মূল্যস্ফীতি হ্রাস ও কর্মসংস্থানের দিকনির্দেশনা নেই
বাড়ছে সুদ ব্যয়, কষ্ট বাড়বে সাধারণ মানুষের
॥ উসমান ফারুক ॥
বছরের পর বছর ধরে অর্থনীতির সব সূচক এখনো টালমাটাল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ সংকট, টাকার মান পড়ে যাওয়া, রাজস্ব আদায় না হওয়া, বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়া, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের মতো সূচকগুলো গত দুই বছর ধরেই খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে শুধু রেমিট্যান্স সূচকটি কয়েক মাস ধরে কিছুটা ভালো হলেও অর্থ পাচারের পরিমাণ কমেনি। অর্থনীতির এমন চালচিত্রের মধ্যে খেলাপি ঋণ এক লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছানোর দিনেই জাতীয় সংসদে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। যেখানে অর্থনৈতিক সংকট সমাধানের কোনো বার্তা নেই। উচ্চহারের মূল্যস্ফীতিতে জর্জরিত সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর চাপিয়েছেন নতুন করের বোঝা। বাজেটের পরের দিন অর্থমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মূল্যস্ফীতি কমবে বছরের শেষে। অর্থাৎ আরো ছয় মাস অপেক্ষা করতে বলেছেন তিনি। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এক বছর অপেক্ষা করতে হবে মূল্যস্ফীতি কমে কি না, তা দেখতে। যদিও বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোর কোনো বাস্তবিক পরিকল্পনা নেই।
বাজেট বিশ্লেষণ করে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আগামী বাজেটও বাস্তবসম্মত হয়নি। বাস্তব সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে কল্পনানির্ভর বাজেট করা হয়েছে। ছোট ব্যবসায়ীদের ওপর নতুন কর বসালেও বিপরীতে ছাড় পেয়েছেন বড় খাতের ব্যবসায়ীরা। নতুন বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কিছুই রাখা হয়নি। এতে রিজার্ভ সংকট দূর করা ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়বে। কর্মসংস্থান আরো কমে যাবে। জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা বাজেট অর্থনীতির চলমান নাকাল অবস্থার কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না।
এ বাজেট সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গত নির্বাচনের ইশতেহারে জনগণের কল্যাণের কথা বলেছিল আওয়ামী লীগ। দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাবে। কিন্তু আর্থিক খাতের সংস্কারে বাজেটে কিছু নেই। সেখান থেকে সরে এসে করের বাড়তি চাপে ফেলছে জনগণকে। দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে লুট করা টাকা বৈধ করার সুযোগ দিয়েছে সরকার, যা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না বলেও প্রস্তাবনা দিয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, দেশি-বিদেশি ব্যাংক ঋণের বিকল্প হিসেবে বাজেটে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য আনতে বাজেট ঘাটতি কমানোর দরকার ছিল। সরকারি ব্যয়ে লাগাম টানতে পারলে ব্যয় কমে গিয়ে বাজেট ঘাটতি কম হতো। এতে বিনিময় হারে প্রভাব পড়ে টাকার মান স্থিতিশীল হতো, রিজার্ভ বেড়ে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে চলে আসত। সরকারি আমলাদের বেতনেও কৃচ্ছ্রসাধন, অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, অপচয় কমাতে উদ্যোগ নেয়া যেত বাজেটে। বিদেশি ঋণনির্ভর প্রকল্প নেয়া বন্ধ করা, গণহারে প্রকল্প না নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রয়োজন ছিল। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ওপর বিভিন্ন ধরনের করের বোঝা না চাপিয়ে বড়দের কাছ থেকে পাওনা কর আদায়ে বেশি মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।
ঋণনির্ভর বাজেটে এবারও সুদ ব্যয় বাড়ছে
জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা আসবে রাজস্ব খাত থেকে। আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি। মূল বাজেটের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি।
শেষ হতে যাওয়া চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। বাজেট বাস্তবায়ন করতে না পারা, অর্থের জোগাড় না হওয়ায় তা সংশোধন করে ঘাটতি ২ লাখ ৩২ হাজার ৯১৮ কোটি টাকায় নামানো হয়। আয় কম হওয়ায় ব্যয় করতে পারেনি সরকার। এতে ঘাটতিও কমে যায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গত ১০ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ বা অর্ধেক। প্রতি বছরই এভাবে বড় আকারের বাজেট নিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারছে না সরকার। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনার পর তাও বাস্তবায়ন হয় না। এমন রেকর্ডের পরও বিশাল আকারের বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
