যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে বেসরকারি খাতে কমিউটর ট্রেন চালুর দাবি
১৫ মে ২০২৫ ১৬:১৩
আহসানুল হক জুয়েল, কিশোরগঞ্জ : করোনা পরিস্থিতির সময় বাংলাদেশ রেলওয়ে করোনার ভয়াবহতার অজুহাত দেখিয়ে ময়মনসিংহ-ভৈরব রেলপথে চলাচলকারী মেইল ট্রেন ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস, যা ঢাকা থেকে ভৈরব বাজার হয়ে ময়মনসিংহ যেত ও দুটি লোকাল ট্রেনের ভৈরব বাজার থেকে ময়মনসিংহ এবং ময়মনসিংহ হতে ভৈরব বাজার পর্যন্ত চলাচল বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন এসব ট্রেন বন্ধ থাকায় এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীরা খুবই বেকায়দায় পড়েছেন।
এছাড়া ট্রেনগুলো চালু থাকলে ইশ্বরগঞ্জ, নীলগঞ্জ, যশোদলপুর, বাজিতপুর, নান্দাইল, আঠারবাড়ী সোহাগী, বোকাইনগর, রিসকা শম্ভুগঞ্জ, সরারচর-হালিমপুর, কুলিয়ারচর, মুসল্লী, ছয়সূতি ও গৌরীপুর, ভৈরবের কালিকাপ্রসাদসহ ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলার ২২টি রেলস্টেশন আবারো প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে।
এসব ট্রেন ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলার ২২টি রেলস্টেশনের যোগাযোগ রক্ষা করত। ফলে খুব সহজে সাধারণ মানুষজন স্বল্প ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারত।
রেলওয়ে সূত্রমতে, লোকাল ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া জনপ্রতি পাঁচ টাকা এবং মেইল ট্রেনে ১৫ টাকা। আর আন্তঃনগর ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া ৪৫ টাকা। ১১৬ কিলোমিটার দূরত্বের ময়মনসিংহ-ভৈরব রেলপথে লোকাল ট্রেনের জন্য নির্ধারিত ভাড়া ৪০ টাকা এবং মেইল ট্রেনের জন্য ৫৫ টাকা। বিপরীতে আন্তঃনগর ট্রেনে উঠলে একজন যাত্রীকে গুনতে হয় ১২৫ টাকা।
এসকল রুটে কী কারণে ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস এবং লোকাল ট্রেনগুলো সার্ভিস বন্ধ হলো, এ বিষয়ে একজন রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের সাথে কথা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মাস্টার বলেন, কী কারণে এ সকল ট্রেন সার্ভিস বন্ধ করা হলো, কারণ আমাদের জানা নেই এবং লিখিতভাবে আমাদেরকে এসব বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কিছুই জানাননি। রেলের ঊর্ধ্বতন মহল এ ট্রেনগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন- এটাই শুধুমাত্র আমরা জানি।
এদিকে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, লোকাল ট্রেনগুলো প্রতিটি স্টেশনে যাত্রাবিরতি করত। ফলে স্বল্প পরিসরে বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা যেত। ফলে ব্যবসায়ী ও পাইকাররা দুধ, ডিম, কলা, মুরগি, ফল, শাকসবজিসহ বিভিন্ন কৃষিজ পণ্যের পাশাপাশি কাপড়, জুতা, কসমেটিকস, চাটাইসহ বিভিন্ন মনিহারি পণ্য আনা-নেওয়া করে বিভিন্ন বাজারে তা সরবরাহ করতেন। এ রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর বেশ কয়েকজন যাত্রী এ প্রতিনিধিকে জানান, ভৈরব বাজার থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ঐ লোকাল ট্রেনগুলো চালু থাকলে আমাদের অনেক উপকার হতো। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আমাদের এ অঞ্চলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ রোডের এ লোকাল ট্রেনগুলো চালু থাকলে অনায়াসেই ময়মনসিংহ শহরে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সকল কাজকর্ম স্বল্প সময় স্বল্প খরচে সম্পন্ন করা যেত। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কী মনে করে করোনার অজুহাত দিয়ে এ ট্রেনগুলোকে বন্ধ করে দিলÑ এটা আমাদের বুঝে আসে না। কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন আশানুরূপ যাত্রী না পাওয়ায় এ রোডের ট্রেনগুলো বন্ধ করা হয়েছে এবং বিনা টিকিটের যাত্রীর কারণে। প্রকৃতপক্ষে এ সকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেন ট্রেনে চলাচলকারী সচেতন যাত্রীগণ। এ রুটের হাজার হাজার যাত্রীগণ দাবি করেন, অবিলম্বে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ তিনটি ট্রেন চালু করুক এবং এই সকল স্টেশনের এলাকাবাসী যাত্রীসেবা হতে বঞ্চিত হতে চায় না। কিশোরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ জেলাবাসীর দাবি, এ ট্রেনগুলো চালু হলে বাংলাদেশ রেলওয়ে আয় বৃদ্ধি পাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছে দায়িত্বে অবহেলার। অবশ্যই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে এ রোডে ট্রেনগুলোয় এবং স্টেশনগুলোয় যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং দায়িত্ব পালন করতে হবে। ফলে বাংলাদেশ রেলওয়ের আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বেশ কয়েকটি স্টেশনের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন আমরা স্টেশনগুলোয় ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু স্টেশনগুলোয় কোনো ট্রেন না থামায় আমাদের মানবতার জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অবিলম্বে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ লোকাল ট্রেনগুলো চালু করলে আমাদের খুবই উপকার হতো। ময়মনসিংহ হতে চট্টগ্রামগামী নাসিরাবাদ এক্সপ্রেসের একজন যাত্রী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন দিলীপ এ প্রতিবেদককে জানান, ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস এবং লোকাল ট্রেনগুলো যখন চালু ছিল, তখন অনায়াসে গ্রামের বাড়ি কটিয়াদীর করগাঁও যেতে পারতাম। কিন্তু এখন খুব কষ্ট কর সপরিবারে গ্রামের বাড়ি যেতে হয়। বাস জার্নির চাইতে ট্রেন জার্নিকে আমি কমফোর্টেবল মনে করি।