সদ্য কারামুক্ত এটিএম আজহার

একবিংশ শতাব্দী হবে ইসলামের বিজয়ের শতাব্দী

স্টাফ রিপোর্টার
২৯ মে ২০২৫ ০৯:৫১

স্টাফ রিপোর্টার : সদ্য কারামুক্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, আমার অপরাধ ছিল একটাইÑ আমি ইসলামী আন্দোলন করি। ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় যেতে চায়, তবে যেনতেনভাবে নয়, ইসলামের সুমহান আদর্শ জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাদের সমর্থন নিয়ে ইসলামকে সাথে নিয়ে আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই। আমি ছাত্রজীবনে যখন ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছি। সেদিনই বুঝেছি অত্যাচার-নির্যাতন, ফাঁসির মঞ্চকে ভয় পেলে চলবে না। আমাদের সাথে কারাগারে থাকা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, মীর কাসেম আলীর মতো আমি প্রস্তুত ছিলাম সন্তুষ্টচিত্তে আল্লাহর কাছে হাজির হওয়ার জন্য। আপনারা জানেন, নিজামী ভাই, মুজাহিদ ভাই মন্ত্রী ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেনি। তাদের অপরাধ ছিল একটাইÑ তা হলো সপ্রশংসিত মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর ওপর তারা ঈমান এনেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহ ইসলামী আন্দোলনের কর্র্মীদের যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্যই পরীক্ষা নেন। সুসময়ে যারা আন্দোলনে আসেন, তাদের চেয়ে যারা বাতিলের অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে দিনের আন্দোলনে টিকে থাকেন, তাদের হাতে আল্লাহ বিশ্বমানবতার কল্যাণের দায়িত্ব তুলে দেন। আমি বিশ্বাস করি, একবিংশ শতাব্দী হবে ইসলামের বিজয়ের শতাব্দী।
তিনি গত ২৮ মে বুধবার রাজধানীর আল-ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনাকীর্ণ সংক্ষিপ্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন। উল্লেখ্য, জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম দীর্ঘ ১৪ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে শাহবাগে জামায়াতের সমাবেশে সরাসরি যুক্ত হন। বুধবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) প্রিজন সেলে থেকে মুক্তির পর ৯টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমবেত জনতা এক শোকরানা সমাবেশের আয়োজন করে, সেখানে তাদের উদ্দেশেও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ১৪ বছর পর আজকে সকালে আমি কারাগার থেকে মুক্তি পেলাম। আমি আজ স্বাধীন, আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। আগের সরকারের সময় আপনারা জানেন, কীভাবে আমাদের ভাইদের হত্যাকাণ্ড করে দুনিয়া থেকে বিদায় করছে।
তিনি আরও বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই ৩৬ জুলাইয়ের মহানায়কদের, যাদের আন্দোলনের অক্লান্ত পরিশ্রমে স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে। ধন্যবাদ জানাই ছাত্র সমাজকে, যারা দীর্ঘ সাড়ে চৌদ্দ থেকে পনেরো বছরের ফ্যাসিস্ট এবং জুলুমবাজ সরকার থেকে নতুন একটা বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে। শাহবাগ থেকে তিনি দীর্ঘ ১৪ বছর পর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় আসেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তিনি আসেন আল ফালাহ মিলায়তনে। আল-ফালাহ মিলায়তনের সংক্ষিপ্ত সংবর্ধনা শেষে তিনি মগবাজারের কাজী অফিস লেনে সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযমের কবর জিয়ারত করেন। এরপর আজিমপুরে তার স্ত্রীসহ অন্যান্য স্বজনের কবর জিয়ারত করেন।
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান আল-ফালাহ মিলনায়তনের সংবর্ধনাকালে বলেন, আল্লাহর শোকরিয়া আদায়ের মানসে একটি বড় পরিসরের সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে। সত্য ও ন্যায় প্রকাশের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের এ ভাইটিকে রেখেছেন। আমাদের প্রিয় অন্য ভাইয়ের তিনি শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।
আমীরে জামায়াত পবিত্র কুরআনের সূরা আল ফাজরের এক আয়াত পাঠ করে বলেন, ‘হে প্রশান্ত আত্মা! তোমার রবের দিকে ফিরে এসো সন্তুষ্ট হয়ে এবং সন্তুষ্টির পাত্র হয়ে। অতঃপর আমার (নেক) বান্দাদের মধ্যে শামিল হও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।’ তিনি আরও বলেন, আমাদের যে প্রিয় ভাইয়েরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন, তারা জান্নাতে পরম সুখে আছেন আমাদের বিশ্বাস। ন্যায়বিচারের মাধ্যমে এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির মাধ্যমে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিগত সরকার আমাদের জান্নাতবাসী ভাইদের বিচারের নামে অবিচার করে হত্যা করেছে।
তিনি সূরা বুরুজ থেকে পাঠ করে বলেন, ‘আর তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধুমাত্র এ কারণে যে, তারা মহাপরাক্রমশালী প্রশংসিত আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল’। আসহাবুল উখদূদের কাহিনী উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের ভাইয়ের আগুনের গর্তে নিক্ষেপ করে হত্যা না করলেও, একে একে ফাঁসি দিয়ে এবং কারাগারে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। আল-ফালাহর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুমের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, এডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুর রব, অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন ও মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মো. সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি এডভোকেট জসিম উদ্দীন সরকার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মুফতি সুলতান মহীউদ্দিন ও মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ইউসুফ, জামায়তের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শামিউল হক ফারুকি ও মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, শহীদ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী, শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন, শহীদ আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর, এটিএম আজহারুল ইসলামের ছেলে তাসনিম আজহার সুমন, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল এবং এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলার আইনজীবীগণ প্রমুখ।