চীনের প্রভাব খর্ব করতে চায় ভারত : ছাড় দেবে না এশীয় জায়ান্ট
॥ ফারাহ মাসুম ॥
ভারতে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর যেন বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারে নয়াদিল্লি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একদিকে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে সরাসরি প্রভাব বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে; অন্যদিকে কৌশলগত প্রভাব রয়েছে এমন কোনো প্রকল্পে চীনা বিনিয়োগে সরাসরি বাধা সৃষ্টি করতে চাইছে ভারত। এ নিয়ে তিক্তও হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে দিল্লি-ঢাকার সম্পর্ক। এক্ষেত্রে মোদির শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উৎসাহী উপস্থিতির পর আবার ২১-২২ জুন তার নয়াদিল্লিতে পরিকল্পিত সফর এবং তারপর ৯ থেকে ১২ জুলাই বেইজিং সফর খুব তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
জানা গেছে, দিল্লির মোদি সরকার বেইজিংয়ের সাথে ঢাকার ভারতের সমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কোনোভাবেই মানতে চাইছে না। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল এখন রাজনৈতিকভাবে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হলেও ঢাকা ক্রমেই বেইজিংয়ের সঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে চলেছে। চীন বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি বড় অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে ভারত তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প নিয়ে সবচেয়ে বড় আপত্তি দিয়ে নিজেরা এ প্রকল্পে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। আর এ প্রকল্প নিয়ে চীনা প্রস্তাব নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করাসহ অনেকদূর অগ্রসর হওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নিজেই জানিয়েছেন। এখন এটাকে ব্যালেন্স করার জন্য ভারতকে কী ধরনের সংবেদনশীল প্রস্তাব ঢাকার পক্ষ থেকে দেয়া হবে, সেটি দেখার বিষয়। ভারতের পক্ষ থেকে তিস্তা ব্যারাজ ছাড়াও ঢাকাকে মংলা বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে বলা হয়েছে ।
আলোচিত গণমাধ্যম ব্যানার নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল এবং হাসিনা সরকার বার বার ভারতকে আশ্বস্ত করেছে যে, চীনের সাথে তাদের সম্পর্ক ভারতকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে নয়, আর ঢাকা বেইজিংয়ের দিকে একেবারে ঝুঁকেও পড়ছে না। চীন সফর করার আগে সেই অবস্থানকে দিল্লির কাছে পুনরায় নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন শেখ হাসিনা তার ভারত সফরে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, মোদি প্রশাসনের এক দশকে ভারতীয় ব্যবসাগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্পষ্টতই অগ্রাধিকারমূলক আচরণ পেয়েছে। বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে আদানি গ্রুপের বিনিয়োগ এর একটি বড় উদাহরণ। গত সপ্তাহে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে ঘোষিত ভারতীয় কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছেন যে, নরেন্দ্র মোদি টাইকুন গৌতম আদানিকে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে বিনিয়োগে সুবিধা পেতে সাহায্য করেছেন।
ব্যানার নিউজে বলা হয়, নরেন্দ্র মোদির বিজেপির অংশীদাররা সম্ভবত বাংলাদেশের নীতি পরিবর্তন করবে না, তবে শক্তিশালী বিরোধীদলের এমপিরা সন্দেহভাজন বিদেশি চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে তার সরকারের প্রতি নয়াদিল্লির অটল সমর্থন থেকে উপকৃত হয়েছেন এবং ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি ভারতীয় প্রতিপক্ষ নরেন্দ্র মোদির সাথে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। মোদির তৃতীয় মেয়াদের জন্য শপথ অনুষ্ঠানে অন্যান্য বিদেশি নেতাদের সঙ্গে যোগদানের মাধ্যমে সেই সম্পর্ক অব্যাহত রাখার বার্তাই তিনি দিয়েছেন।
