বগুড়ায় সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আলোচনা সভা

গণতন্ত্রের জন্য বুকের রক্ত ঢালতে হবে : রুহুল আমিন গাজী

বগুড়া সংবাদদাতা : বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী বলেছেন, শেখ হাসিনা দেশে অঘোষিত বাকশাল কায়েম করেছেন। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের জন্য সম্প্রচার নীতিমালা করার পর বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। এই সংসদ অবৈধ। এই অবৈধ সংসদে প্রণীত কোনো আইন দেশের মানুষ মানেনা, মানবে না। এই জুুলুমবাজ সরকারকে ক্ষমতার মসনদ থেকে হটাতে সকল পেশাজীবীদের রাজপথে প্রয়োজনে বুকের রক্ত ঢেলে দিতে হবে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর রোববার বিকেলে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ বগুড়া শাখার উদ্যোগে স্থানীয় টিএমএসএস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত গণবিরোধী সম্প্রচার নীতিমালা অভিশংসন আইন ও বিপন্ন গণতন্ত্র শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ বগুড়া শাখার আহ্বায়ক ডা. মইনুল হাসান সাদিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. পিয়াস করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি শওকত মাহমুদ, মহাসচিব এম এ আজিজ। রুহুল আমিন গাজী বলেন, পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারিসহ হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের দায়ে বর্তমান সরকার সারা বিশ্বে চোর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই চুরির কথা বলায় আমারদেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মিথ্যা মামলায় মাসের পর মাস জেলখানায় কাটাতে হচ্ছে। সারাদেশে হাজার হাজার বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে খুন, গুম করা হচ্ছে। এসব পরিবারের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। সরকার একটি বাহিনীকে রক্ষী বাহিনীতে পরিণত করে সারাদেশে খুন, গুম করছে। এই বাহিনীর সদস্যরা নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডারের সাথেও জড়িত। তিনি বলেন, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা জনগণের ঘাড়ে চেপে বসেছে। সরকারের বিশেষ ক্যাডার বাহিনী দেশব্যাপী হত্যা, সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। দেশের একজন মানুষও শান্তিতে নেই। এভাবে দেশ চলতে পারেনা।

রুহুল আমিন গাজী আরও বলেন, সরকার জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার মাধ্যমে মিডিয়ার গলাটিপে ধরতে চায়। দেশের মানুষ এই নীতিমালা মানেনা। বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা ভূয়া সংসদের হাতে দেয়া হচ্ছে। এটা করা হলে জনগণ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন। বিচারপতিগণ সরকারের ভয়ে ন্যায় বিচার করতে পারবেন না। সরকার দুদককে এমন এক কারখানায় পরিণত করেছে যেখানে দুর্নীতিবাজরা প্রবেশ করার পর নিষ্পাপ সাদা হয়ে বেরিয়ে আসে। তিনি রাজনীতিকদের সমালোচনা করে বলেন, ৫ জানুয়ারির একদলীয় নির্বাচনের আগে ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে পেশাজীবীরা রাজপথে নামলেও রাজনীতিবিদরা নামেননি। আগামী দিনের সরকার পতন আন্দোলনে রাজনীতিবিদদেরও রাজপথে নামতে হবে। আপনারা মন্ত্রী হবেন অথচ রাজপথে আন্দোলন করবেন না এটা হতে পারে না। তিনি সবাইকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নতুন করে পুলিশে চাকরি দিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করতে চায়। কিন্তু পুলিশ দিয়ে গণআন্দোলন ঠেকানো যাবেনা। প্রয়োজনে ঢাকা ঘেরাও করে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। এ লক্ষ্যে সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ড. পিয়াস করিম বলেন, সরকার গণমাধ্যম এবং বিচার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার বাস্তবায়ন হলে সব বেসরকারি টেলিভিশন বিটিভিতে পরিণত হবে। জনগণ বিদেশী চ্যানেল দেখতে বাধ্য হবে। সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ফ্যাসিবাদী চরিত্র ফুটে উঠছে। শধুমাত্র সত্য লেখার কারণে এ কে খন্দকারের মতো একজন গুণী ব্যক্তিকে হেয় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশ আজ মহা সঙ্কটে। এই সংকট থেকে পরিত্রাণের জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। সরকারের সকল অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে। শওকত মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের কথা প্রচার করতে দিবেনা বলেই সম্প্রচার নীতিমালা করা হয়েছে। বিচারপতিদের ন্যায় বিচার করতে দিবেনা বলেই অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে নেয়া হচ্ছে। তিনি জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী সকলকে তাওবা করে শহীদি তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।