উপদেষ্টাদের কেউ কেউ কি যথাযথ দায়িত্ব পালনে সমর্থ হচ্ছেন না
৮ মে ২০২৫ ১৩:০৫
॥ আহমদ হাসান ॥
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে দেশের জনগণের বড় অংশের একটি প্রত্যাশা রয়েছে। তারা বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন, হত্যা, খুন, গুম, লুটপাট, রাহাজানি, অর্থ পাচার ইত্যাদি কারণে বস্তুগতভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনি মানসিক দিক থেকেও বিপর্যস্ত। তবে জুলাই বিপ্লবোত্তর প্রেক্ষাপটে জনগণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেই পছন্দ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারও জনগণের এ সমর্থনের কারণে ক্ষমতায় টিকে আছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছে। তারা বিগত সরকারের আমলাদের মতো নিয়মানুযায়ী অফিস করছেন বলেই মনে হচ্ছে। তাদের কাজের পরিধি দেশের গ্রাম মহল্লা তথা তৃণমূল পর্যন্ত। তাদের কাজের ইতিবাচক কোনো প্রভাব কিন্তু তৃণমূলে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ তথা সেবাটা কেন্দ্র থেকে শুরু করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজটা তেমনিভাবে গ্রাম ও পাড়া-মহল্লা তথা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত বিস্তৃত। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাজও তৃণমূল তথা পরিবার পর্যন্ত। এভাবে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কাজ তথা সেবাটা তৃণমূল তথা ব্যক্তি, পরিবার, কৃষিজমি থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের কার্যক্রমের মধ্যে বিস্তুৃত। কিন্তু আমরা কি বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের মাধ্যমে সরকার ও প্রশাসনের কাজের প্রভাব তৃণমূল পর্যন্ত দেখছি। রাষ্ট্র ও সরকারের সেবা প্রদানে কি বিগত দিন থেকে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন পাওয়া যাচ্ছে!
আমি প্রথমত শিক্ষার মতো জনগুরুত্বপূর্ণ একটি খাত নিয়ে ব্যক্তিগত অনুসন্ধানের একটি উদাহরণ উল্লেখ করতে চাই। স্নাতক পাস কোর্সে পড়ে এমন এক ছাত্রের সাথে বিগত সপ্তাহে আমার কথা হয়েছে। সে প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি নিয়মিত ক্লাস করো কিনা। সে জানালো, আমাদের কলেজে বিএ-তে কোনো ক্লাস হয় না। কারণ কী জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, তার ক্লাসে ১৫০ জন ছাত্র আছে, কিন্তু কেউই ক্লাসে আসে না। তাই শিক্ষকরাও ক্লাসে আসেন না।
এই যে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন কলেজের একটি ক্লাসের উদাহরণ দিলাম এমন চিত্র সারা দেশের কলেজগুলোয়ই। আজ থেকে দশ বছর পূর্বেও আর একটি স্নাতকোত্তর কলেজের এক শিক্ষার্থীও আমাকে জানিয়েছিল যে, তার কলেজেও নিয়মিত ক্লাস হয় না। সে ছিল ইংরেজি অনার্স ক্লাসের শিক্ষার্থী।
বিগত ২ মে ‘স্নাতক পাস কোর্স, ক্লাসে অংশ নিচ্ছে না শিক্ষার্থীরা’ শিরোনামে সাপ্তাহিক সোনার বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ প্রতিবেদনে শিক্ষার্থী, কলেজ শিক্ষক ও কলেজের এক অধ্যক্ষের প্রকাশিত মন্তব্য থেকে জানা গেছে যে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের কলেজগুলোর স্নাতক পাস কোর্সের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অংশগ্রহণ করে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী একজন ছাত্রকে ৭০ শতাংশ ক্লাসে অংশগ্রহণ না করলে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে কলেজগুলো শিথিলতা প্রদর্শন করায় ছাত্ররা ক্লাসে অনুপস্থিত থেকেই অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে এবং পরীক্ষায় পাস করে সনদ অর্জন করছে। এভাবে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী প্রকৃত জ্ঞান অর্জন না করেই নামমাত্র সনদ নিচ্ছে। এতে করে পুরো জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
