রাজনৈতিক দল ঐকমত্যের দিকে এগোচ্ছে
১৫ মে ২০২৫ ১৫:৪৪
॥ মাহবুবুল হক ॥
বহুদিন পর রাতটা (১১-৫-২০২৫) মহান আল্লাহর রহমতে ভালোই কেটেছিল। পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ সিজফায়ার হয়েছে, সাথে সাথে ২৪-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর জন্য অবিরত যে গণআন্দোলন চলছিল, অন্তর্বর্তী সরকার অবশেষে তা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে (পতিত সরকারের রাজনৈতিক দলকে নিষ্ক্রিয় করা)। বেশ রাত পর্যন্ত বিজয়ীদের শুকরিয়া ও আনন্দ-উল্লাস পরখ করছিলাম আর ভাবছিলাম, আহা! এভাবে যদি ফিলিস্তিনের গাজায় জায়োনিস্টদের সর্বব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ হয়ে যেত। কোলবালিশের মতো জান্নাতি ফুলগুলোর নিত্যদিনের দাফন বন্ধ হয়ে যেত। সারা রাতের আনন্দ অকুল বেদনায় মুহূর্তে নির্বাপিত হয়ে গেল। মনটা প্রতি রাতের মতো কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে গেল। ভোরে উঠে মোবাইলে চোখ রাখতেই দেখি, জনপ্রিয় শিশু সংগঠক, ছাত্রনেতা, পরবর্তীতে প্রাজ্ঞ সংস্কৃতি-সংগঠক ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহ রাজিউন)। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আবার দেশবরেণ্য মনীষীদের নতুন সফরের পালা চলছে। এসব কি পরাভবের বার্তা, নাকি বিজয়ের এলান, মহান মালিক ছাড়া কেউ তো বলতে পারবে না। মনে পড়ে গেল… ‘কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সাথে স্বস্তি আছে। অতএব যখনই অবসর পাও, জোর চেষ্টা করো এবং তোমার রবের প্রতি মনোনিবেশ করো।’ (সূরা ইনশিরাহ : ৫-৬)।
বিষয়ের বাইরে চলে গেলেও গন্তব্যের বাইরে চলে যাইনি। গন্তব্য তো অনেক দূরে। বহুদূরে। থেমে থেমে চলতে হবে। বুঝতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে, এখন আমরা কোন মনজিলে এসে থামলাম! সবার মনজিল তো আবার এক নয়। এই মনজিলে আমরা কত সময় স্থির থাকবো? সবার স্থিরতা বা সবার স্পিড তো সমান নয়। কারণ সবার লক্ষ্যও একমুখী নয়। কোনো গন্তব্যে পৌঁছার জন্য কেউ গমন করবে উড়োজাহাজে, কেউ স্টিমারে, কেউ ট্রেনে, কেউ বাসে, আবার কেউ নানাজাতের বাহনে। এটাই স্বাভাবিক এবং এটাই বাস্তবতাসম্পন্ন প্রজ্ঞা।
যেকোনো প্রতিষ্ঠানের বা সংগঠনের মোটামুটি ৩ ধরনের পরিকল্পনা থাকেÑ ১. বর্তমান, ২. স্বল্পস্থায়ী, ৩. দীর্ঘস্থায়ী। কিন্তু সময়ের বিষয়টা একরকম নয়। বর্তমান কারো জন্য ৬ মাস, কারো জন্য ৯ মাস, আবার কারো জন্য ১২ মাস। ঠিক একইভাবে স্বল্পস্থায়ী পরিকল্পনা করার সময় কেউ স্থির করেন ১২ মাস, কেউ ১৮ মাস, আবার কেউ ২৪ মাস। সবার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য যেহেতু এক বা এক ধরনের নয়, বহু ধরনের, সুতরাং সময়ের বিষয়টাও এক ধরনের হবে না- এটাই বাস্তবতা।
