আলোকে তিমিরে

হিসাব কষে পাওনাগুলো দিয়ে দিন

মাহবুবুল হক
২৩ অক্টোবর ২০২৫ ২০:০৪

গত ৪ অক্টোবর লন্ডনে অভিবাসীবিরোধী দেড় লাখ লোকের যে বড় সমাবেশ হয়ে গেল, তাতে শুধু ইংল্যান্ডবাসী ছিল না, গোটা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অভিবাসীবিরোধীরাও অংশগ্রহণ করেছিল। জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে এ ধরনের সমাবেশ শেষ করে এ অক্টোবরে অভিবাসীবিরোধী সংগঠনগুলো লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে বিরাট সমাবেশের আয়োজন করে। এ সমাবেশের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। এ আয়োজন নতুন কিছু নয়। গত ৩০ বছর ধরে ঢিমে-তেতলাভাবে দুনিয়ার দেশে দেশে নীরবে বা গোপনে অভিবাসীবিরোধী এ আন্দোলন চলে আসছে। আন্দোলন জোরদার হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গত মুদ্দতের সময় থেকে। এ বিষয়ে মূল ফান্ডিং করছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। দেশে দেশে এ আন্দোলন চলছে জাতীয়তাবাদী ফোকাসে। তাদের কিছু মূলকথা আছে, সেটা হলো-
১. আমাদের দেশে আমরাই থাকবো, অন্য কেউ থাকতে পারবে না।
২. আমরা উদারতা দেখিয়ে সর্বক্ষেত্রে নিজেদের ক্ষতি করেছি। এনাফ। আর নয়।
৩. আমরা আমাদের সভ্যতার ক্ষতি করেছি।
৪. আমরা আমাদের সংস্কৃতির ক্ষতি করেছি।
৫. আমরা আমাদের ধর্মের ক্ষতি করেছি।
৬. আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ তথা প্রজন্মের পর প্রজন্মের ক্ষতি করেছি।
৭. আমাদের তরুণরা দেশে চাকরি-বাকরি না পেয়ে ভিনদেশে যাচ্ছে। অপরদিকে ভিনদেশের তরুণরা আমাদের দেশে চাকরি বাকরি পাচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারবৃন্দেরও অমনোযোগিতা ও অবহেলাই প্রধান দায়ী।
৮. আমাদের পূর্বপুরুষদের শ্রম, বিনিয়োগ ও কষ্টের বিনিময়ে যে ভূমি, বাড়িঘর, ইমারত, স্থাপত্য এবং কলকারখানা কালে কালে গড়ে উঠেছে, সেসবের মালিক হয়েছে এখন ভিনদেশের মানুষ। অবশ্যই এসব এখন ঠেকাতে হবে।
৯. অভিবাসীরা আমাদের ধর্ম, সংস্কৃতি, সভ্যতা, শিক্ষা ব্যবস্থা, কখনো পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করেনি। তারা তাদের নিজস্ব ধর্ম, সংস্কৃতি, সভ্যতা ও শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের দেশে ভিন্নভাবে গড়ে তুলেছে। এতে সমাজে এক ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে।
১০. আমাদের আন্দোলন মানবতাবিরোধী নয়। মানবতাকে সুসংহত করার আন্দোলন। আমরা আমাদের সভ্যতা, সংস্কৃতি, ধর্ম, শিক্ষা এবং যাবতীয় বিষয়-আসয় নিজেরাই আবার গড়ে তুলবো। এতে বিশ্বে অশান্তির পরিবর্তে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
অভিবাসীবিরোধী এ আন্দোলন তলে তলে আন্তর্জাতিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও গোটা ইউরোপ। বলতে গেলে শুধু শ্বেতাঙ্গরা বা সাদারা যোগ দেয়নি, সাথে সাথে যোগ দিয়েছে এসব এলাকার নাস্তিক, সংশয়বাদী, ধর্মবিরোধী, সব ধরনের খ্রিস্টান গোষ্ঠী, সব ধরনের ইহুদি গোষ্ঠী, সব ধরনের ইসলামবিরোধী গোষ্ঠী। ইতোমধ্যে পোল্যান্ডে পাঁচ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটেছে। তারা পোল্যান্ডকে খ্রিস্টান দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এদিকে কিছুদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, আমরা আবার আমাদের নিজেদের ধর্মকে শক্তিশালী করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। তার অর্থ হলো আবার তারা নতুন উদ্যোগে ইসলাম