১৮ এপ্রিল সোনার বাংলা পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় ‘পাঠদানে শিক্ষকদের অনাগ্রহ : ভরসা পাচ্ছেন না অভিভাবকরা, সরকারি প্রাথমিকে শিক্ষার্থী কমছে’, শিরোনামে লিড প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ঐ প্রতিবেদনের একটি অংশ এখানে তুলে ধরা হলো। প্রতিবেদনে ঐ অংশে বলা হয়েছে, “রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত ‘টিএন্ডটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের’ শিক্ষক রেহানা আক্তারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি ঢাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম ভর্তি হওয়া ও শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার বেশকিছু কারণ জানান। এ শিক্ষকের মতে, অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং অনেক আমলার স্ত্রী বা নিকটাত্মীয় তদবির করে ঢাকার স্কুলে প্রবেশ করেন। কিন্তু তারা পাঠদান করেন না বললেই চলে। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের শাসনামলে তার এক সহকর্মী টাঙ্গাইল থেকে তার স্কুলে বদলি হয়ে আসেন, কিন্তু তিনি ক্লাস নেননি। অন্য একজনকে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানে হাজিরা চালিয়ে নিয়েছেন, আর মাস শেষে বিনা কাজে বেতন নিয়েছেন। শেখ হাসিনার আমলে একই স্কুলের অন্য এক সহকর্মী ক্লাস নিতেন না, তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে গিয়ে উল্টো বিপদে পড়েন। ওই শিক্ষক তার অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়া দূরের কথা, উল্টো তিনি তার বিসিএস ক্যাডার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার পেনশনের টাকা আটকের অপচেষ্টা চালান।
এ প্রতিবেদককে শিক্ষক রেহানা আক্তার জানান, ঢাকার বাইরে থেকে তদবির করে যারা ঢাকায় আসেন, তাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী লেখাপড়া করানোর বিষয়ে অমনোযোগী। তিনি আরও জানান, ঢাকার প্রাথমিক স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থীদের ভর্তি না হওয়ার পেছনে বেশি দায়ী শিক্ষকরা, তারা সঠিকভাবে পাঠদানে আগ্রহী নন। কিছু শিক্ষক পাঠদানে আগ্রহী হলেও এদের সংখ্যা খুবই কম। তিনি বলেন, এখানে আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে- সরকারি প্রাথমিকে এখন এমন অনেক শিক্ষক নিয়োগ নিয়েছেন, যাদের প্রত্যাশা ছিল বিসিএস বা প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা হওয়া, কিন্তু চাকরির বাজার খারাপ থাকায় এরা সরকারি প্রাথমিকে এসেছেন চাকরি করতে- এ ধরনের শিক্ষকরা কর্মস্থলে মনোযোগী হতে পারছেন না, হচ্ছেন না। ফলে শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার বেহাল দশা তৈরি হয়েছে।”
বিগত কয়েক মাসে সোনার বাংলাসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় শিক্ষা খাতের সমস্যা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ নিবন্ধে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা খাতের দুটি স্তরের শিক্ষা ও পাঠদান পরিস্থিতি তুলে ধরা হলো। এ অবস্থাটা একটি জাতির জন্য কোনোক্রমেই কাম্য হতে পারে না। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারে শিক্ষা বিভাগ দেখার জন্য একজন উপদেষ্টা রয়েছেন। উনি হচ্ছে অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার। উনার অধীনে কয়েকটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ তথা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ আরো কত শত হাজার কর্মকর্তা রয়েছে, যাদের কাজ হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থাকে মনিটরিং করার মাধ্যমে জাতিকে একটি শিক্ষিত ও মেধাবী প্রজন্ম উপহার দেয়া। কিন্তু শিক্ষা খাতে মনিটরিং খুব একটা বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে না।
আমরা যদি রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ অঙ্গ নির্বাহী বিভাগের সাথে জড়িত প্রশাসনের দিকে খেয়াল করি, সেখানেও একট হ-য-ব-র-ল অবস্থা। প্রশাসন পরিচালনার জন্য একটি শক্তিশালী মন্ত্রণালয় আছে। অথচ ৮-৯ মাসেও প্রশাসনে গতি আসেনি এবং প্রশাসনের নিয়োগ পদোন্নতি নিয়ে বেশ বিতর্কের জন্ম্ দিয়েছে। অপরদিকে অভিযোগ আছে এখনো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদেরই প্রশাসনের উচ্চপদে আসীন আছে ও করা হচ্ছে। এ নিয়ে জনগণের মধ্যে যেমন ক্ষোভ আছে, তেমনিভাবে প্রশাসনের দেশপ্রেমিক কর্মকর্তারাও হতাশ। প্রশাসনের অস্থিরতা, ফ্যাসিস্টদের দোসরদের নিয়োগ ও অস্থিরতা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হচ্ছে।
‘জনপ্রশাসনে এখনো অস্থিরতা’ শিরোনামে প্রথম আলো ২২ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ‘অন্তর্র্বর্তী সরকারের সাড়ে চার মাসে একের পর এক বিষয় নিয়ে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা লেগেই আছে। পদোন্নতি, পদায়নসহ নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের। নিয়মিত (রুটিন) কাজ ছাড়া নীতিনির্ধারণী বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোতে পারছে না প্রশাসন।’