তবে ঢাকার কিছু পর্যবেক্ষক ভাবছেন যে, ভারতের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ভারতের আঞ্চলিক নীতিতে বিশেষ করে পাশের প্রতিবেশী বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতেও পারে। কারণ এবার ভারতীয় জনতা পার্টি আগের দুটি নির্বাচনে পাওয়া টানা সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। ফলে বিজেপিকে অন্য দলগুলোর সাথে জোট সরকার গঠন করতে হয়েছে। এর মধ্যে এমন দলও আছে, যাদের নীতির সাথে বিজেপির ঘোষিত নীতির মিল নেই। এর ফলে বিজেপিকে তার অংশীদারদের খুশি রাখতে হবে- যাতে তারা তাদের সমর্থন তুলে না নেয়। অবশ্য আবার অনেকে মনে করেন, এ জোটের অংশীদার বিদেশি নীতিতে কোনো পরিবর্তনের দাবি করার সম্ভাবনা কম। কারণ তারা বেশিরভাগ আঞ্চলিক দল আর তাদের রাজ্য ও অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য বেইজিংয়ের প্রতিযোগিতার মুখে ঢাকাকে পাশে রাখার বিষয়টি নয়াদিল্লির স্বার্থসংশ্লিষ্ট বলেই মনে করে অধিকাংশ দল। ভারতের শাসক ব্লক, তা কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) হোক বা বিজেপি-নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ), সর্বদাই বাংলাদেশের প্রতি তাদের নীতিতে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ভারতের নীতিনির্ধারকরা নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে উত্তেজনা এবং অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সাথে ফাটলের মধ্যে বাংলাদেশে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার থাকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। কারণ দেশটির বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবেশীদের প্রতি ভারতের নীতিকে হস্তক্ষেপকারী হিসেবে দেখা হয়।
ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুসারে, দিল্লির জন্য ঢাকায় একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার থাকার অর্থ প্রধানমন্ত্রী হাসিনার জন্য নিঃশর্ত সমর্থন, যিনি তার দেশকে টানা ১৫ বছর শাসন করেছেন। পশ্চিমা দেশ, মানবাধিকার গোষ্ঠী বা সুশীল সমাজের কর্মীরা অবাধ, মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথা বললেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং সাবেক রাষ্ট্রদূতরা তাদের প্রতিবেশীর প্রতিরক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
যখন বাংলাদেশের বিরোধীদলগুলো ঘোষণা করে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে তারা ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বয়কট করবে, তখন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকায় ভ্রমণ করেছিলেন এবং জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য চাপ দিয়েছিলেন। এ ঘটনার সময় ভারতে ক্ষমতায় ছিল ইউপিএ। পরে যখন বিজেপি ২০১৪ সালে নয়াদিল্লিতে অফিসে বসে, তখন দুই প্রতিবেশী আরও বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যাতে বাংলাদেশে আশ্রয় না নেয় এবং সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়, সেজন্য হাসিনার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন মোদি। আর বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ নির্বাচনে ভারতের অবিচল সমর্থন স্বীকার করেছেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘২০১৪ সালে যখন নির্বাচনকে ঘিরে অনেক ষড়যন্ত্র চলছিল, তখন ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। ২০১৮ সালে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার পাশাপাশি এটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল; ভারত তখনো আমাদের পাশে ছিল। আর এবার আপনারা সকলেই জানেন যে, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে ভারতের অবস্থান কী ছিল।’
২০২৩ সালের মে মাসে বাইডেন প্রশাসন ঘোষণা করেছিল যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে ক্ষুণ্ন করার জন্য সন্দেহভাজন বাংলাদেশিদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান বাংলাদেশে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বাংলাদেশের নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী দিল্লির হস্তক্ষেপের কারণে এটি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। দিল্লির একটি সূত্র বলেছে, সাউথ ব্লকের কর্মকর্তারা দেশটিতে একসময় উপরাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ডোনাল্ড লু’র ওপর প্রভাব বিস্তার করে বাংলাদেশের প্রতি ওয়াশিংটনের নীতিকে নমনীয় করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
