রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ১২তম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ॥ ৭ জিলহজ ১৪৪৫ হিজরী ॥ ১৪ জুন ২০২৪

২৫ কোটি মুসলমানের দেশ ভারত

লোকসভায় কমছে মুসলিম এমপি

মোদির ৭২ সদস্যের মন্ত্রিপরিষদে নেই কোনো মুসলিম
॥ ফেরদৌস আহমদ ভূইয়া ॥
ভারতের মুসলিম জনসংখ্যা ২০ শতাংশ হলেও লোকসভা নির্বাচনে মুসলিম এমপি কোনো সময়ই ১০ শতাংশও হয় না, বরং কমে তা ৫ শতাংশের নিচে চলে এসেছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনেও মুসলিম এমপি নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র ২৫ জন, যা লোকসভার ৫৪৩ আসনের ৫ শতাংশেরও কম। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে ভারতে প্রতিনিয়ত মুসলিম এমপি প্রার্থীদের সংখ্যা যেমন কমছে, তেমনিভাবে কমছে নির্বাচিত এমপির সংখ্যা। অপরদিকে ২৫ কোটির অধিক মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশে মন্ত্রিপরিষদে কোনো মুসলিমের স্থান হয়নি। ইতোমধ্যে বিজেপির নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন সরকারে নরেন্দ্র মোদি ৭২ সদস্যের মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেছেন। অপরদিকে রাজনৈতিক দলগুলো মুসলিমদের মনোনয়ন দেয়া কমিয়ে দিয়েছে। ২০১৯ সালে রাজনৈতিক দলগুলো ১১৯ মুসলিমকে লোকসভা নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছিল, এবার দিয়েছে ৮২ জনকে। ইতোপূর্বে ১৯৮৪ সালে ৪৫ মুসলিম এমপি নির্বাচিত হয়েছিল। এ সংখ্যা ছিল ভারতের স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে মুসলিম প্রার্থী ৮২ জনের মধ্যে মাত্র ২৫ জন মুসলমান এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ২৫ জনের মধ্যে ২১ সাংসদ বিরোধী জোট ইন্ডিয়া জোটের দলগুলোর। এর মধ্যে কংগ্রেসে থেকে সর্বাধিক ৯ জন মুসলিম সাংসদ, তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি)-এর পাঁচজন। চারজন সাংসদ সমাজবাদী পার্টির (এসপি)। দুই সাংসদ ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ (আইইউএমএল) ও একজন ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি)-এর। এছাড়া এআইএমআইএম (অওগওগ)-এর একজন মুসলিম সাংসদ (যার মধ্যে রয়েছেন আসাদুদ্দিন ওয়াইসি)। এছাড়া নির্দলীয় হিসেবে জিতেছেন কাশ্মীর রাজ্যের বারামুল্লা থেকে ইঞ্জিনিয়ার রশিদ। আর লাদাখ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ হানিফা। ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতৃত্বে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স-এনডিএ-তে একজনও মুসলিম এমপি নেই ।
মুসলিমরা এখন লোকসভার মোট শক্তির মাত্র ৪.৪২%, যা সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। ১৯৮০ সালে লোকসভার নির্বাচনে ৪৯ মুসলিম সাংসদ (লোকসভার ৯.০৪%) নির্বাচিত হওয়া এবং ১৯৮৪ সালে ৪৫ মুসলিম সাংসদ (লোকসভার ৮.৩%) নির্বাচিত হওয়ার পর লোকসভায় মুসলমানদের সংখ্যা কখনো ৪০ অতিক্রম করেনি। বিগত তিনটি লোকসভা নির্বাচনে, আদমশুমারি অনুসারে, সামগ্রিকভাবে জনসংখ্যায় মুসলমানদের প্রায় ২০ শতাংশ থাকা সত্ত্বেও মুসলিম সাংসদদের অনুপাত ৫%-এর নিচে নেমে গেছে।
২০১৯ এবং ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় এ বছর ভারতের প্রধান দলগুলোয় মুসলিম প্রার্থী ছিল অনেক কম। ১১টি প্রধান দলে মোট ৮২ মুসলিমকে প্রার্থী করা হয়েছিল। যাদের মধ্যে ২৫ জন জিতেছেন। ২০১৯ সালে এ দলগুলো ১১৫ জনকে প্রার্থী করেছিল। তার মধ্যে ১৬ জন জয়ী হয়েছিল। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, ৬৫টি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে মুসলিমরা মোট জনসংখ্যার কমপক্ষে ২৫%। আর ১৪টি নির্বাচনী এলাকা রয়েছে, যেখানে তাদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। লাক্ষাদ্বীপে মুসলমানদের সংখ্যা সর্বাধিক (৯৬.৫৮%)।