‘প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ’ শিরোনামে গত ২৮ এপ্রিল বাংলা ট্রিবিউন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কোনোভাবেই কাটছে না প্রশাসনের অস্থিরতা। প্রশাসনের সব স্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, পদোন্নতি, ক্যাডার বৈষম্য, মহার্ঘ্য ভাতার দাবিসহ সচিবালয়ের কর্মচারীরা সোচ্চার নিজেদের দাবি-দাওয়া আদায় নিয়ে। এ নিয়ে পুরো প্রশাসনে চলছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, ক্ষোভ, আর হতাশা।’
‘সাতক্ষীরার সাবেক ডিসি নাজমুল আহসানকে গ্রেফতারের দাবি’ শিরোনামে গত ৪ মার্চ দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবরটিতে বলা হয়েছে, ‘সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব নাজমুল আহসানকে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভাঙার অভিযোগ, অবৈধ নির্বাচন, খুন, গুমে অংশ নেয়াসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ করেছেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।
গত ৩ মার্চ সোমবার বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে পুলিশের গুলিতে আহত, নিহতদের পরিবারের ভুক্তভোগী সদস্য ও সচেতন সাতক্ষীরাবাসীর ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তব্য রাখেন, পুলিশের গুলিতে পা হারানো এস এম আহাদ, শহর আলী, নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে খোরশেদ আলম, আব্দুল গফুর, ফকরুল হাসান, শহর আলী প্রমুখ। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালে সাতক্ষীরায় পুলিশের গুলিতে অর্ধশতাধিক জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মীর হত্যার নেপথ্যে ছিলেন তৎকালীন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির ও জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরপরই তার পোষা গুণ্ডা পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবিরও বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছে। তবে বহাল তবিয়তে মন্ত্রণালয়ে কর্মরত রয়েছেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলা, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান।
বক্তারা অবিলম্বে সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসানকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় না আনলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। মানববন্ধন শেষে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের কাছে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।’
দুর্নীতির রিপোর্ট করায় সাংবাদিককে কারাদণ্ড ইউএনও’র
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে যে, গত ২২ এপ্রিল সাতক্ষীরা তালা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ৯ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধানে গেলে সাংবাদিক রোকনুজ্জামান টিপুর সঙ্গে উপজেলা প্রকৌশল দফতরের উপসহকারী প্রকৌশলী এম এম মামুন আলমের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে ইউএনও শেখ মো. রাসেল ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত সাংবাদিককে ১৭৬ ধারায় ১০ দিনের কারাদণ্ড ও ২০০ টাকা জরিমানা করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালাসহ সারা দেশের সাংবাদিক সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।
তার জেরে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মো. রাসেলকে রংপুর বিভাগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়েছে। গত সোমবার (৫ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, পদায়নের পর তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকায় এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং তাকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে সাংবাদিকদের টানা আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচির পর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ‘কালের কণ্ঠের’ তালা প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান টিপু গত ২৪ এপ্রিল বিকেলে সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান।
ঘটনার পর প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় ইউএনওর সমর্থনে স্থানীয় ঠিকাদার ও রাজনৈতিক কর্মীরা মানববন্ধন করেন, যা নতুন করে বিতর্কের জন্ম দেয়।
