স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর আমাদের মাঝে আসে খুশির ঈদ। কিন্তু ঈদের এ খুশি সবার জন্য এক ধরনের হয় না, কারো ঈদ আনন্দের পরিবর্তে বিষাদেও পরিণত হয়। সমাজে বসবাসরত নাগরিকদের আর্থিক সামর্থ্যরে বিস্তর ফারাক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সীমাহীন ব্যবধান। কোনো কোনো ধনী পরিবার রয়েছে যারা দৈনিক যা অপচয় করে তাতে কয়েকটি দরিদ্র পরিবার স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে। কিন্তু উচ্চবিত্তের এসব মানুষ দিনে দিনে আরও ধনী হচ্ছেন, আর দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হচ্ছেন। কারণ অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের কোনো সুযোগই দরিদ্র জনসাধারণের জন্য নেই। তারা চাইলেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন না। কারণ ঋণগ্রহণের শর্তপূরণের সামর্থ্যও তাদের নেই। আর্থিক সামর্থ্য না থাকার কারণে দরিদ্র পরিবারের মেধাবী সন্তানরা ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারেন না, সমাজের অনেক ভালো কাজ থেকেই তাদের দূরে থাকতে হয়, তেমনি ধনী ও সামর্থ্যবানদের সঙ্গে দরিদ্র সাধারণ মানুষের ঈদের ব্যবধান অনেক।
ঢাকার ডেমরা থানাধীন মাতুয়াইল এলাকার এক দুবাইপ্রবাসী পরিবারের খবর নিয়ে জানা গেছে, ওই পরিবারের কর্তাব্যক্তি রোজার শুরু থেকে ঈদবাজার করতে শুরু করেছেন। ২১তম (মাঝেমধ্যে বিরতি ছিল) রোজার দিনেও রাজধানীর একটি মার্কেটে এসেছেন ঈদ কেনাকাটায়। চার কন্যার সন্তানের জননী নিজেরও বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা এখনো শেষ করতে পারেননি। অর্থাৎ মধ্যবিত্ত এ পরিবারের বিদেশি ইনকামের কারণে কেনায় ব্যস্ত তারা। কিন্তু তার আশপাশে শত শত দরিদ্র মানুষ রয়েছে, যাদের দু’বেলা ভাত খাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। ঢাকার মসজিদগুলোর সামনে দরিদ্র মানুষের সাহায্য চাওয়ার দীর্ঘ লাইন সমাজে কী বার্তা দেয়।
ট্রাকে স্বল্পমূল্যে বিক্রি হওয়ার খাদ্যের জন্য দীর্ঘ লাইন যখন ফুরায় না, তখন ঈদ এবং আনন্দ নিয়ে তাদের ভাবনার সময় কই। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ২৫ মার্চ রাতে অফিস কর্তৃপক্ষ তাকে ছাঁটাই করার খবর জানান। সামনে ঈদ, মাসের তখন বাকি কয়েকটা দিন। ১ এপ্রিল থেকে তিনি কর্মহীন, নতুন কোনো স্থানে চাকরি খুঁজে নেওয়ার চেষ্টাও করতে হবে ঈদের পর। তিনি ঈদ প্রসঙ্গে বলেন, আপাতত বাসা ভাড়া দিয়ে দু’বেলা কীভাবে খাবো, তা নিয়ে ভাবছি। অন্য কিছু মাথায় নেই।
চাঁদপুরের নাসির উদ্দিন স্ত্রীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে অফিসের কাছে বেতনের অগ্রিম টাকা চাইলেন, দোয়াও চাইলেন অফিসের মালিকের কাছে। কিন্তু তাকে কোনোভাবে সহযোগিতা না করে উল্টো রিসিপসনিস্ট ফোন করে জানান, তার চাকরি নেই। ফলে বৌ অপারেশনের রোগী আর নিজের বেকারত্বÑ এ অবস্থায় তার ঈদ কেমন কাটবে, তা সহজেই অনুমেয়।
অতিদরিদ্র পরিবারের অনেকেই টের পান না কখন ঈদ আসে আর কখন যায়। তবে যারা প্রতিবেশী ধনীদের সহায়তা পান, তারা কিছুটা হলেও ঈদ অনুভব করতে পারেন। ধনীর যাকাত ফিতরার অংশবিশেষ পেয়ে তারা কিছুটা স্বস্তিবোধ করেন। তবে সমাজের এমন একটি শ্রেণি রয়েছেÑ যারা কারো কাছে নিজের দরিদ্রতার কথা জানাতেও পারেন না, কিছু চাইতেও পারেন না, আবার নিজের সামর্থ্যও নেইÑ এমন পরিবারগুলোর ঈদ কেটে যায় নীরবে-নিভৃতে। কেউ টেরই পান না তারা কীভাবে দিন কাটাচ্ছেন। ধনী-দরিদ্রের এ ব্যবধান দূর করতে প্রতিষ্ঠা করতে হবে যাকাতভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা। ধনীর সম্পদে দরিদ্রের যেটুকু হক রয়েছে, তা তাদের পৌঁছে দিতে হবে। এটা করা সম্ভব হলে সমাজের বৈষম্য কাটবে, হাসি থাকবে সবার মুখে।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- থমকে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতি
- সকল বাধা উপেক্ষা করে সত্যের পথে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হবে
- মুখগহ্বরের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সিংহভাগ তামাকসেবী
- উৎপাদন ও সরবরাহে কমতি নেই, তবে দাম ঠিকই বাড়তি
- ক্যাম্পাসগুলোয় ভিন্নমতাবলম্বী সংগঠনকে কাজ করতে দিচ্ছে না
- আমরা জামায়াত-অজামায়াত বুঝি না, প্রার্থী প্রার্থীই : ইসি রাশেদা
- ৩০ জুন এইচএসসি পরীক্ষা
- রুমা ও থানচিতে ব্যাংকে হামলা লুট অঙ্গুলি কুকি-চিনের দিকে
- সাপ্তাহিক সোনার বাংলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা