সংবাদ শিরোনামঃ

মাওলানা সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড ** আমরা আশা করেছিলাম তিনি খালাস পাবেন ** বৃহস্পতি ও রোববার সারাদেশে হরতাল ** ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা : ইমেজ সঙ্কটে মিডিয়া ** সন্ত্রাসবাদের ইস্যুকে উজ্জীবিত রাখতে সক্রিয় যুক্তরাষ্ট্র ** মুক্ত চিন্তা বন্ধ করতেই মাহবুব উল্লাহর ওপর হামলা ** বিরোধী দলের প্রতি সরকারকে আরো সহনশীল হতে হবে ** এবার কোটি কোটি টাকার গালগল্প ** ঈদকে সামনে রেখে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে চোরাচালান বাড়ছে ** প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে বেঁচে আছে তিস্তাপাড়ের মানুষ ** মৌলভীবাজার মনুব্যারেজ ও লেকে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় ** কাজী নজরুল ইসলামের শিক্ষা ভাবনা **

ঢাকা, শুক্রবার, ৪ আশ্বিন ১৪২১, ২৩ জিলক্বদ ১৪৩৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪

জাহাঙ্গীর আলম আনসারী, শীর্ষনিউজ : ১৯৮৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সেই আলোচিত-সমালোচিত ম্যাজিস্ট্রেট মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান দীর্ঘ ২৯ বছর পর ফের খবরের শিরোনামে আসলেন। তবে এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে। ১৯৮৫ সালে মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন দেশের কুরআন প্রেমিক জনতার উপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়ে। দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও বহাল তবিয়তেই ছিলেন তিনি। প্রায় তিন দশক পর আবারো সংবাদের শিরোনামে আসলেন যুদ্ধ না করেই মহান মুক্তিযুদ্ধের সনদগ্রহণ করে। সে কারণে মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানকে নিয়ে ফের বিতর্কের সৃষ্টি হয়। জানা গেছে, ১৯৮৫ সালের ১০ এপ্রিল ভারতের দু’জন উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদী নাগরিক পদ্মপল চোপরা ও শীতল সিং মুসলমানদের পবিত্র ঐশীবাণী কুরআনের সকল আরবি কপি ও অনুবাদ বাজেয়াপ্ত করার জন্য কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন।

রিটে বলা হয়েছিল, কুরআনে এমন কিছু আয়াত আছে যেখানে কাফির ও মুশরিকদের হত্যা এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রেরণা দেয়া হয়েছে। তাই এই গ্রন্থ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্ম দিতে পারে।

ওই বছরের ১২ এপ্রিল বিচারপতি মিসেস পদ্মা খাস্তগীর এই মামলা গ্রহণ করে এ বিষয়ে ৩ সপ্তাহের মধ্যে এফিডেভিট প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দেন। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ভারতসহ সারাবিশ্বে  প্রতিবাদের ঝড় উঠে। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশের মুসলিম জনতাও বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জেও প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ১৯৮৫ সালের ১১ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঈদগাহ ময়দানে আয়োজন করা হয় এক  প্রতিবাদ সমাবেশের। সেদিন বেলা ১১টায় সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা হোসাইন আহমদকে এসপি অফিসে ডেকে নিয়ে চাপ দিয়ে সভা স্থগিতের জন্য লিখিত অঙ্গিকার নেয়া হয়। পরে প্রশাসন নিজ উদ্যোগে সভা স্থগিত করা হয়েছে মর্মে সভা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে মাইকিং শুরু করে।

কিন্তু তৌহিদী জনতা প্রশাসনের অপপ্রচার ও বাধা উপেক্ষা করে দলে দলে আসতে থাকে ঈদগাহ ময়দানের দিকে। উপায় না দেখে ঈদগাহ ময়দানে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। এ পরিস্থিতিতে মাওলানা ইসারুল হক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে শুধুমাত্র মুনাজাত করেই সভা শেষ করে চলে যাওয়ার অনুমতি চান।

কিন্তু তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান ক্ষিপ্ত হয়ে জনতাকে গালিগালাজ করতে থাকেন এবং কোনোভাবেই এখানে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন।