২০১৯ এবং ২০২৪ সালে বিজেপি এ ৬৫টি নির্বাচনী এলাকায় যথাক্রমে ২৫ এবং ২০টিতে সর্বাধিক আসন জিতেছে। কংগ্রেস ২০১৯ সালে ১২টি এবং অন্যান্য ২০২৪ সালে ১৩টি আসনে জিতেছিল। তারপর টিএমসি ১০ এবং ১২টি এবং সমাজবাদী পার্টি ৩ এবং ৪টি আসনে জিতেছিল। ২০১৯ সালে এ ৬৫টি আসনের মধ্যে মাত্র ১৯ মুসলিম এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এই বছর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২-এ। দুই মুসলিম সাংসদ এমন নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, যেখানে মুসলমানরা জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশেরও কম। উত্তরপ্রদেশের গাজীপুর যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা ১০.১৭ শতাংশ, সেখান থেকে সমাজবাদী পার্টির আফজল আনসারি ও তামিলনাড়ুর রামানাথপুরম (১১.৮৪% মুসলিম জনসংখ্যা) থেকে আইইউএমএলের নবস্কানি কে জয়ী। ২০১৯ সালে এক-চতুর্থাংশেরও কম মুসলিম জনসংখ্যার এলাকা থেকে সাত মুসলিম সাংসদ জয়ী হয়েছিলেন।
প্রার্থী হয়েছেন ৮২ জন, বিজয়ী ২৫
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দেশটির সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠী মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রার্থী ছিল মোট ৮২ জন, বিভিন্ন দলের এসব প্রার্থীদের মধ্যে ২৫ জন জয় পেয়েছেন।
জয়ী ২৫ প্রার্থীর মধ্যে অন্যতম ভারতের বিশ্বকাপ জয়ী সাবেক ক্রিকেট তারকা ইউসুফ পাঠান। তিনি অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বহরমপুর আসনের প্রার্থী হয়েছিলেন। এ আসনটি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রার্থী ছয়বারের এমপি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু রাজনীতিতে নবাগত ইউসুফ পাঠান অভিজ্ঞ রাজনীতিক অধীর রঞ্জনকে ৮৫০২২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন।
উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর আসনে কংগ্রেসের ইমরান মাসুদ জয়ী হয়েছেন। তিনি নিকটতম বিজেপি প্রার্থী রাঘব লখনপাল থেকে ৬৪৫৪২ ভোট বেশি পেয়েছেন।
উত্তরপ্রদেশের কাইরানা আসন থেকে জয়ী হয়েছেন সমাজবাদী পার্টির ২৯ বছর বয়সী নারী প্রার্থী ইকরা চৌধুরী। তিনি ভারতীয় জনতা দলের (বিজেপি) প্রার্থী প্রদীপ কুমারকে ৬৯১১৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন।
উত্তরপ্রদেশের গাজীপুর আসন থেকে জয়ী সমাজবাদী পার্টির আরেক প্রার্থী আফজাল আনসারি। প্রায় ৫ লাখ ৪০ হাজার ভোট পাওয়া আনসারি এর আগেও এ আসন থেকে লোকসভার সদস্য ছিলেন।
অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন (এআইএমআইএম) দলের নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি তিন লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে তার হায়দরাবাদের আসন ধরে রেখেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল বিজেপির মাধবী লতা কমপেল্লা।
কেন্দ্রশাসিত লাদাখে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হানিফা জান। তিনি ইন্ডিয়া জোটের সেরিং নামগিয়ালকে পরাজিত করেছেন।
কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুল্লাহ আসনে জয়ী হয়েছেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল রশীদ শেখ। কারাগার থেকে বন্দি অবস্থায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি হারিয়েছেন কাশ্মীরের হেভিওয়েট প্রার্থী ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহকে।
জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ-রাজৌরি আসন থেকে জয়ী হয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রার্থী মিয়া আলতাফ আহমেদ। তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে পরাজিত করেছেন। শ্রীনগরের আসন থেকে পাস করেছেন একই দলের প্রার্থী আগা সৈয়দ রুহুল্লাহ মেহেদি। এর পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের রামপুর আসন থেকে জয়ী হয়েছেন সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী মহিবুল্লাহ। উত্তরপ্রদেশের সম্বল থেকে জয় পেয়েছেন সমাজবাদী পার্টির আরেক প্রার্থী জিয়াউর রহমান।