আবশ্য সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর চোরচক্রের সদস্য হিসেবে আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কারণে আবার সেই ধারা ফিরে এসেছে কিনা তা নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, শেখ হাসিনার অতি ঘনিষ্ঠ সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের সহায়-সম্পদ নিয়ে ঝড় নামার পর আরো এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার ওপর একই ধরনের খড়গ নেমে আসছে। এরপর অর্থনৈতিক অঙ্গনের আরেক প্রভাবশালী ব্যক্তির ওপর চোরচত্রের সদস্য হিসেবে দুর্নীতির জন্য বিধিনিষেধ নেমে আসতে পারে বলে ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে। এটি ঘটলে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বড় ধরনের ঝড় আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে ভারতের এবারের নির্বাচনের ফলাফল স্পষ্ট হওয়ার পরই কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, দেশটির গত এক দশকে যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়া পূর্ব প্রতিবেশী বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক সম্ভবত স্থিতিশীল থাকবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমাদের গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।’
সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, মোদি এবং তার বাংলাদেশি প্রতিপক্ষ হাসিনার অধীনে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে সম্পর্ক গভীর এবং উভয়েরই নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য নীতিগত পরিবর্তন মোদির তৃতীয় সরকারের সময় হবে না।’
বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ এবং ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজও এ মতের প্রতিধ্বনি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কোনো কিছুই মোদিকে তার বিদেশনীতির উদ্দেশ্যগুলো চালিয়ে যেতে বাধা দেবে না। কারণ ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো তার সরকারকে সমর্থন দেয়া অব্যাহত রাখবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভারতকে একটি উদীয়মান বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরার বিষয়ে বিজেপি এবং বিরোধীদলগুলোর মধ্যে খুব বেশি মতবিরোধ নেই।’
তবে এর মধ্যেও সম্পর্কের মধ্যে একটি কাঁটা সম্ভবত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন এবং ভারতের সাথে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা। দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশীর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী এ দুই ইস্যুতে হাসিনার আওয়ামী লীগ দলের সদস্যরা নীরব থাকেন। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশকে বিকল্প হিসেবে বর্ষার পানি ধরে রেখে এ অববাহিকায় সেচ কার্যক্রম চালাতে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে চীনের পক্ষ থেকে অর্থায়ন করার বিষয়টি ঝুলে আছে বেশ ক’বছর থেকে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সংসদে বলেছেন, চীনের আর্থিক সহায়তায় তিস্তা প্রকল্পের অর্থনৈতিক ভায়াবিলিটি সংক্রান্ত সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী এমন একসময় জানালেন, যার অল্প ক’দিন আগে এ প্রকল্পে জাপানকে সাথে নিয়ে ভারত অর্থায়ন করতে চায় বলে জানিয়ে গেছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কুমার কোয়াত্রা তার বাংলাদেশ সফরের সময়।
তিস্তা ব্যারাজে অর্থায়নের জন্য ভারতের এ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে কূটনৈতিক সমস্যায় ফেলেছে। শেখ হাসিনার সরকার এবারের নির্বাচনের পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সুর্নির্দিষ্ট কার্যক্রম শুরু করার অঙ্গীকার বেইজিংয়ের কাছে করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া মংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির একটি প্রকল্পেও বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে আগ্রহ প্রদর্শন করা হয়।
তিস্তার পাশাপাশি নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে মংলা বন্দর পরিচালনার বিষয়েও আগ্রহ ব্যক্ত করা হয়েছে। এজন্য ভারতের পক্ষ থেকে একটি প্রাথমিক সমীক্ষাও সম্পন্ন হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এই বিষয়টি নিয়ে বেইজিং বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেছে। সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে এমন বার্তাও চীনের পক্ষ থেকে প্রদানের কথা জানা যাচ্ছে যে, ঢাকা চীনকে দেয়া এর আগের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটে বাজেট সহায়তা হিসেবে প্রতিশ্রুত ৫ বিলিয়ন ডলার এবং প্রকল্প ও অন্যান্য সহায়তা হিসেবে ২৬ বিলিয়ন ডলার মধ্য মেয়াদে প্রদানের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে।
জানা গেছে, চীনের হাতে অর্থনৈতিক টুলস ছাড়া কিছু কৌশলগত টুলসও রয়েছে। বেইজিং মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মি ও ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স এবং মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সাথে সমান্তরাল সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। বাংলাদেশে চীনের যেকোনো স্বার্থ বিপর্যয় ঘটানোর চেষ্টা করা হলে এসব টুলস সক্রিয় করা হতে পারে বলে চীন ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।
চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত ও অন্যান্য ইস্যুতে দ্বন্দ্ব অনেক পুরনো। অমীমাংসিত সীমান্ত বিরোধে জর্জরিত দুই দেশের গভীর পারস্পরিক অবিশ্বাস দীর্ঘকাল ধরে চীন-ভারত সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছে। ২০২০ সাল থেকে তাদের বিতর্কিত সীমান্তে হাজার হাজার ভারতীয় ও চীনা সৈন্য জমায়েত হয়েছে। এ নিয়ে সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সৈন্য এবং চার চীনা সৈন্য নিহত হয়েছিল।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক হিসেবে কাজ করা চীন বিশেষজ্ঞ সানা হাশমি বলেছেন যে, আগামী বছরগুলোয় ভারত-চীন সম্পর্কের কোনো বড় উন্নতি হবে না। তিনি বলেন, নয়াদিল্লির ‘চীন নীতিতে নরম’ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সীমান্ত ইস্যুতে চীন কোনো ছাড় দেবে না।
এসব কারণে বাংলাদেশে ভারতের একতরফা নিয়ন্ত্রক সম্পর্ককে মেনে নিতে চাইছে না বেইজিং। এবারের নির্বাচনের পর বাংলাদেশের প্রশাসনের বিভিন্ন সংবেদনশীল পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারের ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশটি অনেক বেপরোয়া হয়ে গেছে। এমন অভিযোগও ঢাকার প্রশাসনের শীর্ষপর্যায় থেকে পাওয়া গেছে যে, সচিব বা অধিদফতর; এমনকি তার নিম্নস্তরে নিয়োগ বদলি ও অন্যান্য প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সরাসরি দূতাবাস থেকে সিদ্ধান্ত দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি আদানি গ্রুপের বকেয়া পাওনা ডলারে পরিশোধের ব্যাপারে সরকারকে অনুরোধ জানানোর পরিবর্তে সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বলা হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আদেশ ছাড়া এ ধরনের নির্দেশনা মানতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে পদচ্যুত হতে হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেয়ার কথাও জানা গেছে।
জানা গেছে, এ ধরনের হস্তক্ষেপে সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ বেশ বিব্রত। তারা কোনোভাবেই কামনা করেন না, কোনো দূতাবাস থেকে সরাসরি সরকারের কোনো বিভাগ বা কর্মকর্তার প্রতি নির্দেশনা দেয়া বা অনুরোধ করার মতো ঘটনা ঘটুক। ধারণা করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন দিল্লি ও বেইজিং সফরের পর এ ধরনের সংবেদনশীল বিভিন্ন বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট গতিপথ তৈরি হবে। সেটি না হলে এমন ধরনের সংবেদনশীল বিষয়ে অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে, যার প্রভাব সরকারের স্থিতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও পড়তে পারে।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- কে হচ্ছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
- উৎসবের পর ফিরছে মানুষ
- জলবসন্তের জীবাণু থেকে সাবধান
- বছরে ৯২ হাজার কোটি টাকা পাচার হয় : সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী
- মুসলমানদের ইতিহাস মুছে দিচ্ছে চীন
- সেন্টমার্টিন কি বিচ্ছিন্ন
- ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল
- পানিবন্দি মানুষ চরম দুর্ভোগে : এ্যাড. জুবায়ের
- রাজপথে ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলুন : ড. রেজাউল করিম
- ইসলাম প্রচার সমিতির উদ্যোগে দুস্থ নওমুসলিমদের মাঝে কুরবানির গোশত বিতরণ
- উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে নিহত ৯
- সব দেশের সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় আফগানিস্তান
- ভারতে ফ্রিজে গরুর গোশত রাখার অভিযোগে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো ১১টি মুসলিম বাড়ি