শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া দুই ধাপে ১৫% বাড়বে


২৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:২৪

জুলাই মাস থেকে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা বাড়বে
স্টাফ রিপোর্টার : এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা ১৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। দুই ধাপে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। প্রথম ধাপে আগামী মাসে (নভেম্বর) সাড়ে ৭ শতাংশ বা ন্যূনতম দুই হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা পাবেন তারা। পরবর্তী ধাপে আগামী বছরের জুলাই মাস থেকে এ হার বেড়ে মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বা ন্যূনতম দুই হাজার টাকা হবে।
রাজধানীতে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবির মুখে বাড়ি ভাড়া ভাতা পুনর্র্নির্ধারণ করেছে সরকার। গত ২১ অক্টোবর মঙ্গলবার সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারের সঙ্গে আন্দোলনরত ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের’ নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে আদেশ জারি করা হয়।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে শিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনরত শিক্ষকদের জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজীর হাতে অর্থ বিভাগের সম্মতিপত্র তুলে দেন। এ সময় শিক্ষক নেতারা ১০ দিন ধরে চলা আন্দোলন প্রত্যাহার করে সন্তুষ্টচিত্তে গত ২২ অক্টোবর বুধবার থেকে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তারা কর্মবিরতিসহ সব ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন।
শিক্ষক নেতারা জানান, একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখন থেকে শনিবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হবে। বার্ষিক পরীক্ষার আগ পর্যন্ত শনিবার ক্লাসসহ সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম চলবে।
গত ১২ অক্টোবর রোববার থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন চলছিল। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও উৎসব ভাতা বাড়ানোর দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়েছিল।
তবে সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আপাতত চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা অপরিবর্তিত থাকবে। বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা ও মূল বেতনের ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা পাচ্ছেন।
সচিবালয়ে আলোচনায় সমঝোতা হওয়ার পর শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, দিনটি ঐতিহাসিক। তিনি সৌভাগ্যবান। এটি বাস্তবসম্মত ও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। শিক্ষকরা দেশের মেরুদণ্ড। তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই ভঙ্গুর ছিল। সেই বাস্তবতা থেকেই শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা ধাপে ধাপে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ সময় শিক্ষক নেতা দেলাওয়ার হোসেন আজিজী সরকারের এ সিদ্ধান্তকে বাস্তবসম্মত ও ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় বিজয় হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বুধবার (২২ অক্টোবর) থেকে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাব। তবে উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি সরকার পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশা করি।’
অর্থ বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভাতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো বকেয়া দেওয়া হবে না এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে আর্থিক বিধিবিধান কঠোরভাবে মানতে হবে। ভবিষ্যতে অনিয়ম ধরা পড়লে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসে এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা পান, যা গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছিল। পরে ১৬ অক্টোবর এ ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ বা ন্যূনতম দুই হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা আন্দোলনকারীরা প্রত্যাখ্যান করেন।
ভাতা কত বাড়ল
নতুন সিদ্ধান্ত নভেম্বর থেকে কার্যকর হলে ডিসেম্বর মাসে শিক্ষক-কর্মচারীরা বাড়তি বেতন হাতে পাবেন। বর্তমানে অধ্যক্ষের (গ্রেড ৪) বেতন ৫০ হাজার টাকা। নভেম্বর থেকে বাড়ি ভাড়া (৭.৫%) তিন হাজার ৭৫০ টাকা পাবেন। উপাধ্যাক্ষর (গ্রেড ৫) বেতন ৪৩ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া তিন হাজার ২২৫ টাকা পাবেন। সহকারী অধ্যাপকদের দুটি গ্রেড রয়েছে। সহকারী অধ্যাপকের (গ্রেড ৬) বেতন ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা। বাড়ি ভাড়া দুই হাজার ৬৬২ টাকা। গ্রেড ৮-এর সহকারী অধ্যাপকের বেতন ২৩ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া এক হাজার ৭২৫ টাকা, (সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা)। প্রভাষকের (গ্রেড ৯) বেতন ২২ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া (৭.৫%) এক হাজার ৬৫০ টাকা (সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা)।
বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকের (গ্রেড ৭) বেতন ২৯ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া (৭.৫%) দুই হাজার ১৭৫ টাকা। সহকারী প্রধান শিক্ষকের (গ্রেড ৮) বেতন ২৩ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া এক হাজার ৭২৫ টাকা (সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা)। সিনিয়র শিক্ষক (গ্রেড ৯) বেতন ২২ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া (৭.৫%) এক হাজার ৬৫০ টাকা (সর্বনিম্ন দুই হাজার) পাবেন। এছাড়া সহকারী শিক্ষক (গ্রেড ১০), সহকারী শিক্ষক (গ্রেড ১১) সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া পাবেন।
আগামী বছর বাড়বে কত
আগামী জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া হলে অধ্যক্ষ সাত হাজার ৫০০ টাকা, উপাধ্যক্ষ ছয় হাজার ৪৫০, সহকারী অধ্যাপক (গ্রেড-৬) পাঁচ হাজার ৩২০, সহকারী অধ্যাপক (গ্রেড-৮) তিন হাজার ৪৫০, প্রভাষক তিন হাজার ৩০০, প্রধান শিক্ষক চার হাজার ৩৫০, সহকারী প্রধান শিক্ষক তিন হাজার ৪৫০, সিনিয়র শিক্ষক তিন হাজার ৩০০, সহকারী শিক্ষক (গ্রেড ১০) দুই হাজার ৪০০ এবং সহকারী শিক্ষক (১১তম গ্রেড) এক হাজার ৮৭৫ টাকা (সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা) পাবেন।