মোদির মন্ত্রিসভায় এবারো নেই কোনো মুসলিম
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের আগে শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদাররা প্রায়ই দাবি করতেন, সংখ্যালঘু মুসলমানদের একাংশও নাকি এখন তাদের ভোট দিচ্ছেন। আবার অনেকেই এ দাবিকে ‘ফাঁকা আওয়াজ’ হিসেবে অবিহিত করেন। তবে শুভেন্দুদের দাবি যদি সত্য বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে তার প্রতিফলন কোথায়? হিসাব অনুযায়ী, মোট ভোটারের ১৪ শতাংশ ভোটার মুসলিম। তবুও মোদির নবগঠিত মন্ত্রিসভায় নেই কোনো সংখ্যালঘু প্রতিনিধি। গত রোববার (৯ জুন) রাষ্ট্রপতি ভবনে নরেন্দ্র মোদিসহ ৭২ জন শপথগ্রহণ করেন। এই ৭২ জনের মধ্যে কোনো মুসলিম নেই। এমনকি শরিক দল তেলেগু দেশম বা জনতা দল ইউনাইটেডও কোনো মুসলিম প্রার্থীকে মন্ত্রী করেনি। এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পর্যবেক্ষকরা। টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকারে ধারাবাহিকভাবে কোনো মুসলিম প্রতিনিধি নেই। এক্ষেত্রে কেউ বলছেন, ‘নো ভোট-নো পোস্ট।’ অর্থাৎ সংখ্যালঘুরা বিজেপি বা তাদের শরিকদের ভোট দেয়নি, তাই তারা মন্ত্রিসভায় নেই।
তবু প্রথাগতভাবে হলেও বিজেপিতে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। ২০১৪ সালেও মোদি মন্ত্রিসভায় দুইজন সংখ্যালঘু ছিল। নাজমা হেপতুল্লাহ ও মোখতার আব্বাস নাকভি। কিন্তু মোদির দ্বিতীয় মেয়াদ থেকে মন্ত্রিসভায় আর ঠাঁই মেলেনি সংখ্যালঘু প্রতিনিধিদের। এবারও পুনরানৃত্তি ঘটাল মোদি। ১৪০ কোটি মানুষের দেশ ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ২৫ কোটি। দেশটির হিন্দু জনসংখ্যার তুলনায় তা অনেক কম হলেও সংখ্যাটি অল্প নয়! পৃথিবীর অনেক দেশের মোট জনসংখ্যাই ২০ কোটির কম। এত বিপুলসংখ্যক মানুষের কোনো প্রতিনিধি এবারও কেন্দ্রীয় সরকারে না থাকায় ভারত ছাড়িয়ে এ আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে মুসলিম বিশ্বে।
ভারতে রেকর্ড ভোটে জিতে ইতিহাস গড়েছেন রাকিবুল
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এককভাবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। যদিও বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট তিনশ’ আসন ছুঁতে পারেনি। দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে কংগ্রেসের উদ্যোগে গড়া ‘ইন্ডিয়া’ জোট।
ভোটের লড়াইয়ে ব্যক্তিগত চমক দেখিয়েছেন অনেক প্রার্থী। তাদের মধ্যে একজন রাকিবুল হুসেইন। তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন আসামের ধুবুরি আসন থেকে। কংগ্রেসের এ প্রার্থী এবার জিতেছেন ১০ লাখ ১২ হাজার ভোটের ব্যবধানে।
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো রাকিবুল যাকে হারিয়েছেন, তিনিও একজন মুসলিম। তবে কোনো সাদামাটা প্রার্থী নন, অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (এআইইউডিএফ) প্রধান বদরুদ্দিন আজমল। তার দলকে আসামের তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আসামের ১৪টি আসনের মধ্যে মাত্র তিনটি জিতেছে কংগ্রেস। এর মধ্যে একটি রাকিবুলের ধুবুরি।
রাকিবুল যে ধুবুরিতে এত বড় ব্যবধানে জিতলেন, সেটা তার নিজের এলাকা নয়। সেখান থেকে প্রায় তিনশো কিলোমিটার দূরে সামাগুড়ি থেকে তিনি বার বার বিধায়ক হয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকেই জিতে আসছেন রাকিবুল। ২০১১ সালে প্রফুল্ল মহন্তাকে হারিয়ে দিয়েছিলেন, যিনি সেবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। ২০১৬ সালে যখন বিজেপির জোয়ার চলছিল তখনো সামাগুরিতে বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন তিনি।
রাকিবুল জয়ী হওয়ার কিছুক্ষণ পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তাকে ‘হিরো অব দ্য ডে’ (দিনের নায়ক) বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, তার আলোচনা সামনে আসা উচিত।