ভার্সেস ক্রিশ্চিয়ানিটির যুদ্ধের কথা তুলে গোটা মুসলিম বিশ্বের ওপর আঘাত হানার চেষ্টা করবে। যার নাম ‘ক্রুসেড’। প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশ অতীতের যে থিমটাকে সামনে নিয়ে ইরাক ও লিবিয়া আক্রমণ করে দুটি মুসলিম দেশকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আবার সে পাঁয়তারা চলছে। শুধু ফিলিস্তিন নিয়ে তারা বসে থাকতে চায় না। পাশ্চাত্য সভ্যতার কাছে পুরনো অনেক অস্ত্র আছে। তাদের দেশে দেশে নতুন অনেক অস্ত্র হরদম তৈরি হচ্ছে। সেগুলো তো কাজে লাগাতে হবে। স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ, সার্বভৌমত্বের জন্য যুদ্ধ বা মানবতার জন্য যুদ্ধ বলে বলে খুব আর জমছে না। সুতরাং ধর্মযুদ্ধ আখ্যায়িত করে তারা মুসলিম এবং মুসলিম দেশকে আল্টিমেটলি ধ্বংস করতে চায়। ইসলামকে তারা ধ্বংস করতে পারবে না- এটা তারা খুব ভালো করে জানে। তবুও তারা আগের মতো নানা অজুহাতে ইসলাম ধ্বংসের কথাই বলবে। এতে বর্তমানের যে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, সেই খেলা একটা এক্সট্রিম পয়েন্টে (চূড়ান্ত পর্যায়ে) নিয়ে যাওয়া যাবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু গোপনে গোপনে অন্যান্য খ্রিস্টান দেশকে এ বিষয়ে নানা প্রণোদনা দিয়ে চুপচাপ বসে থাকছেন না। তিনি নিজের দেশে নানাভাবে পারসিকিউশনে (নিপীড়ন-নির্যাতনে) ব্যস্ত রয়েছেন। অবৈধ অভিবাসীদের মার্কিন মুলুক থেকে জোর করে বের করে দেওয়ার নানা ফন্দি এঁটেছেন এবং তাঁর পরিষদ নিয়ে নতুন নতুন ফন্দি আঁটছেন।
এই তো মাত্র কিছুদিন আগে তিনি লন্ডনের পাকিস্তান বংশোদ্ভূত লেবার পার্টির তরুণ মেয়র সাদিক খানকে যাচ্ছেতাই বলে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করেছিলেন। যিনি পরপর তিনবার মেয়র যুদ্ধে বিজয় লাভ করেছেন। এখন তার বয়স মাত্র ৫০ বছর। একটা বড় এবং শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্ট অন্য দেশের রাজধানীর মেয়রকে এভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন, সাধারণত তা দেখা যায় না। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ইংল্যান্ডে বা বিদেশে এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রতিবাদ হয়নি। এদিকে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের দেশের তাবলিগ জামাতের মতো খ্রিস্টান প্রিস্টরা লন্ডনে বাড়ি বাড়ি ঘুরছে। ক্রিশ্চিয়ানিটির দাওয়াত দিচ্ছে। অভিবাসীরা ধারণা করছেন, তাদের সম্পর্কে সরকারের কাছে বা কাউন্টির কাছে সব ধরনের তথ্য থাকা সত্ত্বেও কেন এ ধরনের তৎপরতা চলছে, তা তাদের বুঝে আসছে না। যেসব গির্জার দেওয়ালে বহুদিন রং চড়েনি, সেসব গির্জা রঙিন হয়ে উঠেছে।
আমি এই যে এখানকার বাস্তবতা তুলে ধরছি, সে কারণে আমার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন আমাকে সাবধান করছে যে তুমি হয়তো এরপর আর এদেশে আসতে পারবে না।
এদিকে সামাজিকভাবে নানারকম তর্ক-বিতর্ক চলছে। স্থানীয় বনাম স্থানীয়, স্থানীয় বনাম বৈধ অভিবাসী, বৈধ অভিবাসী বনাম অবৈধ অভিবাসী। যারা বৈধ অভিবাসী অর্থাৎ যারা ইতোমধ্যে ব্রিটিশ নাগরিক হয়ে আছেন, তারা ভাবছেন, তাদের হয়তো কোনো ক্ষতি হবে না। তাদের আইনের দ্বারা যার যার দেশে পাঠানো যাবে না। কিন্তু যারা ঝুলে আছেন, প্রসেসের মধ্যে আছেন এবং ভবিষ্যতে যারা লেখাপড়ার কারণসহ অন্যবিধ প্রয়োজনের কারণে ইংল্যান্ডে আসতে চান, তাদের জন্য অবশ্যই বিষয়টি কঠিনতর হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে তাদের ফিসসমূহ আকাশচুম্বী করেছে- যাতে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের ছাত্র-ছাত্রীরা এদেশে আর না আসতে পারে। পড়ালেখা এবং এক বেলা কাজের যে সুযোগ এতদিন বিদ্যমান ছিল, তাও নানা ফন্দিতে কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পড়ালেখার বিষয়ে যে বৃত্তি ব্যবস্থা ছিল তা কমতে কমতে এখন বটম লাইনে পৌঁছে গেছে।