আমাদের দেশের রাজনীতি মোটামুটি ৩ ভাগে বিভক্ত- ১. সুবিধাবাদী, ২. সেক্যুলার, ৩. ইসলামী। ১নং-এ যারা আছে, তারা সবাই মিলে যদি ১টি মজবুত দল গড়তে পারত, তাহলে দেশ ও দশের জন্য খুব সুবিধা হতো। কারণ জনসাধারণের মধ্যে যারা সুবিধাবাদী বা সুবিধাভোগী, তারা একই জায়গায় বসে জনমত সৃষ্টি করতে পারতো। অন্যদেরও একটি দলকে চিহ্নিত করা সহজ হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এরা আবার ঐক্য গড়তে চায় না। এরা সবাই মিলিত হতে চায় না। একসাথে বসতে চায় না। এরা বিচ্ছিন্ন থাকতে পছন্দ করে এবং এরা গোপনীয়তাও পছন্দ করে। এদের মধ্যে আশরাফ আছে, আরতাফ আছে। বয়সের ব্যবধান আছে। প্রবীণ ও নবীনের বাধা আছে। স্বার্থের ব্যত্যয় আছে ইত্যাদি। ফলে ১নং মতবাদের নেতা ও কর্মীরা নিজেদের স্বার্থে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছে না। এখানে চিরকাল অনৈক্যই বিরাজ করবে। শিক্ষা-দীক্ষা বাড়লে যে এই মতবাদের মানুষজন উন্নত হবে বা উন্নত মানুষ হবে, সে আশায় গুড়েবালি।
১নং-এর মতো ২নং মতবাদের মানুষজনও প্রায় বিভক্ত। তাদের মধ্যেও অনেক বিভাজন। মতবাদ এক হলেও দেশভেদে আবার নানা বিভক্তি আছে। যেমন কমিউনিস্ট ও সমাজতন্ত্রীরা রাশিয়া, চীন ও লাতিন আমেরিকা নিয়ে বিভক্ত। কেউ রুশপন্থী, কেউ চীনপন্থী এবং কেউ লাতিন আমেরিকাপন্থী। এদের কারো সাথে কারো কোনো মিল-মহব্বত নেই। কেউ চে-পন্থী, কেউ লেলিন আবার কেউ-বা মাওসেতুংপন্থী। এটা তো গেল কমিউনিস্টদের হিসাব-নিকাশ। কমিউনিস্টরাই তো শুধু সেক্যুলার নয়, আরও তো সেক্যুলার আছে। বলতে গেলে যারা ইসলামিস্ট নয়, অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতের সংযোজনে যাদের জীবনব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি, তারাই তো সেক্যুলার। যারা শুধু ইহলৌকিক বিষয় নিয়ে সদা ব্যস্ত, তারাই সেক্যুলার। এরা কতভাগে বিভক্ত তা তো শুমার করা মুশকিল। প্রায় সকল ধর্মের মানুষের ঠিকানা এখানে। মুসলিমদের কথা যদি ধরি, তাহলে সব মাজহাবের সাধারণ লোকজন এখানে রয়েছে, যারা রাজনীতিকে জীবন থেকে আলাদা বিষয় বলে বিবেচনা করেন। এখানেও আবার একশ্রেণির মানুষ আছেন, যারা ধর্ম-কর্ম করলেও ধর্মকে ব্যক্তিগত বিষয় অথবা জীবন থেকে আলাদা বিষয় বলে বিবেচনা করেন। তবে সূক্ষ্মভাবে বিচার-বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, নানাপন্থী মানুষ এখানে একত্রিত হলেও এদের মধ্যে সাধারণ একটা ঐক্যবোধ এখানে বিরাজমান রয়েছে। তাদের স্লোগান হলো, ‘জীবন তো একটাই’, সুতরাং জীবনকে সমৃদ্ধ করতে হবে, উন্নততর করতে হবে, সভ্যতা এবং সংস্কৃতির মিলন ঘটাতে হবে। অর্থাৎ জীবনকে কমফোর্ট অবস্থায় আনার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব করতে গিয়ে জীবনের কোনো মূল্যবোধই আর এখানে স্থিতাবস্থায় থাকে না। এখানে শুধু একটাই লক্ষ্য, আমাকে বড় হতে হবে। অনেক অর্থ-সম্পদ অর্জন করতে হবে। ব্যাংক-ব্যালান্স বাড়াতে হবে। উত্তরাধিকারদের জন্য সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব করতে গিয়ে দারুণ একটা প্রতিযোগিতার মধ্যে গিয়ে পড়তে হয়। অনেকটা সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়ার মতো। এ ধরনের ঝাঁপা-ঝাঁপিতে গেলে নীতি-নৈতিকতা, সততা, সুনীতিÑ কোনোটাই আর মস্তিষ্কে বিরাজ করে না। মস্তিষ্ক তখন