সোনার বাংলা ডেস্ক : মিয়ানমারের দিক থেকে ২-৩ দফা গুলি ছোড়ার অজুহাতে কার্যত প্রবাল দ্বীপমালা সেন্টমার্টিনের সঙ্গে টেকনাফের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এর ফলে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংকটে পড়েছেন দ্বীপটির ১০ হাজার বাসিন্দা। সংকট মোকাবিলায় গত ১৪ জুন শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে জাহাজে ২০০ মেট্রিক টন খাদ্যপণ্য পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে টেকনাফে আটকে পড়া দেড়শ যাত্রীও ফিরছেন।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, নতুন করে গত ১৯ জুন বুধবার রাত থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মর্টার শেল ও গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের সীমান্ত এলাকা। এর মধ্যেই সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মিয়ানমারের তিনটি যুদ্ধজাহাজ। সাগরে মিয়ানমারের জলসীমায় গত দুদিন ধরে নোঙর করে আছে জাহাজগুলো। এতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গত ১৬ জুন রোববার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সেন্টমার্টিন নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং আরাকান আর্মির এ সংঘর্ষের কারণে নাফ নদী এবং নদীসংলগ্ন মোহনা এলাকায় বাংলাদেশি বোটের ওপর অনাকাক্সিক্ষত গুলির ঘটনা ঘটছে। আইএসপিআর জানায়, এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গভীর উদ্বেগ প্রকাশে করে গত ১২ জুন প্রতিবাদ জানায়। এরই ধারাবাহিকতায় মিয়ানমার নৌবাহিনী সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে মিয়ানমারের সমুদ্রসীমায় এবং নাফ নদীর সীমানায় অবস্থান করে মিয়ানমারের দিকে আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। একই সঙ্গে আরাকান আর্মিও মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ ও বোট লক্ষ করে গুলি করেছে। বর্তমানে মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমার নৌবাহিনীর একাধিক যুদ্ধজাহাজ অভিযান পরিচালনা করছে। মিয়ানমার নৌবাহিনী সেন্টমার্টিনের অদূরে মিয়ানমারের সমুদ্রসীমায় অবস্থানের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে অবহিত করছে।
আইএসপিআর আরও জানায়, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষটি মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ড এবং তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় চলমান। সেন্টমার্টিন দ্বীপের পাশে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের একাধিক জাহাজ মিয়ানমারের জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণসহ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় থেকে নিয়মিত টহল পরিচালনা করছে। মিয়ানমারের চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ সেন্টমার্টিনের নিকটবর্তী হওয়ায় সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়াচ্ছে। সকলকে এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ। প্রতিবেশী দেশে যুদ্ধের কারণে দেশের ভূখণ্ড থেকে সেন্টমার্টিনকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের ক্ষোভের আরেকটি বড় কারণ, চরম এ দুঃসময়ে নৌবাহিনী, বিজিবি পুরোপুরি নির্বিকার। গত ১৪ জুন শুক্রবার দ্বীপে খাবার পাঠানো হয়েছে, যাত্রীবাহী একটি জাহাজে করে। সেই জাহাজের নিরাপত্তায়ও কোনো বাহিনী দেখা যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, গত শুক্রবার (১৪ জুন) সকালে সেন্টমার্টিন জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, মিয়ানমারের ৩টি যুদ্ধজাহাজ সাগরে তাদের জলসীমায় নোঙর করে আছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের আওতাধীন সেন্টমার্টিনের বিচকর্মীদের সুপারভাইজার জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, গত রাতে মিয়ানমারের দিক থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ ভেসে এসেছে। গত শুক্রবার সকাল থেকে জেটিঘাট থেকে মিয়ানমারের জলসীমায় দেখা যাচ্ছে দেশটির ৩টি যুদ্ধজাহাজ নোঙর করে অবস্থান করছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, এ যুদ্ধজাহাজ মিয়ানমারের জলসীমায় গত দুদিন ধরে অবস্থান করছে। গত ১৪ জুন শুক্রবার সকালেও সেন্টমার্টিন জেটিঘাট থেকে জাহাজগুলো দেখতে পায় স্থানীয়রা। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গত তিনবার বাংলাদেশি ট্রলার ও স্পিডবোটে লক্ষ করে গুলি ছোড়ার ঘটনায় দ্বীপবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এবার যুদ্ধজাহাজ দেখতে পাওয়ায় নতুন করে আবারও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের আঁচ লাগছে এপারের বাংলাদেশের সীমান্তের গ্রামগুলোয়। বাংলাদেশি ট্রলারগুলোকে সীমান্তের ওপার থেকে গুলি করা হচ্ছে। যদিও কারা গুলি করছে, তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে সেন্টমার্টিন ইস্যু নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার মিয়ানমারকে কিছু বলতে পারছে না। বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। বর্তমান আওয়ামী শাসন আমলের মতো ঘন অমানিশা জাতির জীবনে আর কখনো আসেনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশে সরাসরি কোনো হামলা হয়নি। মিয়ানমারে বেশ কয়েকটি জাতিগত গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের অংশ হিসেবে সম্ভবত বিদ্রোহী গোষ্ঠী সাম্প্রতিক এসব ঘটনা ঘটিয়েছে, মিয়ানমার সরকার নয়। ‘সেন্টমার্টিন ইস্যুতে সরকার নতজানু পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে’ বিএনপি (বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) নেতাদের এমন অভিযোগের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিরোধীদলের একটা ভাষা আছে, সরকারি দলের সিদ্ধান্তকে তারা নতজানু আখ্যায়িত করে। কিন্তু কীভাবে নতজানু, সেটা একটু ব্যাখ্যা করে দিক না। তিনি বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে যে গুলি এসেছে, সেটা মিয়ানমার সরকার করেনি। এটা আরাকান আর্মি নামে যে বিদ্রোহীরা আছে, তাদের গুলি। যেকোনো উসকানির মুখে বাংলাদেশ যুদ্ধে না জড়িয়ে আলাপ-আলোচনায় সমাধানে বিশ্বাসী। সেখানে যে জাহাজের কথা বলা হয়, সে জাহাজ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মিয়ানমার উসকানি দিলে আমরা তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করব। একটা সমাধান বের করব। যুদ্ধে জড়াব না।’
মির্জা ফখরুল প্রশ্ন করেন, ‘এই শাসকগোষ্ঠী এতটাই আজ্ঞাবহ যে, মিয়ানমারের মতো দেশ সম্পর্কে তারা কিছু বলতে পারে না। এ মনোভাব কতটা আজ্ঞাবহ হতে পারে?’ মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সীমান্তে যখন বাংলাদেশিরা মারা যাচ্ছে এবং দেশের মানুষ যখন অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তখন তারা কোনো প্রতিবাদ করেনি।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- দিল্লি-বেইজিং দ্বন্দ্বক্ষেত্র ঢাকা?
- কে হচ্ছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
- উৎসবের পর ফিরছে মানুষ
- জলবসন্তের জীবাণু থেকে সাবধান
- বছরে ৯২ হাজার কোটি টাকা পাচার হয় : সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী
- মুসলমানদের ইতিহাস মুছে দিচ্ছে চীন
- ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল
- পানিবন্দি মানুষ চরম দুর্ভোগে : এ্যাড. জুবায়ের
- রাজপথে ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলুন : ড. রেজাউল করিম
- ইসলাম প্রচার সমিতির উদ্যোগে দুস্থ নওমুসলিমদের মাঝে কুরবানির গোশত বিতরণ
- উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে নিহত ৯
- সব দেশের সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় আফগানিস্তান
- ভারতে ফ্রিজে গরুর গোশত রাখার অভিযোগে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো ১১টি মুসলিম বাড়ি