নির্যাতন, ফাঁসি, গুম, খুনসহ হেন কৌশল অপকৌশল নেই, যা জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে না। তারপরও দলটির এগিয়ে যাওয়া এর বিরোধী শক্তির মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের অত্যাচার-নির্যাতনের ফলে দলটির প্রতি জনগণের সমর্থন বাড়ছে। অত্যাচার-নির্যাতন করে সরকার ভুল করছে, এতে সমর্থন আরো বাড়বে- এমন ইঙ্গিত ২০১৩ সালেই দিয়েছিলেন ইরানের এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক পীর মুহাম্মদ মোল্লাযেহি। ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর রেডিও তেহরান সূত্রে প্রকাশ, পীর মুহাম্মদ মোল্লাযেহি বলেন, ‘বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে দেশটির সরকার।’ সেই উদ্বেগ থেকেই জামায়াতে ওপর হাসিনা সরকার নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে। রাজনীতি বিশ্লেষকরা এ ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলেন, অত্যাচার-নির্যাতন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার অপচেষ্টা আখেরে সুফল বয়ে আনে না। ইতিহাস সাক্ষী নীরব-নিরীহ জনগণ ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মতো জেগে উঠলে তাকে সামাল দেয়ার ক্ষমতা কোনো স্বৈরশাসকের থাকে না। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টন হত্যাকাণ্ডের পর দেশে আরো অনেক খুন, গুম, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু হাসিনা পতন ঠেকাতে পারেনি। বরং জামায়াতে ইসলামীর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে
জামায়াতে ইসলামীর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ডাক পড়ছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের। এশিয়ার প্রভাবশালী দেশ সিঙ্গাপুর, চীন, ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে সম্পর্ক উন্নয়নের আহ্বান জানাচ্ছেন। ইসলামী আদর্শের বিপরীত আদর্শ কমিউনিজম এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তারাও আজ জামায়াতে ইসলামীর দিকে বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করেছে। জামায়াতের নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ ৯ জন গত ২৮ নভেম্বর চীন সফরে গেছেন। এ বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে একসময়ের জামায়াতে ইসলামীর কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত দৈনিক জনকণ্ঠ। প্রতিবেদনটি তুলে ধরার আগে উল্লেখ করা প্রয়োজন ভারতের আনন্দবাজার, হিন্দুস্তান টাইমসসহ অনেক বিখ্যাত পত্রিকায় জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সাক্ষাৎকারসহ একাধিক প্রতিবেদন গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করেছে। আল-জাজিরা, বিবিসি, ভোয়া, ঠিকানার মতো বিশ্বব্যাপী পরিচিত মিডিয়ায় প্রচার করেছে এবং দেশের ডেইলি স্টারে ছেপেছে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। বিশ্লেষকরা মনে করেন, জামায়াতে ইসলামীর প্রতি সমর্থন ও আগ্রহ বাড়ার কারণেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া গুরুত্ব দিচ্ছে।
গত ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ‘নেতাদের চীন সফর রাজনীতিতে নতুন বার্তা’ শিরোনামে দৈনিক জনকণ্ঠ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এত বলা হয়েছে, ‘২৪-এর অভ্যুত্থানের পর জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে নতুন আলোচনা তৈরি হয়েছে। দলটির প্রভাব বাড়ছে ভূরাজনীতিতে। ৫ আগস্টের পর জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমানের দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ নতুন করে আলোচনায় এসেছেন আগামীর রাজনীতিতে। শুধু সভা-সমাবেশেই থেমে থাকেনি জামায়াত। একের পর এক রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেছে।
সর্বশেষ প্রথমবারের মতো বেশ কয়েকটি ইসলামিক দল সঙ্গে নিয়ে জামায়াতের চলমান চীন সফর পথ দেখাচ্ছে অন্য ইসলামিক দলগুলোকেও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যুত্থানের পর পুনর্গঠনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এরপর এ সফরের মাধ্যমে ভূরাজনীতিতে দলটির গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। দেশে নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনীতি কোনো দিকে যাচ্ছে।’ জনকণ্ঠের প্রতিবেদনটিকে বলা হয়েছে, ‘হাসিনা সরকারের পতনে জামায়াতকে কাছে পেতে বেশ কয়েকবার ভারত থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় জামায়াতের সঙ্গে। তবে জামায়াতে ইসলামী সে ডাকে সাড়া না দিয়ে বৈঠক করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। ভারতের ডাকে সাড়া না দিয়ে জামায়াত যে কৌশল অবলম্বন করেছে, তাতে করে তরুণ প্রজন্মের কাছে নিজেদের অবস্থান অনেকটা পরিষ্কার করেছে দলটি। গত ২৮ নভেম্বর চীন সরকারের আমন্ত্রণে প্রথমবারের মতো বেজিং সফরে গেছে কয়েকটি ইসলামিক দল। যার নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।’
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি আদর্শিক রাজনৈতিক দলের উত্থান দেশের রাজনীতির জন্য এক ইতিবাচক বার্তা। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিবর্তনে তারা এ পরিবর্তনকে ইতিবাচক মনে করছেন, কারণ দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, সংগ্রামে দেশের জনগণ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বের প্রতি গভীর আস্থা রাখে। জনগণ নতুন বোতলে পুরনো পানীয় আর চায় না, এবার বোতল ও পানীয় দুটিই বদলাতে চায়।