পুরনো গির্জা ক্রয় করে মসজিদ-মাদরাসা সৃষ্টি করার যে প্রয়াস ছিল, সম্ভবত তাও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ এ নিয়ে পূর্ববর্তী সরকারসমূহের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা অনেক অভিযোগ তুলেছে। অভিযোগ তুলেছে, কেন ইস্ট লন্ডন ও সেন্ট্রাল লন্ডনের আবাসিক এলাকা এশিয়ানদের দোকান পাট বা মার্কেট করতে দেয়া হয়েছে? যার ফলে সেসব এলাকা যাতায়াতের জন্য বর্তমানে অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। রাস্তার দুই পাশে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে, মাঝখানে রয়েছে মাত্র একটি গাড়ি যাওয়ার রাস্তা, বাস্তব ক্ষেত্রে এসব রাস্তাগুলো ওয়ানওয়ে হয়ে উঠেছে। ফলে স্থানীয় অধিবাসীরা ক্রমে ক্রমে ভালো এলাকা ছেড়ে অপেক্ষাকৃত মন্দ এলাকায় যেয়ে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। এ সুযোগটা নিচ্ছে এশিয়ান এবং চীনসহ পূর্ব দিগন্তের দেশসমূহ। স্থানীয় অধিবাসীদের প্রচুর অভিযোগ রয়েছে, সবকিছু এখানে বলা সম্ভব নয়। শুধু একটা অভিযোগের কথা বলা যায়, তা হলো লন্ডন শহরের কোনো এলাকায় কেউ রাস্তায় হর্ন বাজায় না। শুধু বাজায় এশিয়ানরা। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই হলো মুসলিম।
তাদের কিছু বায়বীয় অভিযোগ আছে। শুনলে হাসি পায়। সেসব হলো, মুসলিমরা ইংল্যান্ডের রাস্তা দখল করে শুক্রবারের সালাত আদায় করে। এর ফলে অন্য জাতিসমূহের নাগরিক অধিকার দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয়। ব্যাহত হয়। খ্রিস্টানরা যদি মুসলিম দেশসমূহে রোববারে রাস্তায় নামাজ আদায় করতে চায়, তাহলে কী সেসব দেশের সরকার বা জনগণ সেই আবেদন মঞ্জুর করবে?
এর জবাব সংশ্লিষ্ট জনগণ বা গোষ্ঠী দেওয়ার পূর্বে তারা নিজেরাই জবাব দেয়, না, এটা কোনোদিন এ পৃথিবীতে ঘটবে না।
কথায় কথায় একজন পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট (স্থায়ী বাসিন্দা) বললেন, তাঁকে একজন স্থানীয় অধিবাসী যুক্তি তর্কের খাতিরে বলেছেন, আচ্ছা আপনাদের সরকার যদি হঠাৎ করে এক লক্ষ আফ্রিকানকে রেসিডেন্ড ভিসা দিয়ে দেয়, তাহলে কি আপনারা মেনে নেবেন?
বাংলাদেশি ব্রিটিশ ভদ্রলোক জবাবে বলেছেন, কোনো জাতি যদি বিপদে পড়ে সাময়িকভাবে আমাদের দেশে এসে যায়, মানবিক কারণে নানা অসুবিধা হলেও আমরা তাদের অবশ্যই জায়গা করে দেবো। যেমন আমরা প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গাকে (যারা মিয়ানমারের নাগরিক) বহু বছর যাবত আমরা তাদের প্রথমে পরোক্ষ এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে প্রত্যক্ষভাবেই আমাদের দেশে আমাদের নাগরিকদের মতোই সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে জায়গা করে দিয়েছি। এরা ছিল উদ্বাস্তু। এ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা প্রথম এসেছিল ৭৮-৭৯ সালের দিকে। তাদের তো ৪৭ বছর হয়ে গেছে।
প্রশ্নকারী প্রতিপ্রশ্নে জিজ্ঞেস করেছেন, আচ্ছা এ রোহিঙ্গারা যদি খ্রিস্টান বা ইহুদি হতো, তাহলে কি আপনারা জায়গা দিতেন?
জবাবে বাংলাদেশি ব্রিটিশ নাগরিক বলেছেন, রোহিঙ্গারা গত প্রায় ৫০ বছর ধরে জান-মাল রক্ষা করার জন্য উদ্বাস্তু হিসেবে আমাদের দেশে এসেছেন। তাদের তো মুসলিম হিসেবে সহযোগিতা করা হয়নি, সহযোগিতা করা হয়েছে উদ্বাস্তু মানুষ হিসেবে। এই উদ্বাস্তুদের মধ্যে বিভিন্ন জাতির ও বিভিন্ন ধর্মের লোক ছিল। এখনো আছে। মুসলিম ছাড়া অন্যদের আমাদের সরকার তো ফেরত পাঠায়নি।
তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে, যারা নিজ দেশে জুলুমের শিকার হয়েছিল। আমরা আমাদের নির্যাতিত, নিপীড়িত, অত্যাচারিত প্রতিবেশীদের হক আদায়ের চেষ্টা করেছি মাত্র। আফ্রিকান কালো মানুষ যদি কোনোভাবে আমাদের বর্ডারে উদ্বাস্তু হিসেবে সাময়িক আশ্রয়ের জন্য এসে যায়, তাহলে তো নিশ্চয়ই আমাদের সরকার ও জনগণ তাদের জায়গা দেবে।
কিন্তু পার্মানেন্ট ভিসা নিয়ে এতো মানুষ একসাথে বাংলাদেশে আসবে সেটা তো কল্পনা করা যায় না। কারণ আমাদের দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত মানুষ বেকার জীবনযাপন করছে। স্বল্প শিক্ষিত বা মূর্খ কর্মজীবী বেকার মানুষের সংখ্যা কম করে হলেও দুই কোটি। বিদেশে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে কাজ করছেন আমাদের দেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ। সে অবস্থায় ভিন্ন জাতির কাউকে শ্রমজীবী হিসেবে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
শেষে স্থানীয় অধিবাসী বলেছেন, তাহলে এখন আমাদের কথা চিন্তা করুন। আমরা কী অবস্থায় আছি।
বাংলাদেশি ব্রিটিশ জবাবে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের নানা দেশের প্রশ্নগুলো ভিন্ন ধরনের। আপনারা বিশাল বিশাল জাহাজ পাঠিয়ে আফ্রিকা থেকে মানুষ ক্রয় করে নিজেদের দেশকে উন্নত করেছেন। ওদের বিষয়ে আপনাদের মানবিক অব্লিগেশন (দায়বোধ) রয়েছে। আপনাদের স্ট্রাকচার, রেলওয়ে, বৃহৎ শিল্প, জাহাজশিল্প, রাস্তাঘাট, হাইওয়ে, বিশাল বিশাল ব্রিজ, ওভারগ্রাউন্ড আন্ডারগ্রাউন্ড রাস্তাঘাট, রেলওয়ে গড়ার জন্য আপনারা আপনাদের সাবেক কলোনিগুলো থেকে খুব সহজে, খুব কম দামে আদম সন্তান ক্রয় করেছেন। তাদের প্রতি আপনাদের একটা ঐতিহাসিক দায়িত্ব তো রয়েছে। তাদের আপনারা অবশ্যই উদ্বাস্তু করতে পারেন না।
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে। আমাদের দেশ থেকে লেখাপড়া করার জন্য আপনাদের দেশে যারা যেত, তারা আবার দেশে ফিরে এসে নিজ নিজও পেশায় যোগ দিত। জোর করে আপনাদের দেশে কেউ থেকে যেত না। গত প্রায় ৫০ বছর ধরে আপনাদের প্রয়োজনে, আপনাদের ডাকে, আপনাদের আহ্বানে আমাদের শিক্ষিতজন।
আপনাদের দেশে শিক্ষাগত, চাকরি-বাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন, তাদেরও আপনারা কোনো কারণে উদ্বাস্তু করতে পারেন না। আপনারা ডেকেছেন বলেই তো আমরা গিয়েছি। এখন আপনাদের কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের লোকদের আপনারা নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর মহা-উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, এটা যেমনি অন্যায়, তেমনি অমানবিক এবং নীতি-নৈতিকতাবিরোধী। তাছাড়া একটি ঐতিহাসিক বিষয় আপনাদের সবসময় মনে রাখতে হবে- এ উপমহাদেশ ও আফ্রিকা মহাদেশকে লুণ্ঠন করে আপনারা ধনী হয়েছেন, বড় হয়েছেন, সমৃদ্ধশালী হয়েছেন, হিসাব করে আমাদের পাওনাগুলো দিয়ে দেন, আমরা ইনশাআল্লাহ সবাই চলে যাব। আর যদি না দেন বা না দিতে পারেন, তাহলে আমাদের ফিরে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না, বরং কিয়ামত পর্যন্ত এ উপমহাদেশ ও আফ্রিকা থেকে আপনাদের অবশ্যই জনবল নিতে হবে।