পররাষ্ট্র সচিব-ইইউ দূত বৈঠক

ইরানের সঙ্গে ৬ জাতির চুক্তিতে ‘অর্থনৈতিক লাভ’ দেখছে বাংলাদেশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার : পরামাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের ৬ জাতির যে চুক্তি হয়েছে তার বাস্তবায়ন হলে এবং দেশটির ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়া হলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ডেলিগেশন প্রধান রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়েদুনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সচিব এ মনোভাব ব্যক্ত করেন। গত ১৪ জুলাই অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় সম্পাদিত ঐতিহাসিক ওই চুক্তির বিষয়ে বিকালে ওই কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে অবহিত করে। মন্ত্রণালয়ের সভাকে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় চুক্তিটির বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ কিভাবে লাভবান হতে পারে সেটিও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, চুক্তিটি বাস্তবায়ন হলে এবং ইরানের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়া হলে আমরা দেশটির সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং যোগাযোগ বাড়াতে পারি। জাতিসংঘের অবরোধ আরোপের কারণে বাংলাদেশ দেশটির সঙ্গে কোনো ব্যবসা করছে না জানিয়ে তিনি বলেন, সেই অবরোধ প্রত্যাহার করা হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ সুগম হবে। ঢাকাস্থ ইইউ দূতরা চুক্তির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবহিত করেছেন জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, কিভাবে চুক্তিটির বাস্তবায়ন হবে এবং কখন অবরোধ তুলে নেয়া হবে সে সম্পর্কে তারা আমাদের ধারণা দিয়েছেন। ওই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে তাৎণিক বাংলাদেশ সরকার  যে বিবৃতি দিয়েছে রাষ্ট্রদূতরা তার প্রশংসা করেছেন বলেও জানান তিনি। এদিকে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইইউ রাষ্ট্রদূত উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ইরানের সঙ্গে চুক্তি এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমরা বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের কাছে সেটি ব্যাখ্যা করেছি। সচিবের সঙ্গে বৈঠকে ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফিয়া অ্যাবোরসহ ব্রিটেন ও জার্মানির প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। এদিকে গত ১৬ জুলাই এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পকে অভিনন্দন জানায়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ সব সময় বিষয়টি আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছে। অবশেষে সেই নেগোশিয়েশনের সফল পরিসমাপ্তি হয়েছে। বাংলাদেশ আশা করে ওই চুক্তির মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত হবে, শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে যাত্রা শুরু হবে। পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বিশেষ করে জ্বালানি খাতে এর ব্যবহার বাড়বে। বিবিসি, রয়টার্স, গার্ডিয়ান ও নিউইয়র্ক টাইমসে বিশ্লেষকরা বলছেন, চুক্তির ফলে ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ বন্ধ  হবে। বিশ্ব শক্তি ইরানের ওপর থেকে সব ধরনের অবরোধ পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করবে। চুক্তির মাধ্যমে বড় ধরনের কূটনীতিক জয় পেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। এর ফলে বিশ্ব শান্তির আরও অগ্রগতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা। তবে ইসরাইল ওই চুক্তিতে ‘ঐতিহাসিক খারাপ’ চুক্তি বলে সমালোচনা করছে।