সয়াবিনের রাজধানী লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে চাষীরা

আতোয়ার রহমান মনির, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) থেকে : লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলাকে সয়াবিনের রাজধানী বলা হলেও এবার বিগত বছর এর তুলনায় ২০১০ সালের চাষীরা ন্যায্য মূল্যে সয়াবিনের দাম না পাওয়া সহ সময় মত  বীজ ক্রয়ের ও জমি প্রস্ত্ততের জন্য আর্থিক সহযোগীতা না পাওয়ায় উৎসাহ হারিয়ে এ ফসলকে বাদ দিয়ে অন্য ফসলের দিকে উৎসায়িত হয়েছেন। ফলে গত বছরের তুলনায় এবছর সয়াবিন ফলন কম ও চাষবাস কমই দেখা মিলছে সয়াবিন চাষীদের ফসলি জমির মাঠে।

লক্ষ্মীপুর ও রায়পুরে সয়াবিন ফলনে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে কম সুদে ঋণ দেওয়া সহ সার বীজ প্রদান করে কৃষকদের উৎসাহিত করেছে। এ বছর ঐ রকম কোন তৎপরতা সরকারি-বেসরকারি ভাবেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ফলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে আশংকা রয়েছে। লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর লক্ষ্মীপুর জেলায় সয়াবিনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১১৮০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ৩৫৬২২ হেক্টর। তুলনা মূলক লক্ষ্যমাত্রা বেশি অর্জিত হয়ে ছিল।

গত বছর কৃষকদের সয়াবিন চাষে কৃষকদের অনুপ্রাণিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ডা. আতিউর রহমান নিজেই ব্যাংক থেকে ঋণ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করে। বেশি বেশি সয়াবিন চাষ করার জন্য কৃষকদের আহবান জানান এবং কম সুদে সহজ শর্তে সয়াবিনের উপর কৃষকদের ঋণ প্রদান সমস্ত ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ প্রদান করে। এর মধ্যে সব চেয়ে সয়াবিনের উপর কৃষকদের বেশী ঋণ প্রদান করেন এনসিসি ব্যাংক লক্ষ্মীপুর ও রায়পুর এ দুটি শাখা। লক্ষ্মীপুর এনসিসি ব্যাংকের ম্যানেজার ওবায়েদুর রহমান জানান, গত বছর এ ২টি ব্যাংক শাখা থেকে কৃষকদের মাঝে ৩২ লাখ টাকা  ঋণ প্রদান করা হয়। তবে এ বছর রায়পুর ও লক্ষ্মীপুর শাখা থেকে ৪৫ লাখ টাকা সয়াবিন চাষীদের মাঝে বিতরণের চিন্তা ভাবনা রয়েছে তবে কৃষকদের সাড়া পেলেই ঋণ বিতরণ হবে বলে তিনি জানান।

চরবংশী গ্রামের কৃষক আমানীয়া হাওলাদার জানান গত বছর সরকারি  উদ্যোগে সমন্বিত সয়াবিন চাষ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সয়াবিন চাষীদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষণ সহ নেওয়া হয়েছে নানান কর্মসূচি। কিন্তু এ বছর এ প্রকল্প শুরু হবে কিনা তা এখনো জানা যায়নি বলে তিনি ব্যাক্ত করেন। এছাড়া গত বছর সয়াবিন চাষীদের জন্য বিনামূল্যে সার ও রোগ-বালাইয়ের উপর সরকারিভাবে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বছর এখনো এ ধরনের কোন কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। ফলে এ বছর সয়াবিনের রাজধানী হিসেবে খ্যাত লক্ষ্মীপুর লক্ষ্য মাত্রা অর্জন হবে কিনা এ আশংকা রয়ে গেছে। লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক এম আমির হোসাইন জানান, এ বছর সয়াবিনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তারা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবে।

‘সয়াবিনের রাজধানী’ খ্যাত রায়পুর উপজেলায় এ বীজের সংকট চলছে। বিএডিসি’র কাছ থেকে চাহিদার তুলনায় কম বরাদ্দ পাওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়। এছাড়া বিএডিসি’র বীজে চারা না গজানোর অভিযোগ এখন কৃষকদের মুখে মুখে। এজন্য কৃষকরা উপযুক্ত সময় হওয়ায় স্থানীয়ভাবে বীজ সংগ্রহ করার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর রায়পুর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের ৪টি ইউনিয়নে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদন হয়। দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ ভাগ সয়াবিন এ এলাকায় উৎপাদিত হয়। সয়াবিন বদলে দিয়েছে হায়দরগঞ্জ বাজার ও আশপাশ এলাকার মানুষের জীবন যাত্রার মান। এ ফসল বিক্রির নগদ টাকায় স্বাবলম্বী হয়েছেন হাজার হাজার কৃষক। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত সয়াবিন তেল ও পল্লী খাদ্য প্রস্ত্ততকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখান থেকে সয়াবিন কেনার জন্য ছুটে আসেন। যোগাযোগ করা হলে রায়পুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইকবাল বলেন, ১৮ জানুয়ারি থেকে ৩০ ফেব্রুয়ারি সয়াবনি আবাদের উপযুক্ত সময়। টানা শৈত্য প্রবাহের কারনে সয়াবিনের চারা গজায়নি। জমিতে সয়াবিন চাষ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিএডিসি’র বীজের গুণগত মান ভালো বলেও তিনি মনে করেন। নোয়াখালী বিএডিসি’র উপ-পরিচালক আনন্দ চন্দ্র দাস মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে বলেন, রায়পুরে ১১ জন ডিলার রয়েছেন। চাহিদানুযায়ী তাদেরকে সয়াবিনের বীজ দেয়া সম্ভ্যব হয়নি। আমাদের কাছে বীজ না থাকায় কৃষকরা অতিরিক্ত দামে স্থানীয়ভাবে তা সংগ্রহ করছে। নিন্মমানের বীজের কারনে চারা না গজানো প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, সয়াবিনের বীজ সংরক্ষন একটি স্পর্শকাতর বিষয়। শৈত্যপ্রবাহ ও দীর্ঘদিনের পুরানো বীজ হলে এ অবস্থার তৈরি হয়।