অথচ এ হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গে রাকিবুলের সম্পর্ক খুবই উত্তেজনাকর! এমনকি নির্বাচনের আগে হিমন্তের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন রাকিবুল।
৪ জুনের ফল শুধু ধুবুরিতে নির্বাচনী ইতিহাসই রচনা করেনি, রাকিবুলের মেধার প্রমাণ যেমন হয়েছে, তেমনি যারা তার প্রার্থিতা নিয়ে সন্দেহ করেছিলেন তাদেরও চুপ করিয়ে দিয়েছে।
ভূমিধস বিজয়ের পর স্ত্রী এবং ছেলেকে নিয়ে নির্বাচনী কার্যালয় থেকে প্রশংসাপত্র গ্রহণ করতে যান রাকিবুল। যে কাগজটি হয়তো শোভা পাবে তার ড্রয়িং রুম কিংবা রিডিং রুমের দেয়ালে। যাতে রাকিবুলের নামের পাশে ভোটের সংখ্যাটি ১৪ লাখ ৭১ হাজার ৮৮৫। যখন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমলের নামের পাশে ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৪০৯ ভোট। বিজয়ের ব্যবধান বিস্ময়কর ১০ লাখ ১২ হাজার ৪৭৬ ভোট।
জানা যায়, রাকিবুল হুসেইনের জন্ম ৭ আগস্ট ১৯৬৪। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন। তিনি সামাগুড়ি থেকে বিধায়ক এবং ২০২১ সাল থেকে আসাম বিধানসভায় বিরোধীদলের উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবার ধুবরি থেকে ইতিহাস গড়া জয় পেয়ে লোকসভায় যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
তার বাবা নুরুল হোসেনও বিধায়ক ছিলেন। রাকিবুল ২০০১ সাল থেকে আসাম বিধানসভার সামাগুড়ি নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করছেন। ২০০২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তরুণ গগৈ সরকারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রিত্বও করেছেন। আসামের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কংগ্রেস সরকারেও মন্ত্রিত্ব করেছেন। হেমন্তর মতো তুখোড় নেতাও একবার নির্বাচনে হেরেছেন কিন্তু রাকিবুল কখনো হারেননি।
মুসলিমদের রাজনীতি ও ক্ষমতায় অন্তর্ভুক্তি দরকার
ভারত হচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় মুসলিম জনসংখ্যার দেশ। সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া, দ্বিতীয় হচ্ছে পাকিস্তান আর বাংলাদেশ হচ্ছে চতুর্থ মুসলিম জনসংখ্যার দেশ। কিন্তু ভারতের মুসলিমরা হিন্দুত্ববাদের নিষ্পেষণে প্রতিনিয়ত পিছিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভারতে হিন্দুত্ববাদের জাগরণের প্রভাবে প্রতিনিয়ত মুসলিমরা কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ছে। বিগত শতাব্দীর আশির দশকের প্রথম দিকে ভারতীয় জনতা পার্টি-বিেেজপি বিকাশ লাভ করতে থাকে। একদিকে বিজেপির নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদী জাগরণ হচ্ছে; অপরদিকে মুসলিমরা পিছিয়ে যাচ্ছে। ভারতে বিজেপি সরাসরি হিন্দুত্ববাদের বিকাশের কথা বলছে তার প্রমাণ হচ্ছে তাদের দল থেকে কোনো মুসলিম প্রার্থীকে মনোনয়ন না দেয়া। ভারতের লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে একটি আসনেও বিজেপি কোনো মুসলিম প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি। মন্ত্রিপরিষদেও নেয়া হয়নি কোনো মুসলিমকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২৫ কোটি মুসলিমের দেশে সরকারের মন্ত্রিপরিষদে কোনো মুসলিম সদস্য না থাকা ভারতের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশের মন্ত্রিসভায় দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব বাদ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ভারত স্বীকৃত কোনো হিন্দু রাষ্ট্র নয়, তাই ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো; বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলকে মুসর্লিমদের রাজনীতি ও ক্ষমতায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা উচিত বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।




এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।