বাজেটবিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার
জনগণের প্রতি এ সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের প্রতি এ সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। সরকার ও সরকারের মদদপুষ্টদের আখের গোছানোর জন্যই এ বাজেট পেশ করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর গত ১০ জুন সোমবার সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেছেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। ৭ জানুয়ারি প্রহসনের ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে এ সরকার ক্ষমতা দখল করেছে। অর্থমন্ত্রী ৬ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন। অর্থমন্ত্রী ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’ শীর্ষক বাজেট বক্তব্যে তথ্য-উপাত্ত পেশ করে যেসব আশার বাণী শুনিয়েছেন, তার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তিনি সুখী-সমৃদ্ধ বলতে যে বাংলাদেশের কথা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাংলাদেশের মানুষ দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতি, পানি-গ্যাসের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি এবং ব্যাংক লুটপাটসহ শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, বিদেশে অর্থ পাচার ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় লাগামহীন দুর্নীতির কারণে চরম কষ্টকর জীবনযাপন করছেন। এটাকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বলা যায় না।
তিনি মনে করেন, বাজেটে করের চাপ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিনের জীবনযাপনে অপরিহার্য নানা পণ্যের সেবার ওপর বাড়তি কর চাপানো হয়েছে। মুঠোফোনে কথা বলার ওপর অতিরিক্ত কর বসানো হয়েছে। পানি শোধন যন্ত্র, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বা এসি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন গৃহস্থালি দ্রব্যের ওপর শুল্ককর বাড়ানো হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ বাড়াবে।
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বড় অংকের ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। এটি অর্জন করতে চলতি সংশোধিত বাজেট থেকে ৬৬ হাজার কোটি টাকা বেশি আহরণ করতে হবে। যা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদগণ। প্রকৃতপক্ষে সরকারের রাজস্বনীতি ব্যক্তি ও গোষ্ঠীনির্ভর হয়ে পড়েছে।
জামায়াতে ইসলামী মনে করে, ঋণনির্ভর ও সংকোচনমূলক বাজেট বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করবে। বাজেটে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ বিশাল ঋণনির্ভর বাজেট বাস্তবায়ন করা সরকারের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে এবং মুদ্রাবাজারে অনেক বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। সুদের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে। দেখা দিতে পারে আরও তারল্য সংকট। প্রস্তাবিত বাজেটকে অর্থনীতিবিদগণ সংকোচনমূলক বাজেট বলে আখ্যায়িত করেছেন। বাজেটে মূল্যস্ফীতি, কর-জিডিপির অনুপাত এবং জিডিপির অনুপাতে বাজেট ঘাটতির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সেটি অর্জন করা কঠিন হবে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বাজেটে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের কোনো কৌশল রাখা হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণখেলাপি ও হুন্ডির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার কোনো কথা বলা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাব করেছে, তাতে বিগত মার্চ মাস পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৮২ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা, যা প্রকৃত চিত্র নয়। বাস্তবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। খেলাপি ঋণ কমাতে হলে খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাজেটে তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এতে খেলাপি ঋণের প্রবণতা আরও বাড়বে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের সময় খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। আওয়ামী লীল বলেছিল, খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য আইন প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে। বাস্তবে খেলাপি ঋণ আদায় নয়, বরং বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
