বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:০০
॥ সাইদুর রহমান রুমী॥
২০২৪ সাল, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় বছর। বিদায়ী বছরটিতে বাংলাদেশের বিরাট এক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে। ১৯৭১ সালের পর এ বছরটিকে বলা হয়, বাংলাদেশের সত্যিকার স্বাধীনতার বছর। বছরের শুরুতে কথিত নির্বাচনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আরোহণ আর ৫ আগস্টে পলায়নের মাধ্যমে বছরটি জাতির ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। আলোচ্য এ বছরটি অবশেষে বিদায় নিচ্ছে। বহু ঘটনার সাক্ষী ২০২৪ স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে থাকবে এদেশের মানুষের মনে।
ড. ইউনূসের কারাদণ্ড
২০২৪-এর ১ জানুয়ারি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ক্যাঙ্গারু আদালত দেশের শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন। ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের অন্য তিনজনের প্রত্যেককে ঢাকার শ্রম আদালত ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং পরবর্তীতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে ১ মাসের জামিন দেন। সাজাপ্রাপ্ত অপর তিনজন হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
১ জানুয়ারি ৮৪ পৃষ্ঠার এ রায় ঘোষণা করেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করে।
বিতর্কিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
বহু বিতর্কিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭ জানুয়ারি ২০২৪ সালে। বিরোধীদলগুলোর বয়কটের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবার কথিত এ নির্বাচনে জয়লাভের ঘোষণা দেয়। ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন পেয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পায় বলে ঘোষণা দেয়। যদিও আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে যাওয়া জাতীয় পার্টি ও অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী এ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলে। ৯ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করা হয় এবং অবশেষে ১০ জানুয়ারি জয়ী সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন। ভোটারবিহীন বিতর্কিত এ নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়ার তথ্য প্রচার করা হয়। এর মাঝে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পড়েছে ৮০টি আসনে বলে জানানো হয়। ভোটের দিন বিকেল ৪টায় ভোট শেষ হওয়ার ঘণ্টা দেড়েক পর প্রেস ব্রিফিংয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল শুরুতে বলেন, ভোট পড়েছে ২৮ শতাংশ। পরে তাকে পাশ থেকে একজন সংশোধন করে বলেন, সংখ্যাটি ৪০ শতাংশ হবে। সিইসি তখন ভোটের হার ৪০ শতাংশ হতে পারে বলে জানান। বিতর্কিত এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে জাতীয় পার্টি (জাপা) ২৬টি আসন পেয়েছিল। তবে মাত্র ১১টি আসনে জয় পায় তারা।
আওয়ামী পৃষ্ঠপোষকতায় তৃণমূল বিএনপি ও কল্যাণ পার্টির ভেলকিবাজি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধীদলগুলো না আসায় শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ তৃণমূল বিএনপি নামক একটি দল তৈরি করে। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত তৈমূর আলমসহ কিছু নেতাকে ভাগিয়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে এটি করা হয়। এছাড়া ওয়ানম্যান শো খ্যাত জেনারেল (অব.) ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টিকে নির্বাচনে টানতে তার দলটিতেও ভাঙন ধরানো হয়। বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা তৈমূরকে তৃণমূল বিএনপি’র ব্যানারে নির্বাচনে জিতিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে আনা হলেও তাকে চরম ভরাডুবির পরাজয়ের শিকারে পরিণত হয়। এভাবে জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ছিল এক ভিলকিবাজির খেলা।
আওয়ামী এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতে খুন
ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ উপজেলা) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার মে মাসে ভারতে খুন হন। বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য হয়ে ভারতের মাটিতে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ১২ মে চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত সফরে ভারতে যান এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। ১৮ মে তার নিখোঁজের বিষয়ে উত্তর কলকাতার বরানগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলে তার খণ্ডিত লাশের টুকরো উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে রহস্যের জট খোলাসা হলে দেখা যায় তারই দীর্ঘদিনের বন্ধুরা চোরাচালান নিয়ে বিরোধের জের ধরে তাকে খুন করেছিল। এলাকার একজন চিহ্নিত চোরাচালানি এবং দাগী সন্ত্রাসীকে মহান সংসদের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে আওয়ামী লীগ বিগত সংসদকে চরম বিতর্কিত করে ফেলে । ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী জানা যায়, এমপি আনার ২০০০ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ২১টি মামলার আসামি ছিলেন।
সাবেক আইজিপি বেনজীরের শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। তিনি পুলিশের ২৪ তম মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের এপ্রিলে দুটি গণমাধ্যমে ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ এবং ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর আলোচনায় আসেন বেনজীর আহমেদ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বেনজীরের সম্পদের তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। দুদক জানায়, বেনজীরের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। গোপালগঞ্জের ছেলে বেনজীর এর আগে শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে র্যাবের ডিজি এবং ডিএমপি কমিশনার ছিলেন। এগুলোর দায়িত্ব পালনের পুরো সময় তিনি শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করেন, যার অনেকগুলোই মিডিয়ায় আসে। মানুষের সম্পত্তি জোর করে দখল এবং নিরপরাধ মানুষদের ক্রসফায়ার ও মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে তিনি এ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন।
ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেফতার ও আইনজীবী আলিফ হত্যা
ফ্যাসিস্ট হাসিনার পলায়ন পরবর্তী বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত অত্যাচারকে কেন্দ্র করে কল্পিত কাহিনী প্রচার এবং দেশদ্রোহিতার অভিযোগে ইসকন বাংলাদেশ নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর পুলিশ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে। জাতীয় পতাকার ওপরে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়, যেখানে ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলাম তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের রিমান্ড শুনানিকে কেন্দ্র করে তার সন্ত্রাসী হিন্দুত্ববাদী সমর্থকরা সরকারি আইনজীবী (এপিপি) সাইফুল ইসলাম আলিফকে আদালত চত্বর থেকে ধরে নিয়ে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে। আইনজীবী হত্যার নিন্দা না করে উল্টো ভারত সরকার এবং তাদের দোসর ভুয়া মিডিয়াগুলো বাংলাদেশবিরোধী ব্যাপক অপপ্রচার অব্যাহত রাখে।