উন্নতি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে হিমালয়ান চক্রে উড্ডীন হতে থাকে। গত ৫৩ বছরে এ অবস্থাটাই তো আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। হতদরিদ্র থেকে ধনী পর্যন্ত সব শ্রেণির মানুষই এখানে বিদ্যমান। আমাদের দেশে যে দুটি বড় রাজনৈতিক দল, তারা মূলত সেক্যুলারিজমে বিশ্বাসী। সে কারণে তাদের মধ্যে বড় কোনো প্রভেদ নেই। সেক্যুলার হলেও বড় দুটি দলের উল্লেখযোগ্য মানুষ ধর্ম-কর্ম করে, নামাজ-রোজা, হজ-জাকাতে বিশ্বাস করে। এসব নিয়ে নানা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে পার্থক্য সামান্য এবং সেটা হলো ক্ষমতা অর্জন করা। অন্যভাবে বলা যায়, ক্ষমতা-বিলাস। যেহেতু এখানে সবার লক্ষ্য এক, সে কারণে এখানে এক ধরনের মনোভাব অনুভব ও উপলব্ধিও এক। এরা ইচ্ছা করলে সামান্য ছাড় দিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে। রাজনৈতিকভাবে এরা বিভক্ত থাকলেও সামাজিক ও ধর্মীয় চিন্তাভাবনায় তারা একই অবস্থানে নোঙর করে আছে। এদের মধ্যে বিয়ে-শাদী, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক প্রতিপত্তি অর্থাৎ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় তারা ভাগাভাগি অবস্থানে থাকতে পছন্দ করে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, নানা ধরনের ক্লাব, বিনোদনের কেন্দ্রগুলো এদেরই করায়ত্তে আছে বা থাকে। এমন কি মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা, কবরস্থানও এরা নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের দেশের সেক্যুলার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের বিকল্প হলো বিএনপি। বিএনপির জন্ম সেভাবেই। আওয়ামী লীগের অহঙ্কার, হামবড়ামি, গডফাদারমূলক ব্যবহার এবং ভারত-তোষণমূলক মনোভাব যদি না থাকতো, তাহলে হয়তো এত সেক্যুলার দলের জন্ম হতো না।
৩নং রাজনীতি নিয়ে বেশি কিছু বলা মুশকিল। তবে মনে হয় এখানেই সবচেয়ে বেশি বিভক্তি। মুখে আমরা বলি, আমাদের কিবলা হলো কাবা। বাস্তবে কিবলা অনেক। এখানেও ১নং ও ২নং শ্রেণির মানুষ বিদ্যমান রয়েছে। অর্থাৎ এখানেও সুবিধাবাদী ও সেক্যুলার মনোভাবের লোক রয়েছে। যারা শিরক-বিদাতহীন জীবনের স্বপ্ন দেখলেও এবং আখিরাতে বিশ্বাস করলেও দুনিয়ার জীবনকে তারা নানাভাবে আঁকড়ে আছে। বাহ্যিকভাবে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, মসজিদ, মাদরাসা ইত্যাদিতে সংযুক্ত থাকলেও এদের আকিদা ও বিশ্বাস নানাভাবে বিভক্ত। যতই দিন যাচ্ছে, ততই যেন বিভক্তি বাড়ছে। ইসলামিস্টরা কেন একট্টা হতে পারে না, কেন তারা নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে পারে না। গবেষক ও সাংবাদিকগণ যখন এ ধরনের প্রশ্ন করেন, তখন তারা সরাসরি জবাব দেন- আখেরি জমানায় এটা তো সম্ভব হবে না। এটা তো রাসূল (সা.) বলে গেছেন, আখেরি জমানায় মুসলমানরা ৭৩ ভাগে বিভক্ত হবে। তাঁর কথাই তো সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটাই তো আমাদের নিয়তি। এর বাইরে আমরা যাব কী করে। আবার কেউ কেউ জবাব দেন, আমরা যদি এদেশে মাইনোরিটি