৫ ইসলামী ব্যাংক বন্ধের ষড়যন্ত্র
৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৫৮
সুদভিত্তিক ২০ ব্যাংকের অবস্থা নাজুক হলেও নেয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা
॥ উসমান ফারুক ॥
কোনো ধরনের প্রাকপর্যালোচনা, ব্যাংকিং খাতে কোন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, সাধারণ আমানতকারী ও সাধারণ বিনিয়োগকারী তথা শেয়ারহোল্ডার আইনি অধিকার কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে, সে বিষয়ে কোনো বিশ্লেষণ ও ক্ষতিকর প্রভাব সামাল দেয়ার আগাম প্রস্তুতি ছাড়াই শরীয়াহভিত্তিক ৫ ব্যাংক একীভূত তথা মার্জার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর তা করতে গিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে সব ধরনের আইন ও বিধিবিধানকে। পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত এসব ব্যাংকের আরেক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গেও কোনো ধরনের সভা করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে নতুন করে আইনি দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
আইন অনুযায়ী, এসব ব্যাংকের বিষয়ে মার্জার বা বিলুপ্ত বা আর্থিক খাতে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হলে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে আগাম পিএসআই প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু এসবের কোনো কিছুই না করে এক তরফাভাবে জোর করে ব্যাংক মার্জারের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটিকে আওয়ামী স্টাইল বা ফ্যাসিবাদী কায়দা বলেছেন বিশ্লেষকরা। এর ফলে ব্যাংকের আমানতকারী, বিনিয়োগকারীরা পুঁজি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরিরতরা এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে এ মার্জার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে পুরো বিষয়ে সম্যক ধারণা সবার কাছে প্রকাশ করার পরামর্শ দিয়েছে ব্যাংক খাতের সংস্কারে সহায়তা দিতে শুরু করা বিশ্বব্যাংক।
আইন মানছে না বাংলাদেশ ব্যাংক
হুট করেই দেশের ১০টি ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক মার্জ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন গভর্নর। এসব ব্যাংক মিলিয়ে নতুন একটি ব্যাংক করা হবে। যার প্রস্তাবিত নাম হচ্ছে ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক। এ ব্যাংকের পুরো মালিক হবে সরকার।
অথচ সুদভিত্তিক বা প্রচলিত ধারার প্রিমিয়ার ব্যাংক, মধুমতি, মিডল্যান্ড, যমুনা, ইউসিবি, পদ্মা, মার্কেন্টাইল, এনআরবি ব্যাংক, এবি ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংক মিলিয়ে অন্তত ২০টি ব্যাংকের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তারল্য সংকটের কারণে এবারই প্রথম প্রিমিয়ার ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
রাজপথে প্রকাশ্যে গুলি চালানো আওয়ামী লীগ নেতা এইচ বি এম ইকবালের কব্জায় দীর্ঘ ২০ বছর ছিল ব্যাংকটি। বিপ্লবের পরে সরকার গঠন করার এক বছর শেষে ব্যাংকটিতে পর্ষদে পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখনো পলাতক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা তাপসের মালিকানার মধুমতি ব্যাংকের পর্ষদে কোনো পরিবর্তন আনেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ২০ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ইসলামী ধারার পাঁচ ব্যাংকের মতোই। কিন্তু সরকার এসব ব্যাংকের দুটি ছাড়া কোনোটির পর্ষদে বদল আনেনি এখনো।
কিন্তু পাঁচ ব্যাংকের মার্জার করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য হচ্ছে, এসব ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারি হওয়ায় খেলাপির হার ৯৯ শতাংশে উঠেছে। তারল্য সংকটে ব্যাংকগুলো অচলাবস্থার সৃষ্ট হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোর প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে ব্যাংকগুলোকে সেখানকার আইন ও বিধিবিধান মেনে চলতে হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে বিনিয়োগ সংগ্রহ করায় ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগ সংক্রান্ত আইনি বিধান মানতে হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ দিতে হয় ব্যাংকগুলোকে। শেয়ারধারক না হয়েই নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা পরিচালক পদে নিযুক্ত হন।