এসময় তৌহিদী জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়লে ম্যাজিস্ট্রেট মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানের নির্দেশে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। পুলিশের গুলিতে প্রথমেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে দশম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল মতিন। হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় শীষ মোহাম্মদ, রশিদুল হক, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সেলিম, সাহাবুদ্দীন, কৃষক আলতাফুর রহমান সবুর, রিকশাচালক মোক্তার হোসেন ও রেল শ্রমিক নজরুল ইসলাম নিহত হন। আহত হয়েছিলো আরো অর্ধশতাধিক মানুষ।

পবিত্র কুরআনের অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী তৌহিদী জনতার উপর গুলিবর্ষণের নির্দেশ দেয়ায় ওই দিন ৮জন মুসল্লিকে জীবন দিতে হয়েছে। ওই ঘটনায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মানসিকভাবে আহত হয়েছিলেন। আলোচিত সেই মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান তখন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান বর্তমানে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা সম্পন্ন বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান।

১৯৮৫ সালের ১১ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনো হয়নি। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের অভিযোগের তীর মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে হলেও বিগত ২৯ বছর বিভিন্ন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা সরকারগুলো তাকে তিরস্কার না করে বিভিন্ন মেয়াদে পুরস্কৃত করেছে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের গত আমলে দীর্ঘ সময় ধরেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ছিলেন মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান। এরপর ২০১৪ সালের মধ্য জানুয়ারি থেকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় তাকে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান করে প্রমাণ করেছে তিনি একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েই তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধা সেজে সনদ গ্রহণ করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর রোববার মুক্তিযুদ্ধ ও জনপ্রশাসনবিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকার) বৈঠকে মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানসহ চার সচিব ও একজন যুগ্ম-সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য এখনো আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষায় আছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। ২৯ বছর পার হয়ে গেলেও বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের মূল নায়কদের শাস্তির দাবি থেকে সরে আসেনি নিহতদের স্বজনরা।

এ বিষয়ে ওই ঘটনায় নিহত রাশিদুল হকের ভাই গোলাম মোর্তজা শীর্ষ নিউজকে বলেন, দেশের সরকারগুলো এত বড় একটা হত্যাকাণ্ডের বিচার না করে উল্টো ঘটনার নায়ক ম্যাজিস্ট্রেট মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানকে পুরস্কার দিয়েছে। তিনি বলেন, ভাইকে হারানোর বেদনা শুধু আমরাই বুঝি। মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানসহ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।

ঘটনার ২৯ বছরেও আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নিহত আব্দুল মতিনের বড় ভাই সাদিকুল ইসলাম শীর্ষ নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ৩৫ বছর পর তার বাবার হত্যাকারীদের বিচার করেছে। খুনিদের ফাঁসি দিয়েছে। আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার আমরা পাবো না কেন? ৫০ বছর গেলেও আমরা এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবি থেকে পিছু হটবো না।

তিনি বলেন, ২৯ বছরে দেশে অনেক সরকার এসেছে কিন্তু কোনো সরকারই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করেনি।

তিনি আরো বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সহযোগিতা কামনা করেন।

সাদিকুল ইসলাম বলেন, আমরা শুনেছি তিনি নাকি (মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান) নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মিথ্যা সনদ গ্রহণ করেছেন। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে প্রতারণার জন্যও তার শাস্তি দাবি করেন সাদিকুল।

১৯৮৫ সালের ১১ মে’র ঘটনায় নিহত রিকশাচালক মোক্তার হোসেনের ছেলে খাইরুল ইসলাম শীর্ষ নিউজকে বলেন, আমার বাবা নিহতের সময় আমার বয়স ছিল সাত বছর। আমার একটি বোন আছে। বাবার মৃত্যুর পর থেকে আমরা খুব কষ্ট করে দিন কাটিয়েছি। ভেবেছিলাম বাবার হত্যাকারীদের বিচার হবে। কিন্তু ২৯ বছর চলে গেলো কোনো বিচার আমরা পাইনি। যার হুকুমে পুলিশ গুলি করে আমার বাবাসহ ৮ জনকে হত্যা করেছিল তিনি এখন সরকারের বড় কর্মকর্তা। আমরা এই খুনি মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানের বিচার চাই।

মোক্তার হোসেনের স্ত্রী পুরমানুন খাতুন শীর্ষ নিউজকে  বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।