আগামী বাজেটের ৩৬ শতাংশের বেশিই আনতে হবে ঋণ করে। এর মধ্যে বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেবে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। দেশীয় উৎসের মধ্যে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ ব্যাংক খাত থেকে। ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ এখন সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সঞ্চয়পত্র মিলিয়ে সরকারের অভ্যন্তরীণ স্থিতি হচ্ছে প্রায় ৯ লাখ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে ব্যাংকিং খাতে। এর মধ্যে নতুন করে সরকারের ব্যাংক ঋণ নেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক তো এমনিতেই তারল্য সংকটে রয়েছে, ব্যাংক কোত্থেকে দেবে? আরেকটি দিক হলোÑ ব্যাংকিং সেক্টরের যে অবস্থা, দুরবস্থায় থাকা মানুষ তো ব্যাংকে টাকাই রাখছে না, আস্থা নেই। ব্যাংক থেকে কী করে টাকা নেবে সরকার।
তিনি বলেছেন, নতুন বাজেটও ঋণনির্ভর করেছেন অর্থমন্ত্রী, যা বর্তমান বাস্তবতায় ঠিক হয়নি। অলরেডি বৈদেশিক ঋণের ভারে জর্জরিত। আমার মনে হয়, ব্যয়টা সাশ্রয় করলে ঘাটতি কিছু কমবে। বিগত বছরগুলোয় বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প নিতে বিদেশি ঋণ বেশি নিয়েছে সরকার। এতে রিজার্ভ থেকে ডলার খরচ করেছে সরকার সবচেয়ে বেশি। এক বছরেই রিজার্ভ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার নিয়েছে সরকার বিদেশি ঋণ পরিশোধ ও জ্বালানি তেল আমদানিতে।
বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু নেই
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলেছে, চ্যালেঞ্জিং সময়ে এ বাজেট উদ্ভাবনমূলক ও সাহসী পদক্ষেপ নেই। সরকারের আর্থিক নীতির সমালোচনা করে সিপিডি বলেছে, বর্তমান অর্থনৈতিক সমস্যা ও ক্রান্তিকালীন সংকটের সমাধানে বাজেটে যথাযথ পদক্ষেপ ও দিকনির্দেশনা নেই। আমাদের আশা ছিল, এ বাজেট অনেকটা উদ্ভাবনমূলক হবে। এখানে সৃজনশীল কিছু পদক্ষেপ থাকবে এবং কিছু সাহসী পদক্ষেপ থাকবে। কারণ এ চ্যালেঞ্জিং সময়ে গতানুগতিক বাজেট কোনো ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে পারে না।
গত সপ্তাহে ‘অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫’ র্শীষক আলোচনা করেছিল সম্পাদক পরিষদ ও সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। সেখানে বক্তারা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে পারে, তেমন কিছুই নেই। জনপ্রশাসনে ব্যয় বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ঋণখেলাপি মডেলে চলছেন ব্যবসায়ীরা। বাজেটে তাদের জন্য সুবিধা রাখা হয়েছে। আর্থিক খাতে সুশাসন ও সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বাজেটে উপেক্ষিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানটিতে দেশের অর্থনীতির কোন প্রেক্ষাপটে আগামী বাজেট উপস্থাপন হলো, তাই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। রেমিট্যান্স ছাড়া বাকি সব সূচকই অস্বস্তিতে রয়েছে জানিয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ঘাটতি বাজেট দেওয়া হলেও উন্নয়ন বাজেট ও পরিচালন খাতে কোনো কাটছাঁট করা হয়নি। অথচ অর্থনীতির এ ধরনের সংকটের সময় কৃচ্ছ্রতাসাধন করা দরকার ছিল।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে বাজেটের ১৭ শতাংশ। এখানে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষায় সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্র সুদ ব্যয় দেখানো হয়েছে। এসব বাদ দিলে বাজেটের ৯ শতাংশ হবে সামাজিক সুরক্ষা খাতে। আর প্রকৃত সামাজিক সুরক্ষা বিবেচনায় নিলে তা বাজেটের এক শতাংশ হবে। আগামী বাজেটে পেনশন খাতে প্রবৃদ্ধি দেখানো হয় ৯ শতাংশ। মোট বাজেটেও এত প্রবৃদ্ধি হয়নি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘জনপ্রশাসন ব্যয় এ সময়েও বাড়ানো হয়েছে। সেখানে সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তি দিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উদ্যোগ নেই। মানুষ স্বস্তি পায় এমন কিছু নেই বাজেটে।’ প্রশাসনিক সংস্কার করার দাবি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাজেট গতানুগতিক ধারায় হয়েছে। অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও জ্বালানি সংকটের মতো তিনটি বড় দাগের চ্যালেঞ্জ আছে। এসব সমাধানে কোনো প্রস্তাবনা রাখা হয়নি। সরকার এখন ঋণ নিয়ে, ঋণ পরিশোধ করছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও রিজার্ভ বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ নেই।’
