স্টাফ রিপোর্টার : নিরাপদ ভ্রমণের আশ্বাস দেওয়া হলেও প্রতি বছরই ঈদযাত্রায় ঘটে অসংখ্য দুর্ঘটনা; ঘটে প্রাণহানিও। এসব দুর্ঘটনায় অনেকে আহত হন, ঘটে অঙ্গহানি। কোনো কোনো পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি বিয়োগ হয়ে যান, ফলে ঈদ আনন্দের পরিবর্তে পরিণত হয় বেদনায়। প্রতি বছরই ঈদ এলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান নিরাপদ ঈদযাত্রায় তৎপর হয়, কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। ঈদের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু তৎপরতা চোখে পড়লেও ঈদের পর ফিরতি যাত্রায় তা আর দেখা যায় না। প্রতি ঈদে এক কোটিরও বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়েন। ঈদের তিন-চারদিন আগে এরা ঢাকা ছাড়েন অল্প সময়ের মধ্যে এত মানুষকে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতা পরিবহন সেক্টরের নেই। ফলে মানুষ ঝুঁকি নিয়েই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহনে শহর ছেড়ে গ্রামে যান। কিন্তু এ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহন চালানো ঠেকাতে নিয়োজিতরা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ কারণে ঘটে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। আর বাড়তি ভাড়া, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রোধে কঠোর হচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে ঈদ পরিণত হয় বিষাদে।
দেশজুড়ে ঈদুল আজহা উদযাপন করা হবে ১৭ জুন। ঈদের এ দিনটিকে ধরে ১৬ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে ১৩ জুন থেকে। কারণ এদিন বৃহস্পতিবার ছিল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস। যারা কর্মজীবী, তারা বৃহস্পতিবার অফিস করে গ্রামের বাড়িতে যাত্রা শুরু করেছেন। অবশ্য গত সপ্তাহজুড়েই ঢাকা ছেড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কারণ যাদের খুব একটা বাধ্যবাধকতা ছিল না, তারা সপ্তাহজুড়ে গ্রামের বাড়ি ছুটেছেন।
বাস কাউন্টারেই নেওয়া হচ্ছে বাড়তি দাম
বিপুল পরিমাণ যাত্রীর বাড়ি ফেরার ভরসাস্থল বাস। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় ঈদের আগে-পরে বাসের টিকিটের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। এ সুযোগে টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেন বাস মালিকরা। বিকল্প না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বাড়তি দামেই টিকিট কাটতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। বরাবরের মতো এবারের চিত্রও একই। গত ১১ জুন মঙ্গলবার এ রিপোর্ট লেখার দিনে দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী নামিদামি পরিবহনের বাসের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। ফলে এসব কাউন্টারে এসে যাত্রীদের খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, ছোট কোম্পানির বাসের টিকিট এখনো আছে। তবে সংশ্লিষ্টরা সেগুলো বিক্রি করছেন না। ঈদ আরও ঘনিয়ে এলে সেসব টিকিট আরও বেশি দামে বিক্রির পাঁয়তারা করছেন তারা। বড় কোম্পানিগুলোরও সব টিকিট বিক্রি হয়নি। সংশ্লিষ্টরা হয়তো সিস্টেম ব্লক করে রেখেছে। যাতে সময় সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করতে পারে।
ট্রেনের ফিরতি টিকিট বিক্রি চলছে
আগামী ১৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে এরই মধ্যে ট্রেনে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রির পর এবার ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত ১০ জুন সকাল ৮টা থেকে পশ্চিমাঞ্চলের আন্তঃনগর ট্রেনের আসন বিক্রি শুরু হয়েছে। আর পূর্বাঞ্চলের ট্রেনের আসন দুপুর ২টা থেকে বিক্রি শুরু হয়। যাত্রীদের সুবিধার্থে এবারো অনলাইনেই সব টিকিট দেয়া হবে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কর্মপরিকল্পনা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এতে বলা হয়, ১০ জুন থেকে ফিরতি যাত্রা শুরুর ১০ দিন আগের আন্তঃনগর ট্রেনের আসন অগ্রিম হিসেবে বিক্রি করা হবে। পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলের সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট সকাল ৮টায় এবং পূর্বাঞ্চলে চলাচল করা সব ট্রেনের টিকিট দুপুর ২টায় বিক্রি করা হবে। জানা গেছে, আন্তঃনগর ট্রেনের ২০ জুনের টিকিট বিক্রি ১০ জুন, ২১ জুনের টিকিট ১১ জুন, ২২ জুনের টিকিট ১২ জুন, ২৩ জুনের টিকিট ১৩ জুন বিক্রি করা হয় এবং ২৪ জুনের টিকিট বিক্রি হবে ১৪ জুন।
বিআরটিসির ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিস’ চলবে ১৮ জুন পর্যন্ত
