পুঠিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালদের দৌরাত্ম্য, ভোগান্তিতে রোগীরা
২৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:৪৩
পুঠিয়া (রাজশাহী) সংবাদদাতা : রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের আধিপত্য, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালদের দৌরাত্ম্য চলছে। সেই সাথে রয়েছে অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের প্রভাব। এতে প্রতিদিন বিপাকে পড়ছেন চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে দালালরা রোগীদের হাত ধরে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করায়। এতে ভুক্তভোগীদের নিয়মিত আর্থিক ও মানসিক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, হাসপাতালের ভেতরেই কাজ করা কিছু অস্থায়ী কর্মচারী এ দালালি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা রোগীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে শতকরা ৪০ শতাংশ কমিশন নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একজন হাসপাতাল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হাসপাতালের সামনে প্রায় দেড় ডজন প্যাথলজি সেন্টার ও ১০টি অবৈধ ক্লিনিক রয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব দালাল আছে। যে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী যাবে, সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার কমিশন পান। প্রতি মাসে প্রথম সপ্তাহে এ কমিশন দেওয়া হয়। এতে একজন ডাক্তার মাসে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন পান। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যানুযায়ী, উপজেলায় ২৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ১৩টি ক্লিনিক আছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দালাল নিয়োগ করে রেখেছে যাদের অধিকাংশই নারী। তারা মাসে ছয়-সাত হাজার টাকা বেতন পান এবং পরীক্ষার বিল থেকে ৪০ শতাংশ কমিশন পান।
সরেজমিন দেখা গেছে, সপ্তাহে তিন দিন দুপুর ২টার পর ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি আছে। তবে এ নিয়ম কেউ মানছে না। নিয়মের বাইরে প্রতিনিধিরা হাসপাতালের ভেতরে অবস্থান করে চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন দালাল ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দখলে। তারা প্রেসক্রিপশন কেড়ে নিয়ে জোর করে রোগীদের নির্দিষ্ট ক্লিনিকে পরীক্ষা করাতে বাধ্য করে। অনেক রোগী এর মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন। এর আগেও ‘দালাল মুক্ত পুঠিয়া মেডিকেল চাই’ স্লোগানে ইমারজেন্সি কক্ষের সামনে শামীম ড্রাইভারের নেতৃত্বে আন্দোলন করেছিলেন কয়েকজন যুবক। সে সময় দালালরা শামীম ড্রাইভারের ওপর হামলা চালায়। শামীম আহত হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু এরপরও দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়নি।
জরুরি বিভাগের এক উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দালালদের অত্যাচারে অনেক সময় রোগীরা বিরক্ত হয়ে যান। স্থানীয় দালালদের প্রভাবের কারণে আমরা কোনো প্রতিবাদ করতে পারি না। আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. জনাব আলী মুস্তাফিজ বলেন, কর্তৃপক্ষের অবস্থান টের পেলে দালালরা দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন অথবা সুযোগ বুঝে অলি-গলিতে অবস্থান নিয়ে আবার ফিরে আসে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সূচনা মনোহারা বলেন, আমি এখানে নতুন। তবে দালালদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। দ্রুত পুঠিয়া হাসপাতাল দালালমুক্ত করব। সরকারি হাসপাতালের স্টাফরা যদি দালালির সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুঠিয়া উপজেলা ইউএনও লিয়াকত সালমান বলেন, দালালদের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দালালদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।