জাতির মেরুদণ্ডের সব গিঁট আলগা করে ফেলে ফ্যাসিবাদীরা
১৫ মে ২০২৫ ১৫:৩৯
॥ সরদার আবদুর রহমান ॥
চব্বিশের আগস্ট বিপ্লবের পর ৯ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে এখনো সব সেক্টরে যেন স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে না। এর মূল কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতির মেরুদণ্ডের সব গিঁট আলগা অথবা দুর্বল করে গেছে হাসিনার নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা। দেশের শিক্ষা, অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, পুলিশ, বিচার, ভোটব্যবস্থা, গণমাধ্যম প্রভৃতিকে একেকটি ‘গিঁট’ বলে বিবেচনা করা যায়। এখানে এসব বিষয়ের একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা উপস্থাপন করা হচ্ছে।
শিক্ষা: ফ্যাসিবাদের শাসনকালে বড় রকমের ধাক্কা খায় জাতির মেরুদণ্ড বলে গুরুত্ব পেয়ে আসা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। বিসিএস, মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতির প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র শিক্ষকের লিখে দেয়া, নকলের অবাধ সুযোগ দেয়া, পাসের বন্যা, জিপিএ-৫-এর ছড়াছড়ি ইত্যাদি ছিল বহুল আলোচিত। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া তো তখন মামুলি ব্যাপার হয়ে ওঠে। একটার পর একটা প্রশ্নপত্র ফাঁসের কাণ্ডকারখানা রীতিমতো ডাল-ভাত হয়ে উঠেছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয় পাঠদানের পদ্ধতি, পরীক্ষা ও মেধা যাচাইয়ের পদ্ধতি, উত্তরপত্র মূল্যায়ন এবং ফলাফল তৈরির প্রক্রিয়া প্রভৃতিতে নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকে। এছাড়া পাঠ্যপুস্তকে নানা বিতর্কিত বিষয়াদি সন্নিবেশ করা, বিশেষ রাজনৈতিক পরিচয়কে মুখ্য করে তোলা এবং জাতিবিধ্বংসী পাঠক্রম যুক্ত করার মাধ্যমে জাতীয় চেতনা ও মূল্যবোধের ওপর কুঠারাঘাত করা হয়।
বিচার বিভাগ: একটি দেশের বিচারব্যবস্থা হলো মানুষের ইনসাফ ও মানবাধিকার রক্ষার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। কিন্তু ফ্যাসিবাদ সেই আশ্রয়ের জায়গাটাও ধ্বংস করে ফেলে। একদিকে বিচার বিভাগের ব্যাপক দলীয়করণ করা হয়; অন্যদিকে দল ও নির্বাহী বিভাগ থেকে প্রবল হুমকি ও চাপের মুখে রাখা হয়। এর ফলে বিচার বিভাগ ‘জি¦ হুজুর’ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। একজন বিচারপতি এজলাসে দলীয় প্রধানের প্রতিকৃতি স্থাপন করে তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের এজলাস ভাঙচুর, প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি মেরেছেন- এমন নির্লজ্জ দলীয় ক্যাডারও বিচারপতি হিসেবে বহাল থাকেন। এমনকি খুনের মামলার অন্যতম আসামিকে চার্জশিট থেকে নাম কাটিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি করা হয়। বিচারের রায় মনমতো না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিচারকদের দেশছাড়া করার নজিরও স্থাপন করা হয়। আর এ দলবাজ এজলাস প্রতিষ্ঠা করে সাজানো-পাতানো বিচারের মহড়া দিয়ে ‘মৃত্যুদণ্ড’ দেয়ার মতো রায় প্রদান ও তা কার্যকরও করা হয়।
পুলিশ: একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে কীভাবে দলের ইচ্ছাপূরণের বাহিনীতে পরিণত করতে হয়, তার দৃষ্টান্ত হয়ে আছে পুলিশ ও র্যাব বাহিনী। টানা তিন মেয়াদে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকায় পুলিশের মধ্যে ব্যাপক দলীয়করণ হয়। বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে অতি উৎসাহী একটি অংশ দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে পুলিশকে ব্যবহার করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও বেপরোয়াভাবে গুলি করে মানুষ হত্যার ক্ষেত্রেও উৎসাহী কর্মকর্তাদের ভূমিকা ছিল সর্বজনবিদিত। পুলিশের মধ্য থেকেই স্বীকার করা হয় যে, কতিপয় উচ্চাভিলাষী, অপেশাদার কর্মকর্তার কারণে এবং কর্মকৌশল প্রণয়নে বলপ্রয়োগের স্বীকৃত নীতিমালা অনুসরণ না করায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে কিছু কর্মকর্তার হাতে পুলিশ বাহিনী ছিল জিম্মি। দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে তারা প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক হয়। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা পুরো বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। গত বছরের নভেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ পুলিশের মোট সদস্য সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার। এর মধ্যে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আ’লীগ সরকার গঠনের পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে কেবল কনস্টেবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৯২৫ জন। উপপরিদর্শক (এসআই) নিয়োগ দেয়া হয়েছে সাড়ে ১১ হাজার। অর্থাৎ মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের অর্ধেকের বেশিই নিয়োগ পেয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরে। অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের বড় অংশ রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পেয়েছে। এছাড়া স্বজনপ্রীতি ও অর্থ লেনদেনের মাধ্যমেও অনেকের নিয়োগ হয়েছে। এক্ষেত্রেও নিয়োগের আগে পুলিশি তদন্তের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিচয় খতিয়ে দেখা হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিরোধীদলের আন্দোলন দমন এবং ‘রাতের ভোট’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে পুলিশের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ২০২৪ সালের ভোটের আগেও আন্দোলন দমন ও ‘গায়েবি মামলা’ দিয়ে বিরোধীদলকে হয়রানির ক্ষেত্রেও পুলিশ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সর্বশেষ ছাত্র আন্দোলনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রেও গত ১৫ বছরে নিয়োগ পাওয়া পুলিশ সদস্যদের একটি অংশকে অতি উৎসাহী ভূমিকায় দেখা গেছে।
অর্থনীতি: জাতির আরেকটি মেরুদণ্ড হলো জাতীয় অর্থনীতি। ফ্যাসিবাদী আ’লীগ সরকার কেবল লখিকোটি টাকা বিদেশে পাচার করেই থেমে থাকেনি, একটি ‘ভুয়া’ আর্থিক ব্যবস্থাপনাও রেখে যায়। যার সূত্রগুলো ছিল এরকমÑ ১. ভুয়া রিজার্ভ প্রদর্শন, ২. ভুয়া জিডিপি (প্রবৃদ্ধির হার) দেখানো এবং ৩. ভুয়া পরিসংখ্যান তৈরি ও ব্যবহার। এর মাধ্যমে তারা দেশের সার্বিক অর্থ-ব্যবস্থাপনাকে বিপজ্জনক খেল-তামাশায় পরিণত করে রাখে। তাদের বিদায়ের পর সহসা যে উপসর্গ প্রকাশিত হতে থাকে, তাতে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে বেসরকারি ব্যাংকগুলো টাকাশূন্য হয়ে পড়ে। তাদের বিতাড়িত হওয়ার পর আর্থিক খাতের শূন্যতা প্রকাশিত হতে শুরু করে। আওয়ামী লীগ আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয় বলে সর্বশেষ তথ্যে প্রকাশ পায়। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রতি বছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। লীগ সরকারের আমলের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের রাঘব-বোয়াল, আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এ পরিমাণ অর্থ পাচার করেন। ব্যাংকে আমানত রাখা গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ, ঋণখেলাপিদের অবৈধ সুবিধা দেয়া, বিদেশে অর্থ পাচারসহ নানা দুর্নীতির কারণে ভেঙে পড়ে আর্থিক খাত। ব্যাংক চালানোর মতো যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও মাসোহারা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতরে নিজেদের লোক রাখা হয়েছিল কর্তৃত্ববাদী লীগ সরকারের আমলে। দেখানো হয়েছিল ভুয়া রিজার্ভ। দুর্নীতি করতে যেসকল উপায় বেছে নেয়া হয় তার মধ্যে ছিল, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আর ফেরত না দেয়া (ঋণখেলাপি, যাকে ভদ্র ভাষায় বলা হচ্ছে ‘শ্রেণিকৃত’ বা ক্লাসিফায়েড), আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি টাকা লুট করা, বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির জন্য এলসি করে পণ্য না এনে বিদেশেই টাকা রেখে দেয়া, শেয়ারবাজারে কারসাজি করে টাকা লুট করা, বেনামে ও ভুয়া একাউন্ট খুলে এবং ভুয়া কোম্পানি খুলে সেগুলোর নামে কথিত ঋণ নিয়ে টাকা মেরে দেয়া, সরকারি টেন্ডার ও কেনাকাটায় ব্যয় বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি দেখানো প্রভৃতি কৌশল ছিল অর্থ আয়, আদায় ও পাচারের মাধ্যম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ পাচার দিয়ে যাত্রা শুরু হয়ে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের টাকা পাচার ছিল সর্বশেষ লুণ্ঠনের ইতিবৃত্ত।