সাংবাদিক নেতারা বলছেন, একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে এভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো এবং সাংবাদিককে শাস্তি দেওয়ার ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করায় ইউএনও- তার ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ব্যবহার করে তৎক্ষণাৎ একজন সাংবাদিককে কারাদণ্ড প্রদান জাতিকে কী মেসেজ দেয়। এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করার পরও তাকে আবারও ইউএনও হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে যাওয়ায় যে ইউএনও সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেয় এবং যার পক্ষে ঠিকাদাররা মানববন্ধন করে তার পেশাগত ইথিকস ও নৈতিক অবস্থানটা প্রশ্নসাপেক্ষ। অথচ প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে নতুন করে ইউএনও পদেই পদায়ন করেছে।
এসব কারণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়ে জনমণে নানা প্রশ্ন কে এবং কারা চালায় প্রশাসন? অপরদিকে অভিযোগ রয়েছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরা প্রশাসনে উচ্চপর্যায়ে নিয়োগ পাচ্ছে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিষয়ে আর একটি অভিযোগ রয়েছে যে, তাদের সবাই আছে স্ব স্ব প্রমোশন ও পদায়ন পাওয়ার তদবির নিয়ে ব্যস্ত। তাই তারা দেশ জাতি ও সরকার নিয়ে চিন্তা ও ভাবনার জন্য কোনো সময় পান না। অন্তর্বর্তী সরকারের বিগত ৯ মাসের কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে কী পাওয়া যায়। এ নিবন্ধে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিভাগ নিয়ে কিছু সিলেকটিভ ঘটনা তুলে ধরা হলো। এ কয়েকটি ঘটনা দিয়ে প্রশাসন ও অন্তর্বর্তী সরকারের তৎপরতার চিত্রটা কী তা কিছুটা বোঝা যায়।
রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হচ্ছে জনপ্রশাসন। জনপ্রশাসনের অধীনে সবগুলো মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোরও নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ। সরকারের প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ছয় হাজার। ছয় হাজার কর্মকর্তার মধ্যে কি দেশপ্রেমিক ও সৎ, যোগ্য, দক্ষ কর্মকর্তা নেই! তাহলে কেন একজন খুনি জেলা প্রশাসককে সচিব পদে দায়িত্ব দিতে হবে। কেন দুর্নীতিকে সহায়তা করে এমন ক্যাডার কর্মকর্তাকে ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব দিতে হবে! এদ্বারা বোঝা যায়, সরকারের জনপ্রশাসনের যে সিনিয়র সচিব ও উপদেষ্টা আছেন, তারা প্রশাসনকে যথাযথ তদারকি ও মনিটরিং করতে পারছেন না বা মনিটরিং করার ক্যাপাসিটি নেই। নাকি তারা যথাযথ দায়িত্ব পালনে সমর্থ হচ্ছেন না! তাদের দায়িত্ব পালনের ক্যাপাসিটি তথা সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কারণ হচ্ছে কীভাবে ফ্যাসিস্টদের খুনের প্রত্যক্ষ একজন সহযোগী প্রশাসনের একেবারে উচ্চপদ ‘সচিব’ পদে দায়িত্ব পেলেন! দেশপ্রেমিক জনগণ চায় এবং দাবিও বটে, উপদেষ্টা ও সচিব পর্যায়ে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদেরকে দেশ ও জাতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। এ ধরনের দায়িত্ব কোনো চাকরি বা পেশা নয়। এ দায়িত্বগুলো হচ্ছে স্বাভাবিক পেশার ঊর্ধ্বে বিশেষ দায়িত্ব, ক্ষমতা, অধিকার ও মর্যাদাপূর্ণ কাজ। অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন; বিশেষ করে উপদেষ্টা ও সিনিয়র সচিবরা, তাদের শুধু অফিসে যাওয়া, ৯টা- ৫টা অফিস করা, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বরাদ্দকৃত একটি আলিশান বাড়িতে অবস্থান করা ও মাস শেষে একটি বেতন নেয়ার মধ্যেই তাদের দায়িত্ব কর্তব্য নির্ধারিত নয়। তাদের যেমন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদের মতো মর্যাদপূর্ণ দায়িত্বে ক্ষমতায়ন করা হয়েছে, তেমনিভাবে তাদের ঘাড়ে দেশ ও জাতির বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। আর জাতি কঠিন এক লড়াই তথা হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিস্টদের উৎখাত করে আপনাদের এ দায়িত্ব প্রদান করেছে। তাই আপনাদের বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হলে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই দেশ ও জাতির কল্যাণে সার্বিক সমস্যা ও সমাধান নিয়ে চিন্তাভাবনা ও কাজ করতে হবে। তাহলেই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হতে পারে এবং দেশ ও জাতি এগিয়ে যেতে পারে।