তিনি আরো বলেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ৬ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমানো হবে। অথচ ১৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীত ৯ শতাংশের ওপরে। বিশেষজ্ঞ বলেছেন, মূল্যস্ফীতির যে হিসাব ধরা হয়েছে, সেটি গড় হিসাব। সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত পণ্য বাস্কেটের ভিত্তিতে হিসাব করা হলে মূল্যস্ফীত হবে ২০ শতাংশের বেশি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই। আছে কিছু বাস্তবতাবর্জিত উচ্চাকাক্সক্ষী লক্ষ্যমাত্রা।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত নৈতিক ও অর্থনৈতিক কোনো দিক থেকেই গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থমন্ত্রীর এ পদক্ষেপ সামাজিক ন্যায্যতার দিক থেকে বৈষম্যমূলক। বাজেটে সর্বোচ্চ করহার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ শতাংশ। কিন্তু ১৫ শতাংশ কর দিয়েই কালো টাকা বৈধ করা যাবে, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে কর ফাঁকিবাজদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে নিয়মিত ও সৎ করদাতাদের তিরষ্কৃত করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘এবারের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ যারা নেবেন, সরকারের কোনো সংস্থা তাদের কোনো প্রশ্ন করবে না।’ সরকারের এ পদক্ষেপ দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করবে।
তিনি আরো বলেন, বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির আয়সীমা গত অর্থবছরে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ছিল। এ বছর তাই রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বেশি আয়ের লোকদের আয়করের সীমা ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যক্তি কর বৃদ্ধির পাশাপাশি আয়সীমা বাড়ানো উচিত ছিল। এক্ষেত্রে আয়সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবি জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শতকরা ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে চলছে নানামুখী ষড়যন্ত্র। প্রস্তাবিত বাজেটেও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ নিয়ে ব্যাপক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবেই জিডিপিতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমছে। যদিও শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ বেশি দেখিয়ে অনেকটা শুভঙ্করের ফাঁকির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। সরকার দেখাতে চাচ্ছে- চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ বরাদ্দ মূল বাজেটের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
তিনি আরো বলেন, কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। কৃষির উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও কৃষকদের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখযোগ্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। অথচ শ্রমজীবীদের ৪৩ দশমিক ৮৯ শতাংশই কৃষি কাজের সাথে জড়িত। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির কোনো নিশ্চয়তা নেই বাজেটে। সার, বীজ ও কীটনাশক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কৃষকদের সুবিধা দেয়ার কোনো দিকনির্দেশনা বাজেটে নেই।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম খাত হচ্ছে শিল্প। অথচ শিল্পের উন্নয়ন, বিকাশ এবং নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে কোনো দিকনির্দেশনা রাখা হয়নি বাজেটে। এমনিতেই কোভিড মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা বৈশ্বিক কারণে এবং ডলারের অভাবে শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। ফলে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না। শ্রমঘন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকলে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠত এবং বেকারত্বও কিছুটা দূর হতো। কিন্তু শিল্পের বিকাশে কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়নি প্রস্তাবিত বাজেটে। একদিকে হাজার হাজার কোটি টাকার লোকসানের বোঝা নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের শিল্পগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বন্ধ পাটকলগুলো চালু করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত বস্ত্র ও পোশাকশিল্পকে অবহেলা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বস্ত্র ও পোশাকশিল্পের বিকাশে কোনো সহায়তার কথা উল্লেখ নেই। উলটো পুরুষ ও বাচ্চাদের আমদানি করা পোশাকের শুল্ক কমানো হয়েছে। এতে দেশীয় শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চিকিৎসা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার হচ্ছে চিকিৎসাপ্রাপ্তি। এক্ষেত্রে বাজেটে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য বাস্তব কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে দেশে চিকিৎসা খাতে চলছে ভয়াবহ অরাজকতা। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসমূহে সেবার মানে ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। বিশেষায়িত বিশেষ শুল্কছাড়ে চিকিৎসা যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ পাওয়া যেত। এক্ষেত্রে আমদানির শুল্ক হার ছিল ১ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে ২০০টিরও বেশি চিকিৎসা যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে ১ শতাংশের শুল্ক বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করেছেন। এতে চিকিৎসাসেবার মূল্য অনেক বেড়ে যেতে পারে। জনগণ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে।
ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো বর্তমানে লুটপাটের কারখানায় পরিণত হয়েছে। গ্রাহকগণ ব্যাংকে টাকা রাখতে ভরসা পাচ্ছেন না। ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের নামে বিশেষ গোষ্ঠী জনগণের আমানতের টাকা আত্মসাৎ করার যে অপকৌশল গ্রহণ করেছে, তা রোধ করার জন্য বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই।
কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি ও বেকারত্ব। দুর্নীতি কমলে অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। কর্মসংস্থানও বাড়বে। ফলে বেকারত্ব কমবে। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে ঘরে ঘরে চাকরি কিংবা বেকারত্ব না কমে বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, শুধু ২০২৩ সালেই বেকারত্বের সংখ্যা ২৪ লাখ ৭০ হাজার। বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণদের বেকারত্বের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
অনেক দেশে সরকার বেকারদের কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা দিয়ে থাকে। আমাদের দেশে সেরকম কিছু করার সদিচ্ছা নেই সরকারের। এবারের বাজেটে বেকারদের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেই।
দেশকে ঋণমুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, তিন বছর আগে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মাথাপিছু ঋণ ছিল ১ লাখ টাকা। বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ গত তিন বছরে প্রতিটি মানুষের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৫৫ হাজার টাকা। ২০২৩ সালের জুন মাসে সরকারি ও বেসরকারি ঋণ ছিল ৯৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। একই বছর সেপ্টেম্বর মাসে তা দাঁড়ায় ১০০ বিলিয়ন ডলারে। যার সুদ দিতে হবে প্রতি বছর সোয়া লাখ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে দেশি ও বিদেশি ঋণ এবং তার সুদ দ্বিগুণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদগণ। চলতি অর্থবছরে সুদ পরিশোধে বাজেটের ১২ দশমিক ৪ শতাংশ বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে সেটা বাড়িয়ে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে দেশি বিদেশি সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা, যা বাজেটের ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। বাজেটের এক বিশাল অংশ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় করতে হবে। মেগা প্রকল্পের ঋণ ও সুদ পরিশোধের দায়-এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে। ডলারের সরবরাহ আরও কমে যেতে পারে। প্রয়োজনীয় ডলারের অভাবে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ যেমন বাধাগ্রস্ত হবে, তেমনি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সংকট আরও তীব্র হবে। মূলত দেশকে ঋণমুক্ত করার বিষয়ে বাজেটে কোনো কার্যকর পদক্ষেপের কথা উল্লেখ নেই।
জনগণের কল্যাণমুখী বাজেটের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, দেশের অর্থনীতির সূচক নিম্নগামী। মূল্যস্ফীতির কারণে সীমিত আয়ের মানুষ বিপদগ্রস্ত। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা, মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার ওপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু তার বাজেট বক্তৃতা বিশ্লেষণ করলে আশাবাদী হওয়ার মতো কোনো নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায় না। অর্থমন্ত্রী খরচের ক্ষেত্রে যে হিসাব পেশ করেছেন, তা কোথা থেকে আসবে, তার নিশ্চয়তা নেই। অর্থমন্ত্রী ২ লাখ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি পূরণ করার উৎস হিসেবে দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ করার কথা বলেছেন। সরকার ব্যাংক খাত থেকে বেশি টাকা ঋণ নিলে বেসরকারি খাত ঝুঁকিতে পড়বে। প্রকৃতপক্ষে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের ওপর বাড়তি কর আরোপের একটি বাজেট মাত্র। এ বাজেট দেশ ও দেশের জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।
দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে এ কথা প্রতীয়মান হয়, এ বাজেট জনগণের কল্যাণের জন্য উপস্থাপন করা হয়নি। সরকার ও সরকারের মদদপুষ্টদের আখের গোছানোর জন্যই এ বাজেট পেশ করা হয়েছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের প্রতি এ সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। জনগণের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট উপস্থাপনের মাধ্যমে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। এ সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেশকে একটি ঋণনির্ভর দেশে পরিণত করবে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- অস্থিরতা বাড়ছে
- আন্দোলনে যাচ্ছে বিরোধীদল
- বিনামূল্যে সরকারি বাড়ি গৃহহীনদের আত্মমর্যাদা এনে দিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী
- কোন অদৃশ্য সুতা আওয়ামী লীগের টিকে থাকার শক্তি
- চামড়ার দামে ধসের নেপথ্যেও কারসাজি
- এ সরকার দেশের সবকিছু ধ্বংস করে ফেলেছে : মির্জা ফখরুল
- হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু ১৪ জুন ,আরাফাত দিবস ১৫ জুন আগামী ১৭ জুন বাংলাদেশে পবিত্র ঈদ উল আজহা