ভারতের চিরাচরিত অপপ্রচার
বাংলাদেশের পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় প্রদানের পরও এদেশের মানুষ চরম ধৈর্য প্রদর্শন করে আসছে। কিন্তু হাসিনার পতনের পর থেকেই ভারতের মিডিয়াগুলোয় বাংলাদেশ নিয়ে একের পর এক সম্পূর্ণ নেতিবাচক খবর প্রকাশ হতে থাকে। বিশেষ করে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার, সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভুয়া ও মিথ্যা খবরও ছড়াতে দেখা গেছে। সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতে অপপ্রচারণা দুই দেশের সম্পর্কে আরও বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে থাকে। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের এসব মিথ্যা প্রচারণা নিয়ে প্রতিবাদও করা হয়। মামলা করা হয় বাংলাদেশে উচ্চ আদালতে এ প্রচারণা বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার। তারপরও ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী প্রোপাগান্ডা অব্যাহত রয়েছে।
আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা
বাংলাদেশের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে ভুয়া অপপ্রচারের একপর্যায়ে চরম হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় কথিত সংগঠনগুলোর সদস্যরা ২ ডিসেম্বর ভারতের আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে দলবেঁধে হামলা চালায়। সকল কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পদদলিত করা হয়। এতে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। চরম নিন্দনীয় এ ঘটনায় ভারতের পক্ষ হতে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় সর্বমহলে ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়।
বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র সচিব বৈঠক
ভারতের অব্যাহত নেতিবাচক আচরণে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক টানাপড়েনের মধ্যেই গত ৯ ডিসেম্বর দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। বৈঠকটি নিয়মিত বলা হলেও উভয় দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনে এ বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রিও বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চাই। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও জোরদারের পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং পারস্পরিক স্বার্থনির্ভর সম্পর্ক চাই। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনও আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের গণমানুষের অনুভূতি বুঝতে সক্ষম হবেন।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত কমিটি গঠন
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী আমলে সংঘটিত ভয়াবহ বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে ৭ সদস্যের কমিশন গঠন করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় ইতিহাসের এ ভয়াবহ নৃশংস বিডিআর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। নৃশংস এ ঘটনায় বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা ও ১৭ বেসামরিক লোককে হত্যা করা হয়। বিদ্রোহের পর সংস্থাটির নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা সংক্ষেপে বিজিবি করা হয়। এত বছর পার হয়ে গেলেও ফ্যাসিস্ট হাসিনা ইতিহাসের এ ভয়াবহ ঘটনার সত্যিকার বিচার এবং তদন্ত করেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত এ তদন্ত কমিটি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানকে সভাপতি করে এ কমিশন গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. সাইদুর রহমান বীরপ্রতীক, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ড. এম আকবর আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শরীফুল ইসলাম এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিতে হবে। এছাড়া ঘটনাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ সংঘটনকারী, সহায়তাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, ঘটনার আলামত ধ্বংসকারী, ইন্ধনদাতা এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয়সহ দেশি-বিদেশি সংশ্লিষ্ট অপরাধী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, বিভাগ ও সংগঠনকে চিহ্নিত করার দায়িত্বও এ কমিটিকে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততায় ব্যাপক চাঞ্চল্য
ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে সংঘটিত বাংলাদেশে গুমের অনেক ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের তদন্ত কমিশন। দুই দেশের মধ্যে বন্দিবিনিময়ের কার্যক্রম এবং আটক ব্যক্তিদের সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে কমিশন তাদের প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা জনসমক্ষে একটি আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাবেক বিচারপতি মাইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশন সম্প্রতি ‘সত্য উদ্ঘাটন’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে। কমিশন জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে এ বিষয়ে একটি জোরালো ইঙ্গিত রয়েছে যে, কিছু বন্দি এখনো ভারতের জেলে থাকতে পারে। কমিশন জানায়, ‘আমরা পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করছিÑ যেন তারা ভারতে এখনো বন্দি অবস্থায় থাকতে পারে এমন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিককে খুঁজে বের করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা কথিত মানবতাবিরোধী মামলা সরকারি পক্ষের সাক্ষী হওয়ার পরও সাঈদী সাহেবের পক্ষের আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসার অপরাধে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে অপহৃত হয়ে ভারতীয় কারাগারে বন্দি হওয়া সুখরঞ্জন বালির ঘটনা এ বিষয়ে ভারতীয় সংশ্লিষ্টতার বড় প্রমাণ বলে কমিশন উল্লেখ করে। অন্যদিকে কথিত মানবতাবিরোধী মামলায় মৃত্যুদণ্ডের শিকার সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীরা ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী কমিশনকে জানিয়েছেন, তিনি কারাগারের বাইরে হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শুনেছেন, যেখানে বলা হচ্ছিল- ‘ওকে কখন ধরা হয়েছে? কোনো তথ্য দিয়েছে কি? এখনো কি জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে?’ ইত্যাদি। এছাড়া বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের ঘটনাও এসবের প্রমাণ। ২০১৫ সালে ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। পরবর্তীতে ভারতে নিয়ে যাওয়া যায় সালাহউদ্দিনকে।