সরকারি ব্যয় কমিয়ে আনা দরকার ছিল এ দুঃসময়ে। ব্যাংক খাতের দুর্বলতা একদিনে সৃষ্টি হয়নি, তাই সমাধানও চটজলদি হবে না। ব্যাংক খাতের সমস্যাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা লাগবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কাজটি হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির মাধ্যমে। সেখানে সরকার বাজেটে সহায়তা দেবে মাত্র।
সর্বোচ্চ ব্যয় হচ্ছে আমলাদের বেতন-ভাতায়
একসময় বাজেটে সর্বোচ্চ ব্যয়ের খাত ছিল শিক্ষা খাত। সব সরকারই শিক্ষা খাতে বেশি বরাদ্দ দিয়ে আসছিল। সেখানে মূল লক্ষ্যই ছিল সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থাকে অগ্রগতির দিকে ধাবিত করা। মোটামুটি ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত এ ধারা চলতে দেখা যায়। এরপর থেকে দেখা মেলে অন্য চিত্র। ২০১৮-১৯ অর্থবছর বাজেট বরাদ্দে শিক্ষা খাতকে ছাড়িয়ে যায় জনপ্রশাসন খাত। আর তখন থেকে এ খাতই ব্যয়ের সর্বোচ্চ খাতের স্থান দখল করে আছে। আগামী অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেটেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি।
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এ বরাদ্দের সবচেয়ে বড় অংশ ব্যয় হবে জনপ্রশাসন খাতে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই লাখ ৯৭ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ২২ দশমিক এক শতাংশ। গত অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল দুই লাখ ৭০ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। এটি ছিল ওই অর্থবছরের মোট বাজেটের ২২ শতাংশ। গত চার-পাঁচ বছর ধরে আমাদের বেতন-ভাতা বাড়াতে গিয়ে সরকার অন্যান্য খাত থেকে বরাদ্দ কমিয়ে আনছে।
কালো টাকা সাদা করতে অভাবনীয় আইনি ছাড়
জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়। যেখানে ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাভাবিক করহার বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। স্বাভাবিক নিয়মে নিয়মিত কর দেওয়ার পরে অতিরিক্ত জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ থাকে। একাধিকবার দিয়ে আসা এ সুযোগে এবার ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
বাজেট প্রস্তাবে আয়কর আইনে তা সংযুক্ত করতে সংশোধনির কথাও বলেছেন অর্থমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেছেন, অন্য আইনে যাই থাকুক না কেন, ভবিষ্যতে এ অর্থ নিয়ে কোনো সংস্থা, দপ্তর বা মন্ত্রণালয় প্রশ্ন তুলতে পারবে না। এতে বেনজীরের মতো অপরাধীরা দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে লুট করা অর্থ বৈধ করতে পারবে বলে অর্থনীতিবিদরা সমালোচনা করছেন। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এর মাধ্যমে সুশাসনকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, কর ফাঁকিতে উৎসাহিত করা হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা কর দিলেই তা বৈধ হবে, তার দুর্নীতি অনিয়মকে ধরা হবে নাÑ এমন সুযোগ রাখা কতটুকু গ্রহণযোগ্য হতে পারে। এখানে একটি রাজনৈতিক অর্থনীতি আছে। কালো টাকার মালিকদের মাথায় হাত বোলানো হচ্ছে।
অর্থনীতির সব সূচকই ভঙ্গুর
আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ফেরাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর যে লক্ষ্য বাজেটে নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয় দাবি করে সিপিডি বলেছে, বাজেট বাস্তবায়নে কোনো নির্দেশনা নেই এ দুটি বিষয়ে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি জায়গায় যন্ত্রণা আছে। সূচকগুলো অস্বস্তিতে রয়েছে। এমন অবস্থায় এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও তলানিতে যাওয়া রিজার্ভ উন্নয়নে। আগামী বাজেট বাস্তবায়নে যে লক্ষ্যমাত্রাগুলো নেওয়া হয়েছে, তা উচ্চাকাক্সিক্ষক। বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই, বাস্তবসম্মত নয়।
সমালোচনা রিজার্ভ নিয়ে
বাজেটে আগামী অর্থবছর শেষে মোট রিজার্ভ প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩২ বিলিয়ন ডলার। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসাব মন্তব্য করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, আইএমএফের বিপিএম৬ পদ্ধতিতে কত হবে, তা বলা হয়নি। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত ৫ জুন রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে বাজেটে ডলারের বিনিময় হার ধরা হয়েছে ১১৪ টাকা, যা গত ৫ জুন ছিল ১১৭ টাকা ৯৫ পয়সা। রিজার্ভ বাড়ানোর লক্ষ্য থাকলেও টাকার মান বাড়ানো হচ্ছে, যা বোধগম্য নয়।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক
সরকারের এ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনী ইশতেহারে মূল্যস্ফীতি কমানোর প্রতিশ্রুতি ছিল। বাজেটে সেভাবে পদক্ষেপ কি নেয়া হয়নিÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন নেই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেই। পণ্য সরবরাহ বাড়াতে আমদানি পর্যায়ে যে শুল্কছাড় দেওয়া হবে, তা ব্যবসায়ীরা পাবেন। ভোক্তাশ্রেণি অতীতের মতো এবারও পাবে না। বাজার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও তদারকি না বাড়ালে তা হবে না।
আর্থিক খাতের সুশাসন প্রশ্নে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে স্পষ্ট বলা হয়েছে, দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে থাকবে সরকার। কিন্তু বাজেটে কর ও ঋণখেলাপিসহ দুষ্টচক্রকে মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের টাকা অর্থনীতিতে আনার প্রচেষ্টায় করহার কমানো হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ভালো নেই অর্থনীতির সূচক
গত জানুয়ারি শেষে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ৫০ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা পার করা অর্থনীতি দিন দিন জটিল আকার ধারণ করছে মন্তব্য করে অর্থনীবিদরা বলছেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার। তা অর্থনীতির অন্যান্য সমস্যায়ও প্রভাব ফেলছে। লাগামের বাইরে চলে যাওয়া মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো ও বাজার ব্যবস্থা নিবিড় তদারকি অতি জরুরিভাবে করার পরামর্শ অর্থনীতিবিদরা দিয়ে এলেও তাতে গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার।
পুরনো বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিময় হারে গত এক বছরে টাকার মান কমেছে সাড়ে ৮ শতাংশের বেশি। রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত না হওয়া ও আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রপ্তানি বৃদ্ধি না পাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি সেই ধাক্কা সামলাতে পারছে না। দুই বছরে রিজার্ভ ২৮ বিলিয়ন ডলার কমেছে।
এ চাপে অর্থনীতির মৌলিক সমস্যায় পরিণত হয়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে গত দুই বছর ধরেই। মাঝখানে গত বছরের আগস্টে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে উঠেছিল।
গত এপ্রিলে তা কিছুটা কমে ৯.৭৪ শতাংশ উঠলেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি উঠেছে সাড়ে ১২ শতাংশের ঘরে। গত দুই বছরে মূল্যস্ফীতির পারদ সাড়ে ৯ শতাংশের ঘরেই রয়েছে। আমদানি কমানোয় বাণিজ্য ঘাটতি কমলেও এখনো ঋণাত্মক বা ঘাটতিতে রয়েছে আর্থিক হিসাব। নতুন বিনিয়োগের চেয়ে পুরনো ঋণ পরিশোধে চাপ বেড়ে যাওয়ায় আর্থিক হিসাবের ঘাটতি দিন দিন বেড়েই চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত ৯ মাসে এ হিসাবে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের এ সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার বা ২১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- লোকসভায় কমছে মুসলিম এমপি
- এ বাজেট ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য আরো বৃদ্ধি করবে
- জট খুলছে ফেঁসে যাচ্ছেন একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা
- কোটা বাতিলের দাবিতে আবারো শিক্ষাঙ্গন উত্তাল
- কাজে লাগছে না পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামানোর পদক্ষেপ
- ওয়াকার-উজ-জামান নতুন সেনাপ্রধান
- শঙ্কার ঈদযাত্রায় ভাড়া বিড়ম্বনায় যাত্রীরা
- ডিইউজে সভাপতি শহিদুল ইসলামের মায়ের ইন্তেকাল
- ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবি শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের
- ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নে শিক্ষক ফেডারেশনকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে - অধ্যাপক এবিএম ফজলুল করীম
- বায়োফার্মা পেল ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি এন্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড
- ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের নতুন কমিটিকে ছাত্রশিবিরের অভিনন্দন