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখি মানুষের জন্য দেশব্যাপী ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিস’ চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। এ লক্ষ্যে গত ১০ জুন থেকে আগাম টিকিট বিক্রি শুরু করে সংস্থাটি। ১৩ জুন থেকে ঈদযাত্রার বিশেষ এ সেবা প্রদান শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিআরটিসির সংশ্লিষ্ট ডিপো থেকে ঈদযাত্রার এ টিকিট ক্রয় করা যাবে। বিআরটিসির বিশেষ এ সার্ভিসটি চলবে ঈদের পরদিন, অর্থাৎ ১৮ জুন পর্যন্ত। বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় সংস্থাটির মতিঝিল, জোয়ারসাহারা, কল্যাণপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ বাস ডিপো (চাষাঢ়া) থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে মতিঝিল বাস ডিপোর অধীন ঢাকা থেকে রংপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, জয়পুরহাট, জামালপুর ও কলমাকান্দা রুটের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। কল্যাণপুর বাস ডিপো থেকে বিক্রি হচ্ছে রাজশাহী, নওগাঁ, নেত্রকোনা, সৈয়দপুর, ঠাকুরগাঁও, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, গাইবান্ধা, বগুড়া, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইলের নাগরপুর, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও শেরপুরের নালিতাবাড়ী রুটে চলাচলকারী বাসের টিকিট। গাবতলী টার্মিনাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে রংপুর, গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া রুটের বাসের টিকিট। জোয়ারসাহারা বাস ডিপো থেকে মিলছে রংপুর, দিনাজপুর, নওগাঁ, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও বগুড়ার বাসের টিকিট। মিরপুর বাস ডিপোর অধীনে বিক্রি হচ্ছে ঠাকুরগাঁও, রংপুর, পঞ্চগড়, ঝালকাঠির স্বরূপকাঠি, গোপালগঞ্জ ও বগুড়া রুটের বাসের টিকিট। মোহাম্মদপুর বাস ডিপো থেকে বিক্রি হচ্ছে রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, বগুড়া, নওগাঁ, বরিশাল, খুলনা, গোপালগঞ্জ ও ময়মনসিংহ রুটের বাসের টিকিট। যাত্রাবাড়ী বাস ডিপো থেকে কেনা যাচ্ছে রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, কুড়িগ্রাম, ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও বরিশাল রুটের বাসের টিকিট। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ বাস ডিপোয় ফরিদপুরের ভাঙ্গা, বরিশাল, হবিগঞ্জ, রংপুর, লালমনিরহাট, নওগাঁ, নেত্রকোনা ও বগুড়া রুটে চলাচলকারী বাসের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। গাজীপুর বাস ডিপো থেকে বিক্রি হচ্ছে খুলনা, বরিশাল, রংপুর, বগুড়া ও ময়মনসিংহ পথের বাসের টিকিট। এর বাইরে কুমিল্লা, নরসিংদী, সিলেট, দিনাজপুর, বগুড়া, রংপুর, খুলনা, পাবনা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও বরিশাল বাস ডিপো থেকেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচলকারী বিআরটিসির বাসের অগ্রিম টিকিট পাওয়া যাবে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে প্রতিবারই বিআরটিএ ও হাইওয়ে পুলিশ অংশীজনদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করে। এসব বৈঠকে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়, কোনোভাবেই ঈদযাত্রায় লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না, সিটি সার্ভিসের বাস দূরপাল্লায় চলতে দেওয়া হবে না, ট্রাক ও পিকআপভ্যানে যাত্রী বহন করতে দেওয়া হবে না, বাড়তি ভাড়া আদায় কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে, সড়ক-মহাসড়কের চাঁদাবাজি যেকোনো মূল্যে রুখে দেওয়া হবে। বাস্তবে এসবের তেমন কিছুই ঘটে না। ঘটার কথাও নয়। কারণ ঈদযাত্রায় মাত্র তিন-চার দিনে ঢাকা থেকে এক কোটির কাছাকাছি মানুষ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রা করেন। এত অল্পসময়ে, এত বিপুলসংখ্যক মানুষ পরিবহন করার মতো গণপরিবহন দেশে নেই। রেলসেবা তো ব্যাপকভাবে অপর্যাপ্ত। নৌপরিবহন ব্যবস্থাও সুবিধার নয়। সুতরাং সিংহভাগ মানুষ আপনজনের টানে ঝুঁকি নিয়ে সড়কপথেই যাত্রা করেন। তিনি আরও বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো এ দৃশ্য শুধু নির্বিকারভাবে দেখতে থাকে। সড়কের চাঁদাবাজি, বাড়তি ভাড়া আদায় এবং অনিরাপদ যানবাহন চলাচল বন্ধে তাদের তেমন কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান হয় না। তিনি বলেন, ঈদযাত্রা নিরাপদ করার জন্য সরকারিভাবে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, সেসব উদ্যোগ ঈদ-পূর্ব যাত্রায় যতটা সক্রিয় থাকে, ঈদ-পরবর্তী ফিরতি যাত্রায় ততটা সক্রিয় থাকে না। ফলে ঈদের ফিরতি যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিতের কর্মকৌশল সাজাতে হবে।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- ঋণনির্ভর বাজেট
- লোকসভায় কমছে মুসলিম এমপি
- এ বাজেট ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য আরো বৃদ্ধি করবে
- জট খুলছে ফেঁসে যাচ্ছেন একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা
- কোটা বাতিলের দাবিতে আবারো শিক্ষাঙ্গন উত্তাল
- কাজে লাগছে না পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামানোর পদক্ষেপ
- ওয়াকার-উজ-জামান নতুন সেনাপ্রধান
- ডিইউজে সভাপতি শহিদুল ইসলামের মায়ের ইন্তেকাল
- ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবি শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের
- ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নে শিক্ষক ফেডারেশনকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে - অধ্যাপক এবিএম ফজলুল করীম
- বায়োফার্মা পেল ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি এন্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড
- ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের নতুন কমিটিকে ছাত্রশিবিরের অভিনন্দন