প্রতিরক্ষা: একটি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা-প্রতিষ্ঠান হলো তার সেনাবাহিনী। এটি জাতির মেরুদণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ একটি গিঁট। কিন্তু ফ্যাসিবাদী সরকার এটিও দুর্বল করে রাখে। একে প্রধানত দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে এবং দ্বিতীয়ত, প্রতিরক্ষা ম্যানুয়াল তৈরি করে ভারতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থার অনুকূলে। এর সূচনা করা হয়, পিলখানা ম্যাসাকারের মাধ্যমে দেশের গর্ব সেনাবাহিনীর ৫৭ জন কর্মকর্তার পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে। অতঃপর সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করে রাখা হয় প্রায় নিরস্ত্র ও নির্বীর্য অবস্থায়। আজকের ২০২৫ সালের মতো টেকনোলজির যুগে এসেও প্রযুক্তিবিহীন করে রাখা হয়। স্বাধীনতার এত বছর পরও সামরিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ উন্নত হতে পারেনি। হাসিনা সারা বছর উন্নয়নের গল্প শুনিয়ে গেলেও কিন্তু সামরিক খাতে কিছুই করেনি। একটা অত্যাধুনিক সামরিক ঘাঁটি নেই, যেখানে সৈনিকরা যুদ্ধকালীন সময়ে লড়াই করতে পারবে। হাসিনা সবসময় বোঝাতো ভারতের গোলামি করতে থাকলে ভারত কখনো আক্রমণ করবে না। আ’লীগ এখন পর্যন্ত যে ৯৪ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে, সেগুলো দিয়ে যদি সামরিক খাতটাকে সাজানো হতো, তাহলে অন্যান্য দেশ বাংলাদেশকে সমীহ করে চলতো। ৯৪ বিলিয়ন ডলার এত বেশি টাকা যে, এ টাকা দিয়ে হাজার হাজার যুদ্ধযান ক্রয় করা যেত।
নির্বাচন ব্যবস্থা: একটি দেশে ক্ষমতার হাতবদল এবং জনগণের পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠার প্রধান মাধ্যম হলো দেশের সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন ব্যবস্থা। একেও জাতির মেরুদণ্ডের একটি গিঁট মনে করা যেতে পারে। দেখা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনসমূহ অনেকটাই বিতর্কমুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারলেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন বিতর্ক শুধু নয়- একেবারে নিন্দনীয় পর্যায়ে চলে যায়। আন্তর্জাতিকভাবেও সেগুলো গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে অন্য নির্বাচনগুলোও ব্যাপকভাবে কলুষিত হতে থাকে। যেকোনো নির্বাচন বা ভোটের অর্থ দাঁড়ায় একতরফাভাবে আ’লীগের সমর্থকদের বিজয় নিশ্চিত হওয়া। নির্বাচনগুলোয় ভোটারদের উপস্থিতি হতাশাজনক হয়ে পড়ে। ‘ভোট দিতে গিয়ে কী লাভ, দিলেও পাশ না দিলেও পাশ’Ñ এমন প্রবাদ-প্রবচন জনসাধারণের মধ্যে স্থায়ী হতে থাকে। এভাবে সর্বজনীন ভোটব্যবস্থা বলতে গেলে ধ্বংসের মুখে পড়ে যায়। আর এতে গণতন্ত্রের সমাধিসৌধ রচিত হতে থাকে। নির্বাচনের নির্ধারিত দিনের আগের রাতেই বিশেষ ব্যবস্থায় বিশেষ প্রতীকের পাশে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে রেখে দিনের বেলায় নির্বাচনের মহড়া দেয়া হয়। শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নির্বাচনকে একটি দলেরই একচেটিয়া বিজয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকল প্রকার ঘৃণ্য কৌশল অবলম্বনের অনুশীলন চালানো হয়।
গণমাধ্যম : বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় সংবাদমাধ্যমও ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। এজন্য হয়তো মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ দায়ী ছিল। তবে সার্বিকভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে সাংবাদিকদের নিয়ে বিরূপ ধারণা জন্মে। ঐ সরকারের আমলে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনিসহ ৫৯ সাংবাদিক হত্যার শিকার হন এবং আড়াই শতাধিক সাংবাদিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নির্যাতিত হন। এর মধ্যে এক যুগ গত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সাগর-রুনির রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। এমনকি তাদের ল্যাপটপটি পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে পলাতক সরকার ডিজিটাল কিংবা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো কালো আইন প্রয়োগ করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করে আ’লীগের নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট স্বার্থান্বেষী মহল। সে কারণে সাংবাদিক হত্যা বা নির্যাতনের বিচার হতে পারেনি। গণমাধ্যমের একটি বড় অংশই আ’লীগের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও নেতাদের দ্বারা অথবা তাদের আস্থাভাজন ব্যবসায়ীদের অর্থায়নে পরিচালিত হতে থাকে। এসব গণমাধ্যমের মালিকপক্ষের চাপে স্বাধীন সাংবাদিকতা বিলীন হতে বসে।
পলাতক সরকার জাতির মেরুদণ্ডের এ গিঁটগুলো এমনভাবে তছনছ করে ফেলে যে, সেগুলো মেরামত করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এজন্য রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। আইনের শাসন ফিরিয়ে আনা, বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা প্রতিষ্ঠা করা, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়া প্রভৃতি কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেয়াই এখন সময়ের দাবি।