ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পর স্থিতিশীল মাছ, গোশত ও মুদিপণ্য
৩০ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৩০
স্টাফ রিপোর্টার : নিত্যপণ্যের মূল্য স্বল্প আয়ের মানুষের একেবারেই নাগালের বাইরে। মানুষের আয় স্থিতিশীল থাকলেও নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল নয়। প্রতিদিনিই কোনো না কোনো পণ্যের মূল্য বাড়ছে। কিছু পণ্যের মূল্য কমছেও। কিন্তু বৃদ্ধি ও কমতির মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান রয়েছে। কোনো পণ্যের মূল্য একলাফে অনেক বাড়লেও কমার সময় গতি খুবই ধীর। যেমন, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৯৫ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বেড়ে এখন ১৬৯ টাকা হয়েছে। মাত্র ৫ বছর আগে অর্থাৎ ২০২০ সালে দেশে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১০৫ টাকা। তাহলে কী দাঁড়ালো? মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে লিটার প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এখন মাঝেমধ্যে দাম কমছে আবার বাড়ছে। শুধু সয়াবিন তেল নয়, সব মুদিপণ্য মূল্য বেড়েছে। শীতের আগমন উপলক্ষে শাক ও কিছু সবজির মূল্য কমেছে। আলুর মূল্য এমনিতেই কম আছে। এছাড়া মাছ-গোশতসহ প্রায় সব নিত্যপণ্য মূল্য বেশি।
খবর নিয়ে জানা গেছে, বিগত কয়েক মাসের তুলনায় বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে থাকা সবজিগুলো এখন ৫০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, নতুন সবজি অল্প অল্প করে বাজারে আসতে শুরু করেছে। এরপর শীত আসবে, তখন বেশি বেশি নতুন সবজি উঠবে এবং দাম আরও কমে আসবে। এখন বাজারে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, বেগুন (গোল) ৮০ টাকা। এছাড়া পটোল ৬০ টাকা, শিম ৭০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, কাঁচকলা ৩০ টাকা (হালি), লাউ ৫০ টাকা (পিস), ফুলকপি (ছোট) ৫০ টাকা, বাঁধাকপি (ছোট) ৫০ টাকা, মূলা ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০ টাকা, কচু ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৬০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা এবং আলু ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজারে মুরগি ও মাছের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও সাধারণ ক্রেতার জন্য তেমন স্বস্তি আসেনি।
বিক্রেতারা বলছেন, ব্রয়লারের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় সামান্য কমলেও দেশি মুরগি ও অন্যান্য মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে বাজারে সামগ্রিকভাবে দাম এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এখন বাজারে ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৭০-১৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩১০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি ৩২০ এবং দেশি মুরগি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পাতিহাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে। বিক্রেতারা জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। পাইকারি পর্যায়ে দাম সামান্য কমেছে, খুচরা বাজারে এর প্রভাবও পড়েছে। তবে দেশি ও সোনালি মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
রাজধানীর মাছের বাজারে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। বাজারে কেজিপ্রতি রুই মাছ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, কাতল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, শিং ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়, চাষের মাগুর ৫০০ টাকায়, কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় এবং তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার খুচরা বাজারে গরুর গোশত ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি এবং খাসির গোশত ১০০০-১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, মাছের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও পরিবহন খরচ ও খামার পর্যায়ের মূল্য অপরিবর্তিত থাকায় দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিক্রেতারাও বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই খুচরা বাজারে মাছের দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। পণ্যের দাম বাড়ার জন্য চাঁদাবাজিকে দায়ী করছেন কেউ কেউ। চাঁদাবাজি বা মজুদদারি যে কারণেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ুক না কেন, এর বিরুদ্ধে সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিকল্প কৃষিবাজার চালু করার কথা বলেছেন। কিন্তু তা কীভাবে ও কতদিনে হবে, সেটা তিনি স্পষ্ট করেননি। বিকল্প বাজার না হওয়া পর্যন্ত সরকার টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে ভোগ্যপণ্য সরবরাহ বাড়ালে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে। সরকার দেশ পরিচালনায় নানা কমিশন গঠন করেছে, কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা এ সরকারের বড় শক্তি জনগণের সমর্থন। সেটাই যদি নড়বড়ে হয়ে পড়ে, তখন তাদের নৈতিক অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়বে। জুলাই অভ্যুত্থানে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষের সেন্টিমেন্টকে মাথায় রেখে এখনই বাজার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন বিশ্লেষকরা।