স্টাফ রিপোর্টার : ২০১৮ সালে অক্টোবরে মীমাংসিত সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুটি গত ৫ জুন উচ্চ আদালতের একটি রায়ের পর ফের আলোচনায় এসেছে। শুধু আলোচনা নয়, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক ও বিক্ষোভ নতুন করে ডালপালা মেলেছে। ক্ষোভ-বিক্ষোভে রূপ নিয়েছে। গত ৫ জুন সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার রায় দিয়েছে, হাইকোর্ট। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিল করে দেওয়া সরকারি পরিপত্র পূণর্বহালে উচ্চ আদালতের রায় স্থগিতের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।
বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে অযৌক্তিক কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত ধারাবাহিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সে বছর ৪ অক্টোবর সরকারের সিদ্ধান্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন করে পরিপত্র জারি করে। সে সময় পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, ৯ম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) ও ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং ৯ম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) ও ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো।
শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলনের যৌক্তিকতা বিবেচনায় সরকার তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের মাধ্যমে ও কমিটির সদস্যের পর্যালোচনার ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়। তাহলে কেন ২০১৮ সালের মীমাংসিত বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন শেষে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে ফিরে গেছেন। এখন বিসিএসসহ সব প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে মেধাবীরা সুযোগ পাচ্ছেন। সে কারণে গত ৫ জুন হাইকোর্টের এ রায় আপিল বিভাগের মাধ্যমে রাষ্ট্রপক্ষকে স্থগিত করার উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানায় শিক্ষাথীরা।
গত ৫ জুন সরকারি নিয়োগের দুই শ্রেণিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে যে পরিপত্র জারি করা হয়েছিল, সেটি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে, উচ্চ আদালত। ২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট করেন। সে রিটের শুনানি নিয়ে ওই ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। সর্বশেষ গত ৫ জুন বুধবার সেই রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। ওই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার ফলে এখন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ায় আর কোনো বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। এ রায়ের পর থেকে কোটা বাতিলের দাবিতে ফের আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এদিন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এ সময় ‘চাকরিতে কোটা, মানি না মানব না’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, কোটার ঠাঁই নাই’, ‘হাইকোর্টের রায়, মানি না মানব না’, ‘কোটা পদ্ধতি, কোটা পদ্ধতি, মানি না মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন তারা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা কোনো দেশের স্বাভাবিক শিক্ষাব্যবস্থা হতে পারে না। হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহালের রায় দিয়েছেন। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানান। তারা দেশের সূর্যসন্তান। তাই বলে তাদের সন্তান; এমনকি নাতি-নাতনিরা পরিশ্রম না করেই কোটায় চাকরিতে যোগ দেবে, এটা মানেন না তারা। রায়ে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে ওই শিক্ষার্থীরা বলেন, এটা তাদের অধিকারের লড়াই। মেধাবীরা পরিশ্রম করে চাকরি পাবেন, কোটায় নয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। তবে ওইবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে দেয় সরকার। তার আগে এসব পদে চালু থাকা কোটার ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর বাইরে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ আসন থাকতো। ২০১৮ সালে সরকার এ কোটা বাতিল করে।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- ঋণনির্ভর বাজেট
- লোকসভায় কমছে মুসলিম এমপি
- এ বাজেট ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য আরো বৃদ্ধি করবে
- জট খুলছে ফেঁসে যাচ্ছেন একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা
- কাজে লাগছে না পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামানোর পদক্ষেপ
- ওয়াকার-উজ-জামান নতুন সেনাপ্রধান
- শঙ্কার ঈদযাত্রায় ভাড়া বিড়ম্বনায় যাত্রীরা
- ডিইউজে সভাপতি শহিদুল ইসলামের মায়ের ইন্তেকাল
- ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবি শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের
- ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নে শিক্ষক ফেডারেশনকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে - অধ্যাপক এবিএম ফজলুল করীম
- বায়োফার্মা পেল ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি এন্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড
- ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের নতুন কমিটিকে ছাত্রশিবিরের অভিনন্দন