এ কারণে ব্যাংক মার্জার, অবসায়ন বা বড় ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে ব্যাংকের পরিচালকদের বাধ্যতামূলকভাবে বিশেষ সভা ডাকতে হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য। সেখানে প্রস্তাবনা তুলে ধরতে হয়। বিনিয়োগকারীরা একমত হলে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে ব্যাংকের পর্ষদ। পরিচালকদের কোনো সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীরা চাইলেই বাতিল করে দিতে পারেন। এটি আইন স্বীকৃত।
কিন্তু মার্জারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক নিলেও বিনিয়োগকারীদের এখনো জানানো হয়নি। তাদের স্বার্থ কীভাবে সংরক্ষণ করা হবেÑ তা খোলাসা করা হচ্ছে না। অন্যদিকে ব্যাংক অবসায়ন না হলেও আমানতকারীদের পুরো অর্থ পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
আইনি দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে
একীভূত করতে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেও ৫ ব্যাংকের বিষয়টি আইনি বেড়াজালে পড়ে গেছে। আমানতকারী ও পুঁজিবাজারের শেয়ারধারকদের বিষয়গুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো প্রস্তুতি না থাকায় আইনি সংকট তৈরি হয়েছে। সেই সংকট কাটাতে মার্জারের ঘোষণা দেয়ার পর এবার আইনি সমাধান খুঁজতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অবসায়ন না হয়ে একীভূত বা ‘মার্জ’ হলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী আমানতকারীদের পুরো অর্থ ফেরত দিতে হবে। অন্যদিকে বিএসইসির নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ পুরোটা সংরক্ষণ করতে হবে এমন দাবি উঠেছে। তা সমাধানে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনে থাকা ব্যাংকগুলো শুধু ‘মার্জার (একীভূত) হবে না কি, ‘মার্জার অ্যান্ড অ্যাকুইজিশন’ হবে সেই বিষয়টিতে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ কী করবে, তা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই এক মাস হতে চললেও কোনো প্রশাসক বসাতে পারেনি ব্যাংকগুলোয়।
তাই ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ব্যাংক আমানত বিমা আইন, আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ (খসড়া) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর আইনগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯১৯ (সংশোধিত-২০২৩) এর ৫৮ ধারা অনুযায়ী, আমানতকারীদের ক্ষতি হতে রক্ষা, আমানতকারীদের স্বার্থে বা ব্যাংক নীতির স্বার্থে সরকার যেকোনো ব্যাংক-কোম্পানি অধিগ্রহণ করতে পারে।
৫৮(ই) ধারায় বলা আছে, ‘‘তাহা হইলে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহিত আলোচনাক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত আদেশ দ্বারা, উক্ত আদেশে নির্ধারিত তারিখ হইতে, উক্ত ব্যাংক-কোম্পানি অথবা উহার এক বা একাধিক শাখা অথবা উহার অধীনস্থ কোনো প্রতিষ্ঠান, অতঃপর অধিগৃহীত ব্যাংক বলিয়া উল্লিখিত, অধিগ্রহণ করিতে পারিবে।’’
একই ধারার ৪ নম্বর উপধারা অনুযায়ী, কোনো স্কিমের আওতায় যেকোনো ব্যাংক কোম্পানিকে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নিকট হস্তান্তর করতে পারবে সরকার। দুই ক্ষেত্রেই অধিগ্রহণকৃত ব্যাংকের দায়দেনা সরকার বা গ্রহীতা ব্যাংক বহন করবে। ব্যাংক একীভূত করতে এই আইনের পাশাপাশি ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ পর্যালোচনা করছে সরকার। ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশের ১০(গ) নম্বর ধারায় ‘সার্বিকভাবে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা’ করতে বলা হয়েছে।
একই ধারার ২ নম্বর উপধারায় ‘ইসলামী ব্যাংকসমূহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক রেজুলেশনের উদ্দেশ্যসমূহ, প্রয়োজনে, প্রবিধান দ্বারা সুস্পষ্ট করিতে পারিবে’ বলা আছে। এজন্য ইসালামী তথা শরীয়াহ ব্যাংক একীভূত করতে পৃথক নীতিমালা তৈরি করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। এটি এখনো তৈরি হয়নি।