হতাম, তাহলে জাতিগত স্বার্থে আমাদের মধ্যে কিছুটা হলেও ঐক্য গড়ে উঠতো। কিন্তু এদেশে আমরা মেজরিটি। আমরা যারা রাজনৈতিক দল গড়ে তুলেছি। আমাদের সবার মৌলিক ধারণা হলো, আমরাই সঠিক দল। অন্যরা সঠিক নয়। সুতরাং যারা সঠিক নয়, তাদের নিয়ে ঐক্য গড়ে তোলা তো সম্ভব নয়। পূর্বে একেকটা মাজহাবের একেকটা রাজনৈতিক শাখা ছিল। বর্তমানে প্রতিটি মাজহাবের সাথে সংযুক্ত রয়েছে অনেক শাখা। এভাবেই বিভক্তি বেড়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে রয়েছে দুটি বড় ‘স্কুল অব থট’। একটি আলিয়া, অপরটি কওমি। আলিয়ায় তেমন বিস্তৃতি না ঘটলেও কওমি মাদরাসার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। এ দুই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা থাকার কারণে জটিলতা বেড়েছে, বিভক্তি বেড়েছে এবং বিভাজন বেড়েছে। এরপর আছে আঞ্চলিক প্রভাব-প্রতিপত্তি। পীরসাহেবদের প্রাচীন ব্যবস্থাপনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় মাঝে মাঝে নতুন নতুন পীরের আস্তানা গড়ে উঠছে নানা স্বার্থের কারণে। এদের মধ্যেও অনৈক্য সৃষ্টি হচ্ছে। এক আস্তানার সাথে অন্য আস্তানার কোনো যোগাযোগ নেই। মেলামেশা নেই। যার যার মাজার ও সিলসিলা নিয়ে তারা নিজের মতো রয়েছে। নিজেদের গদি নিয়েও এদের মধ্যে টানাটানি আছে। এদের আবার সবার রাজনৈতিক শাখা নেই। পীরের মুরিদগণ সবাই আবার একই দলের কর্মী বা সমর্থক নন। সুতরাং এখানেও নানা বিভক্তি রয়েছে। একটা ইসলামী সমাজ বা রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে এ ধরনের কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য তাদের নেই। তাদের মূল লক্ষ্য যা বলা হয় তা হলো নিজেকে মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলা। তাকওয়াসম্পন্ন হওয়া, চরিত্রবান হওয়া ইত্যাদি। পীরসাহেব তাদের শিক্ষক, তিনি যা যেভাবে শেখাবেন, তারা তাই শিখবে এবং তাদের মধ্যে পীরসাহেবের পক্ষ থেকে এমন কিছু ধারণা দেয়া হয় যে, পীরসাহেবের খেদমত করলে দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের কল্যাণ ও মঙ্গল হবে। এমনকি অনেকে এ ধরনের বদ্ধমূল ধারণা প্রচার করেন যে, এই খানকার মুরিদ হলে জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ হবে। পীরসাহেব বিচার দিবসে আল্লাহর রাসূলের কাছে সুপারিশ করতে পারবেন। সেই সূত্রে রাসূল (সা.) মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে পারবেন। যা হোক, এসব সবাই জানি। এসবের আলোচনা কম হয় না। কিন্তু বাস্তবে এর প্রসার বাড়ছে বৈ কমছে না। নানা শাখা-প্রশাখায় বিস্তৃত ইসলামপন্থীরা বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন। তার ভেতরেও ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা কিছুটা আলোর ছটা পাচ্ছি। ইসলামপন্থীদের মধ্যে বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ছোট-বড় মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ডজনখানেক দল আলাপ-আলোচনা করছে, বৈঠক করছে। কিছু কিছু সমঝোতাও তৈরি হচ্ছে। একে অপরের