সংবাদ শিরোনামঃ

মাওলানা সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড ** আমরা আশা করেছিলাম তিনি খালাস পাবেন ** বৃহস্পতি ও রোববার সারাদেশে হরতাল ** ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা : ইমেজ সঙ্কটে মিডিয়া ** সন্ত্রাসবাদের ইস্যুকে উজ্জীবিত রাখতে সক্রিয় যুক্তরাষ্ট্র ** মুক্ত চিন্তা বন্ধ করতেই মাহবুব উল্লাহর ওপর হামলা ** বিরোধী দলের প্রতি সরকারকে আরো সহনশীল হতে হবে ** এবার কোটি কোটি টাকার গালগল্প ** ঈদকে সামনে রেখে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে চোরাচালান বাড়ছে ** প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে বেঁচে আছে তিস্তাপাড়ের মানুষ ** মৌলভীবাজার মনুব্যারেজ ও লেকে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় ** কাজী নজরুল ইসলামের শিক্ষা ভাবনা **

ঢাকা, শুক্রবার, ৪ আশ্বিন ১৪২১, ২৩ জিলক্বদ ১৪৩৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪

॥ রুদ্র মিজান ॥
পাড়া, প্রতিবেশী সবার কাছে ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত তারেক। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো না। থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। কিন্তু ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র কাছে সে একজন অস্ত্র ব্যবসায়ী। গ্রেফতারের পর অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়েই ডিবি’র সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে তারেক। তবে তার বাবা আবু জাফর শিকদার মনে করেন, তারেককে হত্যা করে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজানো হয়েছে। ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে তার ছেলে। কারণ ডিবি পুলিশের কাছে তার নাম লেখা হয়েছে তারেক মাসুদ। তার প্রকৃত নাম মেসবাহ উদ্দিন মুহাম্মদ তারেক (২২)। অথবা কেউ তার ছেলেকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। কারণ গ্রেফতারের সময় সে বলেছিলো, ‘আমি পরিস্থিতির শিকার।’ কিন্তু কারা কেন তাকে ফাঁসাতে পারে তা জানা নেই তারেকের পরিবার ও প্রতিবেশীদের। তারেক সম্পর্কে খোঁজ নিতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সরজমিন কদমতলির দনিয়ায় গেলে এলাকাবাসী জানান, তারেককে অত্যন্ত ভদ্র ছেলে হিসেবে জানেন তারা। কোনোদিন কারও সঙ্গে ঝগড়া হয়নি তার। তার বিরুদ্ধে কারও কোনো অভিযোগ নেই। কেন তারেককে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো তা জানেন না এলাকাবাসী। তবে তারা জানান, রোববার রাত আড়াইটায় তারেকের কান্নার শব্দে তাদের ঘুম ভেঙে যায়। তাকে বাসা থেকে বের করেই মারধর করেছে পুলিশ। সে ‘মাগো, মাগো’ বলে চিৎকার করছিল। সাদা পোশাকে পাঁচ ছয় জন গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। তারেকের বাবা আবু জাফর শিকদার জানান, মর্গ থেকে তারেকের লাশ আনার পর তার শরীরের বিভিন্নস্থানে লাঠির আঘাত দেখেছি। বুকে-পিঠে গুলিবিদ্ধ ছিল। তিনি মনে করেন, ডিবি পুলিশ তাকে আটক করার পর বেদম প্রহার করে হত্যা করেছে। পরে ভোরে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে প্রচার করেছে। তার ছেলে তারেক কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিল না। ২০১০ সালে দনিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর এক বছর একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছে। দুই বছর নারায়ণগঞ্জের আদমজীতে একটি গার্মেন্টে সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিল। ছেলেকে মালয়েশিয়া পাঠানোর ব্যবস্থা করছিলেন তার বাবা আবু জাফর শিকদার। তাই এক মাস আগে ওই গার্মেন্টের চাকরি ছেড়ে দেয় সে।

তারেককে আটকের সময় ডিবি’র কয়েকজন সদস্য বাসায় ঢুকেই তার নাম জানতে চায়। তখন ডিবি’র সদস্যরা বলছিল, আমরা তথ্য পেয়ে এসেছি। কোথায় রাখছো বলো? তারেক তখন ‘না, স্যার, না স্যার..’ বলেছে। সে বলেছে, ‘আমার বাবার সঙ্গে কথা বলেন। আমি পরিস্থিতির শিকার।’ তারপর পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরিস্থিতির শিকার বলতে কি বুঝিয়েছিলো তারেক তা জানা নেই তার পরিবার ও প্রতিবেশীদের। তারেকের পিতা আবু জাফর জানান,  রাজনীতি করে না। খারাপ কোনো বন্ধু নেই তার। সে কিভাবে অস্ত্র ব্যবসায়ী হলো?

একই কথা বলেন দনিয়া এলাকাবাসী। ওই এলাকায় প্রায় ত্রিশ বছর ধরে বাস করছেন তারেকের মা-বাবা। দনিয়া ক্লাব মোড় সড়কের ২১৬ নম্বর বাসাটি তাদের নিজের। ওই বাসার ভাড়াটে আলী জব্বার ও তার স্ত্রী বিউটি বেগম জানান, তারেক ছিল নীরব প্রকৃতির ছেলে। কথা বলতো খুব কম। বাসায় আসা-যাওয়ার পথে শিশুদের আদর করতো। পাশের জননী জেনারেল স্টোরের মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, মদ, গাঁজার কোনো অভ্যাস ছিল না তারেকের। তবে সে ধূমপান করতো। কথা বলার সময় শফিকুলের পাশে ছিলেন তার স্ত্রী হাসিনা বেগম। হাসিনা বলেন, আমরা তাকে ভালো ছেলে হিসেবে জানি। কখনও কোনো খারাপ কাজে তাকে পাইনি। একইভাবে এলাকার বাসিন্দা মুহাম্মদ শামসুদ্দিন (৫৫) ও শাকিল আহমেদ তুহিন (২৯) জানান, তারেকের মতো ছেলের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবসার অভিযোগ বানানো কাহিনী ছাড়া কিছু না। একটা ভদ্র ছেলেকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তবে কি কারণে তাকে মারা হতে পারে জানতে চাইলে তারা বলেন, এটা আমাদের জানা নেই। তারেকের বন্ধু আবিদ হাসান মুন জানান, এক মাস ধরে তারেক বাসার সামনে বসে আড্ডা দিতো। সাহিত্যের বই পড়তো। সে এমন কিছু করতো বলে জানা নেই যে তার শত্রু সৃষ্টি হবে। ডিবি পুলিশ কেন তাকে ধরে নিয়ে গেলো তা তার কাছে রহস্যময়। কদমতলি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, তারেকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা সাধারণ ডায়েরি আছে বলে তার জানা নেই। রোববার সকালে মুগদার মান্ডা গ্রীণ মডেল টাউনের বালুর মাঠ থেকে তারেকের লাশ উদ্ধার করে মুগদা থানা পুলিশ। বিশাল এই মাঠের খুব কাছে কোনো বসতি নেই। সেখানে ওই দিন ভোরে কাউকে গুলি করা হয়েছে কিনা তা এলাকার বাসিন্দারা জানেন না। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তারেককে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে, সে সন্ত্রাসী ও অস্ত্র ব্যবসায়ী চান্দি সুমন ও কিলার শামিম গ্রুপের সদস্য। তার গ্রুপ কদমতলি ও মাতুয়াইল এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা ও চাঁদাবাজি করে। গোয়েন্দা পুলিশ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। এক পর্যায়ে তারেক জানায়, ভোর বেলা গ্রীণ মডেল টাউন সংলগ্ন বালুর মাঠ এলাকায় তার সহযোগী ব্রিস্টল, কালু, ভাগিনা রুবেল ও  নোয়াখাইল্যা রকি অস্ত্র নিয়ে একত্রিত হবে। বালুর মাঠে অপরাধীদের কাছাকাছি পৌঁছে কৌশল হিসেবে পুলিশ তারেক মাসুদকে তার সহযোগীদের সঙ্গে একত্রিত হতে বলে। যাতে পুলিশ তার সহযোগীদের শনাক্ত করতে পারে। তারেক তার সহযোগীদের নিকটে গিয়ে সহযোগীর কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। তখন অন্য সহযোগীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। তখন পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায় বলে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

গত সোমবার সকাল ১০টায় মেজবাহ উদ্দিন মুহাম্মদ তারেকের লাশ তাদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার পদুয়া ইউনিয়নের দলিবিলা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তার আগে রোববার রাত ৮টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে তারেকের লাশ গ্রহণ করেন তার পিতা আবু জাফর শিকদার। আবু জাফরের তিন ছেলের মধ্যে তারেক ছিল সবার বড়। মেজো ছেলে তানজিল ব্রিটিশ কাউন্সিলের এ লেভেল পরীক্ষার্থী এবং ছোট ছেলে তকি দাখিল পরীক্ষার্থী। মানবজমিন পত্রিকার সৌজন্যে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।