ব্যাংক একীভূত করার আগে আরো দুটি আইন করতে হবে সরকারকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘আমানত সুরক্ষা আইন’ তৈরি। এটি বর্তমানে ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ (খসড়া)’ অবস্থায় রয়েছে। অন্যটি হচ্ছে ‘ডিসট্রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট (ডামা)’ বা দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদ ব্যবস্থাপনা আইন। এই আইন তৈরি খসড়া এখনো প্রস্তুত করা হয়নি।
বিএসইসি চায় না ৫ ব্যাংকের মার্জার
পাঁচ ব্যাংক মার্জ হলে এসব ব্যাংককে পুঁজিবাজার থেকে ডি-লিস্ট করতে হবে। তাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা কমবে পুঁজিবাজারে। আবার এসব ব্যাংকের বিনিয়োগ যেমন আছে, আবার অন্যরা এসব ব্যাংকেও বিনিয়োগ করেছে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে। সেই বিনিয়োগ সমাধান করতে নতুন সংকট তৈরি হবে। পুঁজিবাজার ও ব্যাংকে বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট তৈরি করবে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এজন্য বিএসইসি কর্মকর্তারা চাইছেন না এসব ব্যাংক মার্জ হোক। তাই আইনি প্রক্রিয়াতেই এ মার্জার আটকাতে চাইছেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংক না জানালেও সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরে নিজেরা বৈঠকে বসেছেন। আইনি দিক পর্যালোচনা করে বিএসইসি কর্মকর্তারা ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ’ এর ৭৭ ধারা অনুসরণ করতে বলবে বাংলাদেশ ব্যাংকে।
কী আছে ৭৭ ধারায়
তালিকাভুক্ত ৫ ব্যাংক অবসায়নে না যাওয়ায় ইতোপূর্বে একীভূত হওয়া কোম্পানির শেয়ারধারকদের মতো সমাধান চাইবে বিএসইসি। সেখানে এক প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আনুপাতিক হারে নতুন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার পেয়েছেন। অথবা আগের মতোই ব্যাংকগুলোকে চলতে দিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দিতে বলা হবে বিএসইসির পক্ষ থেকে।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর শেয়ারধারক হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের নতুন ব্যাংকের শেয়ার চাইবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এজন্য ব্যাংকের সম্পদ ও তহবিল অপব্যবহারের জন্য দায়ী শেয়ারধারক ও পরিচালকদের বাদ দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার দেয়ার জন্য দাবি করা হবে। ব্যাংক ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ এর ৭৭ নাম্বার ধারা অনুসরণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের কাছে বক্তব্য উপস্থাপন করবে বিএসইসি।
৭৭ ধারায় বলা আছে, ‘প্রতারণামূলকভাবে ব্যাংকের সম্পদ অথবা তহবিল ব্যবহার অথবা অপব্যবহারের জন্য দায়ী ব্যক্তিগণ’ শিরোনামে এ ধারায় ‘দায়ী ব্যক্তিগণ’ এর সংজ্ঞায় বলা আছে, ‘‘তাহারা, যাহাদেরকে এই অধ্যাদেশের অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো আইনের অধীনে অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ তাহাদের কর্ম, নিষ্ক্রিয়তা এবং সিদ্ধান্তের ফলে তফসিলি ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহার বা অপব্যবহারের জন্য দায়ী হিসাবে চিহ্নিত করিয়াছে, যাহার মধ্যে নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণও অন্তর্ভুক্ত-
ক) উল্লেখযোগ্য শেয়ার ধারকগণ, খ) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যগণ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক অথবা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, মুখ্য ব্যবস্থাপনা কর্মীগণ এবং তফসিলি ব্যাংকের অন্যান্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগণ, যাহারা স্ব স্ব দায়িত্বের জন্য দায়ী থাকিবেন, গ) ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান, ঘ) দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ধারা ৪০৩ এবং ৪০৪-এর বিধান অনুযায়ী অসৎভাবে সম্পত্তি আত্মসাৎকারী ব্যক্তি, ঙ) মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ধারা ২(শ)-এর অধীনে অপরাধকারী ব্যক্তি; অথবা চ) এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চিহ্নিত অন্য যে- কোনো প্রাকৃতিক বা আইনি ব্যক্তি।’
শুরুতেই অস্বচ্ছতা
আর্থিক অনিয়ম, ঋণ কেলেঙ্কারিতে জেরবার বেসরকারি খাতের ৫ ব্যাংক মার্জার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যাংকের নাম প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়। সংবাদ মাধ্যমে আসা ৫ ব্যাংকের নামের বিষয়ে কোনো আপত্তিও করেনি দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এসব ব্যাংকের আমানতকারী ও শেয়ার ধারকদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে- তা নিয়ে শত শত প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক কোনো উত্তর দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে তালিকাভুক্ত ৫ ব্যাংকের বিষয়ে তৎপরতা শুরু করেছে পুরো প্রক্রিয়ায় এখনো কোনো কিছুই না জানা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ইতোমধ্যে আলোচনায় থাকা ৫ ব্যাংকের মধ্যে তিনটির কাছে ‘মার্জার’ নিয়ে জানতে চেয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। সব ব্যাংকই ডিএসইর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে, মার্জার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি তারা।
অথচ বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীরা পত্রিকার মাধ্যমে জেনে গেছেন এসব ব্যাংক মার্জ হচ্ছে। সরকার মার্জ করতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে নাম প্রকাশ করছে না। এজন্য বিশ্বব্যাংকও পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে পরামর্শ দিয়েছে। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ আউটলুক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি বলেছে, একীভূত মানে পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ, জনবল, শাখা, ঋণ, আমানত, ব্যবহৃত প্রযুক্তি, মানবসম্পদ নীতিমালা, নিজস্ব চাকরি বিধিমালা, নিজস্ব বিনিয়োগ নীতিমালা, আমানতকারী, শেয়ারধারক ও দায় দেনাসহ সবকিছু একটিতে রূপান্তরিত করা। কীভাবে এটি করা হবে তার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র বা সম্যক ধারণা আগেভাগেই সবাইকে জানাতে হবে। নইলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না মার্জার। তাতে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আমানতকারীদের পুরো অর্থ দিতে বাধ্য
ব্যাংক অবসায়ন না হওয়ায় আমানতকারী ও সাধারণ শেয়ারধারকদের পুরো স্বার্থ রক্ষা করতে হবে আইনি বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটির প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নানামুখী চাপের পর এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেছেন, আমানতকারীরা তো এখন দুশ্চিন্তায় আছে। তাই অনেকেই আমানত তুলে নিতে চাচ্ছেন। যাদের একেবারেই প্রয়োজন নেই তাদের আমানত না তোলার অনুরোধ করবো। কারণ হচ্ছে, কারো আমানত নিয়ে কোনো টেনশন নেই। ব্যাংক তো বন্ধ হবে না, সব ব্যাংক মিলিয়ে নতুন ব্যাংক হবে। তাদের আমানত তো নতুন ব্যাংকে যাবে, সেখানে থাকবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনে থাকা অবস্থায় এসব ব্যাংকে লুটপাট হয়েছে। এখানে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীদের কোনো দায় নেই। কিন্তু এই দুই শ্রেণি এখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একশ্রেণির কর্মকর্তারাও। তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার পর বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেই মার্জারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যুক্তিযুক্ত। কারণ হলো, সুশাসন নিশ্চিত না হলে ফের এসব ব্যাংকে দুর্নীতি হবে। আরেক গোষ্ঠী এসে ব্যাংক দখল করবে। আগে এই ব্যাংক দখলের পথকে বন্ধ করতে হবে। নইলে জনগণের ৩৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ব্যাংক মার্জ করলেও কোনো লাভ হবে না। ফের নতুন করে জনগণের কষ্টার্জিত করের টাকা কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কাছে চলে যাবে।