বিরুদ্ধে কথা না বলার অঙ্গীকার তৈরি হচ্ছে। যারা গণতন্ত্রের মাধ্যমে অর্থাৎ ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়, তাদের মধ্যে মোটামুটি একটা সংলাপ তৈরি হচ্ছে। ‘মেক্সিমাম নয়, মিনিমাম ম্যাচিং-এ গণতন্ত্র হাসিলের জন্য আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করবো’Ñ এ ধরনের আন্ডারস্ট্যান্ডিং গড়ে উঠছে। যারা গণতন্ত্র বা নির্বাচনকে বর্তমান জমানায় বিবেচনা করে না, তারা এসব থেকে দূরে থাকছে। তাদের কাছেও ইসলামিস্টদের মধ্যে যারা গণতন্ত্রপন্থী নির্বাচনপন্থী তারা বিনয়ের সাথে কথা বলছেন। বোঝানোর চেষ্টা করছেন অথবা তাদের নীরব থাকতে বলছেন। মনে হয় সমঝোতার একটা রাস্তা তৈরি হচ্ছে।
সেক্যুলার প্রধান দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সম্ভবত আগামী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না। সেই প্রেক্ষাপটে বিএনপি কিছু ছাড় দিয়ে হলেও ইসলামিস্টদের সাথে কথাবার্তা বলছে, আলাপ-আলোচনা করছে। নির্বাচনের বিষয়ে তারা যে গতিতে চলতে চাচ্ছিল, সেই গতি বর্তমানে কিছুটা স্তিমিত হয়েছে। কারণ পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ ও এনসিপির উদ্যোগে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার যে আন্দোলন অব্যাহত ছিল, তাতে বিএনপি ছাড়া সকল রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে সমর্থন করায় সরকারিভাবে অবশেষে দাবিটা মেনে নেয়া হয়। এটা ছিল রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের বাঁকফেরা। ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করার পর সাধারণভাবে ধারণা করা হয়েছিল অভ্যুত্থানকারীদের বড় দাবি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে, সেটা অনেকেই ভাবতে পারেনি। যেকোনোভাবেই হোক, আওয়ামী লীগ বা তাদের সঙ্গী-সাথীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এদিকে পতিত সরকারের সাবেক প্রেসিডেন্ট পালিয়ে যাওয়ায় সরকারও কিছুটা দুর্বল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। অভ্যুত্থানকারীরা সর্বোচ্চ কণ্ঠে আওয়াজ তুলতে থাকে। যদি এখনকার ১নং দাবি মেনে না নেয়া হয়, তাহলে অভ্যুত্থানের লক্ষ্য ও গন্তব্য ভণ্ডুল হয়ে যাবে। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আওয়ামী লীগ সম্পর্কিত দাবিটি মেনে নেয়ায় বিএনপিও দুর্বলতম স্থানে পৌঁছে যায়। তারা এখন বাধ্য হয়ে সরকার ও বর্তমান আন্দোলনকে সমর্থন করতে বাধ্য হয়। তাদের উচ্চকণ্ঠ অপদমিত হয়। সরকার সামান্য সময়ক্ষেপণ করে যে কৌশলের অবতারণা করেছে, তা পুনরায় দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়। সরকার কাউকে বিভক্ত করছে না। বড় বেশি শাসনও করছে না। আকবরীয় কায়দায় মেলামেশার মধ্যে সবকিছুর সমাধান করার চেষ্টা করছে। এ ধরনের পটভূমি ও প্রেক্ষাপটে আশা করা যায়, মোটামুটি ঐকমত্যের সাথে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন ইনশাআল্লাহ হয়ে যাবে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক।